কানাগলির শেষ প্রান্তের অন্ধকার

।। প্রত্যুষ বন্দ্যোপাধ্যায়।।

কানাগলির শেষ প্রান্তের অন্ধকার গ্রাস করেছে একটা শহর কেমন ছিল তার স্মৃতি এখন তো ছাই কিছুই চেনা যায় না সবকিছুই নতুন সবকিছু একইরকম ক্লোন কবিতার মতোই ক্লোন চাহিদা সব ভিড় করে আছে একে পাশ কাটিয়ে ওকে ধাক্কা মেরে ঠিক কোথায় যেতে চাইছে ব্যাপারটা এই ধন্দেই হয়তো নির্ধারিত কলার খোসার সামনে চুক্কি খাওয়া আর ঘরে ফেরা

রেজোলিউশন

বিষাদকে বুদ্ধের কাছে পাঠিয়ে
একটু ভাতঘুম সেরে নেওয়া যাক

এক পা এক পা করে
একদম খাদের কিনারে

এরপর রসিয়ে রসিয়ে জীবনটাকে দেখা

তোমার দরজায় তালা ঝুলতে না ঝুলতেই
তোমাকে ভুলে গেছে গলি

অতএব ছায়া গোটাও
খুলে দাও রুমালের গিঁট

তেজস্ক্রিয় ভোর হচ্ছে
বাচ্চাগুলোর স্কুল হাঁ করে গাজর দেখাচ্ছে

আর তুমি বাজারের রঙে মশগুল
অপেক্ষার সামনে একটা আয়না
পিছনে একটা দূরবীন

দৃষ্টিপথের ধাঁধা
মুখ ভেঙচে তাকিয়ে

লাশ গুনতে আবার ভুল হল

ত্রুটিবিচ্যুতি সম্পর্কিত

পদ্ধতিগত ত্রুটি কীভাবে শোধরানো যায় জানা নেই ইনবিল্ট তো ফলে শোধন তো দূর শোধনের বোধন হতে না হতেই বিসর্জনের কাঠি নিয়ে ঢাক হাজির আর কান টানলে মাথা ঝাঁকানো ডিজে

লেখার জন্যে মরিয়া যাপনের একান্ত আমিষ আয়না আর প্রখর পারদে যত ডোবা ততোই ব্যক্তিগত ততোই দমে টান নিজস্ব ঘাতক বলে একজন ফোন পেয়ে চলে গেছে নির্দিষ্ট বাঁকে নেমেসিস এই ক্ষেত্রে পাঠ্যপুস্তক কী কী বলে আর তুমিও কি উদ্ধৃতি ও বিজ্ঞাপনে নিজেকে দেখতে চাও চেয়েছো কখনও এ কেমন চাওয়া গুরু
চাওয়া হলো না

সরে যেতে যেতে সরে যেতে যেতে জল থেকে কতদূরে সেই যে লেটারবক্স থেকে হাত গুটিয়ে নিলো ছায়া আর বাসস্টপে কখন যেন একটা বাঘ হাই তুলছে আর থাবা চাটছে চলে যাচ্ছে বাসের পর বাস কেউ নামছে না হাঃ এইভাবে আসা বন্ধ হয় যাওয়া বন্ধ হয় আসাযাওয়ার পথ বন্ধ হতে থাকে

কানাগলির শেষ প্রান্তের অন্ধকার গ্রাস করেছে একটা শহর কেমন ছিল তার স্মৃতি এখন তো ছাই কিছুই চেনা যায় না সবকিছুই নতুন সবকিছু একইরকম ক্লোন কবিতার মতোই ক্লোন চাহিদা সব ভিড় করে আছে একে পাশ কাটিয়ে ওকে ধাক্কা মেরে ঠিক কোথায় যেতে চাইছে ব্যাপারটা এই ধন্দেই হয়তো নির্ধারিত কলার খোসার সামনে চুক্কি খাওয়া আর ঘরে ফেরা

সমস্ত বিশ্বাসের আগে অ বসিয়ে যাওয়া ওহে পাগলা কম্পোজিটর আপনাকে কুর্নিশ যখন দ্বিধা কাটিয়ে দ্বন্দ্বর মধ্যে ঢুকে পড়ে দেখা গেলো সব তর্ক সব তার্কিক কী অবাক কান্ড ও জ্ঞানে এখনও বাইনারি প্রধান যেন ধূসরতা তুমি কবেকার ফেলে আসা নক্ষত্রের স্মৃতি যেন ধুলিধূসর এ সভ্যতায় তার কোনও উপস্থিতি নেই

এইসব ক্ষেত্রে যেন বাংলা মরণ ও ইংরেজি মোরন ঠিক এক ঠাপ সম-অর্থে প্রাঞ্জল হয়

তুমিও ভেবেছ দূরে যাবে কতদূর সেটা উহ্য থাক কেননা গতরখাকী সময়ের কারুকাজ এতো দীর্ঘ ছায়াপাত বরাদ্দ রেখেছিল ত্রিনয়নে এত জল এ তো সেই প্রচ্ছদ ভালো লেগে গোটা বই কিনেই বেকুব

দাড়ি কাটার অনীহা দিনের মতো ফোন আসে লেখার মাঝে লেখার মাঝে লেখার তেমন কোনও উদ্দ্যেশ্য ও বিধেয় প্রমুখ অ্যাজেন্ডাও নেই অধিকাংশই পড়ছে না চোখ বোলাচ্ছে অধিকাংশই ক্লোন লেখালিখি আর তাই নিয়ে মাচা কবি খাঁচা কবি চর্বির চ্যাবরচ্যাবর

তো তুমি এর মধ্যে কোথায় বাপ কোন ফিকিরে ঘুরছো ঘুরছো কী আদৌ ধপাস পড়ার পর চিৎপটাং শব্দটি লেখা হয়েছিল
এই চোখ এলো যেই দেখা গেল তোমারও করোটি নেই হাঁটুজলে ধাঁধা

বিশদে বিষাদ বিষ স্থানু রেখে একদিকে চলে গেছে ও বাগানে আর কোনও ফল নেই তেজস্ক্রিয় নীরবতা আছে

এতদিন গোপন

কপাল নামক আশ্চর্য গোপালের নাড়ু
হাতে নিলে নেই
না নিলে আছে

অরণ্যে যে কাঁদে
তার চোখ নেই জল নেই
একটা গোঙরানো ভেসে বেড়ায়

তুমি তাকে চেনো
তার শরীর নিয়ে সে কাছে এলে
তুমি আরও একা হও

কোন বিপন্নতার কাছে রাখবে তোমার স্মৃতি
কোন বিহ্বলতার কাছে তোমার বিস্মৃতি
খরাক্লান্ত মেধা তোমার
আঠালো লোভ আর
অন্তর্লীন অসূয়া

দগ্ধতার সময় এসে গেছে
পারষ্পরিক কাদা শানানো ঢিলের মতো
তোমাকেই তাক করে তুমি ছুঁড়ছ
আহত হচ্ছে অন্য কেউ

গলন্ত সময় এসে গেছে
ভেঙে যাচ্ছে সাবেকী চৌকাঠ
খসে পড়ছে শৌখিন পলেস্তরা
সাজানো সংলাপ

ঐ দ্যাখো
সভ্যতার সম্রাট আর অসভ্যতার ভাঁড়
ল্যাঙচানো বিদুষকের ফেলে দেওয়া শালপাতা
চাটতে চাটতে
নরকের কবন্ধ অন্ধকারে মিলিয়ে যাচ্ছে

তুমিও এসো
লাইনে দাঁড়াও
ফালাফালা খুলে ফেলো এতদিনের চামড়া

অথবা চামড়া বলতে তুমি যে সব ফোস্কার প্রহার
এতদিন গোপন রেখেছ

প্রত্যুষ বন্দ্যোপাধ্যায়

জন্ম ১৯৬০, নিবাস, পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা, ভবানীপুর। স্বাক্ষর। সম্পাদিত পত্রিকা – শব্দ, ক্যানেস্তারা। প্রকাশিত কবিতার বই – অব্যয় সংহিতা (ধানসিড়ি) ‘ক্যাজুয়াল স্বৈরতন্ত্রী (অক্ষরযাত্রা)। প্রকাশিতব্য, ‘চালচিত্র’ (অক্ষর যাত্রা)

Share