আজ বৃহস্পতিবার, ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

চোখের হদিশ খুঁড়ে তুলে এনো

সে আমাকে দেখছিল
আর আমার ভেতর থেকে আরেকজন বেরিয়ে দুজনকে দেখতে শুরু করল

রাস্তাটা যে মোড় থেকে বেঁকেছে
সেখানেই থমকে আমরা
আর ঝরা পাতা শুকনো পাতা
ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছে
বালি সরে যাচ্ছে

হাওয়া নেই
রাত নিকষ

আমরা হাতে হাত রাখতে চাইলাম
ঠাণ্ডা হাড়
বরফের নখরা

একে অপরকে ছায়া ছুঁড়ে ছুঁড়ে
মারতে চাইলাম আমরা
কিন্তু মানুষের হত্যার ইতিহাসেও
এতো কৌতুক

তখন কথা ফুরোয়
শ্বাসাঘাতের সংকট আর
জ্বিহায় তীব্র মাদকের নিশিডাক

কার্নিশে কার্নিশে মৃত্যুর নাচ
জমে ওঠে
আমরা ঘুমোতে ভুলে যাই

এইভাবেই স্মৃতিরা বেপথু
বিশ্বাসঘাতক

অতর্কিত ছুরিকা এক
দৃষ্টির চোখ চিরে খুবলে আনে

সে আর আমাকে দেখতে পায় না
আমিও দেখতে পাই না
আমার ভিতর

সে ছিল কিনা
সে আছে কিনা

হেরে যাওয়া স্বপ্নগুলোর লাশ
শকুন চঞ্চুর নিচে বিছিয়ে রাখছি
আর ঘুণ আর উইয়ের আগ্রাসী রাজ্য বিস্তার

ঘড়ির কাঁটা আর ডাকবাক্সে
পারমানবিক ছাই

এভাবেই সংযোগ ছিন্ন হয়
এভাবেই বিস্মরণের শুরু

গণ-খরা মগজে মগজে

যেন বিড়াল নখের কাছে
রেখেছিলে চিঠি

আদরের অক্ষরগুলি
ফালাফালা অক্ষরগুলি

হাওয়ায় হাওয়ায়
রক্তের ঘ্রাণ

ঝরে

তীব্র যন্ত্রণার মধ্যে
একটা সিগারেট ধরানোর স্বাধীনতা

আপাতত এটুকুই থাক …

অনভ্যস্ত ছায়া ফেলে রেখে
তুমি চলে গেছ নারকীয় শীৎকারের পথে
মেঘে মেঘে পড়ে আসে বেলা
সংলগ্ন সভ্যতার ছাই উড়ে এসে ঢেকে দেয়
পরাগ মিলন প্রক্রিয়া
বিলম্ব নিথরতা
মগজের কোষে কোষে বাসা বাঁধে
কথার জবাব দিতে দেরী হয়
ঠিকানা খুঁজতে দেরী হয়
চিঠি লেখার হাত নিয়ে
ডাকবাক্স অবধি পৌঁছতে, দেরী হয়

কর্কট দিনাতিপাতের দাঁত
গেঁথে গেল সে কোন অপরাহ্ন দীর্ঘতম হলে
একান্ত শ্বাসাঘাত
ক্লান্ত করে আরও
বলেছিলে একদিন, নিকট কূপের কাছে
রেখে যাবে বিজড়িত স্মৃতি সংবেগ
যদি চাও, চোখের হদিশ খুঁড়ে
তুলে এনো
বলেছিলে একদিন
রেখে, চলে যাবে কুয়াশার আলপথ ধরে
সেই কথা
ট্রামপথ আলগোছে শুনে ফেলেছিল
ঘড়িতে ন’টার কাঁটা সেই থেকে ফেউ ডাকে
সেই থেকে
ঘুমোতে পারো না আর রাতে

ধ্বনি বিষে কাতর জরজর এ সভ্যতা
তোমাকে শিক্ষা দিলো
একাধারে হত্যাকারী ও নিহতের পাঠ বিনিময়
ভালবাসা কোন ফাঁকে ভুলে ভরা
কানাগলি গর্ভে সেঁধোয়
তার কাছে গমন অগম বাস স্টপে
কোথা থেকে বাঘ এসে থাবা চাটে
কাক ও শৃগাল জুটি একসাথে বলে ওঠে

এ সব ক্ষয়ের সংকেত তুমি ক্যাকোফেনি
কাঁটা বেছে বেছে উদ্ধার করে আনো
বিলুপ্ত কাছে থাকা লিপির আগ্রহ
তুমি আরেকটু বসে যাও থেকে যাও আরও
কিছু ক্ষণ

দিনশেষে শুধু
আর একটা সিগারেট ধরানো
আপাতত এটুকুই নতুন বিস্ময় থাক

স্বাধীনতা থাক …

তুমি শুয়ে আছো
আর জানলার বাইরে থেকে স্বপ্ন
তোমার ঘুমন্ত চোখ
ডেকে নিলো

আমলকি গাছের তক্ষক
প্রহরে প্রহর গুণে যায়
এখনও জাগলো না
না শরীরে না স্বপ্নে না উচ্চারণে

তুমি তখন কাতর
কাদায় লেপা অস্বচ্ছ স্ফটিক
না বিশুদ্ধ কাচ না পারদ দর্পণ না স্ফুরিত বিস্ময়

তুমি শুয়ে আছো
তোমার ঘুমের ভেতর
ঢুকে পড়ল তোমার বিস্মৃতির খসড়া
এমন এক স্থির জলের ইতিহাস
স্মৃতি ছুঁড়ে দিলেও তরঙ্গ ওঠে না
না লিপি না স্বর অথবা সংযোগ

ঘুম শুধু ঘুম যেন নিকষ পাথর

প্রহরে প্রহর গোণে তক্ষক
কে জাগে

কয়েকটা কথা বলার
মাত্র কয়েকটা

গুণতে বসলে
কর গোণার আগেই
শেষ হয়ে যাবে

এমনি
সামান্য

‘দ্যাখো, আমি তোমাকে ভালবাসি
কিন্তু তোমার ভালবাসার দেশটাকে আর
ভালবাসতে পারছি না’

না
বলে দিলাম তাই

জন্ম ১৯৬০, নিবাস, পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা, ভবানীপুর। স্বাক্ষর। সম্পাদিত পত্রিকা – শব্দ, ক্যানেস্তারা। প্রকাশিত কবিতার বই – অব্যয় সংহিতা (ধানসিড়ি) ‘ক্যাজুয়াল স্বৈরতন্ত্রী (অক্ষরযাত্রা)। প্রকাশিতব্য, ‘চালচিত্র’ (অক্ষর যাত্রা)

 Post Views: 688

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top