প্রাক্তন

ছোটগল্প

।। ফাতেমা রিয়া ।।

তারপর থেকে সোহান প্রায়ই মেয়েটাকে স্বপ্ন দেখতো। কোনো এক পরিত্যক্ত স্টপেজে মেয়েটা একা একা কান্না করছে, সোহান যেই এগিয়ে যায় জিজ্ঞাসা করতে, মেয়েটা কিছু বলতে চায়। কিন্তু কোথা থেকে যেন বাস চলে আসে। মেয়েটা তড়িঘড়ি করে উঠে চলে যায়।

প্রাক্তন

দূরে কোন গীর্জায় ঘন্টা বাজছে। ভোর। বাইরে টিপ টিপ বৃষ্টি। অদ্ভুত ভূতুড়ে বিষণ্ণতা। রিনি উঠে বসলো। শরীর ম্যাজ ম্যাজ করছে। রাতের নেশা এখনো কাটেনি। ফোন হাতে নিলো। ওয়াইফাই পাচ্ছে না। নেট নেই। সে তাকালো সোহানের দিকে। পাশেই ঘুমিয়ে আছে, বাচ্চাদের মত নিষ্পাপ মুখ। রিনির ইচ্ছা হলো আদর করে দিতে, সে সোহানের দিকে এগিয়ে আসলো। চুমু খেল কপালে।

সোহান অবশ্য টের পেলো না। মরার মত ঘুমিয়েই আছে। রিনি হাসলো। সে বিছানা থেকে উঠতে গেল। হাতে টান পড়লো। সোহান হাত ধরে আছে। চোখ বন্ধ। ঘুম ঘুম স্বরে বললো, এক চুমুতে হয় নাকি?
রিনি কপট রাগ করলো, “ও আচ্ছা শুয়ে শুয়ে ভান ধরা হচ্ছে!”

ফোন বেজে উঠলো সোহানের। একটু বিরক্ত হলো সে। ‘এই অসময়ে ফোন দেয় কোন বেরসিক শালা’। রিনি ফোনটা বালিশের নিচ থেকে বের করে দেয়। অচেনা নাম্বার।
ফোনটা ধরতেই সোহানের মুখ পানসে! রিনি দেখছিল, বললো, কে ফোন করেছে?
সোহান ফোন রাখলো, মনে হয় কথাটা এড়িয়েই গেল। তারপর কাছে টেনে নিলো রিনিকে।

সোহান যেন একটু অস্থির হয়ে আছে। মনে হয় ঠিক মনোযোগ দিতে পারছে না। ইতস্তত রিনি সরে আসলো। তারপর বললো, কে ফোন করেছিল?
সোহান পানসে হয়ে যায় আবার। তারপর বলে, অপ্সরা।

অপ্সরা! রিনি অবাক হয়। অপ্সরা সোহানের কিশোর বয়সের প্রেম। যার জন্য সোহান হাতটাত কাটতো। বাসার সামনে গিয়ে বৃষ্টির মধ্যে দাড়িয়ে থাকতো। যদিও জানে এসব কিশোর বয়সের পাগলামি। তবুও রিনির একটা ঈর্ষা কাজ করে অপ্সরার প্রতি।

– কি বলছে?
– বিয়ে ঠিক হয়েছে। দাওয়াত দিয়েছে।
– এতদিন পর বিয়ের দাওয়াত দিতে ফোন? ভালো মেয়ের প্রেমেই পড়েছিলে!

সোহানকে চিন্তিত মনে হলো। নাম্বার পেলো কোথায়? তাও এই ভোরে কেন ফোন দেবে?
রিনি কিছু না বলে উঠে পড়লো। বাথরুমে গেল ফ্রেশ হতে।

সোহান বাসা থেকে বের হয়ে গেল একটু পরে। তার অস্থির লাগছে। রিনিকে বললো কাজ আছে। রিনি অবশ্য ব্যস্ত। সে তার এই অস্থিরতা খেয়াল করলো না। বা করলেও কী? রিনি অনেক কিছু এড়িয়ে যায়।

একটা টং এর দোকানে বসলো সোহান। চা খাচ্ছে। আশেপাশে অনেক ব্যস্ততা, দুইটা লোক উত্তপ্ত ভাবে আওয়ামীলীগ বিএনপি নিয়ে আলোচনা করছে। একজন বিদ্রুপের সুরে বললো, তারেক জিয়ার আশা ছাইড়া দেন মিয়া। অন্যজন বললো, আপনারা তো তারেকরে ভয় পান। তাই দেশে আসতে দিতে চান না। অন্যজন হো হো করে হেসে উঠলো।
সোহান ভালমত তাকালো দুইজনের দিকে। মধ্যবয়স্ক দুইজন লোক। মনে হয় এলাকার বন্ধু। কাপড় চোপড়ে নিম্ন মধ্যবিত্ত মনে হয়।

সোহান ফোন হাতে নিলো। নাম্বারটা দেখলো, রবি নাম্বার। অপ্সরা ফোন দিয়েছিল যেখান থেকে। সোহানের ভয় ভয় লাগতে থাকে। সে তবু ফোন দেয়।

প্রথমে কেউ ধরে না, দ্বিতীয়বারে অপ্সরা ফোন ধরে।

– হ্যাঁ বলো।
– আমার নাম্বার পেলে কোথায়?
– জানা কি খুব দরকার? অপ্সরা সূচালো কন্ঠে বলে।
সোহান থতমত খায়, আসলেই তো, দরকার নেই। অপ্সরা আগের মতই কথা বলছে।
– না, তা নয়।
– বিয়েতে এসো, পার্টি সেন্টার, ধানমন্ডি, ১৯ জানুয়ারী।
– অন্য সবাইকে কী বলবে? আমি কে?
– বন্ধু।
– তোমার ভাইরা তো আমাকে চেনে।
– চিনুক, আমি বলেছি তোমার কথা।
– ওমা এতকিছু করে ফেললে?
– করলে কী সমস্যা?
– এখন আমার কথা বলতে পারলে, কবছর আগে পারলে না।
– এখন কি সেসব নিয়ে ঝগড়া করবে?
– নাহ।
– এসো, তোমার বউকে নিয়েই এসো।
সোহান থতমত খায়। তারপর বলে, আগের মতই আছো।
অপ্সরা হাসে। অনেকদিন পর। সেই হাসি।

সোহানের বুকে যেন বৃষ্টি নেমে আসে। কত রাত অপেক্ষার পর এই সৌভাগ্য হলো! তার চোখে পানি চলে আসে।
সে কোনভাবে বলে, আসবো। অপ্সরা কিছু বুঝতে পারলো কিনা কে জানে! সে তড়িঘড়ি করে বললো, আচ্ছা রাখি।

চায়ের দোকান থেকে বের হয়ে যায় সোহান। আগের কথা মনে পড়ে, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি এখনো। এমন বৃষ্টির দিনেই তো প্রথম দেখা অপ্সরার সাথে।

সে কাঁটাবন দাড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছে। কত আর তখন বয়স। ইন্টারে সবে উঠলো মনে হয়। কলেজে পড়ে। অপ্সরা তখন মাত্র নাইনে পড়ে। দেখলো স্কুল ড্রেস পরা একটা মেয়ে খুব কান্না করছে বাস স্টপে দাড়িয়ে। আশেপাশের মানুষজন অবাক হয়ে দেখছে। কেউ কিছু জিজ্ঞাসাও করছে না। বৃষ্টি আরো বেড়ে গেল, সবাই স্টপেজের ছাউনির মধ্যে আশ্রয় নিলো। মেয়েটার সে খেয়াল নেই, সে ভিজেই যাচ্ছে। সোহান এগিয়ে গেল, তারপর বললো, বৃষ্টি পড়ছে, ভিতরে আসো।
অপ্সরা তাকে দেখে মুখ ঝামটা মেরে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নি্লো আবার। তারপর ছাউনির এক পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
সোহান কী করবে বুঝতে না পেরে সেও অন্যপাশে দাঁড়িয়ে পড়লো। বাস এলো। মেয়েটা ভীড়ের মধ্যে হারিয়ে গেল, আর দেখা গেল না।

তারপর থেকে সোহান প্রায়ই মেয়েটাকে স্বপ্ন দেখতো। কোনো এক পরিত্যক্ত স্টপেজে মেয়েটা একা একা কান্না করছে, সোহান যেই এগিয়ে যায় জিজ্ঞাসা করতে, মেয়েটা কিছু বলতে চায়। কিন্তু কোথা থেকে যেন বাস চলে আসে। মেয়েটা তড়িঘড়ি করে উঠে চলে যায়।
এই অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে সোহানের অস্বস্তি লাগতে থাকে। সে ফেসবুকে ঢোকে। পাগলের মত স্ক্রল করে, মেয়েদের সাথে কথা বলে। কিন্ত বাস স্টপেজের মেয়েটা যেন অনবরত কোথাও কান্না করেই যায়…

সোহান বাসায় ফিরে আসে। বিছানায় শুয়ে পড়ে ক্লান্ত, অবসন্ন হয়ে। আজ অফিস নেই, শুক্রবার। রিনি একটু পর চেঁচামেচি করবে জুমার নামাজে যাবার জন্য। তার কোথাও যেতে ইচ্ছা হচ্ছে না।

রিনি আর তার বিয়ে হল ছ’মাস। ছিমছাম গোছানো সংসার, অতীতের যাবতীয় দুঃখ দুর্দশা থেকে মুক্ত হয়ে সবে গোছাতে শুরু করলো সব, তার মধ্যেই এই ফোন। আবার বলে, বিয়েতে আসো, ফাজলামি নাকি!

সোহানের রাগ উঠে যায়, সে যাবে না কোথাও, রিনিকেও কিছু বলবে না। কী ভেবেছে অপ্সরা? সোহানের ভালোবাসা নিয়ে অনেক খেলেছে সে, আর নয়। সোহান ক্লান্ত বোধ করে। এই আহ্বান উপেক্ষা করার সাধ্য তার কি আজো হয়ে উঠেছে?

রিনি আসলো একটু পর। সে রান্না করছে। ঘর্মাক্ত শরীর, ক্লান্ত চেহারা। চোখ মুখ পাকিয়ে বললো, নামাজে যাবে না?
দীর্ঘশ্বাস ফেলে সোহান বলে, আজ শরীরটা ভাল্লাগছে না।
রিনি ওড়না দিয়ে মুখ মোছে, কী যেন খোঁজে বেডরুমে। তারপর বলে, তা তো কোন সপ্তাহেই ভাল লাগে না তোমার।
সোহান বিরক্ত হয়। সে বলে, আজ আসলেই ভাল্লাগছে না, প্লিজ সোনা।
রিনি একবার তার দিকে তাকায়, কী যেন দেখে, তারপর বলে, আচ্ছা।

সোহান হাফ ছেড়ে বাঁচে, রিনি রান্নাঘরে চলে যায়। সোহান ঘুমে তলিয়ে যায়, মনে হয় বৃষ্টি আর কান্না এক হয়ে যাচ্ছে। পরিত্যক্ত বাস স্টপেজে বসে কে কাঁদছে? অপ্সরাই কাঁদছে! সে এবার আর যায় না অপ্সরার কাছে। অপ্সরা কান্না থামিয়ে রাগী গলায় জিজ্ঞসা করে, তুমি আসবে না?

– আসলে তুমি চলে যাও, তোমাকে নিয়ে যায় অচেনা বাস। কই নিয়ে যায় আমি জানি না..
– ধরে রাখতে তো পারো।
– এখন পারি না। তখন পারতাম, বুঝি নি।
– চুপ।
অপ্সরা এগিয়ে আসে..এগিয়ে আসে…
ডাকে, সোহান, এই সোহান..

রিনি ডাকছে, সোহানের ঘুম ভেঙে যায়। রিনি বিরক্ত গলায় জিজ্ঞাসা করলো, কী বিড়বিড় করছিলে স্বপ্নের মধ্যে?
সোহান দ্রুত উঠে বসে। ‘কী জানি দেখেছিলাম, মনে নেই। ‘

রিনির দিকে তাকালো সে, রিনি গোসল করে এসেছে। একটা নীল জামা পরা। গাঢ় নীল। অপ্সরার মত লাগছে কেন? এমন জামা কি অপ্সরা পরতো?
নিজের ওপরে বিরক্ত হয় সোহান। বিরক্তি চাপা দিতে সে বলে, খাবার দেবে না? খুদা লাগছে।

সোহান বিকেলে আবার বেরোয়। ভাবছে আজ অনেক হাঁটবে, সেই কিশোর বয়সের মতো। সে থাকে মোহাম্মদপুর। এলাকাটা আগে ভালই ছিল, এখন ডেভেলপাররা এসে শহরের বুকটা চিরে ফেলেছে যেন। সে ইকবাল রোডে আসে হাঁটতে হাঁটতে। ছিমছাম, মাঝে মাঝে দু একটা চায়ের দোকান দেখা যায়, বৃষ্টি থেমে গেছে।

দুইটা কলেজের ইউনিফর্ম পড়া ছেলেমেয়ে হেঁটে যাচ্ছে। হয়তো বন্ধু। হয়তো না। অপ্সরা কি তার বন্ধু ছিল কখনো?
সোহান ভাবতে চেষ্টা করে। না, ছিল না।

সে কখনো অপ্সরাকে বলেনি সে পর্ন দেখতো, অপ্সরা কখনো জানতো না সে দুই একবার কলেজে থাকতে বন্ধুদের সাথে বেশ্যালয়েও গিয়েছে। অপ্সরা জানতে পারেনি সে টেস্ট পরীক্ষায় অঙ্কে ফেল করেছিল, অপ্সরা জাননি অপ্সরার সাথে প্রেম থাকতেও আরেকটা মেয়েকে ভাল লেগেছিল তার। সেই মেয়ের বাসার সামনেও সে দাড়িয়েছিল দুইদিন। সে জানে এতে মেয়েরা খুশি হয়। অবশ্য লাভ হয় নি। মেয়েকে দেখলো একদিন প্রেমিকের সাথে মোটরবাইকে। তারপর সব ভুলে আবার অপ্সরার কাছে ফিরে আসা। অপ্সরা জানতো না সে কত কিছু জানে না, তাতে অপ্সরার সমস্যাও হয়নি। সোহান সমস্যা হতেও দেয়নি। তবে আজ কেন হিসেব নিয়ে বসতে ইচ্ছা হয়?

সোহানের চোখে পানি আসে। বৃষ্টি শুরু হয়। অপ্সরার মতই কাঁদতে কাঁদতে  ভিজতে ইচ্ছা হয় তার।
সেই অভিমানী মেয়েটার প্রেমে পড়েছিল সে, প্রথম দিন ই।
অপ্সরাজ কথা মনে হলে বা তার কথা উঠলে অনেকদিন সেই কান্নাভেজা মেয়েটার ছবি ভেসে আসতো।।এখনও আসে। সোহানের এখনও মনে হয়, তার মধ্যে কোথাও না কোথাও, অপ্সরা একা একা কেঁদেই যাচ্ছে।

সে কখনো অপ্সরাকে বলেনি সে পর্ন দেখতো, অপ্সরা কখনো জানতো না সে দুই একবার কলেজে থাকতে বন্ধুদের সাথে বেশ্যালয়েও গিয়েছে। অপ্সরা জানতে পারেনি সে টেস্ট পরীক্ষায় অঙ্কে ফেল করেছিল, অপ্সরা জাননি অপ্সরার সাথে প্রেম থাকতেও আরেকটা মেয়েকে ভাল লেগেছিল তার। সেই মেয়ের বাসার সামনেও সে দাড়িয়েছিল দুইদিন। সে জানে এতে মেয়েরা খুশি হয়। অবশ্য লাভ হয় নি। মেয়েকে দেখলো একদিন প্রেমিকের সাথে মোটরবাইকে। তারপর সব ভুলে আবার অপ্সরার কাছে ফিরে আসা…

সোহান বিয়েতে এসেছে অবশেষে। রিনিকে লুকিয়েই এসেছে। রিনি জানলে রাগ করবে। অপ্সরাকে বউ সাজে দেখার ইচ্ছা ছিল তার, নিজের জন্য না হউক। সোহান হাসে৷ হাতে বড় একটা গিফটের বক্স। সে চায় বিয়ে বাড়িতে যেন কেউ তাকে অপাঙক্তেয় না ভাবে। সে তো কাঙাল হয়ে আসেনি এখানে। নাকি কাঙাল হয়েই এসেছে?

এতকিছুর পর, তার অর্জন প্রেমিকার বিয়েতে গিফট নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা। সোহান নিজের ওপর বিরক্ত হয়। এত নিচে কবে নামলো সে? তার ইচ্ছা হয় গিফটটা দিয়ে চলে যায়। তবু সে যায় না, রিসিপশনে গিয়ে গিফট দেয়, নাম লেখায়, বলে, মেয়েপক্ষ।

গিফটের আকার দেখে বেশি প্রশ্ন করা হয় না, ভিতরে ঢুকতেই অনেক ভীড়। অপ্সরাকে দেখা যাচ্ছে না। সে হয়ত স্টেজে বসে আছে।
ভীড় ঠেলে একটু আগাতেই অপ্সরাকে দেখে সে। অনেক সেজেছে, চেনাই যাচ্ছে না। সোহান বিরক্ত হয়। কী আজকালকার ট্রেন্ড, বিয়েতে একমন ময়দা মেখে বসে থাকা। তবে অপ্সরা তাকে চিনতে পারে। তার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। সে তাকে হাত ইশারায় ডাকে।
সোহান এগিয়ে যায়। অপ্সরার পাশে দুইটা ছোট বাচ্চা বসে আছে, অন্যরা হয়ত ব্যস্ত, বর মনে হয় আসে নি।

সোহান নিশ্চিন্ত হয়।
কাছে যেতেই অপ্সরা বলে, এসেছো তাহলে?
সোহান একটু রেগে যায়, এই তামাশার মধ্যে আমাকে ডাকার কী দরকার ছিল?
অপ্সরা অপ্রস্তুত হয়, তারপর বলে, জানি না। তুমি না আসলেই পারতে।
সোহান চুপ থাকে, হয়ত এখন বলা সাজে না, বা বলা উচিত ও না, তবু বলে,  তুমি ডেকেছো, আমি আসি নাই এমন তো হয় নি।
অপ্সরা হাসে, কী সুন্দর সে হাসি, এখন মেকাপের আড়াল থেকে যেন চেনা অপ্সরা বের হয়ে এসেছে। সোহান মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে।

– বসো, খেয়ে যেও।
– হ্যাঁ খেতেই তো আসলাম তোমার বিয়েতে। সোহান যেন মেজাজের সাথেই জবাব দেয়।
অপ্সরা চোখ পাকিয়ে বলে, খুব তেজ হয়েছে দেখছি!

সোহান চুপ করে থাকে আবার, অপ্সরার বান্ধবীরা চলে আসে হই হই করতে।
মোটামতো এক মেয়ে জিজ্ঞাসা করে, কে রে?
অপ্সরা নিজেকে সামলে নেয়। তারপর বলে, ওই যে, আমাদের এলাকার বড় ভাই ছিলেন আর কী। সোহান ভাই আমার বান্ধবীদের সাথে পরিচিত হন।
সোহানের ক্লান্তি লাগে, তার কাছে মনে হয় সব ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। সে কোনরকমে ওদের সাথে কথা শেষ করে খাবার টেবিলে গিয়ে বসে। প্রথম ব্যাচ শুরু হয়েছে।

সোহান খেয়েই বের হয়ে গিয়েছিল, অপ্সরার পাশে অনেক মানুষজন। আর সুযোগ পাওয়া যাবে না। সে একা একা দাঁড়িয়েছিল গেটে। অপ্সরার বরকে দেখলো, একটু বয়স্ক মনে হলো, তবে টাকাওয়ালা হবে। সোহান দীর্ঘশ্বাস ফেলে। একটু পর অপ্সরা চলে যাবে। সে বিদায়টা দেখতে চায়।

সন্ধ্যা নামলো। সোহানের শীত করছে অনেক। জানুয়ারী মাসের শৈত্যপ্রবাহ না তার মধ্যের শীতলতা সে বোঝে না।
অপ্সরা বের হল, পাশে তার বাবা মা আত্মীয় স্বজন। গাড়ি রাখা সামনে। অপ্সরার চোখে পানি। সোহান মুগ্ধ হয়ে দেখলো।
সেই বাস স্টপেজের একা একা কান্না করা মেয়েটা আজ বউ সেজেও কান্না করছে। সোহানের চোখে সেই দৃশ্য ভেসে উঠলো।
সে মনে মনে বললো, আহা, কাঁদে না।

আজ মেয়েটা আর বাসের অপেক্ষা করবে না। একা কাঁদবে না। তার পাশে অনেক মানুষ। তার জন্য অপেক্ষা করছে ফুলসজ্জিত গাড়ি।।
সোহানের চোখেও পানি এলো, তবে সে চোখ মুছতে চায় না। এক পলক ও আড়াল করা উচিত না এই দৃশ্যকে। এত সুন্দর বেদনাময় মুহূর্ত কি মানুষের জীবনে বারবার আসে?

সোহানের চোখ ঝাপসা হয়ে যায়…সে চোখ মুছতে চায় না।

অপ্সরা চলে যায়।

সোহান বের হয়ে আসে। একটা গল্প শেষ হল।

কান্না দিয়ে শুরু, কান্না দিয়ে শেষ।

সোহান হাসে…

সন্ধ্যা নামলো। সোহানের শীত করছে অনেক। জানুয়ারী মাসের শৈত্যপ্রবাহ না তার মধ্যের শীতলতা সে বোঝে না।
অপ্সরা বের হল, পাশে তার বাবা মা আত্মীয় স্বজন। গাড়ি রাখা সামনে। অপ্সরার চোখে পানি। সোহান মুগ্ধ হয়ে দেখলো।
সেই বাস স্টপেজের একা একা কান্না করা মেয়েটা আজ বউ সেজেও কান্না করছে। সোহানের চোখে সেই দৃশ্য ভেসে উঠলো।
সে মনে মনে বললো, আহা, কাঁদে না।

প্রচ্ছদের ছবি- অতনু সিংহ

ফাতেমা রিয়া

তরুণ গল্পকার, উপন্যাসও লিখেছেন। দেশের বাড়ি বরিশাল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন পড়েছেন। সাহিত্য, সঙ্গীত, দর্শন ও রাজনীতে বিশেষ আগ্রহ রয়েছে।

Share