থাকার অন্তরালে না থাকার অসীম

।। জয়শীলা গুহ বাগচী ।।

“একটা দিনকে আয়ু বলে ডাকি
একটা রাতকে শ্বাস নিতে বলি জোরে
এ যাবত যত ছবি আছে চোখে
তাদের রেখে দিই পরিত্যক্ত সিনেমা হলে
বাতাসে ভেসে যায় জন্মের সুগন্ধ
জীবন গুণতে গুণতে সংখ্যা হয়ে যাই
জীবন বুঝতে বুঝতে প্রতিদিন
মৃতের স্বপ্ন হয়ে উঠি”

দিন ও…

আমি আমার রঙ পড়ছি
আঁকছি নিজস্ব হাঁটাচলা
ঘরবাড়ির ভেতর চাপা পড়া সমুদ্র …
লিখছি ভুলে থাকা বিশুদ্ধ রাস্তা
একটি সম্ভাবনার সূর্যাস্ত …
এই তো আকাশ বসেছে জানালায় দ্বিধায়
নিশ্চিন্তে দোল খাচ্ছে আমাদের নদীভাষা
মিথ্যে সংক্রান্ত সমস্ত ছায়াকে
ঢেকে রাখি জীবনের মগ্ন দিয়ে
নিজের মিথ্যেকে জোনাকি দিই
বইয়ে দিই তারাখসা স্রোতে
দূর হতে থাকে আমিভেজা বালিস
প্রতিদিনের ইচ্ছে থেকে মায়া তুলে আনি
দরজা নিভে আসে
জানালা টাঙিয়ে দিই
টানাপোড়েনের খোলা মাঠে

অতিক্রম

ডুবে যেতে যেতে
ক্রমশ পরশুর শ্বাস লাগছে গায়ে
খণ্ড খণ্ড চিন্তার বাতাসে
মাংসের অক্ষর শুধু
আমাদের সেরিবেলামে চাঁদ ওঠেনা
ধোঁয়ার শরীরে শুধু সান্ত্বনার সবুজ
চামড়ার ইতিহাস থেকে
কথা বলে চোখের ফুল
ফুল অস্ত যায়
চিন্তার পাঁজর আঁকড়ে ঘুমসন্ধ্যা
শপথের মতো শোনায় তোমাকে
হে জন্ম… হে দ্বিতীয়…
জীবিত করো থাকা না থাকার সম্ভাবনা
থাকার অন্তরালে না থাকার অসীম
তোমার হোক …

উচ্চারণ

আমরা হাত ধরে দৌড়চ্ছিলাম
হয়তো একটা হলুদ মাঠ হয়ে উঠছিলাম
আমাদের গায়ে ঝরে পড়ছিল
অজস্র শব্দ
যেসব শব্দ সামাজিক নয়
যেন পরিচিত শোকের ওপর মোমবাতির আলো
কিন্তু শব্দের ভেতর কোথাও আমরা ছিলাম না
একটা স্বচ্ছ মাঠ
কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়ে ছিল
আমরা আমাদের খুঁজতে খুঁজতে
চতুর হয়ে উঠলাম
ধর্মস্থান হয়ে উঠলাম
আমরা তবু দৌড়চ্ছিলাম
আমাদের গায়ে তীব্র সজারু জন্মাচ্ছিল…

ছবি থেকে

নামের আড়ালে কিছুটা নিঃশব্দ রাখা আছে
আলোর নিঃশ্বাসে যখন কোন কথা থাকে না
কথার নেশায় অদৃশ্য পকেটের ইশারা থাকে না
তখন একটা ফেলে রাখা নৌকোকে
খাবারের সাথে মিশিয়ে দিই
নিভৃত স্বাদের ভেতর বন্ধ জানালা হেসে ওঠে
শত শত গল্পের গাছেরা আরও নীল আরও
একটা দিনকে আয়ু বলে ডাকি
একটা রাতকে শ্বাস নিতে বলি জোরে
এ যাবত যত ছবি আছে চোখে
তাদের রেখে দিই পরিত্যক্ত সিনেমা হলে
বাতাসে ভেসে যায় জন্মের সুগন্ধ
জীবন গুণতে গুণতে সংখ্যা হয়ে যাই
জীবন বুঝতে বুঝতে প্রতিদিন
মৃতের স্বপ্ন হয়ে উঠি

ফটোগ্রাফ- মোনালী রায়

জয়শীলা গুহ বাগচী

জন্ম ও বেড়ে ওঠা- পশ্চিম বাংলার উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি শহরে। ছাত্র বয়েস থেকে লেখার শুরু। তবে শূন্য দশকে লিটল ম্যাগাজিনে আত্মপ্রকাশ। প্রকাশিত বই তিনটি। ‘দেবদারু অপেরা’, ‘থার্মোকট, ফুল্লরার কলের গান’। প্রকাশিতব্য কবিতার বই- ‘ফার্নের গন্ধ’।

Share