।। চিনু কবির ।।
কাশ্মীর
নয়ন ভেঙে পড়ছে
সমস্ত গজব নিয়ে
কিছু একটা পাথরের মধ্যে
গুমরে ওঠে
পেন্সিলে আঁকা কাশ্মীর।
লকডাউন
আর্ট পাখি ভালো উড়তে পারে
এতোদিন পাহাড়গুলো ভুল ছিলো;
রোহিঙ্গা শিবিরের কান্না
কেউ শুনছেনা…
দেয়ালঘড়ি কি শুধুই সময়প্রবাহ-
আন্দাজি বুড়ো হয়ে যাচ্ছি, রাষ্ট্রটা ভাঙছে না
বালের লকডাউন।
লিপি আক্তার
লিপি আক্তার হেঁটে হেঁটে টিউশন বাড়ি
ডাকঘর পেরুলেই বৃষ্টি
লোকে তাকে মৌনজল বলে
সেই জলে আয়োজন করে,
লিপি আয়োজন –
ভাসিয়ে দেয়ার।
লিপি চেপে ধরে,
লিপি মনে পড়ে না- বাবা মা।
মনে পড়ে পাঠ্যবইয়ের লাবণ্য,
চুরি হয়ে যাওয়া শিশুশৈশব,মায়ের সাথে নামতা
ছয় পায়ে হেঁটে হেঁটে দলছুট একা
পূর্বদেশে যায়, মৌলভী পাড়ার দিকে-
ফুপাতো ভাইকে রেখে এলাম হরবোলাদের গ্রামে
হেঁটে হেঁটে টিউশন বাড়ি…
সঙ্গীত মেশানো থাকে যে কোন বাঁকে।
নমরুদের বাদশাহী
(দিদারকে)
কবে থেকে ঘুমোতে যাবার ভয় আমার,
আচমকা চার চাকার কালো গাড়ি এসে দাঁড়ায়।
চমকে উঠি, হাতরাতে গিয়ে ভেঙে যাচ্ছিলাম
আঁধখাওয়া চাঁদ ও বৃষ্টি এসে পড়ে মাথার কাছে;
নমরুদের প্রাসাদ থেকে জারি হওয়া পরোয়ানা-
ধাক্কা খাওয়া সাইকেলও জানেনা কার রোষে পুড়ে যাচ্ছে …
একই রিলে
ছায়া ও ছবিতে
ছকে ও প্রতিবিধানে
তৈরি করা স্ক্রিপ্ট ও প্রেসনোটে-
ভাবছি যেখান থেকে সবগুলো গ্রামের শুরু
দূরে কোথাও মঞ্জরী নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে
বৃষ্টি এসে পড়লেও পতনের শব্দে বেড়িয়ে পড়ছি
হত্যাদৃশ্য, একটি মানুষের অপমান,
কবুল করতে
ঢেকে ফেলা হয়েছে পবিত্র সংবিধান।
আমাদের তৈরি হতে হবে প্রত্যাখানের জন্য
আমাদের ফিরে আসার জন্য-
এসে দাঁড়াও, থামাও…
কোথায় গেলো সেইসব জাদু ও পাতা খেলার
লৌকিক মানুষ,
জেগে ওঠো লোকগাথা-উপকথা
জীবন্ত মানুষ
ছোঁয়াও হাত, ফুঁয়ে, বান ও মন্ত্রে মিশিয়ে দাও,
টেনে নামিয়ে ফেলো- নমরুদের বাদশাহী…
রেহানাজল
রেহানাজলের দিকে- অতিশয় ডুবে যাচ্ছিলাম,
অনেক মাছ ও অন্যান্য যাবতীয় উৎসব নিয়ে
দূরবাহু ছড়িয়ে কী লাভ বলো,
যে নেমন্তন্ন ভুলে এখানে দাঁড়িয়ে আছি
কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল, মাথা নও করে-
সরল বাক্য ও ভাষা ভুলে যাবতীয়
বোধের আড়ালে থেকে যাবো,
এ আমার অগস্ত্যবিহার…
মৃণাল সন্ন্যাস থেকে উঠে এসে এইমাত্র-
আধ খাওয়া জিভ, আমাকে ফেলে দিতে চায়,
মানুষের কোলাহলভর্তি
পৃথিবীর দিকে একবারো তাকাওনি,
লোহার পুলের উপর দিয়ে অনায়াসে
নেমে যাচ্ছিলো অস্তগামী সূর্য-
রেখে দেই সম্ভাষণ, যারা এসেছিল…
অধিকন্তু বিষয়াবলীর ভেতর বেবাক ভুলে
যাওয়া এক আর্তলিপি পড়ে থাকে সেলাই করা
ঠোঁটের কাছে-
বস্তুত ঝুকে থাকা আলো কোনদিকে যাচ্ছে
কিছুই বুঝা যাচ্ছেনা, জোৎস্নারাতের হাহাকার নেমে এলে-
মর্মরধ্বনির পাশে বিষাদের চিহ্ন এঁকে এঁকে
একেকটা গ্রামীণপথ তৈরি হয়ে যাচ্ছে-
কালো সুতায় ভরিয়ে দিচ্ছি শূন্য বোতামঘর
ভুল হয়ে যাচ্ছে পৃথিবীটা…
প্রচ্ছদের ছবি: মোহাম্মদ রোমেল
চিনু কবির
চিনু কবির, কবি ও সম্পাদক। জন্মস্থান ও বেড়ে ওঠা বাংলাদেশের ব্রহ্মপুত্র তীরবর্তী গাইবান্ধা শহরে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। সরকারি কলেজে দর্শন বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন দীর্ঘসময়। লেখালেখির শুরু হয় ছোটকাগজ দিয়ে। দুই দশক ধরে ছোটকাগজ ক্যাথারসিস [১৯৮৩-২০০৩] সম্পাদনা করেন।