।। ফাতেমা রিয়া ।।
আমি মোবাইলে সময় দেখি, বিকাল ৫টা। শাইখ ভাই আমার কাঁধে হাত রাখেন। শুধু মনে হতে থাকে বিশাল এক জালে জড়িয়ে যাচ্ছি। জালটা সবেমাত্র সুতো ছাড়তে শুরু করেছে, পেঁচিয়ে নেবার জন্য।
১
আজকে অবস্থা ভাল মনে হচ্ছে না। শাইখ ভাই রেগে আছেন। বারবার সিগারেট ধরাচ্ছেন। এদিক সেদিকে ফোন করছেন। একটু আগেই মজিদ মিয়াকে ফোন করা হল। সে ফোন ধরেই, ‘ব্যস্ত আছি’ বলে কেটে দিয়েছে। শাইখ ভাই সোফায় বসে বিড়বিড় করছেন। ‘কুত্তার বাচ্চার এত সাহস!’
এর মধ্যে মজনু মিয়া এসে জিজ্ঞাসা করল, ভাই চা খাবেন?
রাগের চোটে মজনুকে মারতে পর্যন্ত উঠলেন শাইখ ভাই। আমি গিয়ে থামালাম। আমার দিকে রক্তচোখে তাকিয়ে শাইখ ভাই বললেন, বেলাল খানকির পোলারে আমার কাছে নিয়া আয়।
‘ভাই বেলালে ফোন ধরে না।
‘থাকে কই কুত্তার বাচ্চা?
‘ভাই মালিবাগে।
‘তা লোক পাঠা।
‘পাঠাইসিলাম৷ জানলা দিয়া দেখেই পালাইয়া গেছে।
‘রাইতে পাঠা। ওর বাসার সামনে লোক লাগাইয়া রাখ।
‘রাখছি ভাই। আইজকা রাতের মইদ্যে পাখি ধরমু।
‘বাল ফালাইবি।
শাইখ ভাই সোফায় গিয়ে বসলেন। তার হাত-পা কাঁপছে। এত উত্তেজিত হওয়ার কিছু আছে বলে মনে হয় না। দুই কোটি টাকা তার জন্য এমন কিছু না। ইয়াবার চালানের টাকা থেকে বেলাল দুই কোটি টাকা সরিয়েছে, তার ভাগ কিছুটা মজিদ মিঁয়া পেয়েছে। বেলাল শাইখ ভাইকে না জানিয়ে মজিদ মিঁয়ার জন্য কাজ শুরু করেছে, টাকা ভাগাভাগি করছে এটাই বড় সমস্যা মনে হল। মজিদ মিয়া শাইখ ভাইয়ের বিজনেস পার্টনার। তবে কড়ায় গন্ডায় সবকিছুর হিসাব হয়। আগামী মাসে তাদের বিজনেস আলাদা হবার কথা। এর মধ্যে বেলাল গন্ডগোল বাধিয়ে দিল। এখন আমার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও ত প্রশ্ন উঠবে, নাকি? অলরেডি আমাকে ‘বেঈমানের বাচ্চা, সব বেঈমান’ বলে গালি দিয়ে ফেলা হয়েছে। অপরাধের দুনিয়া টিকে থাকে বিশ্বাসের ওপরে, বিশ্বাসই একমাত্র সুনাম, একমাত্র সার্টিফিকেট।
২
আমার খারাপ লাগছে, মাথা ধরেছে। তবুও শাইখ ভাইয়ের আলিশান ড্রয়িং রুমে খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স করেছি, ভালো চাকরি পাই নি, বন্ধু-বান্ধব অবহেলা করেছে, শাইখ ভাইয়ের এলাকায় এত সম্মান দেখে এটাই মনে হল, ওনার মতো হলেও বা কেমন হয়। আন্ডার-মেট্রিক লোক অথচ মন্ত্রী মিনিস্টারও সালাম দেয়, বুঝে-শুনে কথা বলে। বিসিএস ক্যাডারের থেকে কম কিসে। যদিও মনটা মাঝে মাঝে খারাপ লাগে, বাবার কথা মনে আসে, প্রতিবার বিসিএস সার্কুলার হলেই, বয়স আছে এখনও, দিয়ে ফেল- বলেন।
বুঝাতে পারি না মাসে মাসে তো টাকা আসছে, চাকরির কী দরকার! তবু বাবা মাঝে মাঝে চশমার ঝাপসা কাঁচের মধ্যে দিয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন। কী বলতে চান তা আমি জানি। বলতে সাহস পান না। যে সত্য তিনি জানেন তা উনি আজ নিজের কাছেও বলেন না। উনি এখনো নিজেকে মনে মনে বোঝান, তার ছেলে গার্মেন্টস সাপ্লায়ার, বায়িং হাউজ সাপ্লায়ার, ইপিজেডেও মাঝে মাঝে কাজ করে। তাই তো কোনও অফিস নেই, দোকান নেই, কত ধরনের মানুষ, এক জায়গায় বসে থাকলে কী হয়।
রিটায়ার্ড স্কুলমাস্টার বাবার মাসে মেডিসিন লাগে বিশ হাজার টাকার, মায়ের লাগে পনেরো হাজার টাকার, বোনের প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ার খরচ লাগে মাসে তিরিশ হাজার। মতিঝিলে বাসা ভাড়া বেড়ে গেছে। নিজেকে এটা ওটা বুঝ না দিলে পথে গিয়ে দাড়াতে হবে সেটা মাস্টার সাহেব বোঝেন। আমিও বুঝি, তাই পথ চলে যাই। নিজের পথ।
‘শুভ?
শাইখ ভাইয়ের কথায় ধ্যান ভাঙে। ওনার হাতের সিগারেটটা নিভে গেছে। আমি লাইটার বের করি। উনি সিগারেট অ্যাশট্রেতে ফেলে দেন।
আমি গিয়ে ওনার পাশে দাঁড়াই। উনি বলেন, বেলালের একটা ব্যবস্থা আজ রাতেই করতে হইব।
‘ভাই কী ব্যবস্থা?
‘সব বইলা দিতে হইব কেন?
আমার হাত-পা কাঁপতে থাকে।
‘কাঁপিস না, শিখতে হইব, নাকি?
‘জ্বী ভাই।
ফোন বেজে ওঠে। মাশকুর ওপাশ থেকে বলে, ভাই হারামজাদারে পাইসি।
আমি কিছু বলতে পারি না। শাইখ ভাই আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নেন। ‘ কই তোরা..আইচ্ছা, ওরে নিয়া আমার টংগীর বাসায় যা গা.. আমি আব্বাসরে কইয়া দিতাছি ফ্ল্যাট খুলতে।
শাইখ ভাই ফোন রাখেন। উঠে বলেন, চল টংগী যাই।
আমি মোবাইলে সময় দেখি, বিকাল ৫টা। শাইখ ভাই আমার কাঁধে হাত রাখেন। শুধু মনে হতে থাকে বিশাল এক জালে জড়িয়ে যাচ্ছি। জালটা সবে মাত্র সুতো ছাড়তে শুরু করেছে, পেঁচিয়ে নেবার জন্য।
৩
আমরা টংগী পৌছালাম রাত আটটায়। শুক্রবার তাই জ্যাম ছিল না, মগবাজার থেকে এক টানে চলে আসলাম। আসার পথে শাইখ ভাই গাড়িতে আরাম করে ঘুম দিলেন। ড্রাইভার তা দেখে হাসতে হাসতে বললো, বড় মিশনে যাওয়ার আগে ভাই কড়া ঘুম দেয়।
আমি কিছু বললাম না, শাইখ ভাইয়ের কথা ভাবলাম, চলিশোর্ধ্ব লোক, অথচ দুইশো কোটি টাকার সম্পত্তি আছে আইনীভাবেই। কাগজে কলমে। কাগজে কলমে যা নাই, তার কোনো হিসেব নাই। মজিদ মিঁয়াই তার একমাত্র পার্টনার ইন ক্রাইম, বাকিসব ডিসেন্ট ব্যবসা। গার্মেন্টস, সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, বিস্কুটের ফ্যাক্টরি। এখনও এই লোক নিজে রিস্কি মিশনে যায় এটাও ভাববার বিষয়। লোক দিয়ে যা করায়ে ফেলা যায়, তার জন্য নিজে মগবাজার থেকে বয়ে টংগী যেতে হবে কেন? আমার মাথাব্যথা শুরু হল। মাথার মধ্যে জাল ভেসে ওঠে। শাইখ ভাই ঘুম থেকে উঠে গেছেন ততক্ষণে। নতুন হওয়া ফ্লাইওভার গুলো দেখছেন আর বলছেন, “হাইরে টেকা।”
আমিও মনে মনে ভাবছিলাম,” হাইরে টেকা।”
টংগীতে ওনার বাসা জংগলের মধ্যে। কিছুটা জয়দেবপুরের সাইডে। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে রেললাইন। মেইনরোড থেকে কয়েক গলি পার হয়ে শাইখ ভাইয়ের বাসার গলি। রাস্তা অন্ধকার, ল্যাম্পপোস্ট নষ্ট। বাসাটা পুরোনো। অন্তত চল্লিশ বছর বয়স তো হবেই। এই বাড়ি নিশ্চিত দখল করা বাড়ি, তিনতলা বাড়ি কতকিছুর সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কে জানে!
শাইখ ভাই গাড়ি নিয়ে সোজা গ্যারেজে ঢুকে গেলেন। বাড়ির কেউ একজন কলাপসিবল গেটে তালা মেরে দিলো। আমার ভয় ভয় করতে লাগলো।
আমরা দোতলার ফ্লাটে উঠলাম। পুরো বাড়িতে আমরা ছাড়া কেউ নাই বোঝা গেলো। একজন অবশ্য নিচ থেকে সাথে সাথে আসলো, সে-ই আব্বাস মনে হল। তার মুখ শুকনো, চেহারাতে অদ্ভুত এক কাঠিন্য, চোখ কোটরাগত। কালো প্যান্ট শার্ট পরা। সে শাইখ ভাইকে দেখে খুব উচ্ছ্বসিত মনে হলো, তবে শাইখ ভাই বেশি কথা বলছেন না। তাকেও কি টেনশনে পেয়েছে?
ফ্লাটের দরজা খুলতেই ন্যাপথালিনের গন্ধ এসে নাকে লাগলো, সাথে ফিনাইলের ঘ্রাণও আসছে। সামনের রুমে শুধু একটা চৌকি পাতা, তাতে শতরঞ্জি বেছানো। আমরা ভেতরে ঢুকে গেলাম সরাসরি। বেলালকে দেখা যাচ্ছে। তাকে স্টিলের চেয়ারে বেঁধে রাখা হয়েছে। চেয়ার ধরে আছে মাশকুর আর শাহীন। বেলালের মুখ ফ্যাকাসে। কপালের চারপাশে চাপ-চাপ রক্ত। সে কিছু বলতে চেষ্টা করছে কিন্তু তার মুখ থেকে শব্দ বের হচ্ছে না।
মাশকুর আর শাহীন শাইখ ভাইকে সালাম দিলো। উনি কোনো উত্তর দিলেন না। সরাসরি বেলালের দিকে তাকিয়ে বললেন, কিরে?
বেলাল অসহায়ভাবে তাকিয়ে রইল।
‘তোরে রাস্তা দিয়া কে উঠাইল? তোর মাইয়ার হাসপাতালের খরচ পর্যন্ত দিলাম গতমাসে? দিছি কিনা?
বেলাল মাথা নাড়লো।
‘টেকা দেইখা সইলো না? মজিদ মিঁয়ার লগে পিরিত করতে গেছ। এর লাইগাই রাস্তার কুত্তা পাত্তা দিতে নাই।
মাশকুর আর শাহীন হাসলো। হাসিটা এত কুৎসিত কেন কে জানে! আমি পকেট থেকে প্যাকেট বের করে সিগারেট ধরালাম।
শাইখ ভাই আমার দিকে তাকালেন, তারপর আব্বাসের দিকে তাকিয়ে বললো, দে।
আব্বাস শার্টের নিচ থেকে বিরাট একটা মাংস কাটা ছুরি বের করল। তারপর এগিয়ে দিল আমার দিকে। আমি তাকালাম শাইখ ভাইয়ের দিকে। শাইখ ভাই মাথা নাড়লেন। আমার হাত থেকে সিগারেটটা নিয়ে টানতে লাগলেন।
‘ভাই, আমি..।
কেউ কোনও কথা বলছে না, মাশকুর আর শাহীন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, আব্বাস হাসছে, আর শাইখ ভাইয়ের মুখ ভাবলেশহীন, তিনি অন্যদিকে ফিরে সিগারেট টানছেন।
এর মধ্যে মাশকুর পকেট থেকে স্কচটেপ বের করে বেলালের মুখে লাগিয়ে দিল।
‘আগায় যাও। আব্বাস বললো।
আমি ছুরি নিলাম, শাইখ ভাই শুধু বললেন, গলায়..।
৪
বেলালের লাশের সাথে আমাকে রেখে মাশকুর আর শাহীনসহ শাইখ ভাই বের হয়ে গেলেন। শুধু আব্বাস রইলো আমার সাথে।
শাইখ ভাই শুধু বললেন, কাইল এগারোটায় মগবাজারের বাসায় আইসো। আর কিছু বলার সুযোগ দিলেন না, দ্রুত বের হয়ে গেলেন, সাথে গেলো ওরা দুইজন। অবিলম্বেই গাড়ি স্টার্ট দেয়ার শব্দ শুনলাম, আমার হাতে তখনো ছুরি ধরা। আমি কিছু ভাবতে পারছিলাম না, বেলাল তখনো চেয়ারে বাঁধা, মাথা কাত, চোখ খোলা, গলগল করে রক্তে সব ভেসে যাচ্ছে। তাই হয়ত শাইখ ভাই আর দাঁড়ালেন না। কিন্তু আমি কী করব? আমাকে কেন রেখে যাওয়া হল।
একটু পর আব্বাস বললো, কাজে লাইগা পড়েন।
আমি ছুরি ফেলে দিলাম, বিড়বিড় করে বললাম, কী কাজ?
‘ একটু আগেই আপনে ওনারে মারলেন না? আপনেই ত মারলেন, আমরা ত চাই নাই মারতে।
‘ ক-ক-কী বলেন?
‘ হ। কী যে করেন আপনেরা।’ আব্বাস কয়েকটা রামদা এনে দিল। আর বালতি ভরা পানি, ফিনাইল, ন্যাপথালিন। শুনলাম বাথরুমের কল ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।
আব্বাস আবার বলে উঠলো, দশটার মইদ্যে কাম কমপ্লিট করেন। ব্যাগ আইনা দিতাছি।
আমি রামদা নিয়ে বসলাম। বেলালকে চেয়ার থেকে নামালাম। ওর মুখের দিকে তাকাতে ভয় লাগছে। আব্বাসও রুম থেকে সরে গেল। আমার চিৎকার দিতে ইচ্ছা হল। হঠাৎ বাবার কথা মনে আসলো, মনে হল, উনি ঝাপসা চশমার মধ্যে দিয়ে বিস্ফোরিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। বাবার কাছে যেতে ইচ্ছা হল খুব। আমি বেলালকে মেঝেতে শুইয়ে দিলাম। তারপর ফোন দিলাম বাবাকে, দুইবার রিং এর পর ধরলেন। নরম স্বরে বললেন, কিরে শুভ? কখন আসবি বাসায়?
‘ এই তো বাবা। একটু দূরে আছি। কাজ শেষ করেই আসবো।’ জানি না আমার চোখ দিয়ে এত পানি পড়ছে কেন। কন্ঠটা স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা করলাম।
‘ তোর গলা এমন কেন রে?
‘ ঠাণ্ডা লেগেছে বাবা।
‘ আচ্ছা, তোর মা বলেছে বাসায় পেঁয়াজ নাই। আসার সময় দোকান খোলা পাইলে নিয়া আসিস। কিছু বলবি নাকি?
‘ না, বাবা, এমনিই ফোন দিলাম, আসতে দেরি হবে তো।
‘আচ্ছা।
‘ রাখি তাহলে। আমি ফোন কেটে দিলাম।
আব্বাস পাশে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে এমন ভয়ংকর দেখাচ্ছে কেন জানি না। সে রামদা হাতে নিল। বেলালের লাশ টুকরো করতে লাগল।আমার দিকে তাকিয়ে দ্রুত বলল, বেশি সময় নাই। হাত পা কাইটা দিতেসি। আপনি কয়েক জায়গায় ফেলবেন।
‘ জ্বী।
‘ কিছুই জানেন না দেহি। তাই তো শাইখ ভাই থুইয়া গেল আফেনেরে।
আমি কিছু বললাম না। দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসে রইলাম, আমার পুরো শরীর রক্তে ভেসে যাচ্ছে। চোখের সামনে জালটা স্পষ্ট হয়ে ভেসে উঠল। এখন আমার চারপাশে সুতোগুলো প্যাঁচাচ্ছে। শুধু পেঁচিয়েই যাচ্ছে।
৫
রাত সাড়ে নয়টা। আমি দাঁড়িয়ে আছি টংগী জংশনে। আমার হাতে ৫টা চামড়ার ব্যাগ। মানুষ কি আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকাচ্ছে?
আমি কারও চোখের দিকে তাকাচ্ছি না। কোনও একটা ট্রেন আসলে উঠে পড়ব। আমার কী কাজ এদিকে? আমার কোনও কাজ নেই। কেউ কী ভাবলেও বা আমার কী? আমি কিছু জানি না। প্লাটফর্মে ভীড়ে দাঁড়ানো যাচ্ছে না। আমি একটু সরে দাঁড়ালাম। এর মধ্যে ট্রেনের হর্ন বেজে উঠলো। চট্টগ্রামের ট্রেন এসেছে। আমার বুক ধুকপুক করতে লাগলো। উঠতে হবে, এই ট্রেনেই উঠতে হবে। দাঁড়ানো যাবে না আর এখানে। কোথাও থামা যাবে না, তবুও মুক্তি নেই আর। ট্রেনটা ধীরে ধীরে থামলো, আমি উঠে পড়লাম, টিকেট কাটলাম না, থাক, নেমে যাব দ্রুত। ট্রেন খিলগাও ঢুকলেই নেমে যাব। সেখান থেকে মতিঝিল, ও হ্যাঁ, মায়ের জন্য পেঁয়াজ কিনতে হবে তো। বাবার ওষুধের কথাও জিজ্ঞাসা করা হল না। আছে মনে হয়। না থাকলে তো বলতো। এর মধ্যে মাথায় অন্য এক চিন্তা এলো। সামনের জানালার পাশে এক বৃদ্ধা মহিলা বসে আছে। খুব সন্তর্পণে তার কাছে গিয়ে একটা ব্যাগ রেখে দিলাম, তার সিটের নিচেই ঢুকিয়ে দিলাম। করুন স্বরে বললাম, চাচী একটু রাখি।
বৃদ্ধা মহিলা হাসলেন। স্নিগ্ধ হাসি। আমি চারপাশে তাকালাম, ট্রেনে অনেক দাঁড়ানো যাত্রী। কেউ খেয়াল করছে না আমাকে। শুধু একটা বাচ্চা মেয়ে তীব্র চোখে তাকিয়ে দেখছে আমাকে। সে বসে আছে আমার থেকে একটু সামনে, বামপাশে। সে কি দেখছে? আমি ফ্যাকাসে ভাবে তার দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করলাম। মেয়েটা আরও তীব্রভাবে আমার দিকে তাকালো। আমি ঘাড় ঘুরিয়ে নিলাম। এই তো ট্রেন চলে এসেছে, কাছাকাছিই তো। ঘড়ি দেখলাম, সাড়ে দশটা বাজে। পেঁয়াজের দোকান খোলা পাব কিনা কে জানে….পাব হয়ত।
ফাতেমা রিয়া
তরুণ গল্পকার, উপন্যাসও লিখেছেন। দেশের বাড়ি বরিশাল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন পড়েছেন। সাহিত্য, সঙ্গীত, দর্শন ও রাজনীতিতে বিশেষ আগ্রহ রয়েছে।