ঘরে বিবাহে পাওয়া দুইটি স্যুটকেস থাকে

।। বায়েজিদ বোস্তামী ।।

ঘরে বিবাহে পাওয়া
দুইটি স্যুটকেস থাকে
ঘর ভেঙে গেলে একটি
কোথায় যে চলে যায়
এই ভাবনায় আরেকটি
স্যুটকেস নড়েচড়ে না
ধূলোর গভীরে থেকে
একা একা ঝিমায় শুধু

ঘরে বিবাহে পাওয়া দুইটি স্যুটকেস থাকে


বুদ্ধ পূর্ণিমায়

মোড়ে সিঙাড়া ভাজা হইতেছে
তেল, ময়দার দাম বেশি যেহেতু
পাঁচ টেকার সিঙাড়ার সাইজ ছোট
হইয়া বড়োসড়ো মার্বেলসম হইছে
আকাশে বুদ্ধ পূর্ণিমার চাঁদের
সাইজ অবশ্য পূর্ববৎ—বৃহদাকার

সে দশ টেকায় দুইটা সিঙাড়া কেনে
গরম সিঙাড়া আলতো চাপে ভাঙে
ফুঁ দিয়া মুখের ভেতরে চালান করে
আপনি জানেন, গরমসিঙাড়া কখনোই
মুখে দেবার আগে পুরাপুরি জুড়ায় না
তার তালুতে ছ্যাঁকা লাগে যথারীতি
সে গরম শিঙাড়া মুখে রাস্তা পার
হইতে ধীর পায়ে হাঁটতে শুরু করে

চাঁদের ব্রাইটনেস আরেকটু বাড়ে
সে মুখ তুলি চকিতে তাকায় একবার
মুখ নামায়ে দ্বিতীয় সিঙাড়ায় চাপ
দেবার টাইমেই অধিক ব্রাইটনেসের
বাসের হেডলাইটে তার চোখ ঝলসায়


কুত্তার বেল্ট

বুড়া কুত্তাটার
কান্ধে ক্ষত
দগদগ করতেছে

কাঁচা মাংসের
গন্ধ পাইয়া
ক্ষতের পাশে
উড়তেছে
মাংসভূক মাছি

ক্ষতটার পাশেই
রঙচঙা বেল্ট
চকচক করতেছে

ঘর বিষয়ক

*

কেবল ঘর বদলের কাল এলে
লোকে টের পায় নাই করেও
কম কিছু জমে না তো ঘরে
বস্তুগত কিংবা অবস্তুগত
তখন তারা আতান্তরে পড়ে যায়
কী ফেলবে আর কী বা নেবে সাথে!
*

ঘরে বিবাহে পাওয়া
দুইটি স্যুটকেস থাকে
ঘর ভেঙে গেলে একটি
কোথায় যে চলে যায়
এই ভাবনায় আরেকটি
স্যুটকেস নড়েচড়ে না
ধূলোর গভীরে থেকে
একা একা ঝিমায় শুধু

*
ঘরের লোকে হাতের তালু
কপালে রেখে ভুল পদ্ধতিতে
বুঝতে চায় জ্বরের তীব্রতা
প্রলাপে জপে ভুল প্রিয়নাম
*

ঘরের পুরুষ বাইরে গেলে
ঘরজুড়ে থাকে ঘামগন্ধ
ঘরের নারী বাইরে গেলে
মেঝেয় পড়ে থাকে দীর্ঘ চুল
*
ঘর চায় ঘরের লোকে
দিনশেষে ঘরে ফিরুক
*
ঘরে আসবাব এলে
সাথে ঘুণপোকারাও আসে


বাজার-দাস

বিরিক্ষের মতো স্বাবলম্বী নই
রোদ জল আলো মাটি হাওয়া থেকে
নিজের খাদ্য তৈরি করতে পারি না নিজে

শিকারী ও সংগ্রহকারী তো নই-ই
চাষাও নই—ফলাই না কিছুই
ফলে সকলই কিনতে হয়

প্রতিদিন, প্রতিবেলা বাজারে যাই

কিনি চাল ডাল আটা
কিনি তেল নুন হলুদ মরিচ
কিনি মাছ মাংস দুধ ডিম
কিনি শাকসবজি ফল

শুধু কিনি, কিনি আর কিনি

আদতে আমি বাজার-দাস এক
আমাকে বাজার আরেক বাজারে
কিনে রেখেছে কেবল কিনতেই


কঙ্কা ও তার দস্যি ভাইয়েরা

আমার কন্যা কঙ্কা— কঙ্কাবতী
বিরিক্ষঘন কোনো বনে থাকে
বুনোলতার দোলনায় দোল খায়
একা একা

ওর দস্যি ভাইয়েরা
শিঙাল হরিণের পিঠে চেপে
দিনভর দাপিয়ে বেড়ায়
বনজুড়ে
কখনো-সখনো
বোনকে দেখতে আসে
দূরে দাঁড়িয়ে দ্যাখে, তন্বিষ্ঠ কঙ্কা দোল খায়
দুই ঝুঁটি সমেত মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে গায়
লাল ঝুঁটি কাকাতুয়া…
ওরা রা-টি করে না
চুপিসাড়ে এসে
চুপিসাড়ে চলে যায়

রূপকথা মনে হচ্ছে না?
হ্যাঁ, ঠিক তাই
কঙ্কা ও তার দস্যি ভাইয়েরা
রূপকথার দেশেই থাকে

ধূলার ধরণীতে
ওরা কোনওদিন আসবে না

বায়েজিদ বোস্তামী

মকর জাতক। জন্ম রংপুরে। কবি। গদ্যকার। জীবন ভোগ নয়, উপভোগে আগ্রহী।
প্রকাশিত বই
পাপের পুরাণ (কবিতা, ২০১৯)
গাঙডুবি (গল্প, ২০২১)
আমি যে মরি না তাই (কবিতা, ২০২২)
ইমেইল bostami81@gmail.com

Share