মহা-মহাকায় মুখোশ

গুচ্ছ কবিতা

।। রাজু আহমেদ মামুন ।।

“এই প্রতারকের বাজারে প্রতিদিন একশো একটা মুখোশের সাথে ধাক্কা লাগে, মহা-মহাকায় মুখোশ, তারা মহান-বৃহৎ; তাদের সালাম ঠুকতে ঠুকতে অন্যেরা খাবার খোঁজে। তাদের ভাবমূর্তিকে সবাই তওয়াফ করে, সেজদা দেয়— দুটো কারেন্সি নেকির আশায়।”

মরমি জ্যোৎস্নার আয়াত

নিজস্ব নির্জনে গিয়ে মনে হলো
কাঁদি না অনেক দিন।
আবর্জনা জমে আছে আপন উপত্যকায়।

উলঙ্গ শিশুর মতো ডাক পারি-
ও আমার মেঘমালা, ও জমানো মেঘমালা,
আহারে, কত মৌসুম দাঁড়িয়ে এখানে…

নেমে আসো, নেমে আসো আমার বেহুঁশ—
উদাসীনতার প্রান্তে, নেমে আসো প্রবল বর্ষণে।
লোভের-মোহের ক্লেদে ডুবে যাচ্ছি আহা কী করুণ!
ভাসাও আমারে, ধুয়ে দাও চোখের পানিতে।

ও আমার মেঘমালা, নিজস্ব নির্জনে…

আহারে, কাঁদি না কত দিন!

শান্তি

কোনো একদিন শান্তি পাবো বলে
সূর্য নামক ছুটন্ত এক রেলগাড়ীর সাথে
প্রতিদিন দৌড়াই

দিনান্তে ডেরায় ফিরতে ফিরতে
ভাবি,কোন একদিন শান্তি পাবো…

দোজখের মুগ্ধতা

‘আহারে পরান পাখি
অনেক সুখের কষ্ট করেছ গো…’

মুছে দিতে দিতে চিকুরের ঘাম
ফাল্গুনী চাঁদ, রওশন খেলাও ঠোঁটে

বিশ্বাসযোগ্য মিথ্যের মতো
তোমার মেধাবী মুখ

মুগ্ধ এ দু চোখ, যেন পলকে কাটলো
সহস্র বছর

মিথ্যে! তা হোক
তবু এই দোজখের বসন্ত ঋতু
মুগ্ধ করেছে দু’চোখ!

কোনো এক আজকের পাঠ

গতরাতে স্বপ্নে দেখলাম
অজানা এক ট্রেনের কামরায়…

লোক উঠছে নামছে — নানা স্টেশনে
পরিচয় হচ্ছে, কথা হচ্ছে
‘মি গর্দম মি গর্দম’ গেয়ে নাচছে
এক ভার্চুয়াল রুমি, প্রচীন বুড়ো

এক ফেরিওয়ালা এসে
চোখ রাঙিয়ে বললো, তোমার অনেক পাপ!
পকেট উজার করে আমার বাতাসা কেনো
মুক্তি পাবে।

তখন ফেরিওয়ালার চারদিক ঘিরে
নাচছে প্রাচীন রুমি
‘খোদ কুজাও খোদ কুজাগারো খুদকেলে কুজা
খোদ রেন্দে ছুফু কাশত…’

তাঁর গান শুনে মিটমিট করে হাসতেই
থেমে গেল বুড়ো
চোখভরা কৌতুহল নিয়ে বললো, কই যাচ্ছ!
বললাম, যাওয়ার মধ্যে যাই!
ওঁ নিরর্থকতা ওঁ গতি শাশ্বত।

তারপর রুমি গোলাপের সুবাস হয়ে
হাঁটতে শুরু করলো আমার সাথে

আমরা হাটছি আমরা হাঁটছি
ধাবমান ট্রেন অতিক্রম করে
আমরা হাঁটছি দিকশূন্য পুর
যাচ্ছি— বিচিত্র রকম যাওয়ার মধ্যে…

আর এই কথা পাঠ করেছি –
কোনো এক আজকে!

মুখোস দেবতা

এতো ছোট এত ক্ষুদ্র হিসেবে মাঝে মাঝে নিজেকে খুঁজে পাই… যেন মনে হয়, এই জনপুঞ্জে আমি এক নিরাকার! সত্য বটে— তাই আফসোস নেই!

কিন্তু এই প্রতারকের বাজারে প্রতিদিন একশো একটা মুখোশের সাথে ধাক্কা লাগে, মহা-মহাকায় মুখোশ, তারা মহান-বৃহৎ; তাদের সালাম ঠুকতে ঠুকতে অন্যেরা খাবার খোঁজে। তাদের ভাবমূর্তিকে সবাই তওয়াফ করে, সেজদা দেয়— দুটো কারেন্সি নেকির আশায়।

ক্ষুদ্রেরও অনেক রকম বিড়ম্বনা থাকে, দুঃখ থাকে ঘরে বাইরে। সেই যন্ত্রণায় মাঝে মাঝে মনে হয় একটি পবিত্র প্রতারকের মুখোশ আমার থাকলেই বা ক্ষতি কী, চেষ্টা করে দেখি! দু’ একবার সে দৌড়ের মাঠে গিয়ে দেখেছি,ওমা! এ কী! ম্যারাথনের মাঠে আমি এক ল্যাঙরা প্রার্থী!

কাকে বলি— এই অযোগ্যরে করো হে ক্ষমা!

তবু এ সার্কাস সময়ের– অতি ক্ষুদ্র, প্রায় নিরাকার একজন দর্শক। প্রণাম হে মুখোশ দেবতা, আমারে নিলেনা তব তরীতে।


প্রচ্ছদের ছবি- Strolling With Magician, Alla Goniodsky, আমেরিকা, রাশিয়া

রাজু আহমেদ মামুন

কবি ও সাংবাদিক, বাড়ি বরগুনা জেলায়, বাস করেন ঢাকা শহরে। সাপ্তাহিক ধাবমান পত্রিকার সম্পাদক।

Share