আজ বৃহস্পতিবার, ১৮ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩রা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
আজ বৃহস্পতিবার, ১৮ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩রা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ক্যান্সেলগিরির মোচ্ছব

।। তাহমিদাল জামি ।।

সামাজিক মাধ্যমে সংঘবদ্ধ জটলা পাকিয়ে গণগিরি ফলানো এবং কোম্পানিগুলোকে ‘জবাবদিহি’ দেখানোর জন্য তদবির করাটাই বুঝি এইকালে গণতন্ত্র ফলানোর চূড়ান্ত পরাকাষ্ঠা। অথচ আদতে যার ক্ষমতা এসবের ফলে বলবৎ হয় সে হল পুঁজি। এখন আর রাজা নয়, পুঁজিই কল্লা কাটে। আর সেকালে যেমন মৃত্যুকে নিয়ন্ত্রণ করার আপাত ক্ষমতা প্রদর্শন করার দরুন সার্বভৌমকে আরও মহাশক্তিশালী মনে হতো, শেষ মুহূর্তে সাজা দেওয়ার বা ক্ষমা করে দেওয়ার আদেশ দিয়ে যেভাবে সার্বভৌম ক্ষমতার পরাকাষ্ঠা প্রকটিত হতো, তেমনি একালে কোন প্রতিষ্ঠানের কর্মীকে চাকরিচ্যুত করার জন্য তাদের বসের কাছে তদবির করার মধ্য দিয়েই বসের ক্ষমতা আরও বদ্ধমূল হয়। 
এই খারিজি সংস্কৃতির দায় বামপন্থীদের বেশি দেওয়া হলেও আদতে দুই তরফই নানা ইস্যুতে গণহারে খেপে ওঠার চর্চা করে বেড়ায়। একদিকে বামেরা যেমন বেহাট (নো প্লাটফরমিং) করার আমল করে, তার বিপরীতে ডানেরাও লিবারাল আর্টস শিক্ষাক্রম বাতিলের এবং বামপন্থী শিক্ষকদের উপর নজর রাখার নানা পাঁয়তারা করে। এই খেলায় না এরা জেতে না ওরা। জেতে কেবল সেই ক্ষমতাসীনেরা যাদের কাছে গিয়ে সবাই এইসকল ভয়ভীতিহুমকিদাবির বাস্তবায়নের জন্য তদবির করে। 

খারিজের সংস্কৃতি: কিছু বিবেচনা

ক্যান্সেল কালচার বা খারিজি সংস্কৃতি ডিজিটাল জমানার এক নতুন সাংস্কৃতিক রকম বা আকরণ। ক্যান্সেল কালচার ধারণাটির উদয় ঘটে ২০১৬-২০১৭-র দিকে সামাজিক মাধ্যমে। তারপর যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে ডিজিটাল মাধ্যমে মিটু আন্দোলন শুরু হলে খারিজের সংস্কৃতি ধারণাটি দ্রুত চালু হয়ে যায়। 

ক্যান্সেল বা খারিজ করার ধারণা মূলত ডিজিটাল জমানায় কোন ব্যক্তি বা সংঘকে বয়কট করার একটা ধরন। এই সংস্কৃতি চর্চা করতে যেসকল উপাদান লাগে সেগুলোর বেশিরভাগই আগাম হাজির ছিল, অর্থাৎ ইন্টারনেটের উদয়ের পর নানা সময়ে চালু হয়েছিল। যেমন ডক্সিং (কারো গোপন ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করে দেয়া), ভাইরালিটি (কোন কনটেন্ট হুট করে বড় সংখ্যক মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া), স্ক্রিনশট বা নানা ধরনের ডিজিটাল ট্রেইস/চিহ্ন জমা করে রাখা ও উপযুক্ত সময়ে বিব্রতকর তথ্য হিসাবে তা ফাঁস করে দেওয়া, হ্যাশট্যাগ ইত্যাদির দ্বারা দ্রুত সমস্বরে কোন ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে জনমত সংগঠিত করা, ইত্যাদি। এই সবকিছুর সমন্বয়ের ফলে ডিজিটাল পরিসরের খারিজি সংস্কৃতি চালু হতে পেরেছে। 

তো এই খারিজি সংস্কৃতি কখনোই অবিমিশ্র গ্রহণযোগ্যতা পায় নাই, বরং এ নিয়ে নানা রকমের প্রতিক্রিয়া প্রথম থেকেই দেখা গিয়েছিল। কোনও বিশেষ দোষে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা সংঘকে খারিজ করার চল বাড়ার সাথে সাথেই এই বিশেষ শাস্তিপ্রকরণ সম্পর্কে প্রশ্ন, দ্বিধা, সমালোচনা ও নিন্দাও উত্থাপিত হতে থাকে। ফলে খারিজি সংস্কৃতির তাৎপর্য নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে। এখানে আমরা তেমনই একটি বিচারমূলক লেখা তর্জমা করলাম, যার লেখক হলেন আশলি ফ্রওলি। 

ফ্রওলি সমাজতাত্ত্বিক ও শিক্ষক। তাঁর এই লেখায় বর্ণবাদ, ইসলামোফোবিয়া ও পারিবারিক নির্যাতন ইত্যাদির দায়ে অভিযুক্ত কিছু ব্যক্তি কিভাবে সামাজিক মাধ্যমে হেনস্থার শিকার হলেন, এবং ক্রমশ সেই গণহেনস্থা কিভাবে তাঁদের চাকরি খাওয়ার গণদাবিতে পরিণত হল, কিভাবে তাঁদের বেঁচে থাকাই মুশকিল হয়ে গেল – তাই খোলাখুলি বিশ্লেষণ করেছেন ফ্রওলি। 

মিশেল ফুকোর দণ্ডতত্ত্বের ইতিহাসের নজির টেনে ফ্রওলি দেখাতে চেয়েছেন যে সেকালে যেমন সার্বভৌম ক্ষমতা সর্বময় মৃত্যুকে শাস্তির প্রধান ধরন হিসাবে উদযাপন করত এবং তার দ্বারা ক্ষমতার প্রতি জনগণের মান্যতা নিশ্চিত করত, একালের খারিজি সংস্কৃতি তেমনি নিওলিবারাল শ্রমবাজারে মানুষের অনিশ্চিত জীবিকা ও সামাজিক উপস্থিতিকে ধ্বংস করার মধ্য দিয়ে একধরনের গণক্ষমতার বিভ্রম তৈরি করে। ফলে এই খারিজি সংস্কৃতি শেষটায় পুঁজির একচ্ছত্রবাদই কায়েম করে। স্কট এডামস, উইলিয়াম স্যান্ডার্স বা ক্যারলিন ফ্ল্যাক — এই তিনজনের কাহিনী নিয়ে ফ্রওলি আলোচনা করেছেন। বলাবাহুল্য, এই তিনের কারোই সাফাই গাওয়া ফ্রওলির উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু খারিজির মচ্ছব কিভাবে মানুষকে অধিকারহীন বলির পাঁঠায় পর্যবসিত করে এবং একধরনের রিচুয়াল হিংসার মধ্য দিয়ে সমাজের ভেতরের দ্বন্দ্বের একধরনের নিরসন ঘটে, যা পুঁজিকেই জয়যুক্ত করে, এই বৃহৎ প্রেক্ষিত পাওয়া যায় ফ্রওলির আলোচনায়। 

ডিজিটাল জমানার আগেও একঘরে করে দেওয়া, কারো হাঁড়ির খবর ফাঁস করে দেওয়া, সমাজে কারো নামে রটনা বা কুৎসা বা রিরি পড়ে যাওয়া, ইত্যাদি ব্যাপার ছিল। তবে ডিজিটাল জমানায় আমাদের সেল্ফ বা আত্মের যে নির্মাণ, তা এমন যে ডিজিটাল প্রযুক্তির দ্বারা সংবাহিত সামাজিক নানা মাধ্যম ও বৃত্তে নিজেদের উপস্থিত ও উপস্থাপন করার দ্বারাই অন্তত হোয়াইট কলার শ্রমজীবীদের বিপুল অংশ এমপ্লয়েবল হয়ে থাকে, অর্থাৎ কেবল সামাজিক জীবনের জন্য নয়, খোদ খেয়েপরে বেঁচে থাকার জন্যও একালে আমাদের ডিজিটাল আত্মাকে ধোপদুরস্ত হাজির করে রাখা লাগে৷ ফলে সেই ডিজিটাল আত্মাটি একঘরে বা খারিজ হয়ে গেলে আমাদের কম্ম কাবার ও জান সাবাড় হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। 

এই ডিজিটাল উত্তরাধুনিক পরিস্থিতিটি বেশ নতুন। শরৎচন্দ্রের গফুর যখন গ্রামের সমাজে ক্যান্সেল হয়ে গিয়েছিলেন তখন শহরের অনামা ভিড়ে তিনি সকন্যাক ঠাঁই খোঁজার সিদ্ধান্ত নেন। একালে যে একবার ক্যান্সেল হয় সে প্রায়ই একেবারে চিরকালের বিশ্বজনীন দাগি হয়ে যায়, তার প্রায়শ্চিত্ত ও সমাজে মর্যাদা নিয়ে ফের অংশ নেওয়ার খুব সোজাসরল কোন উপায় আছে বলে মনে হয় না, যদি না সে মহাপ্রভাবশালী কেউ হয় যার দাগ বা কলংক নিয়ে থোড়াই কেয়ার করা লাগে।  

ফ্রওলির এই আলোচনায় কার্নিভাল বা মচ্ছব একটা গুরুত্বপূর্ণ ক্যাটেগরি। মিখাইল বাখতিনের বরাতে মধ্যকালীন ইউরোপের কার্নিভাল ধারণাটা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এর সাথে তুল্য বাংলার মহোৎসব বা মচ্ছব/মোচ্ছব। বাংলায় বৈষ্ণব সমাজে এই মচ্ছব ধারণার বিশেষ প্রসার। মচ্ছব বলতে কোনও বিশেষ লীলা বা স্মৃতি বা স্থানে জনসমাগম ও নানাবিধ উদযাপনকে বোঝায়। এই সকল অনুষ্ঠানে নানাবিধ ক্রীড়াময় বা লুডিক আচরণের সমাবেশ ঘটে। খোদ শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতে মহোৎসবের বিচিত্র লীলাময় ও ক্রীড়াময় দিকের বিবরণ আছে। ফলে ইউরোপের কার্নিভাল ধারণার সাথে মচ্ছবের তুল্যতা বিবেচ্য। 

তো মচ্ছবে রিচুয়াল আকারে যে সর্বজনের মিলনমেলা, যে আপাত-সাম্য ও ক্রীড়াময়তার আমল হয়, তাকে নৃতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করা জরুরি। ফ্রওলি, ভিক্টর টার্নারের আলোচনার বরাত টেনে বলেন যে কার্নিভাল বা মচ্ছব একধরনের লিমিনালিটি বা হদ্দমুদ্দবাদের আমল। অর্থাৎ সমাজের বিদ্যমান ক্রমবিন্যাস, অসাম্য ও বিধিবাধ্যতা এইসকল কার্নিভাল/ মচ্ছবে সাময়িক রহিত বা মুলতবি থাকে। 

এই সাময়িক মুলতবির দ্বারাই সমাজ তার ভেতরে জমে ওঠা পেরেশানি, গ্লানি, দ্বন্দ্ব, টানাপোড়েনের নিরসন করে এবং উৎসব শেষে সকলে আবার নিজ নিজ পংক্তিতে ফিরে সমাজবিহিত দায়িত্ব পালন করতে থাকে। ফলে কেউ কেউ বলেন এসকল রিচুয়ালময় বৈপ্লবিকতা বা সাময়িক ওলোটপালট সমাজের প্রকৃত বা স্থায়ী রূপান্তর ঘটায় না, বরং একধরনের খণ্ডিত, প্রতীকী উদযাপনের মধ্য দিয়ে অসাম্যসংকুল সমাজকেই টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করে। 

রিচুয়াল সাম্য এবং “প্রকৃত” সাম্যের তুলনা করতে গিয়ে আমরা ক্লাসিকাল খ্রিস্টীয় বা ইসলামি নানা রিচুয়াল কিংবা মধ্যকালীন উত্তর ভারতের নানা ভক্তি আন্দোলনের রিচুয়ালকে বিচার করে কিংবা মার্কসকথিত রাজনৈতিক সমাজ ও সিভিল সমাজের তুলনা করে হয়তো এই প্রশ্নের যাথার্থ্য বিচার করতে পারি। আপাতত লালন ফকিরের একটি পদ উদ্ধৃত করি:

একবার জগন্নাথে দেখ রে যেয়ে
জাত কেমনে রাখো বাঁচিয়ে।
চণ্ডালে আনিলে অন্ন,
ব্রাহ্মণে তাই খায় চেয়ে।
জোলা ছিল কবীর দাস
তার তোড়ানি বার মাস
উঠছে উথলিয়ে।
সেই তোড়ানি খায় যে ধনী
সেই আশে দরশন পেয়ে।
ধন্য প্রভু জগন্নাথ
চায় না রে সে জাত-অজাত
ভক্তের অধীন সে।
জাত বিচারী দুরাচারী
যায় তারা সব দূর হয়ে।
জাত না গেলে পাইনে হরি
কী ছার জাতের গৌরব করি
ছুঁসনে বলিয়ে।
লালন বলে, জাত হাতে পেলে
পুড়াতাম আগুন দিয়ে।।

কিন্তু আপাতত এ আলোচনায় কেবল মচ্ছব ও বিচারের প্রশ্নে সীমাবদ্ধ থাকি।

মচ্ছবের আলোচনার ধারাবাহিকতায় ফ্রওলি হালজমানার আন্দোলনের সংস্কৃতি নিয়ে সওয়াল তুলেছেন। লেখান্তরে তিনি বলেছেন যে একালে প্রায়ই আন্দোলন বা প্রতিবাদ সমাবেশগুলো কার্নিভাল বা মচ্ছব আকারে হাজির হয়, যেখানে নানা ধরনের মানুষের রং, রঙ্গ, ভাবভঙ্গি মিলিয়ে এক উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে। নানা জাতপাত-মতপথ ও কৃৎকলার মানুষ জমায়েত হয়ে নিজ নিজ অভিব্যক্তি হাজির করে, হোক তা গীতবাদ্য পথনাটক বা অন্য কিছু। এই ক্রীড়াময়, লীলাময় মচ্ছব আসলেই কোন রাজনৈতিক রূপান্তরের শর্ত তৈরি করতে পারে কিনা, নাকি প্রতিবাদের মচ্ছবই সার, সেই জরুরি প্রশ্ন তুলেছেন ফ্রওলি। জটিল প্রশ্ন। এককথায় উত্তর দেওয়া ভার। 

এই প্রশ্নেরই জের ধরে ফ্রওলি একালের ক্যান্সেল কালচার কীভাবে মানুষের অপরাধের প্রতিকার বা দণ্ডবিধানকে মচ্ছবে পরিণত করে, তার আলোচনা পেশ করেছেন। 

মানবজাতির ইতিহাসে বিচার, হাকিমি, আদালত ইত্যাদিকে আমরা ভাবগম্ভীর, সুনিয়ন্ত্রিত, লেখাজোখাভিত্তিক ব্যাপার আকারে সাধারণত বুঝে থাকি। হাম্মুরাবির আইন দুনিয়ার গুরুত্বপূর্ণ পুরাতন লেখাজোখার মধ্যে অন্যতম। হাকিম বা বিচারিক ভূমিকায় গদিনশীন ব্যক্তিরা সাধারণত সমাজে সবচেয়ে গম্ভীর, সাবলাইম বা জালালি ভাবাবহে আবিষ্ট থাকেন। কিন্তু এর বিপরীতে আরেকটি ধারণাও যুগে-যুগে সমাজে হাজির ছিল, আর তা হল গণবিচারের ধারণা (জনতার আদালত, গণরায়, গণধোলাই/লিঞ্চিং, ইত্যাদি), যেখানে গুরুগম্ভীর ও মর্যাদাপূর্ণ ভাবের বদলে মামুলি-সহজ আকারে সমবেত হিংসা সরাসরি, প্রত্যক্ষে উপস্থিত হতে পারে। কিংবা ডুরখেইমিয় সমাজতত্ত্ব অনুযায়ী আমরা এমনও ভাবতে পারি যে গণবিচারের মর্যাদা ও পবিত্রতাই হাকিমি আদালতের মর্যাদা ও পবিত্রতার আদি উৎস। যাই হোক, এই যে দুই কিসিমের বিচারিকতা, এগুলো যে বিচ্ছিন্ন ছিল তাও নয়। ফুকোর বরাতে ফ্রওলি যে আলাপ করেছেন তাতে দেখা যায় যে সার্বভৌম ক্ষমতা ও জনতার সংশ্লেষে প্রাগাধুনিক বিচারে কিভাবে যুগপৎ জালালি ও মামুলি সহিংসতার সমাবেশ ঘটত। 

আমরা একটু অন্য একটা খেই টানি: রনে জিরার নামক ফরাশি চিন্তাবিদ স্কেপগোট মেকানিজম বা বলির-পাঁঠাতন্ত্র নামে যে প্রণালীর কথা বলেন, তা এ আলোচনায় স্মরণীয়। জিরারের মতে সমাজ যখন তুরীয় দ্বান্দ্বিক মুহূর্তে পৌছায়, তখন সমাজ কোন এক অধমকে বলির পাঁঠা বানানোর মধ্য দিয়ে স্থিতাবস্থা পুনরায় কায়েম করে (যথা গ্রিক ফার্মাকোস বা রোমের হোমো সাকের)। কুরবানি বা সঙ্গতিকরণের ধারণা নিয়ে আমি অন্যত্র আলোচনা করেছি। যাই হোক, জিরার বলেন যে একালের আধুনিক লিবারাল বিচারব্যবস্থা সেকালের বলির-পাঁঠাতন্ত্রকে অনেকখানি প্রতিস্থাপিত করেছে। কিন্তু প্রশ্ন আসে যে একালের ডিজিটাল গণবিচার কি আবার কোন প্রকার বলির-পাঁঠাতন্ত্রকে জাগ্রত করার সম্ভাবনা তৈরি করে কিনা। 

ফ্রওলির কথার জের একটু সামনে টেনে আমরা যা জল্পনা আকারে প্রস্তাব করতে পারি তা হল এই যে আন্দোলন বা গণবিচারের মচ্ছবগুলো অনেকটা বিষুধ (বিষ+ওষুধ) বা গ্রিক ভাষায় ফার্মাকোনের ন্যায় দ্ব্যর্থক ব্যাপার। তা সাম্য বা ন্যায় প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ সূচনা হতে পারে, আবার বিপরীতে অসাম্য ও অন্যায়কে আরও জোরেশোরে কায়েম করার বেলায়ও কাজে আসতে পারে। ফ্রওলি “ফার্মাকোন” শব্দটি আমল না করলেও এহেন উল্টোফলকে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণাম (আনইন্টেন্ডেড কনসিকোয়েন্সেস) বলে অভিহিত করেছেন। আমরা একে দ্বান্দ্বিক বা ডায়ালেক্টিকালও বলতে পারতাম, যদি তাতে কারো বুঝতে সুবিধা হতো।

ফ্রওলির আলাপকে অনেকে গণের কর্তাসত্তা বা গণক্ষমতার প্রয়োগের নাকচি বা নিকুচি বলে মনে করতে পারেন। তবে ব্যাপার এত সরল নয়। গণআন্দোলন নিয়ে যাঁরা ভাবনাচিন্তা করেছেন তাঁরাও এইসব প্রশ্ন নিয়ে অতীতে ভেবেছেন তো! যেমন রুশ নেতা ভ্লাদিমির লেনিন স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন বনাম সুসংগঠিত রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে যে তফাৎ টেনেছেন সেটা এক্ষেত্রে কারো কারো স্মরণে আসতে পারে। অবশ্যই একালে স্বতঃস্ফূর্ত আর সংগঠিতের মধ্যে মধ্যস্থতা বা ভেদরেখা টানা আগের মতো সোজাসাপটা নয়। প্রকৃতপক্ষে পাশ্চাত্য বা যেকোন দেশে গণতন্ত্র নামক রাজনৈতিক ধারণার বাস্তব প্রায়োগিকতা বিবেচনা করতে হলেই এসকল প্রশ্নকে আমলে না নিয়ে পারা যায় না। ডিজিটাল জমানা গণের নতুন ধরনের হাজিরা বা সংঘটন (সংগঠন বলছি না) সম্ভব করছে বলে এসকল প্রশ্নেরও নতুন নাড়াচাড়া করা দরকারি হয়েছে। ক্যান দ্য সাবল্টার্ন জাজ? 

ফ্রওলির আলোচনায় একটা ব্যাপার স্পষ্ট যে মচ্ছবি বিচার বা মচ্ছবি রিচুয়ালের দ্বারা গণক্ষমতার বি/সংগঠন কেবল একালের ব্যাপার নয় বরং তা অতীতেও ছিল। বলাই বাহুল্য। তাকফির, ব্লাসফেমি থেকে শুরু করে পুরাতন সিয়াসাত বা দণ্ডতত্ত্ব ঘেঁটে নানা রকম নজির বের করাই যায়৷ কিন্তু আপাতত আমি ঐতিহাসিক সমাজতত্ত্বে যাচ্ছি না। আপাতত আমার উদ্দেশ্য হল বর্তমান মুহূর্তকে বিবেচনায় নেওয়া। 

__________

ক্যান্সেলগিরির মচ্ছব

আশলি ফ্রওলি
(অনুবাদ- তাহমিদাল জামি)

কিছুদিন ধরে মনে হচ্ছিল তথাকথিত ‘ক্যান্সেল কালচার’ বা ‘খারিজি সংস্কৃতি’তে একটু ভাটা পড়েছে। ডানপন্থীরা এই কথাটা বেশ বাগিয়ে ধরেছিল: অনলাইনে মানুষ তাদের আক্রমণ করলেই তারা এই কথাটা প্রয়োগ করত। এন্ড্রু টেইটের মতো আহাম্মক চরিত্র এই খারিজি সংস্কৃতিকে নিজের মর্যাদার তিলক হিসাবে বেশ বরণ করে নিয়েছিলেন। খারিজ হলে যে বদনাম হয়, সেই বদনাম তিনি স্বেচ্ছায় টোকায়ে বেড়াচ্ছিলেন। মানুষও বুঝে ফেলেছিল (তাদের) এই চালাকি। কিন্তু সম্প্রতি ডিলবার্ট ব্যঙ্গচিত্র লেখক স্কট এডামসের বর্ণবাদ-কাণ্ডে যে প্রতিক্রিয়া দেখা গেল, তা বছরকে-বছর দেখে আসা যথারীতি ধরনেই ঘটল। যেই না জঘন্য শব্দগুলা বললেন অমনি ভাষ্যকারেরা হুমড়ি খেয়ে পড়লেন তাঁর বকুনির নিকুচি করতে (যার মধ্যে এমন কথাও ছিল যে “শাদা মানুষে”র উচিত “কাল মানুষের থেকে মানে-মানে দূরে থাকা”।) দেখতে না দেখতে তাঁর কাজ যাঁরা ছাপাতেন তাঁরা লাইন ধরে ঘোষণা দিলেন যে তাঁরা তাঁকে বাদ দিয়ে দিয়েছেন। বাদ দেওয়াটাই তো দস্তুর।

নানাপ্রকারে বছরের পর বছর মোটামুটি এভাবেই কমবেশি প্রকাশ্যে ব্যাপারগুলি ঘটে চলেছে। ২০০৮ সালে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লেখক উইলিয়াম স্যান্ডার্স যখন এক সাহিত্যযশোপ্রার্থীর লেখা নামঞ্জুর করে খুব কটূভাষায় জবাব দিয়েছিলেন, ওই সাহিত্যযশোপ্রার্থী লেখক সেই জবাবটা পাবলিক করে দিলেন। নামঞ্জুর লেখাটির একটা চরিত্র নিয়ে স্যান্ডার্সের একটা লাইন ধরে সেটাকে সেই চরিত্রের গোটা সামাজিক পরিচয়গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বলা হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হল, এবং অচিরেই একটা রগরগে গালাগালি যুদ্ধ শুরু হল। প্রথম দিকের খারিজি সংস্কৃতি যত না পূর্বপ্রচলিত নৈতিক নিয়ম মানানোর খবরদারির ব্যাপার ছিল, তার চেয়ে বেশি ছিল নতুন নৈতিক নিয়ম কায়েম করার ব্যাপার। বিশেষ বিশেষ অন্যায়ের ঘটনাকে লক্ষ্যবস্তু করে একেকটি শিক্ষণীয় মুহূর্ত তৈরি করা হতো, অচিরেই নতুন নিয়মকানুন স্বীকৃত হতো, আর হতবিহ্বল আসামীরা অনুতপ্ত মনে নতুন আচরণবিধি কবুল করে নিত, যেমন ‘আমরা অমুক নিয়ে ঠাট্টা করি না, ‘আমি অমুক বলতে তমুক বোঝাই নি, কিন্তু কেউ তাতে তমুক বুঝতে পারে বটে এবং সেটা বেশ বিপজ্জনক বটে’। অতঃপর তারা জনতার নেকনজরে শামিল হয়ে আগে বাড়ার আশা করত। কিন্তু উইল শেটারলি যেমনটা বলেছেন, স্যান্ডার্স তত সহজ পাত্র ছিলেন না। তিনি ছিলেন স্বস্বীকৃত ‘রেডবোন হিলিবিলি’, যিনি বিনা যুদ্ধে তাঁর-চোখে এইসব ভদ্রলোকি আদব মেনে নিতে নারাজ ছিলেন। বিপরীতে তাঁর উপর আক্রমণকারীরাও নৈতিকতার উচ্চাসনে বসে, মুখেমুখে পালটা জবাব দিচ্ছিল। এই জবাবগুলি কেমন হয় তা টবিয়াস বাকেলের কথায় নিম্নরূপ:

“… সংস্কার বা বর্ণবাদী ধ্যানধারণা বা কাজের জন্য কাউকে তলব করার বেলায় লোকে যেসকল কথা পর্যায়ক্রমে বলে থাকে, এই পর্যায়গুলো অনেকটা কোন বিপর্যয়কর ক্ষতির (বা মৃত্যুর সম্ভাবনার) মুখোমুখি হলে মানুষ যা যা বলে, কুবলার-রস মডেল অনুসারে, সেই রকম: 

অস্বীকার: যথা: “আমার কোন অসুবিধা হচ্ছে না।” “না, এমনটা তো হওয়ার কথা নয়।”
ক্রোধ: যথা: “আমার সাথেই কেন হল এমনটা? এটা তো অন্যায়!” “না না না! তুমি এটা মেনে নিচ্ছ কেমন করে?”
দর-কষাকষি: যথা: “অন্তত আমার বাচ্চাদের বিএ পাশ করা দেখে যেতে পাওয়ার সময়টুকু বাঁচতে দিন” “যা বলবেন তাই করব, আরেকটু টেনে বাড়ানো যায় না? স্রেফ আর কয়টা বছর”। 
বিষাদ: যথা: “আমার কিছুই ভাল লাগছে না, আর কিছু করে কি হবে?” “মরেই তো যাব… কী লাভ?”
মেনে নেওয়া: যথা: “সব ঠিক হয়ে যাবে”; “ঠেকাতে তো আর পারব না, ফলে প্রস্তুত হওয়াই বরং ভাল।”

মানুষ মৃত্যুর সাথে মোকাবেলা করতে গিয়ে যা বলে (এমনকি “মরেই তো যাব” কথাটা) বাকেল যে তারই থেকে রূপক টেনে ব্যাপারটা বোঝালেন এটা একদম জুৎসই, কারণ এখানেও যা ঘটছে তাও একপ্রকার মৃত্যুর শামিল, আর কখনো কখনো তো আক্ষরিকভাবেই মৃত্যুতেই এসব কাণ্ডকারখানা শেষ হয়।  

কয়েক বছর আগে যখন টিভি উপস্থাপক ক্যারলিন ফ্ল্যাক নিজ সঙ্গীর উপর হামলার অভিযোগে পর্যুদস্ত হয়ে শেষে মর্মান্তিকভাবে নিজের জান নিজেই শেষ করে দিয়েছিলেন, আমি লিখেছিলাম সেই ঘটনা নিয়ে। অনলাইন হেনস্থা তো চলছিলই, সেইসাথে তাঁর টিভির কাজগুলো থেকে তাঁকে ছাঁটাই করার আহ্বান দৃশ্যত সফল হওয়ার ফলে তাঁর মনে হয়েছিল তাঁর ক্যারিয়ার খতম হয়ে গেছে। তারপরই তিনি এই পথ বেছে নেন। খারিজি সংস্কৃতির যেসব উদাহরণ সচরাচর মনে আসে, সেগুলো সাধারণত কারো কোন বক্তব্যে গণপ্রতিক্রিয়ার ঘটনা। ফ্ল্যাকের বেলায় গণপ্রতিক্রিয়া তাঁর বক্তব্যের কারণে নয়, বরং তাঁর কথিত কাজের কারণে। কিন্তু সেই কাজ নিয়ে রাষ্ট্রের তদন্ত এবং দোষী প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি সাজার ব্যবস্থা হলেই যেন চলছিল না। সবকিছুর আগে তাঁকে দিয়ে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করা লাগবে! ফ্ল্যাকের গ্রেপ্তারি একটা ‘শিক্ষণীয় মুহূর্ত’ হওয়া লাগবে – যেন শুধু তাঁর শিক্ষা হয় না, বরং যেন একইসাথে আমাদের সবার শিক্ষা হয় – যেন তাঁকে ‘লাভ আইল্যান্ড’ অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতে দেখলেই জনতা বিমূঢ় বোধ করে।         

সে সময় আমি মন্তব্য করেছিলাম যে ফ্ল্যাকের প্রতি আচরণটা ‘মধ্যযুগীয়’ হয়েছে। পুঁজিবাদের অধীনে অধিকাংশ মানুষের হয় নিজে চাকরি করে রোজগার করতে হয় (নইলে যারা রোজগার করে তাদের উপর নির্ভর করতে হয়)। ফলে কারো জীবিকা উপার্জনের সক্ষমতাকে খারিজ করার জন্য দলেবলে চেষ্টা করাটা মূলত ‘প্রকাশ্যে ফাঁসি’ দেওয়ারই আধুনিক নামান্তর। সম্প্রতি যখন টুইটারে আমি কথাটা তুললাম, তখন মন্তব্যে একজন বললেন যে যেহেতু খুব কম লোকই চিরকালের জন্য ক্যান্সেল/খারিজ হয়েছে, ফলে খারিজি সংস্কৃতি বলে আদৌ কিছু আছে কিনা সন্দেহ। তাঁর এই কথায় বোঝা গেল যে ভেতরে-ভেতরে উদ্দেশ্যটা হল পাপী বান্দাদের সমাজজীবন থেকে চিরতরে মুছে ফেলা — একেবারে জন্মের মতো তাদের গায়েব করে দেওয়া।

মানুষ হওয়া বা মানবভাব বলতে কী বোঝায় তা নিয়ে বোধহয় আমরা প্রাগাধুনিক ধ্যানধারণায় ফিরে যাচ্ছি। মানুষ যে নানাধরনের স্বাধীনতা আমল করতে সক্ষম এই কথাতেই লোকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে, ফলে নানা “বদ প্রভাব” জীবন থেকে বোধহয় উধাও হয়ে গেছে। আমজনতার স্বভাব দাঁড়িয়েছে অনেকটা শিশুর মতো। কোন অন্যায়ের চিহ্নমাত্র আমাদের সামনে আসতে পারবে না, এলেই যেন আমরা সেটা নিজ জীবনে ঘটিয়ে ফেলব!

নতুন কিছু বলছি না, কিন্তু এই “মধ্যযুগীয়” তুলনা নিয়ে আরেকখান কথা আছে। মধ্য ও আদি-আধুনিক জমানার শাস্তির আকরণের সাথে আজকের খারিজি সংস্কৃতির সঙ্গতিগুলো তাক লাগার মতো। সবাই মিলে অভিযুক্তের নামে শাপশাপান্ত-নিকুচির হাট বসানো, লোকসমক্ষে অনুতাপের আনুষ্ঠানিকতা, আবার একইসঙ্গে এসব কাণ্ডকারখানার দরুন “ছিঁচকে চোরে”র জনমনে নায়ক হয়ে ওঠার অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণাম – এগুলো বেশ বিবেচনা করে দেখার জিনিশ। 

প্রাগাধুনিক নির্যাতন ও জানকবজের প্রকাশ্য আচার-অনুষ্ঠান নিয়ে যেসব গবেষণা আছে, বিশেষ করে মিশেল ফুকো যেগুলো তাঁর ‘শৃঙ্খলা ও শাস্তি’ বইয়ে উল্লেখ করেছেন, সেগুলো পাঠ করলে মিল দেখে চমকে উঠতে হয়। সেকালে কেউ যদি সার্বভৌমের ইচ্ছায় বাগড়া দেওয়ার দুঃসাহস করত তাইলে সেইসব ঐতিহাসিক দণ্ডানুষ্ঠানে মহাসমারোহে মচ্ছব বসিয়ে তাকে পিটিয়ে চুরেপিষে আটখানা করা হত।

এহেন শাস্তিকাণ্ডের অকুস্থলে যে সাক্ষীস্বরূপ জনতার জমায়েত থাকত, তারা সেখানে স্রেফ ঘটনাক্রমে হাজির থাকত তা নয়, বরং তারা হতো ঐ কাণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ অংশভাক। হইহই, ছিছিক্কার আর ঘটনার স্মৃতিচিহ্ন হাতানোর জন্য হুড়োহুড়ি করার মধ্য দিয়ে শাস্তিকাণ্ডে এক জরুরি ভূমিকা পালন করত এই জনতা। সার্বভৌমের ক্ষমতার প্রদর্শনী জানান দেওয়ার বেলায় তাদের হাজিরা ছিল একান্ত দরকারি। কারণ যে ব্যক্তি আইন লংঘন করেছে সে কেবল সার্বভৌমের নাফরমানি করে নি, যারা সেই আইন মেনে চলে তাদেরও অপমান করেছে। এভাবে প্রকাশ্য শাস্তি একইসাথে জনগণ ও সার্বভৌম উভয়ের বিরুদ্ধে অপমানের প্রতিশোধ হিসাবে কাজ করত। যারা মানত তারা তো এর আনন্দভাগী হতোই, অন্যরাও আইন মেনে চলার হুশিয়ারি পেত। 

মনে রাখা জরুরি যে এসব শাস্তিকাণ্ড ঠিক গুরুগম্ভীর আচার-অনুষ্ঠান ছিল না। প্রায়ই সেগুলো হয়ে দাঁড়াত বেহদ্দ মচ্ছব। মচ্ছব হল সেই উল্টে যাওয়া দুনিয়া যেখানে সমাজের সাধারণ নিয়মকানুন ও পাত্রপাত্রীদের ভূমিকা থাকে মুলতবি। বড়লোকে ছোট হয়, ছোটলোকে বড়। আসলেই, একদিকে হাসির হররা ও বেহুদাপনা, আরেকদিকে মৃত্যুর ভয়াল-গম্ভীর চেহারা এই দুইয়ের ভেতর প্রকাশ্য মৃত্যুদণ্ডের অনুষ্ঠানগুলো বেমালুম ঘুরপাক খেত। 

আজকালকার খারিজি সংস্কৃতিতে আমরা ঠিক এমনই মচ্ছব দেখতে পাই, যখন দেখি একদিকে অভিযোগগুলো বলা হচ্ছে খুবই গুরুতর, অন্যদিকে যে লকলকে-উৎসাহে অপরাধীর পিছু ধাওয়া করা হয়, মামলাটা নিয়ে যেভাবে মিমামিমি চলে, জনতার যে ক্ষমতা দৃশ্যমান হয়, এবং (কখনও কখনও — খুলে বলছি কথাটা এক্ষুনি) অপরাধীর প্রকাশ্যে ক্ষমাভিক্ষা ও আনুষ্ঠানিক অনুতাপ প্রদর্শনের যে বহুল-চর্চিত আমল দেখা যায়! অথচ আজ আর কোন গদিনশীন রাজা এইসকল কাণ্ডের কর্তৃত্ব করছেন না। জনতা তাইলে কার ক্ষমতা বলবৎ করছে? ক্যারোলিন ফ্ল্যাকের মরণের পর ভাষ্যকারেরা সমস্বরে ট্যাবলয়েড পত্রিকা ও সামাজিক মাধ্যমের হেনস্থাকেই দায়ী করেছিলেন। সেসময় #BeKind বলে হ্যাশট্যাগ জনপ্রিয় হয়েছিল। অথচ তিনি যখন প্রথম গ্রেপ্তার হলেন সেই সময় জনতা কিন্তু কেবল দুয়ো দিয়ে, ছি-ছি করে ক্ষান্ত হয় নি। তারা রক্তের জন্য খেপে উঠেছিল। তখনকার জনপ্রিয় হ্যাশট্যাগ কিন্তু ছিল #SacktheFlack। অবশ্য এসব কথা এইবেলা আর মনে করিয়ে দেয়ার সাধ্য কার?

ফুকো লিখেছেন যে প্রকাশ্য মৃত্যুদণ্ড যখন প্রচলিত ছিল, সে জমানায় মৃত্যু যেন এমনিতেই সব আনাচে-কানাচে ঘাপটি মেরে থাকত। শাস্তি হিসাবে মৃত্যুর ব্যবহার সেই সর্বময় হাজির-নাজির মৃত্যুকে একটা অর্থপূর্ণ ভূমিকা দান করল। এই কথার সাথে চাইলে যুক্ত করে বলা যায় যে, এর ফলে যে জিনিসের উপর কারো হাত নাই তার উপর যেন নিয়ন্ত্রণ কায়েম হওয়ার একটা বোধ এসেছিল। আজকালকার চাকরিচ্যুতির ব্যাপারেও একই কথা খাটে। জীবিকার নাজুকতা আজকাল অনেকের জীবনে এক নিত্য সত্য। মধ্যযুগে যেমন আনাচে-কানাচে মৃত্যুর ছায়া ঘনিয়ে আসত, তেমনি এখন চাকরি হারানোর ভয়, বেকারত্বের ছায়া চারপাশে কেবলই ঘনিয়ে আসে। ফলে গণদাবির চাপে প্রকাশ্যে কাউকে চাকরিচ্যুত করতে পারাই যে এই জমানায় দণ্ডবাদিতার রূপ হিসাবে লোকের প্রিয় হয়ে উঠেছে তাতে তাজ্জবের কিছু নেই। এইকালের নড়বড়ে শ্রমবাজার থেকে এমনিতেই যেকোন সময় কারণে-অকারণে খারিজ হয়ে যাওয়ার, চাকরি-নট হয়ে যাওয়ার যে যুক্তিহীন বিপন্নতা সকলের সামনে হাজির, সেই পরিস্থিতিতে মানুষকে চাকরি খাওয়ানোর ভয় দেখিয়ে যেন এই নিত্য নাজুকতাকেই বেশ একটা অর্থপূর্ণ, উদ্দেশ্যবাদী ব্যাপার করে তোলা যায়। 

সামাজিক মাধ্যমে সংঘবদ্ধ জটলা পাকিয়ে গণগিরি ফলানো এবং কোম্পানিগুলোকে ‘জবাবদিহি’ দেখানোর জন্য তদবির করাটাই বুঝি এইকালে গণতন্ত্র ফলানোর চূড়ান্ত পরাকাষ্ঠা। অথচ আদতে যার ক্ষমতা এসবের ফলে বলবৎ হয় সে হল পুঁজি। এখন আর রাজা নয়, পুঁজিই কল্লা কাটে। আর সেকালে যেমন মৃত্যুকে নিয়ন্ত্রণ করার আপাত ক্ষমতা প্রদর্শন করার দরুন সার্বভৌমকে আরও মহাশক্তিশালী মনে হতো, শেষ মুহূর্তে সাজা দেওয়ার বা ক্ষমা করে দেওয়ার আদেশ দিয়ে যেভাবে সার্বভৌম ক্ষমতার পরাকাষ্ঠা প্রকটিত হতো, তেমনি একালে কোন প্রতিষ্ঠানের কর্মীকে চাকরিচ্যুত করার জন্য তাদের বসের কাছে তদবির করার মধ্য দিয়েই বসের ক্ষমতা আরও বদ্ধমূল হয়। 

এই খারিজি সংস্কৃতির দায় বামপন্থীদের বেশি দেওয়া হলেও আদতে দুই তরফই নানা ইস্যুতে গণহারে খেপে ওঠার চর্চা করে বেড়ায়। একদিকে বামেরা যেমন বেহাট (নো প্লাটফরমিং) করার আমল করে, তার বিপরীতে ডানেরাও লিবারাল আর্টস শিক্ষাক্রম বাতিলের এবং বামপন্থী শিক্ষকদের উপর নজর রাখার নানা পাঁয়তারা করে। এই খেলায় না এরা জেতে না ওরা। জেতে কেবল সেই ক্ষমতাসীনেরা যাদের কাছে গিয়ে সবাই এইসকল ভয়ভীতিহুমকিদাবির বাস্তবায়নের জন্য তদবির করে। 

মচ্ছব হিসাবে প্রকাশ্য শাস্তির অনুষ্ঠান আবার সমাজের প্রচ্ছন্ন মূল্যবোধ জানান দেওয়ার সুযোগও হাজির করে। সম্পদের মালিক কে হবে  আর সমাজ কিভাবে গড়া হবে এসকল প্রশ্ন নিয়ে দ্বন্দ্বমীমাংসা একদিকে যখন প্রায় লোপ পেয়েছে, ঠিক তখনই সমাজের নানা গোষ্ঠী আজ প্রতীকী নানা প্রশ্ন নিয়ে বিবাদ করছে, যথা: কার মূল্যবোধকে সমাজের বুনিয়াদি মূল্যবোধ হিসাবে স্বীকার করা হবে। ফলে দল বেঁধে ঘৃণা জানানোর প্রদর্শনী, কিংবা ক্ষমাভিক্ষার দ্বারা মৌলিক মূল্যবোধকে কবুল করে নেওয়া, কিংবা নিকৃষ্ট অপরাধটির বিবরণ বারবার আবৃত্তি করতে থাকা যতক্ষণ না পুঁজিরাজ কল্লাটি কাটেন – এই সবই খুব কাঙ্ক্ষিত কায়কারবার এইকালে। শাস্তির প্রকাশ্য আনুষ্ঠানিকতায়, দণ্ডিত এসে নিজ কৃতকর্ম স্বীকার করে অনুতাপ করবে এমনটাই আশা করা হয়, যাতে যে বিধিনিষেধ লংঘন করা হয়েছে সেগুলোর প্রতি মান্যতাদানের একটি প্রচ্ছন্ন স্বীকৃতি হিসাবে তার এই কথাগুলো কাজ করে। প্রথম দিকের খারিজি সংস্কৃতিতে একান্ত মামুলি অপরাধে দায়ী ব্যক্তিদের হাউমাউ ক্ষমাভিক্ষা ও সকলের কাছে করুণা প্রার্থনা করার শোচনীয় দৃশ্য বেশ দেখা যেত। সামাজিক মাধ্যমে এসে সেলাই করার যে একটি বিচিত্র গোষ্ঠীসংস্কৃতি রয়েছে, সেই গোষ্ঠীতে জনপ্রিয় এক ব্যক্তিকে আসন্ন ভারত সফর কেমন হবে তা নিয়ে মন্তব্য জিজ্ঞাসা করায় তিনি বলেছিলেন ব্যাপারটা “মঙ্গলগ্রহে যাওয়ার প্লেনে আসন পাওয়ার মতো ব্যাপার”। পরে সেই ব্যক্তি সামাজিক বৈচিত্র‍্য ও অন্তর্ভুক্তির মূল্যবোধ লংঘনের দায়ে অভিযুক্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন এবং মাফটাফ চেয়ে এই মূল্যবোধ কবুল করলেন। 

কিন্তু ঘটনা সবসময় এমন ঘটত না, এবং ক্রমেই আর এমন ঘটছে না। আর এখানেই প্রকাশ্য আচার হিসাবে শাস্তিকাণ্ডের মুশকিলটা নিহিত। সেকালেও লোকে কখনোকখনো প্রকাশ্যে অনুতপ্ত হতো, ভাল খ্রিস্টান হয়ে যেত আর নিজের ঘৃণ্য কৃতকর্মের প্রতি ধিক্কার জানাত। কিন্তু যার হারানোর কিছু নেই তাকে নিয়ন্ত্রণ করা খুব মুশকিল। মচ্ছব বসলে তাতে সমাজের মূল্যবোধের জানান দেওয়া হয়, কিন্তু তার ফলে এমন এক পরিসরও খুলে যায় যে সেই ফাঁকতালে অকথ্য কথাও কওয়া সম্ভব হয়, ওইটুকু সময়ের জন্য হলেও। প্রকাশ্য মৃত্যুদণ্ডের এই মচ্ছবরূপী সান্ধ্যদেশের পরিণাম ঠিক এমনই হতো। বরং লোকে অনেক সময় ঠিক এই অকথ্য কথা শুনতেই এখানে হাজির হতো। দণ্ডিত অবলীলায় রাজা, হাকিম এমনকি খোদার নামেও গালাগাল-অভিসম্পাত দিত। ভিক্টর টার্নার যেমন একদা লিখেছিলেন, “মাত্রাছাড়া অথবা সাময়িকভাবে অনুমোদিত অবৈধ আচরণের চেয়ে বেশি তৃপ্তি আর কিছুতে মেলে না।” ডিলবার্ট স্রষ্টা স্কট এডামসের টুইটারে আগে থেকেই এক মিলিয়নের মতো ফলোয়ার ছিল। তাঁর রসাতলে পতনের সময় তাঁর পোস্টের ভিউ হাজার-অযুত ছাড়িয়ে নিয়মিত এক মিলিয়নের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল। যারা ব্যাপারটা উদযাপন করছিল, যারা তাঁর প্রতি ঘৃণা জানাচ্ছিল, যারা তাঁর পক্ষ সমর্থন করছিল আর যারা নিছক কাহিনীর গতিপথ নজর করছিল সবাই মিলে তাঁর প্রোফাইল ছেঁকে ধরেছিল।

যারা ঘৃণা জানাতে আসে, খারিজি সংস্কৃতির এই মচ্ছব তাদের কাছে দুনিয়া উলটে ফেলা ব্যাপার। দুর্বল হঠাৎই সবলের মতো আচরণে সক্ষম হয়ে ওঠে, যেন তারাও লোকের জান কেড়ে নিতে পারে, নইলে নিদেনপক্ষে জীবিকা কেড়ে নিতে পারে। কিন্তু দণ্ডিতের জন্য এই মচ্ছব এক নীরব-নিখুঁত ধ্বংসলীলা, আর নইলে – নীৎশের ভাষায় — “এর ফলে বিচ্ছিন্নতাবোধ আরও তীব্র হয়, আর দানা বাঁধে প্রতিরোধের শক্তি।” ফলে প্রকাশ্য শাস্তিকাণ্ডের এক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণাম হল তা এমন এক পরিসরের অর্গল খুলে দেয় যা ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে অকথ্য কথা বলার কেবল সুযোগই দেয় না বরং বলতে তাদের প্ররোচিত করে। এক কথায়, সেসব অকথ্য কথা শোনার উৎসাহী জনতা পাওয়া যায়। 

এভাবে প্রকাশ্য শাস্তি অনেক সময় ছিঁচকে অপরাধীদের নায়কে পরিণত করত। তেমনি হালের খারিজি সংস্কৃতির আদিপর্বে মিলো ইয়ানোপুলোসের মতো লোক, যার এমনিতে স্রেফ কিছু অচিত্তাকর্ষক ফালতু চিন্তাভাবনা ছাড়া আর কিছু ছিল না, সেই লোকও অজানা-অচেনা থেকে হুট করে পাদপ্রদীপের আলোয় চলে এল। তথাকথিত “বিপজ্জনক” চিন্তাকে খারিজ করার দ্বারা অনলাইনে সেই সান্ধ্যদেশের জন্ম ও প্রসার ঘটে যেখানে বাসি নিঃশ্বাসের মতো অকথ্য কথা ছাড়া যায়, ছড়িয়ে দেওয়া যায়। খারিজ বান্দারা (এবং যারা অল্পের জন্য খারিজ থেকে বেঁচে গেছে) তারা সেখানে গড্ডলিকাপ্রবাহ থেকে দলছুট বিপ্লবীর ভংগি ধারণ করতে পারে, যেন তারা আমাদের সবার মনে-চাপা আকাংক্ষিত সত্য কথাগুলো বলে ফেলার সৎসাহস রাখে!

গণনিন্দার আরেক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণাম হল এর ফলে আমরা নাফরমান ব্যক্তির কাছাকাছি চলে যাই। অনেকেই প্রকাশ্য মৃত্যুদণ্ড অনুষ্ঠানের নানা বাড়াবাড়ি ও সহিংসতায় অংশ নিত বটে, কিন্তু সেই আসামীর সাথে তারা সবচেয়ে নিবিড় নৈকট্য তখনই বোধ করত যখন আসামী উঠত ফাঁসির মঞ্চে। মৃত্যুদণ্ডের প্রকাশ্য প্রদর্শনের উদ্দেশ্য ছিল হুশিয়ারি দেওয়া যে “কালকে এই জায়গায় কিন্তু তুমিও থাকতে পারো”। জনগণকে ওই মঞ্চে নিজ প্রতিচ্ছবি দেখারই দাওয়াত দেওয়া হতো। “সীমা-সংযমহীন এই সহিংসতা”য় মানুষ সবচেয়ে বেশি আতংকিত হতো যখন তারা মুখোমুখি হতো দণ্ডিতের। এই মুখোমুখির ফলে ভয় ও বিধিবিধানের প্রতি বশ্যতা যেমন বাড়তে পারত, আবার উলটো দণ্ডিতের প্রতি সংহতি ও বিদ্যমানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধও জাগ্রত হতে পারত। অত্যাচার যে বিদ্রোহের জন্ম দিতে পারে এই ঝুঁকি বিরাজ করত বরাবরই। 

মধ্যযুগীয় মৃত্যুদণ্ড কেন আজ ক্ষমতার মডেল হয়ে উঠল? কারণ যে লিবারাল বান্দা এসকল প্রাচীন বাহ্য শাস্তিপ্রণালীকে খানিকটা হলেও অন্তরিত করতে পেরেছিল সেই বান্দা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। লিবারাল বান্দাটিকে যুক্তির পদ্ধতিতে “সারাই” করা যেত। তাতে অবশ্য জবরদস্তি বলপ্রয়োগ হাওয়ায় মিলিয়ে যায় নি, বরং তার ফলে জবরদস্তি বলপ্রয়োগের খানিক রূপান্তর ঘটেছিল, যার দরুন সেটা চোখে দেখা কিছুটা দুরূহ হয়ে পড়েছিল। তবু বিচারের লিবারাল আকরণের উদয়ের ফলে অন্তত সকল মানুষকে একই সমতলে স্থাপন করা গেছিল। বিপরীতে, অতীতের প্রকাশ্য দণ্ডনীতি, শাসক ও শাসিতের অসাম্যকেই চিহ্নিত করত। এখন আবার সেই ঘটনাই ঘটছে, যেখানে গণব্যক্তিত্বের সাথে জনতার সম্পর্ক নবরূপে হয়ে দাঁড়িয়েছে বাপসুলভ। কোন অন্যায় — তা সে যত তুচ্ছই হোক — তা আমাদের চোখে পড়তে দেওয়া যাবে না, কারণ চোখে পড়লেই আর ভরসা নেই, আমরা বুঝি সেই অন্যায় নিজ জীবনে ঘটিয়ে ফেলব! সাধু ও পাপির দল আমাদের জন্য যেন অবশ্যই যুগপৎ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে!

প্রকাশ্য শাস্তির আনুষ্ঠানিকতার নানা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণাম যেন আমাদের জন্য শিক্ষা হয়ে থাকে। অস্বস্তিকর সত্য বা ভয়ানক অসত্য কোনটাকে চাইলেই অস্তিত্ব থেকে খারিজ করা যায় না। এগুলো নিয়ে বিতর্ক করতে হবে, বাগড়া দিতে হবে। হয়তো মিম ও মজায় ভরা মচ্ছবে যে ক্ষমতার স্বাদ মেলে, হতে পারে তা আপনার জন্য বিনোদনের যোগানদার। অপরাধীদের গর্দানের উপর চূড়ান্ত খারিজের হুমকি ঝুলিয়ে রাখতে ভাল লাগতেই পারে। কিন্তু তাতে কেবল আসল ক্ষমতা কার হাতে সেই কথাটাই মনে পড়ে যায়। খারিজ সংস্কৃতির মচ্ছব কেবল বিদ্যমান ক্ষমতাকাঠামোকেই বদ্ধমূল করে। তার ফলে সমাজের প্রগতি সাধিত হয় সামান্যই। আদতে, এর ফলে সমাজ বোধহয় পশ্চাৎদিকেই ধাবিত হচ্ছে।  

সূত্র

এই সকল ঘটনাকে বিবেচনা করার মানে পাত্রপাত্রীদের বক্তব্য বা কর্মকে জায়েজ করা যে নয় তা তো গোড়াতেই বুঝে নেওয়ার কথা। বুঝে নেওয়ার কথা হলেও লোকে বুঝে নেয় না। ফলে বলে রাখতে হচ্ছে যে, যাদের কাজকর্ম নিয়ে এ রচনায় আলাপ করলাম তাদের আমি মোটেই সমর্থন করছি না, যেমন সমর্থন করছি না মধ্যযুগের ইউরোপে যারা দণ্ডিত হয়েছিল তাদের কাজকে। বরং দণ্ডিতকরণের পদ্ধতি এবং তা আমাদের সমাজ-সংস্কৃতি নিয়ে কি বলে তাই এখানে আমার বিবেচনার বিষয়। (লেখক)

মূল লেখা:

https://www.sublationmag.com/post/the-carnival-of-cancel-culture#:~:text=We%20can%20see%20this%20’carnival,repentance%20in%20the%20well%2Dtread%20′

তাহমিদাল জামি

লেখক-গবেষক এবং বেঙ্গল হিস্টরি কালেক্টিভের সমন্বয়ক, ঢাকা, বাংলাদেশ।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top