দ্যাখো, কচুরিপানার রোদে ফুটতেছে মরণ তোমার

।। শান্তা এফ আারা ।।

লোনলি সিমেট্রিতে যাইয়া খুঁজতেছো সুইসাইড সাইলেন্স,
ওইখানে হাড়গোড়, মাটিচাপা, কবর, ঘাসেদের কলরব
নীরবতার চাইতে আর কী বেশি বাঙ্ময়

ফেরো গৃহকোণে,
তোমার একান্ত চার দেওয়ালে

দ্যাখো,
কবিতার মতো বিকেল আইসা জানলার শার্সিতে আলপনা আঁইকা যায়
গ্রিম আলখেল্লায়

না হয় বসো ফটকি তীরে
দ্যাখো, কচুরিপানার রোদে ফুটতেছে মরণ তোমার।

নাই

তুমি আর আমি একসাথে ঘর সাজাবো আমাদের, নান্দনিকতায়।
তাই বর্ষাবিলাস সন্ধ্যায়,
অনলাইনে দেখলাম সাদা রঙের সোফা, ডিভান
রঙ মিলায়ে বেডশীট, জানালার পর্দা কী আড়ং থেকে কিনবা?

ফার্ণিচার কোত্থেইকা কিনি বলতো? হাতিল? নাকি অটবী?
আমার কিন্তু সিম্পলিসিটি বেস্ট লাগে।
সিম্পলের মধ্যে গর্জিয়াস? বাবাগো! কী ক্ষঅ্যাত !

ও হ্যাঁ, অ্যাত্তো বই আমাদের!
বুকশেলফ তো বানাইতে হবে দেয়াল জুড়ে!
ক্রোকারীজ কিনতে হবে অল্প কইরা। ঠিক প্রয়োজন টুকু। সেগুলাও কিন্তু সাদা হবে…

আমি কিন্তু আবার একটু মিনিমালিস্ট আছি। তুমিও? বেশ বেশ!
ঘরবোঝাই জিনিসপত্র কী যে বিশ্রী !
ফাঁকা ফাঁকা বাসা হবে। আরাম আরাম ঘোরাফেরা, হাঁটাচলা।
একটুখানি সোফায় এলায়ে যাওয়া।

গল্প…গল্প…সাদা পর্দা ঈষৎ বাতাসে দোল খায়
স্বপ্ন… স্বপ্নেরা রঙ ছড়ায়
.
ঝড়ো হাওয়া, বৃষ্টি থেমে আসে।
সাদা রঙের দেয়াল উঠাইতে মনে পড়ে

আমাদের কোনও বাড়ি নাই।
তুমি নাই।

আম্মার শাড়ি

অবেলার সোনা সোনা রোদে আম্মা মেইলা দিছেন জংলি ছাপার শাড়িটিরে
বেদনায় আর্দ্র আঁচল শুকাইতে

‘আয় তবে সহচরী, হাতে হাতে ধরি ধরি’ শাড়ীটিতে বসিলো স্নেহ প্রজাপতি
প্রজাপতিটি তার প্রজাপতিনীরে সঙ্গে লইয়া
তাথিয়া তাথিয়া নাচিয়া বেড়ায়
রঙ ছড়ায়

আলো নিভে এলে সন্ধ্যা ছায়াতলে
শাড়ীটির বেদনা শুকাইলে ‘পরে
ভাঁজ করতে শাড়িটি
ভাঁজে ভাঁজে তার স্নেহ প্রজাপতির ডানা আটকাইলো

আম্মা শাড়িটিরে আলমিরায় তুইলা রাখলেন কী ?
.
জানি; আম্মার কোন শাড়ি নাই।
আম্মা শাড়ি পরেন না।

আম্মার নাকফুল

আমার মায়ের নাকফুল ছিলো ঈষৎ লবঙ্গের মতো
তা থেকে বাইর হওয়া অদ্ভুত ঝাঁঝের আঁচ
তাড়ায়ে ফিরছে আমার আজন্ম শৈশব, কৈশোর…

ছোট্ট ওই একটুকরো গয়না কোনদিন চকচক করে নাই
স্নেহের কোমল কমলা সোনা রোদে

বর্ণান্ধ আমি; মায়ের ভালোবাসার রঙ খুঁজতে গিয়া
কেবলই ডুইবা গেছি নিঃসীম অন্ধ অন্ধকারে

দুনিয়ার সব রঙেরে জড়ো কইরা ইজেলে তুলি ছোঁয়াই
আমার দুনিয়া কালো হইয়া যায় নিদারুণ ঘনঘোরে
বরিষে বরিষণ

আম্মার গায়ের গন্ধ জানি;
তবু শ্যানেল নাম্বার ফাইভ বা ডিওর রোজ,
আমার গায়ের গন্ধ হইয়া যায়।

আমি আম্মার সন্তান, আমার গায়ে তার গন্ধ নাই
আম্মার গায়ের গন্ধ, কোনদিন শুঁকে দেখি নাই।

আম্মার সাথে আলিঙ্গন দূরত্ব,
আলিঙ্গনের এপাশে ওপাশে আলাদা দুই পৃথিবী
দু’দিকে দাঁড়ায়া রয়।

সুইসাইড সাইলেন্স

মাঝ রাত্তিরে নিজেরে দেখবা বইলা
তাকাইলা ফুললেন্থ মিররে

মুখ কই?ভাঙা টুকরো টুকরো কাঁচে টুকরো টুকরো
খসে পড়ে আত্মাহীন মুখোশ তোমার; মানুষের।

আত্মারে ক্রুশবিদ্ধ কইরা কোন সে দুনিয়াবী শেকলে
বাঁধলা পদযুগল? বা মন তোমার?

তোমার অস্তিত্বে স্ফুলিঙ্গ হাবিয়ার

লোনলি সিমেট্রিতে যাইয়া খুজতেছো সুইসাইড সাইলেন্স,
ওইখানে হাড়গোড়, মাটিচাপা, কবর, ঘাসেদের কলরব
নীরবতার চাইতে আর কী বেশি বাঙ্ময়

ফেরো গৃহকোণে,
তোমার একান্ত চার দেওয়ালে

দ্যাখো,
কবিতার মতো বিকেল আইসা জানলার শার্সিতে আলপনা আঁইকা যায়
গ্রিম আলখেল্লায়

না হয় বসো ফটকি তীরে
দ্যাখো, কচুরিপানার রোদে ফুটতেছে মরণ তোমার।

তোমাদের মরণ নাই

এক মাংসাশী সকালে জাইগা উঠে
আমাদের আদিম ভোর
জঙলা ফুলে ফুলে ছেয়ে থাকা পথ বেয়ে
সকরুণ আলো এক ফালি
বুকে বিঁধে খঞ্জর

তোমাদের সুবহে সাদিক!
যাও জাগ্রত জনসভায়!
করো প্রাত্যহিক মাংসের বিকিকিনি
ভোজ হও! যাও ভোজন উৎসবে!
শেষ শ্বাসটি নেবে বইলা বাঁইচা থাকো আরো কিছু
সকরুণ

তোমাদের দিনান্তে জঙলা ফুলেদের কিনার ছুঁয়ে ছায়া নামে
ছায়ারা গাঢ়
আলকাতরা কালো নেমে যায়
অন্ধ অন্ধকারে পৃথিবী গহ্বরে

উদিলো চন্দ্র বুঝি?
চন্দ্রগ্রস্ত রাতের গাম্ভীর্যতায় ঢাকা পইড়া যায়
তোমাদের আলো ঝলমলে মেগাসিটী রোশনাই
ফক্কিকার

কাঠ চেরাইয়ের মতো শব্দিছে দীর্ঘশ্বাস
তোমাদেরও বুকের গভীরে
টের পাও?

তবু শ্বাস নাও
মরণের আগে তোমাদের মরণ নাই।

শান্তা এফ আারা

জন্ম ১৯৯৩ সালে, যশোরে। বেড়ে উঠা মাগুরা, যশোর ও ঢাকায়। সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর । পেশায় শিক্ষক।

Share