তোমার রাধা

পাঁচটি কবিতা

।। অনুভব আহমেদ ।।


তোমার রাধা

আদ্যোপান্ত প্রেম আমাকে নিগূঢ় করে।
তোমার সাড়াহীন শব্দরাজির বলয়ে
আমি নতজানু রাধা
বাঁশির বিষ ধারণ করে বুকে
শস্যের তলায় গোঙানো সবুজ আর
পত্রালীর অর্কেস্ট্রায়
চোখ নিভিয়েছি জলে

বালির দেশে হারিয়ে আসা তোমার হ্যাটের মতো হারিয়ে যাবো-
মৃত্যুর ডাকবাক্সে

প্রেমিক জলের আবর্তে প্রলম্বিত অপেক্ষায়

আমি রাধা
তোমার রাধা
বুকের আর্গল খুলে আমাকে সমাহিত করো প্রিয়। 


রূপ

সে পুরুষ
তার আড়মোড়া ভাঙা পেশী দৃঢ় করে আমার কাম
সেই ঠোঁট –
কুয়াশামগ্নতা ভেঙে জাগায় যেন কোনও মোহিনীকে

সেই আঙুল-
ইশারায় আরও কয়েকশো রাইন বইতে পারে অবলীলায়

সেই চোখ –
কোনও আলো জলাধারে
পানকৌড়ি হয়ে আমি ডুব মারি সে সুন্দরে।

তুমি দেখোনি তাকে
তার শরীর তেপান্তরের মাঠ
আমি সারারাত জেগে বাঁশি বাজাই।


বাহাস

এখানে নিনাদ অতল
ফসলের উষ্ণতায় কুঁড়েঘরগুলো দোলে
সেলাই মেশিনের ক্ষিপ্রতায় প্রেমিকরা এসে দাঁড়ায়
তাদের শরীর থেকে গলে যায় সুঠাম
এখানে ব্যথার পাশে এক দূরত্ব-
মানুষের বেশে
নেমে আসে-
পথের ধারের কেও-বন
অনেক নিঃসঙ্গতা ছুঁয়েছে এ বাতাস
এ বাতাস জানে, মানুষের জীবন পাখিদের ক্লান্তিকর বাহাস।


পুনর্বার

মর্মর অশ্রুত পাতাদের ভেঙে
তোমার বাড়ির ঘাসে শিশুর হাতের ছোঁয়া
মৃত ছিলাম –
তুমি আবার জন্মালে প্রেমিক হয়ে
দক্ষিণে হাওয়ার উতলে
আমি এখনও চড়ে বসি অচিন ঘোড়ায়
ঘাস, লতাপাতা আর প্রজাপতির আদিম দ্বীপে
বুনে রাখি কোমল বয়েস
মাঠের ধারের রাখাল বাঁশি
পথ ভুলিয়ে দেয় বহু মর্মকথার
আমাকে ধরে রাখো-
বিরলপ্রজ বৃক্ষের শিকড়ে
আদিম গুহায় ধরে থাকা প্রদীপে।


রেইন রেইন গো অ্যাওয়ে

তোমারে ব্যথায় রেখে আমি একাই হাঁটি। শহর দাঁড়ায় থাকে বৃষ্টি মাথায়। কোথাও হয়তো দূরেই বাচ্চারা চিৎকার করে রেইন রেইন গো অ্যাওয়ে! আমি কোথায় যাবো ভেবে তোমারে দুঃখ দেই। শহরের দুই একটা পুরুষ আমারে ধাক্কা মেরে চলে যায়। আমি দাঁড়ায় থাকি। বৃষ্টি মাথায় হাঁটতে হাঁটতে দেখি জারুলের থোকা

জারুলের মতোন তুমিও কি এতোটা বেগুনী হও আমার দেয়া ব্যথায়?
আমি কৃষ্ণচূড়ার লালে খোলা চুলের এক মেয়েরে দেখি, যার পাশ থেকে তুমি বারবার তুমি নেমে যাচ্ছো প্ল্যাটফর্মে। তোমাকে ঘিরে ফেলছে খুচরো প্রেমিকারা। তারা হাসে, টোল পড়ে। ঢেউ ঢেউ কবিতায় তারাও তোমারে ভালোবাসে, আমারে দুঃখ দেয়। তোমার শরীরে একটা বর্ষাকাল হয়ে ফুটে থাকার ঘোরে আমার জ্বর আসে। তুমি ভুলে যাও ব্যথা। আমি কেবল তোমারে ব্যথা দিতে পারি, দুঃখ দিতে পারিনা।



অলঙ্করণ: বৈশালী

অনুভব আহমেদ

জন্ম: ১৯৯৩ সন। নিবাস গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সিলেট জেলায়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে হিসাববিজ্ঞানের ছাত্রী।

Share