উপমহাদেশে নারীমুক্তির আলাপ

।। সম্পাদকীয় প্রতিবেদন ।।

বৃহৎ বঙ্গ তথা উপমহাদেশের আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরম্পরা পর্যালোচনা করলে প্রকৃতি, পরিবেশ ও কৃষিক্ষেত্রের সঙ্গে নারী অধিকারের সম্পর্ক চিহ্নিত করা যায়। এই অঞ্চলের কৃষি জগতের নানা বীজ দখল করে নিয়ে প্রকৃতি ও গণসভ্যতার মধ্যে যে জৈববিচ্ছিন্নতা তৈরি করেছে, তার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে কৃষিজীবী নারীদের ওপরেই। গোটা বিশ্বে যে ইকোফেমিনিজমের ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছে, সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে, সেই চর্চার মূল জায়গা হয়ে উঠতে পারে উপমহাদেশ, বিশেষত এই বঙ্গদেশ।

পশ্চিমে আধুনিকতার ইতিহাসের সঙ্গেই যুক্ত হয়ে আছে নারীবাদের ইতিহাস। সেখানে আলোকায়ন, যুক্তিবাদ, শিল্পবিপ্লব, বুর্জোয়াদের উদ্ভব, গণতন্ত্র, সামাজিক সমানাধিকার ও পলিটিক্যাল সোসাইটি গড়ে ওঠার মতো বিষয়গুলোর মধ্য দিয়েই নারীবাদী আন্দোলনের ধারা তৈরি হয়েছে। এমনকী মার্ক্সবাদী বা সোশ্যালিস্ট রাজনীতির ভেতর থেকে শ্রেণিপ্রশ্নকে সামনে রেখেও সংজ্ঞায়িত হয়েছে নারীবাদ। যদিও নারীর ক্ষমতায়ণের বিষয়টি বাজার অর্থনীতির যুগে পণ্যবাদী সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। বাজার ব্যবস্থা নারীর ক্ষমতায়ণকে আদৌ প্রসারিত করে না কি পণ্যের বিপণনে নারী শরীরকে ব্যবহার করে উদ্বৃত্ত মুনাফা কর্তৃক তৈরি হওয়া শ্রেণিবৈষম্যপূর্ণ সমাজ কায়েম করা হয়, তা নিয়ে দীর্ঘ বাহাস জারি রয়েছে। অন্যদিকে পশ্চিমের মতো করে উপমহাদেশে নারীবাদী আন্দোলন গড়ে ওঠা বলতে যা বোঝায়, তেমন কিছু হয়নি বললেই চলে। নারী অধিকার বা সমানাধিকার ও নারীশিক্ষার প্রশ্নে গোটা উপমহাদেশে বেগম রোকেয়া, সাবিত্রীবাই ফুলে, মহাশ্বেতা দেবী, অরুন্ধতী রায়, মালালা ইউসুফজাইয়ের মতো বেশ ক’জন মহীয়সী নারী সমাজ সংস্কারক এগিয়ে এসেছিলেন ঠিকই, পাশ্চাত্যের নানা প্রকারের নারীবাদ তাঁদের প্রভাবিতও করেছে, কিন্তু সংগঠিতভাবে নারীবাদী আন্দোলনের ধারা উপমহাদেশে গড়ে ওঠেনি। তবে কি উপমহাদেশ মানেই কি এখানকার সমাজকাঠামো পিতৃতান্ত্রিক? নাকি উপমহাদেশের বুনিয়াদি সংস্কৃতি মাতৃতান্ত্রিক? নাকি আধুনিক পরিসরে নারীর ক্ষমতায়ণের জায়গা মনুবাদী সমাজ রাজনীতি ও ঔপনিবেশিকতার জাঁতাকলে বারবার পিষ্ট হয়েছে। বাজার অর্থনীতির ‘সমাজবিমুখ’ অরাজনীতির কবলে সমাজের সামগ্রিক বৈষম্য ও আধিপত্য বিরোধী সংগ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থেকে গিয়েছে নারী অধিকার ও নারীমুক্তির প্রশ্নগুলো!

মনে রাখা দরকার, উপমহাদেশে নারী ও নারীমুক্তির প্রশ্ন উপমহাদেশে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আর্য বলয় বাদেএখানকার ব্যাপক একটা অঞ্চলের (বিশেষত পূর্বাঞ্চল) প্রাচীন ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, এক সময় এই বৃহৎ অঞ্চল সমূহের সমাজ কাঠামোর চালিকা শক্তি ছিল নারী । এখানে কৃষি, উৎপাদনব্যবস্থা ও অর্থনীতির চালিকাশক্তির জায়গায় নারী একসময় প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। এইসব অঞ্চলের পুরাণ, পারম্পরিক গাথা, উপগাথায় নারীই ক্ষমতার ভরকেন্দ্র। এমনকী অবৈদিক সংস্কৃতি সমূহের অন্যতম আধার সাংখ্য দর্শন এগিয়েছে পুরুষ ও প্রকৃতির দ্বৈতাদ্বৈত চিন্তাকে সামনে রেখে। উপমহাদেশে আর্য আগমণ এবং পিতৃতান্ত্রিক গোত্রবাদী সংস্কৃতির প্রচলনের পরেও এখানকার বেশ কিছু দেশীয় সংস্কৃতি মাতৃতান্ত্রিক থেকে গিয়েছে। গোত্রবাদ বিরোধী তো বটেই। গোত্রবাদী উত্থানের পরে যতই জ্ঞান, কলা ও আধ্যাত্ম্যচর্চায় পুরুষের আধিপত্য কায়েম হোক না কেন, তার মাঝেই উপমহাদেশে নারী তার ক্ষমতায়ণের লড়াই চালিয়ে গিয়েছে। চোদ্দ শতকের লাল দেদ বা লাল্লেশ্বরীর কথাই ধরা যাক। পিতৃতান্ত্রিক সমাজ কাঠামাোকে তোয়াক্কা না করে এই শৈব সাধিকা কাশ্মীরে তাঁর ‘স্ট্রাগেল’ চালিয়ে গিয়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়ির মেয়ে স্বামীর ঘরে গিয়েও সাধনার জন্য বেশিদিন সংসারে থাকতে পারেননি। গুরুগৃহে বাস করলেন প্রখমে। তারপর পখে পখে ঘুরে বেড়ালেন। এমনকী পারস্যের সুফি কবি মীর সৈয়দ আলি হামদানির (রা) সংস্পর্শে এসে উচ্চারণ করলেন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লা’… শৈব ও সুফি সাধনা একত্রে, সেই যুগেই একত্রে করেছেন লাল দেদ। পিতৃতান্ত্রিক সমাজ তাঁকে নিয়ে অনকে কটূ কথা বলেছে বটে, লাল্লেশ্বরী তোয়াক্কা করেননি কিছুই। কিন্তু এটা ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের জায়গা থেকে নিজেকে ইন্ডিভিজুয়াল হিসাবে ধার্য করে সমষ্টির ওপরে ওঠা নয়, বরং ব্রহ্মাণ্ডচেতনার সঙ্গে নিজের অস্তিত্বকে এক করে দেখা এবং ব্যক্তির প্রতিটি সীমারেখাকে অতিক্রম করে যাওয়ার উদাহরণ লাল দেদের জীবন। যা পিতৃতান্ত্রিক ঘেরাটোপের বাইরে বের হয়ে জৈবিক ও সামাজিক বাইনারির বাইরে বের হয়ে আসা এক নারীর রাজনৈতিক স্ট্রাগেলও বটে। আসলে নারীকে সমাজের উৎপাদনব্যবস্থা থেকে বিযুক্ত করে পিতৃতন্ত্রের উত্থানের মধ্য দিয়ে উপমহাদেশে একদা আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক রদবদলের ঘটনা ঘটে যায়। প্রতিষ্ঠা পায় পুরোহিততন্ত্র, বর্ণবাদ ও ব্রাহ্মণ্যবাদ। যার পরিণতিতে এখানে ঔপনিবেশিক কালপর্ব থেকে শুরু করে আজ অবধি নারীকে তার হৃত অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য লড়তে হয়েছে। লাল দেদ হচ্ছেন স্বয়ং কালী বা তারার মতোই। একই সঙ্গে প্রজ্ঞা, কৈবল্য, স্বাধিকার, দ্রোহ ও মাতৃত্বের সমন্বয়। উপহমাদেশের অবৈদিক তন্ত্রের ধারা লাল দেদের মতোই প্রকৃতি শক্তি বা নারীশক্তিকেই চেতনের আধার বলে মনে করে।

আধুনিক সময়কালে উপমহাদেশে নারীর ক্ষমতায়ণের প্রশ্নে যাঁদের স্ট্রাগেল প্রাতঃস্মরণীয়, তাঁদের মধ্যে বেগম রোকেয়ার নাম এসে পড়ে। পিতৃতান্ত্রিক সমাজ কাঠামো এবং ঔপনিবেশিক প্রেক্ষাপট যেভাবে মেয়েদের অবরোধবাসিনী করে রেখেছিল, সেখান থেকে বের করে এনে নিজেদের অধিকারের প্রশ্নে সচেতন করার কাজ নারীশিক্ষার কার্যক্রম থেকে শুরু করে সাহিত্যে ও সামাজিক কর্মসূচিতে জারি রেখেছিলেন রোকেয়া। প্রথমত জগতের আলো-বাতাসের সংস্পর্শে বাংলার বড় অংশের মেয়েদের নিয়ে এসেছিলেন। মনে রাখা দরকার, প্রথমত ঔপনিবেশিক সময়ের বড় অংশে গণশিক্ষা বিষয়টাই ছিল গৌণ। কারণ, শিক্ষার অধিকার মূলত ছিল উচ্চবর্ণ ও উচ্চবিত্তের এবং পুরুষের নিয়ন্ত্রণে। নারীশিক্ষার বিষয়টি উচ্চবর্ণ ও উচ্চবিত্তের পরিবারগুলিতে পুরুষের নিয়ন্ত্রণেই কার্যকরী হয়েছিল অনেক ক্ষেত্রে। বাঙালি মুসলিম মেয়েদের মধে‌্য গণশিক্ষা প্রসারের কাজটা সহর ছিল না তেমন। যেটা করে দেখিয়েছেন রোকেয়া। দ্বিতীয়ত এইসব বৌদ্ধিক চেতনা বিকশিত হয়েছিল রোকেয়ার কার্যক্রমের দ্বারা। উপমহাদেশে নারী অধিকারের আলাপ করতে গেলে অবশ্যই ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক কালপর্বে মহারাষ্ট্রের সাবিত্রীবাই ফুলের কথাও স্মরণ করা দরকার। জাতপাত বিরোধিতা, নারীদের বাইরে আনা, নারীশিক্ষার ব্যাপারে উদ্যোগে গ্রহণ করার মতো নানাবিধ কাজ করেছেন নিজের ইনডিভিজুয়াল জায়গা থেকেই। বঙ্গের কবি কামিনী রায়ও এ ক্ষেত্রে আলাদা কিছু নন। ঐপনিবেশিক আমলে বৃহৎ বঙ্গের পাশাপাশি উপমহাদেশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা নারীরা স্বাধীনতার লড়াইয়ে যে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন তা উপনিবেশ পরবর্তী নারী আন্দোলনের ক্ষেত্রে প্রেরণাস্বরূপ। এক্ষেত্রে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার থেকে মাতঙ্গিনী হাজরা আজও সার্বিক জনমানেস প্রেরণাস্বরূপ হয়েই অমর রয়েছেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের তারামন বিবির কথাও ভীষণভাবে উঠে আসে। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁর উঠে আসার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে শ্রেণি, বর্গ ও লৈঙ্গিক বিষয়গুলো নিয়ে আলাপের এক পরিসর তৈরি হয়েছিল। বাহান্নর ভাষাসংগ্রাম ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে সামাজিক-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নারীর অধিকার, রাষ্ট্রের সঙ্গে নারীর সম্পর্ক এবং প্রান্তিক সমাজের নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের বিষয়গুলো আলোচ্য হয়ে ওঠে বাংলাদেশকেন্দ্রিক সমাজবিজ্ঞানের অধ্যয়নে। কিন্তু তারামন বিবিদের রাজনৈতিক দ্রোহ একটি কালপর্বে বড় আকার নিলেও শ্রেণি ও লিঙ্গের প্রশ্নগুলো যাতে রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতির নিগূঢ়ে সম্পৃক্ত না হতে পারে, তার জন্য তারামন বিবিদের ইতিহাসের পাতা থেকে সরেও যেতে হয়। এ-ও হয়তো পুরুষতন্ত্রের নির্মম পরিহাস।

কমিউনিস্ট পার্টির হয়ে কাজ করা ইলা মিত্রদের ভূমিকাও অবিস্মরণীয়। ব্যক্তিমানুষ হিসাবে মহাশ্বেতা দেবী প্রান্তিক মানুষের লড়াইয়ে এবং আদিবাসী মেয়েদের জীবনসংগ্রামে সম্পৃক্ত হতে পেরেছেছিলেন, তিনিও নারী আন্দোলনের প্রেরণা। নিজের কাজের মধ্য দিয়ে নারীশিক্ষার ব্যাপারে মালালা তার জীবনকে দৃষ্টান্ত করে তুলেছেন। আর সমাজ-রাষ্ট্র-শ্রেণি ইত্যাদি বিষয়ে নিরন্তর প্রশ্ন, কাউন্টার লজিক ও বাহাস জারি রেখে আজকের এই গোলকায়নের যুগে নারীর অধিকার সংক্রান্ত আলাপের স্পেস তৈরি করছেন অরুন্ধতী রায়। এমনকী মাস্তান হিসাবে উঠে আসা হিন্দি বলয়ের ফুলন দেবীর কথাও উপমহাদেশের নারী অধিকারের দ্রোহ পরম্পরায় উঠে আসে। পুরুষতন্ত্রের শিকার হয়ে তিনি সামাজিক যে দ্রোহ তৈরি করেছিলেন, তা নৈরাজ্যের আঙ্গিকে হলেও পিতৃতান্ত্রিক ও সামাজিক-রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের বিপ্রতীপে নারীর বিদ্রোহের বিরাট একটা দৃষ্টান্ত তৈরি করেছিল। কিন্তু রাজনৈতিক অভিমুখ স্পষ্ট ছিল না। তাই সংসদীয় গণতন্ত্রের মধ্যে নিজের বিনির্মাণ ঘটিয়ে দাবিদাওয়ামূলক রাজনীতির পরিসরে আসতে হয়েছে তাকে।

কিন্তু এত কিছুর পরেও রাষ্ট্রের বৈপ্লবিক পরিবর্তনে রাজনৈতিকভাবে যেসব আন্দোলন গড়ে উঠেছে, সেগুলোর মধ্যে নারীমুক্তির প্রশ্নে এমন কোনো সংগঠিত আন্দোলন হয়নি, যা উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যালোচনায় উল্লেখযোগ্য। বরং নারীর অধিকার অর্জনের ক্ষেত্রে ইনডিভিজুয়াল নারী লেখক, বুদ্ধিজীবী ও সমাজকর্মীরা উপমহাদেশে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকতে পেরেছেন। যদিও এর বাইরে আকাদেমিক জায়গা থেকে অগণন নারীবাদী ছিলেন এবং আছেন। কিন্তু তত্ত্বের বাইরে তাঁদের কোনো সামাজিক বা রাজনৈতিক উদ্যোগ দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠেনি। এ ছাড়া শিল্প-সাহিত্য, চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে গোটা উপমহাদেশে নারীবাদী উদ্যোগ কম নয়। কিন্তু তা নেহাতই নারীবাদী চর্চার মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকেছে। এই সব নারীবাদী আলাপ বাস্তব ক্ষেত্রে কতটুকু প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে, তা এক বড়সড় প্রশ্ন বটে। বৃহৎ বঙ্গ-সহ উপমহাদেশে সমষ্টিগতভাবে নারীমুক্তির আন্দোলন তেমনভাবে সংগঠিত না হওয়ার কারণ, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ইউরোপ-আমেরিকার পুঁজিবাদের বিকাশ ঘটলেও, এখানে পুঁজির প্রবেশ ঘটেছে উপনিবেশবাদের মাধ্যমে। ঔপনিবেশিক অর্থনৈতিক নীতির কারণে কৃষিনির্ভর অর্থনীতির পূর্ণ বিকাশ হয়নি একদিকে, অন্যদিকে পুঁজিবাদের বিকাশ হয়নি আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক কারণে। পাশপাশি বৃহৎ বঙ্গ তথা উপমহাদেশের আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরম্পরা পর্যালোচনা করলে প্রকৃতি, পরিবেশ ও কৃষিক্ষেত্রের সঙ্গে নারী অধিকারের সম্পর্ক চিহ্নিত করা যায়। এই অঞ্চলের কৃষি জগতের নানা বীজ দখল করে নিয়ে প্রকৃতি ও গণসভ্যতার মধ্যে যে জৈববিচ্ছিন্নতা তৈরি করেছে, তার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে কৃষিজীবী নারীদের ওপরেই। গোটা বিশ্বে যে ইকোফেমিনিজমের ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছে, সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে, সেই চর্চার মূল জায়গা হয়ে উঠতে পারে উপমহাদেশ, বিশেষত এই বঙ্গদেশ। কারণ, এখানে যেমন একদিকে প্রথমে নারীকে এবং তারপর সামগ্রিকভাবে গণসমাজকে উৎপাদনব্যবস্থা থেকে বিযুক্ত করে দখল নেওয়া হচ্ছে জল-জমি-জঙ্গলের, তা প্রতিহত করার ক্ষেত্রে প্রকৃতিনিবিড় নারী রাজনীতি খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। ভুলে গেলে চলবে না, পুরুষ ও প্রকৃতির যুগল এবং অর্ধনারীশ্বরের দার্শনিক চিন্তা এই বঙ্গদেশের। মোট কথা, আজকের গোলকায়নের যুগে প্রকৃতি, নারী ও কৃষির মেলবন্ধনে তৈরি হতে পারে এমন এক সম্ভাবনা, যা উপমহাদেশে নারীবাদের ইতিহাসে নয়া মাত্রা তৈরি করতে পারে।

Share