আজ বৃহস্পতিবার, ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

কবিতাও যে যুদ্ধের ভেতর হাঁটে

।। দুর্জয় আশরাফুল ইসলাম ।।

কোনো এক অচেতন সভায় দেখা হবার কথা ছিল
যার, তারই ছায়ার মহড়া, যখনই ভাবি, দেখি
আগুন, বীভৎস এক গুহার প্রতিনিধি, আলো ফুঁড়ে
আকাশতলে দেখছে কোথায় এখনো ছটফটানি
তখন কবিতায় কি হয় প্রসঙ্গে বলি, যথা দেশ—
সভা কবিদের নির্লজ্জ মুখ আড়াল হয়েছে এবং
আড়াল থেকে স্পষ্ট হচ্ছে ধূর্ত অবয়ব, অতএব
কবিতা প্রসঙ্গেও, কতগুলো শুয়োরকে চিনিয়ে
যুদ্ধের মাঠ দখল নিয়েছে কতক শিশু, যীশুস্থলে
তাদের সাহস এবং সংকল্প প্রতিধ্বনিত হলেই
রক্তিম ছায়াতলে কবিতা নির্মিত হচ্ছে ধারণা করি

গোলাপ বর্ণে পাখিরা

গোলাপের পাপড়িতে তুমি পাও বারুদের গন্ধ,
গোলাপের বর্ণে তুমি দেখতে পাও মিছিল
সম্মিলিত জনতার সমস্বর ইনকিলাব

যারা ফিরে যাচ্ছে রাত্রি ছায়াতলে
পরদিন ফিরে আসবে বলে
তাদের তুমি দেখতে পাও দরজায়
এমনই ভয়, উৎকন্ঠা ঢুকে গেছে
তোমার আত্মায়—

তারা ঠিক আসে ভোরের সূর্য হয়ে, যেন সে গান
পূর্ব দিগন্ত আর রক্তলাল, রয়ে গেছে যা অপূর্ণ
ফিরিয়ে আনছে মহাকাল

তুমি শুনতে পাও সকলে কথা বলতে চাইছে
ছাত্র, জনতা, দিনমজুর, আর নিহত আত্মা
সকলে চাইছে হিসাব, স্বাধীনতার, মুক্ত ডানার

ডানা বলতেই তুমি দেখো উড়ে আসছে পাখিরা
আসছে হে, লাল সবুজ স্পর্ধা বুকে
ঘুম পাড়ানিয়া গানে শুয়ে থাকতে দেখেছিলে যাদের

শুক্রবার, শাসকের প্রতি

প্রতিটি শুক্রবার তুমি ভয় পাও, তোমার অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে
তুমি শুনতে পাও কোথাও হলো বিস্ফোরণ, হলো নব-আবিষ্কার,
বিশ্ব সৃষ্টির মতো শব্দ এগিয়ে আসে, তুমি শিমুলতলা ছেড়ে
ঘরের ভেতর স্থান নাও, আত্মশাসনের তীরগুলো এগিয়ে আসে
তুমি ভাবো আরো কিছু ভুল, তোমার নয় তোমার নয়, অন্য কারো
যেহেতু অন্ধকার, যেহেতু কৃত্রিম আলোয় দেয়ালে পড়ে ছায়া

তুমি শুনতে পাও অপরাহ্নকালের ডাক, রাজপথের নির্জন ধ্বনি,
কেননা তুমিই তাড়িয়ে দিতে চেয়েছ মানুষজন, কোলাহল, বিবিধ
অথচ এমন উদ্বেল আহ্বান নিয়ে ঘিরে ধরে তোমার দেয়াল –
যেন ঝঞ্ছা, যেন কবিতার রূপ, যেন কবিতা, তোমাকে ভয় দেখায়
তুমি ভয় পাও, তোমার মনে হতে থাকে বড়ো দীর্ঘ প্রতি শুক্রবার

তুমি নিজের ভেতর আশ্বাস জন্মাতে চাও, অসংখ্য কুয়াশায় মোড়া
ধ্বনি প্রতিধ্বনির সংকীর্ণ রূপ, তোমার দুয়ারে রাত্রির জন্ম দেয়
তুমি ভাবো, শেষ হলো শুক্রবার, থেমে গেছে ধ্বনিরোল, উচ্চারণ
আর তখনই ফিরে আসে ডাক, ফিরে আসে শুক্রবার, যে কোনো
মুহূর্তে সুর তুলে বিদীর্ণ বুকের পাখি, তোমার প্রাসাদে প্রতিধ্বনি

নাই হয়ে যাওয়া আত্মাদের, তাদের পরিজন, সন্তান-হারা মা,
সকল ডাক ঘিরে আসছে, আর্তনাদের সে কি প্রবল দৌড়, আসছে
তোমার ঘরের দিকে, এমনকি তোমার ছায়াও তেড়ে আসছে
তেড়ে আসছে আরেকটি শুক্রবার, ভেঙ্গে পড়ছে সবকিছু, রাত্রি
এমন গাঢ়, অন্ধকারে তীর্যক চাহনি, নতুন যৌবন নিয়ে শুক্রবার।

২৯ জুলাইয়ের কবিতা

কবিতায় কি হয়, কবিতাও যে যুদ্ধের ভেতর হাঁটে
এ বিষয়ে কিছু ব্যাখ্যা আর ভেবে নেয়া চিন্তা আছে
নিশ্চয়ই। এগুলো কনসেনট্রেশান ক্যাম্প-গুচ্ছ
জানান দিচ্ছে আমায় তুমি বলতেই পারো। কিন্তু
আমি ভীরু প্রাণ, মৃতের শহরে দাঁড়িয়েও একা
বাঁচবো বলে মনে মন নকশা আঁকি। একটু আলো
একটু প্রখরতা পেলেই ভূতগুলো সরে যাবে আর
স্বপ্ন সংক্রান্ত ফলাফল নিয়ে দেখা দেবে যীশু,
কোনো এক অচেতন সভায় দেখা হবার কথা ছিল
যার, তারই ছায়ার মহড়া, যখনই ভাবি, দেখি
আগুন, বীভৎস এক গুহার প্রতিনিধি, আলো ফুঁড়ে
আকাশতলে দেখছে কোথায় এখনো ছটফটানি
তখন কবিতায় কি হয় প্রসঙ্গে বলি, যথা দেশ—
সভা কবিদের নির্লজ্জ মুখ আড়াল হয়েছে এবং
আড়াল থেকে স্পষ্ট হচ্ছে ধূর্ত অবয়ব, অতএব
কবিতা অপ্রসঙ্গেও, কতগুলো শুয়োরকে চিনিয়ে
যুদ্ধের মাঠ দখল নিয়েছে কতক শিশু, যীশুস্থলে
তাদের সাহস এবং সংকল্প প্রতিধ্বনিত হলেই
রক্তিম ছায়াতলে কবিতা নির্মিত হচ্ছে ধারণা করি

২৬ জুলাইয়ের কবিতা

না, কোথাও কিছু ঘটেনি। শান্ত আলোয়
আমরা দেখেছি কতক কবুতর উড়ছে,
রাত্রির আকাশ, এ কি নয় বিস্ময়?
উড়ে এসেছে বজ্রযান, যেন ঈশ্বরের গান
ফুল হয়ে পড়লো ছাদে, রাস্তায়, পাঠশালায়

আমরা জেনেছি মাটির সাথে বন্ধন,
সবার নয়, যার হাতে মাটি তার, ফলতঃ দূরে
সরে যাও সব, কাতর বৃদ্ধ, শিশু, জনতা
সুর ধরো সমস্বর, বজ্রযান, তোমাকে মেনে
ফিরে এসেছি দূরে, আরও দূর, ক্রমশ সরে—

অন্ধ কুঠুরিতে, গর্ভগৃহের আগে, শূন্যতা শুধু
বাতাসে, বিশ্বাসে, অনন্ত দিন চলা আশ্বাসে,
কান্না তুলে নাই হয়ে গেল যে, তার প্রতি প্রশ্নে
কেন তুমি অযথা ছাপ রেখে, যখন ঘটেনি কিছু

শুধুই তো ফুল, আরেকটু বেশি বাতাবি লেবু
জলের মতো যা, রেখায়, নদীরূপে, আর পাহাড়

পেইন্টিং: সুলতান ইশতিয়াক

দুর্জয় আশরাফুল ইসলাম

তিতাস পাড়ের সন্তান। জন্ম বেড়ে ওঠা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। কর্মসূত্রে থাকেন ঢাকায়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শ্রমজীবি। প্রকাশিত কবিতা বই দুইটি। সমুদ্রের ব্যাকরণ (২০১৯, বোধি প্রকাশনা, ঢাকা); বিস্ময়, তুমি বৃষ্টিফুল (২০২০, একলব্য, কলকাতা)।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top