আজ বুধবার, ৭ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

প্রকৃতি প্রকৃতি সংসার সৃষ্ট সবজনা

।। সম্পাদকের দফতর।।

পশ্চিমা আধুনিকতার বাগাড়ম্বরে, তার অতিযান্ত্রিক যুক্তিনির্ভরতায় ক্রমশ আধ্যাত্মিক-পরিসর-শূন্য বড় বাংলা ও তথা উপমহাদেশের মনুষ্য সমাজ আজ যে অধুনান্তিক কালপর্বে দিনগুজরান করছে, সেখানে বসন্ত কেবলমাত্র মদ খেয়ে নাচোন-কোঁদন আর আবির মেখে সেলফি তোলার নামান্তর মাত্র। আমরা এ কথা বলছি না যে নাচ-গান, হাসি-হুল্লোড় না-পাক বা হারাম কিছু। মোটেও তা নয়। বরং মানুষের স্বাভাবিক যাপনের অঙ্গ এসবই। এগুলিই মানুষের নান্দনিক বা সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তি। কিন্তু এই যে বসন্ত উৎসব, এর ভিতরে যে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে ওঠার মর্মবাণী, তা তো আমরা কোথাও লালন করছি না আর। বারো মাসে তেরো পার্বণের বড় বাংলার দেশে প্রতিটি উৎসব-পরবের মধ্যে একেকটি প্রাকৃতিক নির্দেশনামা রয়েছে। রয়েছে জীবনযাপনের লৌকিক শিক্ষা। কারণ, মানবদেহ এই মহাপ্রকৃতিরই অংশ, যা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অসীমের সঙ্গে সংযুক্ত।

প্রকৃতি প্রকৃতি সংসার সৃষ্ট সবজনা

বিশ্ব উষ্ণায়ণে পরিবেশ খাক হয়ে যাওয়ার পরেও রঙের উপমহাদেশে, সাংখ্যের বৃহৎ বঙ্গদেশে বসন্ত আসে। ফুলেল সৌন্দর্যে সেজে ওঠে প্রকৃতি। বিত্তবাদী উন্নয়ণ, উচ্ছেদ, নিপীড়ন, আগ্রাসন, গুম-খুন ও গণহত্যার আয়োজনের ভিতরে মানুষ দিনগুজরানে অভ্যস্ত হয়ে উঠলেও, এই বসন্তে তার চৈতন্যের প্রকৃতি সজাগ হয়ে ওঠে। হয়তো বা সে টের পায় প্রকৃতির নিগূঢ় আলাপ। হয়তো সে ফিরতে চায় শিকড়ে আবার। এই বসন্তকাল মানুষকে মানুষের এবাদতের মধ্যে দিয়েই প্রাণ, প্রকৃতি ও পরমের মধ্যে সম্বন্ধ-সেতু মজবুত করার মন্ত্রণা দিয়ে যায়।

শীতে মেহমান হয়ে আসা পরিযায়ী পাখিরা তাদের কলতানে আর ওমে হয়তো-বা প্রকৃতির দুঃখ-শোকের পাশে সাহচর্য্য রেখে নিজনিজ দেশে ফিরে চলে গেলে, অতিথিপাখিদের স্বান্তনা ও প্রেরণায় আবারও সব ভুলে প্রকৃতি সেজে উঠতে চায় এই বসন্তে। আবারও নিজের রূপমাধুরীর পূর্ণ প্রকাশে নিজের কোলের কাছে ফিরিয়ে আনতে চায় আদম-উত্তরসূরীদের। মানুষকে তার আপন সুরতে, আয়নামহলে তাকানোর কথা বলে দেয় প্রকৃতি-মা। যে সুরতের ভিতর, “প্রাণের মাঝে ঘুমিয়ে আছে অমৃতগান, যার নাইকো বাণী, নাইকো ছন্দ, নাইকো তান”- মন্যুষ্যজগতকে এ বসন্তে সেই সচ্চিদানন্দের শরণ নিতে বলে যায় প্রকৃতি।

কেননা এই রঙ-রূপ-রসের লীলাময় জগতে সকল ক্রিয়া প্রকৃতি নির্ভর। প্রকৃতির রূপ-দরবার পার হলেই মিলে যায় অরূপের ঠিকানা। কিন্তু পণ্যবাদী দুনিয়া, বিত্তবাদী দুনিয়া আর তাহাদের মুদ্রাযন্ত্রচালিত ইবলিশের প্ররোচনায় মানুষ আজ নানাভাবে প্রকৃতিবিচ্ছিন্ন। মানুষ বিস্মৃত নিজ প্রকৃতি থেকে শুরু করে পরিপার্শ্বের অগাধ প্রকৃতি-জগত হতে। যেন-বা আয়না দেখতে ভুলে গেছে সে। হয়তো-বা সেই আয়না হাতে প্রকৃতি-মা বসন্তে হাজির হয়েছেন তার নির্বোধ ছাওয়ালদের সামনে।

কিন্তু পশ্চিমা আধুনিকতার বাগাড়ম্বরে, তার অতিযান্ত্রিক যুক্তিনির্ভরতায় ক্রমশ আধ্যাত্মিক-পরিসর-শূন্য বড় বাংলা ও তথা উপমহাদেশের মনুষ্য সমাজ আজ যে অধুনান্তিক কালপর্বে দিনগুজরান করছে, সেখানে বসন্ত কেবলমাত্র মদ খেয়ে নাচোন-কোঁদন আর আবির মেখে সেলফি তোলার নামান্তর মাত্র। আমরা এ কথা বলছি না যে নাচ-গান, হাসি-হুল্লোড় না-পাক বা হারাম কিছু। মোটেও তা নয়। বরং মানুষের স্বাভাবিক যাপনের অঙ্গ এসবই। এগুলিই মানুষের নান্দনিক বা সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তি। কিন্তু এই যে বসন্ত উৎসব, এর ভিতরে যে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে ওঠার মর্মবাণী, তা তো আমরা কোথাও লালন করছি না আর। বারো মাসে তেরো পার্বণের বড় বাংলার দেশে প্রতিটি উৎসব-পরবের মধ্যে একেকটি প্রাকৃতিক নির্দেশনামা রয়েছে। রয়েছে জীবনযাপনের লৌকিক শিক্ষা। কারণ, মানবদেহ এই মহাপ্রকৃতিরই অংশ, যা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অসীমের সঙ্গে সংযুক্ত। এসব আলাপ করার ক্ষেত্রে পুরুষ ও প্রকৃতির সম্বন্ধ নিয়ে বাংলার দার্শনিক অবস্থানটা আরেকবার ঝালিয়ে নেওয়া যাক।

পুরুষ ও প্রকৃতির দ্বৈতাদ্বৈত ভাবের অভিসন্দর্ভ ‘সাংখ্য’ বড় বাংলার চিন্তা জগতের, দার্শনিক স্কুলগুলোর বিরাট একটি মাইলফলক। সাংখ্যভাবের রূপমাধুরী বৃহৎ বঙ্গে প্রকাশিত হয় হরগৌরীর রূপকল্পনায়। পুরুষ ও প্রকৃতির একাত্মতার এই দিগনির্দেশনা আরও ব্যপ্তি লাভ করে শ্রী চৈতন্যের অচিন্ত্যভেদাভেদ তত্ত্বে। নদের নিমাই বললেন, বহিরঙ্গে রাধা (প্রকৃতি) আর অন্তঃরঙ্গে কৃষ্ণ (পুরুষ)-এর কথা। তিনি জানালেন, জগতের সকল মানবসত্তাই বহিরঙ্গে রাধা, আর সকলের অন্তরেই বাস করেন অরূপরতন কৃষ্ণ-কানাই। প্রকৃতির রূপবৈচিত্র্যে মানুষের রূপজগতের লীলা বহমান এবং সেই লীলাভাবের নিয়ন্ত্রক অন্তরের সেই পরম সত্তা। বড় বাংলার দার্শনিক বিবেচনার অন্যতম দিকটি হলো, ‘যাহা আছে ভাণ্ডে, তাহা আছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে’। অর্থাৎ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সকল কিছুই দেহভাণ্ডে হাজির। তাই মানুষের বাহ্যের সকল ক্রিয়াই আসলে প্রকৃতির ক্রিয়া। আর তা অরূপরতন সেই পরমসত্তার সঙ্গে এক হয়ে আছে। রাধিকা আর কৃষ্ণের লীলা খেলার দিকটি তো আসলে এটিই, মানুষের প্রকৃতিজাত যে ভাব ক্রিয়াশীল হয় অন্দরের কৃষ্ণের সাথে একাত্মতায়। প্রকৃতির এই রূপমাধুরী, তার রূঙ-রূপ-রসের প্রকাশকে বসন্তে সেলিব্রেট করা হয় দোলপূর্ণিমায়। এছাড়াও বড় বাংলার সাধুগুরু-ফকির সমাজের কাছে দোলপূর্ণিমার আরও একটি ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে। কারণ, দোলপূর্ণিমা হল শ্রীচৈতন্যের জন্মতিথি। মনে রাখা দরকার, চৈতন্যকে নদীয়ার ফকির বলে অভিহিত করে গেছেন ফকির লালন।

তো নদের নিমাইয়ের জন্মদিন উপলক্ষ্যে ফকির লালন সাঁই কুষ্টিয়ায় তাঁর ছেউড়িয়ার ধামে একদা সূচনা করেছিলেন চৈতন্যের স্মরণে সাধুসেবার। যা এখনও পালিত হয়, লালন ঘরের সকল আখড়ায়, আশ্রম ও দরবারে। সাধুসেবায় যে সেবাপদ্ধতি রয়েছে, অন্নসেবা-সহ সেই সকল আচার ‘মানুষ ভজনা’রই অংশ। তাছাড়া অন্নসেবাকে সাধু সমাজে নেহাতই ক্ষুধা নিবারণ ও স্বাদ উপভোগ করার পন্থা নয়। বরং প্রকৃতির সঙ্গে দেহের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক স্থাপন হয়, এই শাকান্ন গ্রহণের মধ্যে দিয়েই। এবছরও এই স্মরণোৎসব পালিত হয়েছে। যদিও দোলপূর্ণিমার দিনে এ-বছর পবিত্র শবে বরাত থাকায়, ছেউড়িয়ার লালন ধামে ‘লালন একাডেমি’ উৎসবকে দুয়েক দিন এগিয়ে এনেছিল। কিন্তু বড় বাংলার লালন ঘরের অন্যত্র সকল আখড়া-আশ্রম-দরবারে দোল পূর্ণিমা তিথি থেকেই এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে, কোথাও দু’দিন কিংবা কোথাও-বা তিনদিন ধরে। মনে রাখা দরকার, ব্রাহ্মণ্যবাদ বা বৈদিক বর্ণাশ্রমের বিরুদ্ধে, ধনী-নির্ধন বৈষম্যের বিরুদ্ধে এবং নারী শরীরকে পিতৃতন্ত্র দ্বারা অ্যাবিউজ করার বিরুদ্ধে পুরুষ ও প্রকৃতির দ্বৈতাদ্বৈত ভাবের মধ্যে দিয়ে বঙ্গে যে ভাবান্দোলনের সূচনা করেছিলেন চৈতন্য, নিত্যানন্দ ও অদ্বৈতাচার্যরা, ফকির লালন সেই পরম্পরারই এক সাধক। এই পরম্পরার সঙ্গে তিনি অকাতরে মিশিয়েছেন ইসলামকেও। এছাড়াও বঙ্গের আরও ভাবের স্কুলগুলো যেমন শাক্ত-শৈব ইত্যাদি ভাব ও সাধন মার্গ থেকেও তিনি তাঁর চিন্তার ক্ষেত্রে উপাদান সংগ্রহ করেছেন। তবে বৃহৎ নদীয়া চৈতন্যকে তাঁদের প্রথম ফকির এবং নিত্যানন্দ মহাপ্রভুকে ‘গুরু’র মর্যাদা দিয়েছে। তো যাই হোক, বসন্তের এই পূর্ণিমা এই দিক থেকেও বঙ্গে গুরত্বপূর্ণ।

সাধুসেবায় গুরুকে ভক্তিপ্রদান। নবপ্রাণ আখড়বাড়ি, ছেউড়িয়া, কুষ্টিয়া।

আর মনে রাহা দরকার, শান্তিনিকেতন আশ্রমে রবীন্দ্রনাথের দ্বারা পত্তন হওয়া বসন্ত উৎসবেও কিন্তু বাংলার এই প্রাণ-প্রকৃতির সমন্বয়ের পরম্পরা প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। কুষ্টিয়ার পার্শ্ববর্তী শিলাইদহের কাছারিবাড়িতে রবীন্দ্রনাথ জমিদারি সামলাতে গিয়ে তো জমিদারির চৌহদ্দির মধ্যে নিজেকে আটকে রাখতে পারেন নাই। প্রভাবিত হয়েছেন লালন-সহ বৃহৎ নদীয়ার সাধু-ফকিরদের দ্বারা। উপনিষদের মর্মবাণীকে আধার করে পৌত্তলিক ‘হিন্দু’ ধর্ম থেকে বের হয়ে যে ব্রাহ্ম ধর্মের গোড়া পত্তন হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের পূর্বসূরীদের দ্বারা, সেই ব্রাহ্ম ধর্মের চৌহদ্দি থেকেও তো রবি ঠাকুর অনেকটাই বের হয়ে আউল-বাউল-ফকিরদের দিকে ঝুঁকেছিলেন ক্রমেই। তাঁর পরনে দেখা মিলেছিল আলখাল্লার। তো রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনের পৌষমেলাই বলুন কিংবা বসন্ত উৎসব- এসবের মধ্যে পুরুষ ও প্রকৃতির দ্বৈতাদ্বৈত সম্মিলনের সাংস্কৃতিক পরম্পরা ও ভাবান্দোলনের চিহ্ন স্পষ্টভাবেই রয়েছে।

কিন্তু ‘দোল’ আর ‘হোলি’ তো কোনো অর্থেই এক নয়। হোলিকা নামের এক অনার্য নারীকে পুড়িয়ে মারার ‘মিথ’কে পিতৃতান্ত্রিক আর্য বলয় সেলিব্রেট করে, সেটাই মূলত ‘হোলি’। এর সঙ্গে রঙ-আবিরের সম্পর্ক কোনোকালেই ছিল না। অবৈদিক সমাজের রঙ-আবিরের সেলিবেশনকে অনেক পরে আর্য বলয় হোলিতে প্রয়োগ করেছিল। কিন্তু আজও দেখা যায় দোলের পরের দিন, অর্থাৎ হোলির দিনে কীভাবে নারীদের ওপর ‘রঙ’ খেলার অছিলায় শারীরীক নিপীড়ন, যৌন হেনস্থা চালায় হিন্দি-হিন্দুস্তানি ব্রাহ্মণ্যবাদী সমাজ। তাই দোলের যে তাৎপর্য, যে বার্তা, তার সম্পূর্ণ বিপরীতে অবস্থান হোলির। কিন্তু প্যান-ইন্ডিয়ানিজমের নাম করে উত্তর ভারতীয় হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তানি আধিপত্য বড় বাংলার দোলপূর্ণিমা ও বসন্ত উৎসবকে ‘হোলি’তে পর্যবসিত করার চেষ্টা প্রবলভাবে জারি রয়েছে।

আরও যে কথাটা বলার, তা হলো, বসন্ত উৎসব উদযাপনের মাঝেই আমাদের মাথায় রাখা উচিত, ‘প্রকৃতিপ্রেম’-এর স্লোগানকে এনজিওকরণের কায়দায় আউড়ালে প্রকৃতিনিবিড় হওয়া সম্ভব নয়, বরং আমাদের নিজস্ব ভূমি, আমাদের পরিবেশ, আমাদের নিজস্ব বীজ, নিজস্ব ভাষা, নিজস্ব সংস্কৃতিকে নিবিড়ভাবে লালন করে সেই সাংস্কৃতিকভাণ্ড হাতে নিয়েই বিশ্ব দরবারে গেলে একই সঙ্গে স্থানিক ও বৈশ্বিক হওয়া সম্ভব হবে। আর তার জন্য মানুষকে মানুষের সাথে, জীবজগতের সাথে, প্রাণবৈচিত্র্যের সঙ্গে সম্বন্ধ দৃঢ় করতে হবে। মানুষ ভজনা ও প্রাণ-প্রকৃতি-পরমের ভাবই আমাদের এই সঙ্কটকাল পরিত্রাণের উপায় হয়ে উঠতে পারে। এবং তার জন্যে জরুরি জাতিবাদ, বর্ণবাদ, পুঁজিবাদ ও পিতৃতন্ত্রকে প্রতিরোধ করা, পরাস্ত করা।

বলে রাখা দরকার, বসন্তেই কিন্তু পালিত হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারী তো প্রকৃতি বটেই। কিন্তু নারীবাদ বলতে নারীর মাধ্যমে পশ্চিমা পণ্যবাদের বাজারবাদী যুক্তিক্রম অনুযায়ী বেঁধে দেওয়া কিছু ‘অধিকার’-এর স্লোগান নিয়ে চর্চা করা বোঝায় না। নারীসত্তার আলাপ জগত-প্রকৃতির মৌলিক আলাপের সঙ্গেই সম্পৃক্ত। যেকোনো প্রকার আধিপত্যের মোকাবেলা করে প্রাণ-প্রকৃতির সমন্বয়ের যে পরম্পরা তার সঙ্গে মূলগতভাবে নারীই যুক্ত। মাল্টিন্যাশনাল কর্পোরেশনগুলোর হাত থেকে বীজরক্ষা থেকে শুরু করে ভূমিরক্ষা, মজলুম-নিপীড়িতের হক আদায় কিংবা সাম্রাজ্যবাদকে প্রতিহত করার অগ্রণী নারীই। সকলপ্রকার লিঙ্গসমতা, এলজিবিটিকিউএ’র স্ট্রাগলের সামনের সারিতেও নারী। কেননা, এই বড় বাংলায় তথা উপমহাদেশে নারীই একদা উৎপাদন ব্যবস্থার কেন্দ্রে অবস্থান করত। নারী প্রকৃতি। প্রকৃতিই সংসার। আর আমরা সবাই প্রকৃতিগতভাবে শ্রীরাধিকা। আমরা এই লেখায় ইতি টানব, লালন সাঁইজির কালাম উদ্ধৃত করে। তার আগে সকলকে বসন্তের রঙিন শুভেচ্ছা।

নিগম বিচারে সত্য গেল তাই জানা
মায়েরে ভজিলে হয় তার বাপের ঠিকানা

পুরুষ পরওয়ারদেগার
অঙ্গে ছিল প্রকৃতি তাহার,
প্রকৃতি প্রকৃতি সংসার
    সৃষ্ট সবজনা।।

নিগম খবর নাহি জেনে
কেবা সেই মায়েরে চেনে,
যাহার ভার দিন দুনিয়ায়
     দিলেন রব্বানা।।

ডিম্বের মধ্যে কেবা ছিল
বের হয়ে কারে দেখিল
লালন বলে সে ভেদ সে পেল
ঘুচল দিনকানা।।

– লালন শাহ
ছবি- লুবনা চর্যা

– অতনু সিংহ
৮ মার্চ, ২০২৩
অবনপল্লী, শান্তিনিকেতন,

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top