সিজ্জিল

।। শাদমান শাহিদ ।।

এই তো দেখছি, যা আশঙ্কা করেছিলাম, তাই! এই বুঝি নতুন ফ্যাসাদে জড়িয়ে যাচ্ছি, বিষয়টা তৃতীয় কারও কানে পৌঁছানো মানে মহল্লায় আমার বাড়িটা একটা জ্বীনের বাড়ি হিসেবে পরিচিতি পাওয়া।বাড়তি একটা হাঙ্গামায় পড়ে যাওয়া। ভাবলাম, এই মুহূর্তে তাকে না ক্ষেপিয়ে, বরং সিজ্জিলের জন্যে অপেক্ষা করা যায়।অথবা এই পাগলটাকেই ব্যবহার করে সিজ্জিলের খবরটা নিতে পারি। সিজ্জিলের খোঁজ পাওয়া মানে, সব সমস্যার দাওয়াই।আমি মনের কথা মনে রেখে লোকটার হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে বললাম।

অনেকদিন ধরেই খেয়াল করছি একজন জটাধারী সন্ন্যাসী আমার বাড়িটা ফলো করছে। যখন গাড়ি নিয়ে বের হই, দেখি, লোকটা কখনো গেইটের সামনে, কখনো গলিটার মাঝামাঝি, কখনো আবার আরেকটু এগিয়ে এসে মতি মিয়ার চা-দোকানে। বিষয়টা চোখে পড়েছে মতি মিয়ার, বলল. লোকটা যেখানেই বসে না কেন চোখদুটোকে তীরের মতো তাক করে শুধু আমার বাড়িটার দিকে নাকি চেয়ে থাকে।

ব্যাপারটা কী! তবে কী সিজ্জিল এসেছে! নিশ্চয়ই এসেছে, নাহলে এ ধরনের লোক আমার বাসা ফলো করবে কেন? আবার এও ভাবি, সিজ্জিল এসে থাকলে নিজেকে এতদিন লুকিয়ে রাখত না, কবেই সামনে এসে দাঁড়াত, এতদিন কোথায় ছিল, কেন ছিল, শেয়ার করত। তা যখন হয়নি, তখন জ্বীন সংক্রান্ত কিছু নয় নিশ্চয়ই। হয়তো লোকটা অন্যকোনও মতলবে আবির্ভূত হয়েছে। হতে পারে তন্ত্রসাধনায় কোনও সিদ্ধলোক। হয়তো আমার বাড়িতে রাশিচক্রের কোনও লক্ষণ পেয়েছে, যা আয়ত্ত করতে পারলে জীবন তার সার্থক হয়ে ওঠে। গোয়েন্দাও হতে পারে। পৃথিবীর মানচিত্রে নানা কারণেই গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট বাংলাদেশ। সে হিসাবে ইন্টারন্যাশনাল কোনও চক্রের এজেন্টও হতে পারে। হতে পারে নেহাত পাগল, এমনিতেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। এরকমভাবে কত পাগলই তো পথেঘাটে ঘুরে বেড়ায়।

এসব ভেবে একসময় স্থির করলাম, যা ইচ্ছে হোক; যদি আমার বিষয়ক কিছু হয়ে থাকে, তবে আজ নয় কাল সামনে এসে দাঁড়াবেই, তখন দেখব নে। এখন ভেবে ভেবে সময় নষ্ট করার কোনো মানে হয় না। নিজেকে নিয়ে যেভাবে ছিলাম, সেভাবেই থাকতে শুরু করলাম। তবে চাইলেই কি সবসময় একরকম থাকা যায়! সময়ের প্রেক্ষাপটে অনিচ্ছে সত্তে¡ও মানুষকে বদলে যেতে হয়। আব্বা-আম্মা এবং সাহানার মৃত্যুজনিত কারণে যে শীত আমার ভেতরে বাসা বেঁধেছিল, আমি না চাইলেও খেয়াল করলাম, তা অনেকটা ফিকে হয়ে এসেছে। 

আর বসন্ত নয়, উষ্ণতা নয়, কেবল শীত, ঘন অরণ্যের মতো গাঢ় শীতই হবে আমার জীবনে একমাত্র অবলম্বন। ওটার ভেতরই মাঘের সন্ন্যাসী হয়ে কাটিয়ে দেব বাকি দিনগুলf এসব ভেবে যে জীবনকে একদিন দূরে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম, খেয়াল করলাম, সে দূরে কোথাও যায়নি, লুকিয়েছিল আমারই ভেতর। সুযোগ পেয়ে এখন ধীরে ধীরে নড়েচড়ে ওঠছে। ব্যক্তিগত আচার-আচরণের সাথে তুলনামূলকভাবে পোশাক-আশাকেও অনেকটা যত্নশীলতার ছোঁয়া পড়েছে। 

অপরদিকে কলিগদের সামনেও রাশভারি ভাবটা অনেকাংশে কমিয়ে দিয়ে সহজ হয়ে উঠতে শুরু করলাম।এতে করে তারা যেমন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল, প্রাণ পেলাম আমিও। নিজেকে মনে হতে লাগল এ্যাকুরিয়ামভাঙা মাছের মতো, নিচ্ছিদ্র দমবন্ধতা থেকে মুক্তি পেয়ে বিশাল সরোবরে পড়ে কেবল ঝলমলিয়ে ওঠছি।পরিবর্তনের কুইনাইন শুধু যে আমাকেই অভিভূত করে তুলছে, তা নয়, একসময় খেয়াল করলাম, অফিসেও এর প্রভাব পড়েছে।জুনিয়র কলিগদের যারা একসময় যমের মতো ভয় করতো, আমাকে এড়িয়ে চলাটাকে বেঁচে গেছে বলে ভাবত, এখন তারা অনায়াসে কাছে আসে। ভালোবাসে। যে কাজ আগে দশবার তাগাদা দিয়ে আদায় করতে হতো, এখন তা বলা মাত্র হাসিল হয়ে যায়। একটা স্ক্রিপ্ট টাইপ করতে হবে, অপারেটরকে বলা মাত্র তার দশ আঙুল যন্ত্রের মতো প্রস্তুত হয়ে যায়। 

এখানেই শেষ নয়, সম্পাদকমহোদয়ও খাতির করতে লাগলেন। বিয়ের উপযুক্ত তাঁর একজন শ্যালিকা আছে জানি, এজন্যেই কিনা বুঝতে পারি না, ইদানিং বেশ কাছে টানতে লাগলেন। বাসায় ভালোমন্দ কিছুর আয়োজন হলেই দাওয়াত দেন, কখনোও কখনও টিফিনবক্স করে নিয়ে আসেন। বন্ধুর মতো এক টেবিলে বসে গালগল্প করতে করতে খাই।সম্পাদকের নজরানা হিসেবে নিয়মিতপ্রাপ্ত বোতলেও আমার অংশিদারীত্ব স্থাপন হয়। কখনো ভাগাভাগি করি, কখনও ব্যাগে করে বাসায় নিয়ে আসি। এতে করে কিছু সুবিধা যেমন হয়েছে, অসুবিধাও কম হয়নি।সিনিয়র সাংবাদিকদের মধ্যে যারা এতদিন পাত্তা দিত না, তারা ঈর্ষা করতে লাগলেন। পদোন্নতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে বেতন-ভাতা বৃদ্ধি পাচ্ছে দেখে দুয়েকজন ঈর্ষাকাতর হয়ে শত্রুতা করতেও পিছপা হচ্ছে না।

তারপরও আমার ঝলমলিয়ে ওঠা থেমে নেই। বরং কী কারণে যেন সম্পাদক মহোদয় আরো বেশি করে কাছে ডাকেন।ভরসা করেন। যেসব অফিসে তিনি যেতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন না, সেখানে রিপ্রেজেনটেটিভ হিসেবে আমাকে পাঠিয়ে দেন।কোনওখানে নক করলে লাখ টাকার বিজ্ঞাপন পাওয়া যাবে, তিনি বসে বসে ছক আঁকেন, বাকিটার দায়িত্ব আমার।বিদেশ থেকে গুরুত্বপূর্ণ কেউ এল তো, সবার আগে আমারই ডাকে অমুক দেশের বাণিজ্যমন্ত্রী এসেছে, শাহিদ সাহেব একটা লাইন-ঘাট করেন, যেভাবেই হোক তাঁর সাথে এমডি মহোদয়ের একটা সম্পর্ক গড়ে তোলা চাই। 

এ জাতীয় যেকোনো প্রস্তাব এলে সানন্দে গ্রহণ করি আমিও। সাংবাদিকতার বাইরে লেখক হিসেবেও আমার বাড়তি পরিচয় আছে।লেখার স্বার্থে আমার অনেককিছুই জানার দরকার পড়ে। না হলে রবীন্দ্রনাথের ভাষায় লেখা কৃত্রিম পসরায় পরিণত হয়।আমি চাই না, আমার কোনও লেখা অপূর্ণ থেকে যাক, ইমিটেশনের মতো দুদিনের চকচকানি দেখিয়ে অবহেলায় কফ-থুথু, ময়লা আবর্জনার সঙ্গে পথে-ভাগাড়ে পড়ে থাকুক। আর এজন্যেই যেদিন থেকে কলম ধরতে শিখেছি, খাঁটি মালমশলা নিয়েই কাজ করার চেষ্টা করি। সামনে যে কদিন বাঁচব, সত্যের সঙ্গেই থাকতে চাই। সত্য কোথায় লুকিয়ে আছে, কোন মহলে রেখেছে, সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করতে চাই। আর তার জন্যে দরকার সিলসিলা।সিলসিলায় নিজেকে বাঁধা ছাড়া সত্যকে উদ্ধার সম্ভব নয়।

দেখলাম, সম্পাদক মহোদয়ের রিপ্রেজেন্টেটিভ হওয়াটা একটা সিলসিলা।এটা ধরে পাতাল ভ্রমণ থেকে শুরু করে স্বর্গের দেবীগমন পর্যন্ত করা সম্ভব। আমি লেখক। গল্প-উপন্যাসে প্রয়োজনে দেবতা যেমন থাকেন, তেমনই কখনও কখনও দেবীদেরও রাখতে হয়। আবার কখনও এমনও হয়, দেবীর ব্যবস্থা না করে দিলে দেবতাদের মেজাজ গরম হয়ে যায়। তখন মাতালের মতো যাচ্ছেতাই ব্যবহার করে বসে।কোনও কোনও দেবতা মাঝেমধ্যে এমন দাবীও করে বসে, যা মেটাতে গিয়ে রীতিমতো মাথা গুলিয়ে যায়। বলে, উপন্যাসের প্রধান চরিত্র করবা, পাশে গোটা বিশেক কুমারী রাখবা না, তা কী করে হয়! তুমি কী কিছু না পড়েই লেখালেখিতে নেমে গেছ গা! তুমি কি গ্রীকপুরাণ পড়ো নাই? সেখানে একেকজন দেবতার কতজন করে সেবাদাসী থাকে, দেখো নাই? দূরে যাব কেন, ভারতীয় পূরাণের কথাই যদি ধরি, এখানে একেকজন দেবতার কতজন সেবাদাসী থাকত, খোঁজ-খবর কিছু নিয়েছ? মহাভারত, রামায়ণ, নাথ সাহিত্য, সাধন-ভজন, দেহতত্ত্ব¡ এসব পড়েছ তো?উপন্যাসে এসব দেবতার চরিত্র সার্থকভাবে ফুটিয়ে তুলতে হলে একজন লেখককে অনেককিছু করতে হয়, অনেককিছু জানতে হয়। এসব ভেবেই সম্পাদক মহোদয় যখন বলেন, শাহিদ সাহেব, আজ একবার অমুক অফিসে যেতে হবে, কাল মন্ত্রণালয়, পরশু নীলভবন। আমি তখন দ্রুত বেরিয়ে পড়ার জন্যে আগ্রহী হয়ে ওঠি। আর এসব করেই একদিন টের পাই, আমি এখন দেশের গুরুত্বপূর্ণ মহলে একটি পরিচিত মুখ। বক্তৃতার জন্যে সভা-সেমিনারে ডাক পড়ে, বিভিন্ন চ্যানেল থেকে টক-শো’র ক্যামেরা ফোন করে।

সবমিলিয়ে যখন ভালো আছি, তখন একদিন খেয়াল করলাম, জটাধারী লোকটাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। চৌরাস্তার মোড়, বাসায় ঢোকার গলিপথ, এমনকি মহল্লার আশপাশেও তাকে দেখা যাচ্ছে না। গাড়ি নিয়ে বের হলে যখনই তার কথা মনে পড়ে, গ্লাস নামিয়ে এদিকওদিক চোখ ঘুরাই। কোথাও নেই লোকটা। এতে করে একেবারেই যে হালকা হয়ে গেছি, তা নয়। কি জানি, কোন মতলবে ফলো করছিল, আদৌ কিছু পেয়েছে কিনা, নাকি অন্যকিছু ছিল।এসব ভেবে যখন অনেকটা স্বাভাবিক হয়েই চলাফেরা করছি, তখনই চোখে পড়ে গেল একদিন। দেখি, বাসার সামনে দেয়াল ঘেঁষে গজিয়ে ওঠা মাঝারি সাইজের অশত্থবৃক্ষটার নিচে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে জপমালা। বিড়বিড়িয়ে কী যেন পড়ছে। তখন আর জিজ্ঞেস না করে পারলাম না, জানতে চাইলাম, ব্যাপারটা কী?

জিজ্ঞেস করতেই একটু চমকে উঠলো যেন। আমার দিকে তাকাল ঠিক, তবে সঙ্গে সঙ্গেই কিছু বলল না। দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিল আমার বাসার দিকে। আমি দেখি, সে এমনভাবে তাকিয়ে রয়েছে, মনে হলো পুরো বাড়িটা দৃষ্টি দিয়ে স্কেন করে নিচ্ছতারপর হাতের জপমালাটায় কয়েক তরফা চুমু দিয়ে ঝোলায় ভরে নেয় এবং কোনো কথা না বলে চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। 

কী ব্যাপার, কিছু না বলে চলে যাচ্ছেন যে!

আমি সাধারণত কারো সঙ্গে রূঢ় ভাষায় কথা বলি না। কিন্তু তখন মনে হলো এটা আমার বাড়ি, যেখানে আমার অস্তিত্ব, একটু শক্ত না হলে দুর্বল ভাবতে পারে। কারো কারো চরিত্র তো এমনই, একবার সুযোগ পেলে আর রক্ষা দেয় না।তাই মেজাজটা চড়িয়েই সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।

তখন সে কী বুঝল জানি না।সঙ্গে সঙ্গে তার রহস্যময় ভাবটা কেটে দেয় এবং চোখেমুখে অনেকটা স্বাভাবিক হাসি ছড়িয়ে বলতে লাগল,
– ব্যাপার কিছু না, আবার কিছুও। বাবাজি, আপনে একটু সাবধানে থাকবেন।
– সাবধানে থাকব মানে! কেন, কী হয়েছে?

এবার ঠিক বাড়িঅলার মতোই খিস্তি-খেউড় শুরু করে দিলাম। এবং দেখলাম, সে অনেকটা ঘাবড়েই গেল।

–বাবাজি বোধহয় কিছু বুঝতাছেন না। আপনের বাড়িতে একজন অতিথির আসাযাওয়া আছে।  
– অতিথি মানে! কে?

এই প্রশ্নটা না করাই উচিত ছিল, সিজ্জিল যেহেতু আমার বন্ধু, তখন জ্বীনদের অন্য কেউ আমার বাড়িতে আসতেই পারে। বিষয়টা আগপাছ না ভেবে বোকার মতো প্রশ্নটি করা ঠিক হয়নি।

– আপনে চিনবেন না। আচ্ছা, সময় হোক, যা করার আমিই করব নে।

এই তো দেখছি, যা আশঙ্কা করেছিলাম, তাই! এই বুঝি নতুন ফ্যাসাদে জড়িয়ে যাচ্ছি, বিষয়টা তৃতীয় কারও কানে পৌঁছানো মানে মহল্লায় আমার বাড়িটা একটা জ্বীনের বাড়ি হিসেবে পরিচিতি পাওয়া।বাড়তি একটা হাঙ্গামায় পড়ে যাওয়া। ভাবলাম, এই মুহূর্তে তাকে না ক্ষেপিয়ে, বরং সিজ্জিলের জন্যে অপেক্ষা করা যায়।অথবা এই পাগলটাকেই ব্যবহার করে সিজ্জিলের খবরটা নিতে পারি। সিজ্জিলের খোঁজ পাওয়া মানে, সব সমস্যার দাওয়াই।আমি মনের কথা মনে রেখে লোকটার হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে বললাম।

– বুঝতে পেরেছি অতিথি বলতে আপনি অন্যকিছু মিন করেছেন। ঠিক আছে, আপনি তদবির করতে থাকেন।এমন কিছু হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবেন। তবে একটা কথা, এ ব্যাপারে এখনই পাঁচ কান করতে যাবেন না। যা অনুমান করছেন, কেবল আমার আর আপনার মধ্যেই রাখবেন। যদি সত্যি সত্যিই এমন কিছু হয়ে থাকে, তাহলে আমি আগে কথা বলতে চাই, তারপর যা ইচ্ছে করবেন। 

টাকা কিছু পেয়ে লোকটা বোধহয় খুশিই হল।তবে চোখেমুখে একটা পরিতৃপ্তির ভাব ছড়িয়ে সেদিনের মতো চলে গেলেও এর কদিন পরেই আবার এল।কাজ সেরে সন্ধ্যার পরপরই অফিস থেকে বেরিয়ে পড়লাম।লিফট্ করে নিচে নেমে গাড়িতে উঠতে যাব এমন সময় কে যেন পেছন থেকে হাতের ছোঁয়া দিল। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি, জটাধারী সন্ন্যাসী। আমার মনোযোগ আকর্ষণ করে নিয়ে মৃদু মৃদু হাসছে। হাসির সাথে তার চোখেমুখের এক্সপ্রেশন দেখে মনে হলো, সে একটা খবর নিয়ে এসেছে, যা (তার মতে) আমার জন্যে সুখবর।অবশ্য সিজ্জিল বিষয়ক হলে আমার জন্যে সুখবরই। তাই ভেতরে ভেতরে অনেকটা পুলকিত হলেও বাইরে প্রকাশ করলাম না।চোখেমুখে একটা ভাবলেশহীন ভাব টেনে নিয়ে বললাম, বলুন, কী খবর?

–আপনার খুঁজ করতেই এদিকে এসেছি, সকাল থেকে বাসার সামনে অপেক্ষা করে মনে হলো, সময় ফুরায়া যাইতাছে, যেভাবেই হোক আপনার সাক্ষাত দরকার। তাই লোকদের জিজ্ঞাসা করে অফিসেই চইলা আসলাম।
– এসেছেন ভালো করেছেন, বলুন, কী খবর?
লোকটা তখন ফিসফিসিয়ে বলতে লাগল, কাল পূর্ণিমা, রাত এগার কী  সাড়ে এগারটা দিকে তাইনে আসতে পারে। 

তাইন মানে সিজ্জিল হবে কী! নাকি অন্য কেউ? অন্য কেউ হলে, কে হতে পারে? সিজ্জিলের পরিচিত কেউ কী? নিশ্চিয়ই সিজ্জিলের পরিচিত কেউ, নাহলে আমার বাড়িতে কেন! বিষয়টা মনে মনে ভেবে নিয়ে বললাম, ক্লিয়ার করে বলেন, কে আসবে?
–কিলিয়ার করে এখন কিছু কওয়া যাইব না, তবে তাইনেরে আমি চিনি। আমার ভাবনা হল, আপনারে নিয়া, আপনার কাছে তাইনের কী কাজ। আচ্ছা, যাই হোক, কাল রাত আপনে বাসায় থাকবেন। আগে আসুক, তখন সবই কিলিয়ার হইব।

তার ইঙ্গিতময় কথাবার্তায় যদিও পরিষ্কার কিছু বোঝা যাচ্ছে না, তারপরও মনে হল, এ পথ ধরেই আমাকে এগুতে হবে।সিজ্জিলের কোনও কূলকিনারা যদি ধরতে চাই, তবে এ পথেই। বিষয়টা এভাবে ভেবে নিয়ে আবারও কিছু টাকা দিয়ে বিদায় করলাম।

শাদমান শাহিদ

কথাশিল্পী। বসবাস, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বাংলাদেশ।

Share