কৃষিকাব্য

চারটি কবিতা

।। মোহাম্মদ রোমেল ।।



নদী

মেঘনার জ‌লের মতো শ‌রীল 
মা‌ঝে মা‌ঝে তু‌মি ক‌বিতা হ‌য়ে উঠো 
আর আমি সাপ-ব্যাঙ, মা‌ছের লাহান 
বি‌চিত্র প্রা‌ণের ল‌গে সহবাস কর‌তে কর‌তে 
মানু‌ষের ম‌ধ্যে যে প্রা‌ণ তার প্রে‌মে প‌ড়ি,
আমার প্রেম 
যমুনার জ‌লের ম‌ধ্যে প্রাণের মতো ক‌বিতা হ‌য়ে উঠে

আহা জল
শ‌রীলের ম‌ধ্যে মধুম‌তি নদী হ‌য়ে ক‌বিতা হ‌য়ে থাক ।


এতিম

অনন্ত উচ্ছেদের যুগে
মনা বিদ্রোহবিহীন হা হুতাশের বৈরাগ্যই জীবন !

দেহের আয়না মহলে কামড়ে ধরা বাসনার বিকার
চৈতন্যের মধ্যে জেগে উঠা অন্তর্গত বিষ
তোমার ইচ্ছার বাইরে বস্তুগত ধন সম্পর্কের জালে দৌড়াইতে থাকা দেহ
ভাষার মধ্যে বন্যা হয়ে ভাসতে থাকা চিৎকার
আকুতির সম্পর্কে পেয়ারহীন ঘূর্ণিলীলা
জীবন-মৃত্যু-ধর্মের সীমানা একাকার করে ইবলিশ ফেরেশতার মত ভেল্কির এক জীবন

যেন ভু-ভূমি থেকে উচ্ছেদের অনন্ত এক এতিমের জগৎ ।


কৃষির ইবাদত 

আমার জ‌মিন আমার কা‌ব্যের মতো সাধু ভা‌বের ভরাপূর্ণিমা হয়ে উঠো
যেন বিষ নয়, রহমতের ফসল হয়ে উঠো ।
ইয়া রব তুমি জানো,
ভরাপূর্ণিমায় সবুজ ঘাস, পা‌নি কিম্বা নদীর পা‌ড়ে ঘুরে ঘুরে
মাটির মধ্যে মাটি হয়ে শুয়ে থাকি,
ফাঁকে সু‌বেহ-সা‌দিক কিম্বা গোধূ‌লি বেলায়
রহম‌তের আধার যি‌নি তাঁর শুক‌রিয়া ক‌রে ক‌রে
নি‌জের মধ্যে বিরাজিত কৃ‌ষিভাব বু‌ঝে নিই।

বহু আগেই বি‌ষে বি‌ষে ছয়লাব আমার জ‌মিন কা‌নে কা‌নে তার বেদনার কথা,
নি‌র্বিচা‌রে প্রাণ হত্যার উৎসব কিংবা সকল শ‌রীল জ‌মি‌নের মতো
বিষাক্ত হ‌য়ে উঠার কা‌হিনী আমাকে ব‌লে দি‌য়ে‌ছে ।

দয়াল, সাধুভা‌বের জমিনের কসম, 
প্রকৃ‌তির হা‌লে নি‌জে‌কে বিষহীন পর‌হেজগার রূ‌পে সাজা‌তে চাই ব‌লে
অসভ্য হ‌য়ে মা‌টির কা‌ছে তোমার কাছে ফি‌রার আকুতিই আমার ইবাদত,
হে সখা ভা‌বের প্রাণময় কৃ‌ষি
আমা‌দের রবের মতো সহজ সরল ক‌রে তোলো।

গুম, হত্যা, প্রাণ উচ্ছেদের রক্তের ‌ হোলিখেলার এই মৃত্যুপু‌রী 
নাগ‌রিক লা-জবান,
‌লোভ-হিংসার রক্তাত ছোবল
আমার বীজ বুনার জ‌মিন নষ্ট ক‌রে দি‌চ্ছে…
আহা তোমা‌দের র‌ক্ত নদী‌তে আমি হাবুডুবু খা‌চ্ছি
হারিয়ে ফেলছি সখা-ভাবের ফসল বুনার খাসিলত ।

এই বর্তমানতায় ইয়া রব
ইতিহা‌সের বর্জ্য সাফ করে যেন ঠিক‌ঠিক আমার সখার কাছে
কৃ‌ষির কাব্য ইবাদতে ফিরতে পারি ।

জমিনে জমিনে সয়লাব ভরাপূ‌র্ণিমার কসম,
তোমার কা‌ছে, কৃ‌ষির কা‌ছে, হয়তো নি‌জের কা‌ছে এইভাবেই ফি‌রে ফি‌রে যা‌বো‌।

ন্ধকার

আলোতে ফাঁদ পেতে আমাকে অন্ধ বানিয়ে রাখার কালে 
তোমার আলো দিয়ে তোমাকে আর দেখবো না বলে 
চলে যাচ্ছি এমন কোথাও
যেখানে, অন্ধকার ছাড়া কোনো সন্ধ্যা প্রদীপ নেই ।

অন্ধকারে দেখার ধরন আলাদা
চোখ না খুলেও শরীল তুমি দ্যাখো ।

চোখের বিনাশ ঘটিয়ে অন্ধকারে জেগে থাকা চোখ 
তোমাকে বিনাশিবে যে শিব

শ্মশানে হরদম জেগে আছে কালীর কসম কাল হয়ে ।

অন্ধকার, যেন সময়ের মধ্যে বোধের আঁধার  
যেন নাই প্রেমে, প্রেম হয়ে খুঁজো অনন্ত অন্ধকার 

যেন অনন্ত অন্তর অভিসারে গভীরের সন্ধানে 
সদা ব্যস্ত তুমি হয়ে আছ সজীব শিবরাতের আন্ধার । 

এসো অন্ধকার, এসো শিব
এসো প্রেমহীন ভূগোলে, দেখার বাইরে না দেখা জমিনে,   
যেন আলোতে ভেদ সেধে সেধে অন্ধ হয়ে হুঁশ হয়ে উঠো ।


অলঙ্করণের ছবি: এস এম সুলতান, প্রচ্ছদের নামাঙ্কন: বৈশালী



মোহাম্মদ রোমেল

স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা, কবি ও সমাজকর্মী। জন্ম গণপ্রজাতন্ত্রী  বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্তর্গত বাঞ্ছারামপুর থানা মরিচাকান্দি গ্রামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স। অডিও-ভিস্যুয়াল ও টেক্সটের স্বাধীন ওয়েব প্লাটফর্ম ‘বানান’-এর প্রধান উদ্যোক্তা এবং সম্পাদক। লালন ধারা -সহ বঙ্গের ভাবচর্চার পরম্পরার সঙ্গে নানাভাবে যুক্ত। ঢাকার ‘চিন্তা’ পাঠচক্রের সঙ্গে বহুদিন ধরে যুক্ত রয়েছেন। একসময় ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয়ভাব্রে যুক্ত ছিলেন। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের এক সময়কার কর্মী। ফটোগ্রাফি, রাজনীতি এবং আড্ডাবাজীতে আগ্রহী। পেশা সূত্রে বেশ কিছু সময় বাংলাদেশের একাধিক জাতীয় টেলিভিশনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বেশ কিছু তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন। ঢাকার ফটোগ্রাফি ও ফিল্ম স্কুল ‘পাঠশালা’য় চলচ্চিত্র সম্পাদনা বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন। বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশন, ইন্টারনিউজ-এ কাজ করেছেন কিছুদিন। বর্তমানে ইউল্যাব ইউনিভার্সিটিতে ‘Center for Critical and Qualitative Studies – CQS’-এ পেশাগতভাবে যুক্ত রয়েছেন। লালনসহ বাংলার ভাব চর্চার ইতিহাস চর্চার সাথে যুক্ত রয়েছেন।

Share