ভূঁইয়ার

ছোটগল্প

।। অভিষেক ঝা ।।

মা’কে এমন সব কথা বলেই বাপ গিয়েছিল। আর ফেরে নি। সাতখান দুসাধ ভূঁইয়ারদের হাতে গায়েব হয়ি গেইল । তাতে কী? তাদের দেশের জমি লোপাট হয়ি গেইল। তাতে কী? ই’সবে খুব হল্লার রেওয়াজ ছিল না তখন। তাই সে পোতাকে দেখে, একটু একটু করে বাপকে দেখে। তার পোতা যেদিন বাপ হবে সেইদিন সে নিজের বাপকে পুরা দেখে ফেলবে, সে মানে পোতা। বাপ, তার সাধ সবকিছুতে মুত ধাক্কা মারে। উঠতেই হয়। বাইরে আসে। শালা পুরা বাড়ি কি কাল তার মতোই স্বপ্নে বেঁহুশ ছিল? একখান পাঁঠা গায়েব! মুত মাথায় উঠে যায়! বাকি বকরিগুলো আর পাঁঠাটা হেগে মুতে একসা করে এখন বসে বসে ঝিমোচ্ছে। রক্ত পড়ে আছে ফোঁটা ফোঁটা, শুকনা হয়ে। বুরমারানি গিধড়!

খানিক আগের রক্ত পায়ে মেখে নিয়ে এখানে এসেছে সে। মাটিতে ছিলকে ছিল রক্ত। সেই রক্ত ছড়াচ্ছে এখন ছড়াচ্ছে এইখানে। চোখেই আসে না এমন হয়ে খয়েরিতে রক্ত লাগছে। ছড়িয়ে পড়ছে বুটি বুটি । খয়েরি ঘন হতে হতে কালো হয়ে আছে এখানে। তারও আগের তুঁত ফলের গন্ধের খানিক ছেড়ে এসেছে ছিলকে থাকা রক্তে, চুষকি মেরে । তেমন ধার না থাকলে রক্তের নুনে তুঁতফলের কষাটে টক টের পাওয়া মুশকিল পরের জনের পক্ষে। ঘন খয়েরি এই পশমিনা পথে সে হারিয়েছে অনেকক্ষণ । চলার নিয়ম মেনে একটা খয়েরি থেকে আরেকটা খয়েরিতে গেছে। সেখান থেকে আরেকটায়। পশমের গন্ধে তার চির চেনা পথ। খানিক পরেই মোচড় দিয়ে উঠবে এই জঙলা পশমিনা — সে জানে — ছিটকে ফেলতে চাইবে তাকে। পশম নরম ঝুরিগুলো আঁকড়ে থাকবে আরো খানিক সময়। তারপর ছিটকাতে হবে নিয়ম মেনেই। বাতাস খুঁজে নিবে তাকে। আবার আরেক গন্ধ দিয়েই বাতাস গড়ে দিবে পথ। কিন্তু বহু কাল ধরে এই গাঢ় খয়েরি জঙ্গল স্থির থাকায় তার ঠাওর করতে অসুবিধা হচ্ছে এখন। এগোচ্ছে। চেনা কিছু গন্ধের আশায়। চেনা স্পর্শের কিছু ভরসা পেতে। অবশেষে তার পায়ে কিছু ঠেকে, চেনাই তো? হ্যাঁ, চেনা। আরেকটা রক্ত, এটা নতুন। জঙলার ভিতর দিয়ে ফিনফিনে ঝোরা হয়ে বইছে। এখনের রক্ত। বহুকাল আগে স্বাদ পাওয়া সেই মাটিতে ছিলকে থাকা রক্তের গন্ধও খানিক বাকি আছে মুছে যেতে যেতে এই রক্তে। গন্ধ পায়ে জোর আনে। গন্ধ পেয়ে জোর আসে। রক্তের স্বাদ পায়ে আসতেই সে আবার চনমনা হয়ে ওঠে। এখানে পশম খানিক হালকা। সবকিছুর ফাঁক দিয়ে রোদের ঝিলিক চোখে আসছে এখানে। বড় নিশ্চিন্ত এখন ; এগোয় । রক্ত মাখামাখি হয়ে থাকা এই পথ তাকে নতুন ধড়পড় দেয় দ্রুত। ধাতুর গন্ধে অচেনা ঠেকলো খানিক জায়গাটা। খানিকক্ষণ বেকুবের মত এ’দিক ও’দিক করে। থম মেরেছিল বহুক্ষণ। আবার রক্তের ধারা ধরে এগোতে চায়। বেরোতে চায় এখান থেকে। এগিয়েছিলো খানিক রক্তের খাত ধরে ধরে। বেরিয়ে এসেছে মনে করার ঠিক আগেই খয়েরি ঝুরিগুলোয় পা আটকাবে তার। বড় চেনা ঝুরিগুলির রোমে অস্বস্তিকর এক স্পর্শ ছড়িয়ে পড়বে। অস্বস্তি নিয়েই চলতে হবে। অস্বস্তি নিয়েই চলেছিল । থেমেছে এখন। ঝোরা শেষে পাঁকালো এক আঠার জন্ম দিয়েছে রক্ত। চুপ হয়ে আছে জায়গাটা, ভারি। চলাফেরা আগের চেয়ে অনেক কঠিন ঠেকে এখানে । আবার ধাতুর গন্ধে ভরছে চারপাশ। আগের চেয়ে তীব্র এখন। বড়ই চেনা ঠেকে। বোঝার চেষ্টা করতেই হড়কা বানের মতো রক্ত বয়ে এসে তাকে বুরবক করে ছাড়ে। চুপচুপে, সারা শরীর রক্তে ভারি হয়ে আসছে। ধাতুর গন্ধ এখন গাঢ় হয়ে সবকিছু ছাপিয়ে কেবল নিজেকেই জানান দিচ্ছে। অতি চেনা হয়ে আসছে এই গন্ধের পরিণতি। জঙলা তড়পিয়ে উঠেছে। কালো হয়ে আসা খয়েরি ঝুরিগুলো নিজেদের জায়গা ছাড়তে তীব্র আপত্তি জানালো। এই নরম স্তর ছেড়ে কেই বা উঠে যেতে চায়! এই আপত্তি জানানোর পুরো সময় জুড়ে তার পুরো বেঁচে থাকা বারবার রক্তে ভেজে। অবশেষে থামে বাদামিদের প্রতিবাদ সকল। চারপাশ থম। বাইরের কী এক প্রচণ্ড টানে গুটিয়ে আসছে পশমিনা এই নরম। পশম এখন ভয় পাওয়ায় গুটুলি মারতে মারতে । ভয়ের দাপটে তুঁতফলেরও আগের আকন্দের ফুল উঠে আসে পায়ে। আকন্দ-তুঁত-মাটি লেগে থাকা ছিলকানো রক্ত- খয়েরি পশমিনার ফিনফিন রক্ত এইসব নিশ্চিন্তের আশ্রয় বড়ই অনিশ্চিত হয়ে ওঠে। বড় নিশ্চিন্ত হয়ে এখানে এগুতে থাকা কত কাল আগের ঘটনা এখন। রোদ ঝলকিয়ে ধাতু পুরো ব্যাপারটিকে নিশ্চিত এক পরিণতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। সমস্ত শক্তি একত্রিত করে বাতাস খুঁজতে মরিয়া হয় সে।

গেট ং ১ বন দ র পশ্চি ঙ্গ জ্য স কার

কোনো শালার যদি চারপাশের সঅঅঅব কিছু দেখার চুলকানি না থাকে তাহলে সে দেখতেই পাবে না কাঠের এই গুমটিটাকে। গুমটিটাকে না-দেখার মতো জায়গায় নিয়ে যেতে চারপাশ যথেষ্ট। চারপাশের দেখার মতো চিজের অভাব নাই। চিজগুলির খতিয়ান ঠিক এখনের দেড় ঘন্টা ধরে তার চোখ আর মনে আসার নিরিখে একটা ফর্দ মতো করলে এমনটা দাঁড়ায়:

৫) একটা ষাঁড় চোখ বুজে বসে আছে— পোল ঘেঁষে— সবজির খোসা, মাছের আঁশ, কুশিয়ারের শুখা ছিবড়া, প্লাস্টিক জমে জমে কাঁই হয়ে আছে। ফেলে দেওয়া আধপচা কদ্দু, কালচে হয়ে শুকিয়ে আসা ভিন্ডি, কালা হয়ে গন্ধ ছাড়ানো কেলার প্রতি ষাঁড়টার কোনো লোভ আছে বলে ঠেকছে না। মাঝে মাঝে থলথলে গলকম্বল ঝাঁকিয়ে হ আর ম মিশিয়ে একটা শব্দ বের করছে। চোখ বুঁজে হুম হুম করতে করতেই ছ্যার ছ্যার করে মুতে দিলো। তার মামার বাড়িতে এমনই একটা বুড়া রামছাগল আছে। সারাদিন বসে থাকে। নাদি ছাড়ে। পাতা চিবায়। চোখ বুঁজে থাকে। জমে থাকা কাঁইটায় প্লাস্টিকে মুড়ে কী যেন ফেললো একটা লোক। কোথা থেকে একটা চিল এসে সেই প্লাস্টিক নিয়ে উড়ে ভাগান দিল। চারটা কুত্তাও আসছিল। কুত্তাগুলো আকাশের দিকে চায়।

২) শালা দাদুকে বারবার চেতিয়েছিল বাপ, ‘ই করলক নাহি। হামরারি পুরা কেস খাই যাউন’। ‘ইত্তা ক্ষেতি সরকারি ভিখে পুষাবে?’, দাদু তিখিয়ে উঠেছিল। বাপের কথা দাদু শোনার পাত্র হলে তাকে দাদির হাত ধরে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় এখন! এত দেরি হয় ডাক্তার দেখাতে! সব জায়গায় ভিখমাগনার মত টাকা তুলতে মা আর দাদিকে নিয়ে ঘুরতে হয়! শালা বাস কখন আসবে! একটু একটু কষ্ট হচ্ছে তার।

৯) টাইট গেঞ্জি আর জিনস পরে পাঁচ-ছয়টা মাগী তারা যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেইদিকে এগিয়ে আসে। দিদি সদা স্যারের টাকা মেরে এমন মাগীদের ড্রেস কিনেছিল। চার মাস পর সদা স্যার মাকে ডেকে পাঠায়। বাড়ি ফিরে কঞ্চি দিয়ে দিদিকে লাট বানায়ে ছেড়েছিল মা। ইস্কুলের ব্যাগ ঘেঁটে বার করেছিল মাগী ড্রেস। কাঁচি দিয়ে কুটি কুটি করেছিল। সেদিন রাতে খায়নি দিদি। পরদিন থেকে ফের খেতে শুরু করেছিল। মাগীগুলোর বুকের লেখাগুলো পড়তে চেষ্টা করে সে। চিকচিকায় খুব। চোখে ঝাঁস লাগে। একজনেরটাই পড়তে পারে।

বি ই ডব্লু আই এল ডি
বি ই এইচ ইউ এম এ এন।

৪) বিনা ওষুধে, বিনা বেল্টে, বিনা ব্যায়ামে, বিনা ডায়েটে গ্যারান্টি সহকারে ফ্যাট কমানো হয়— ১০০% পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াহীন। শীর্ষসুখে ভরিয়ে দিন সঙ্গিনীকে; হয়ে উঠুন প্রতি রাতের হিরো— সুখের সাকিন পেতে আসুন আজই। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন ভাবে টাকে চুল গজানো হয়— এইটার ফোন নম্বর সে মনে মনে মুখস্ত করতে থাকলো। যদিও ডাক্তার তাকে বলেছে তার চুল আবার হয়ে যাবে, চিন্তার কিছু নাই। “হ্যাই চ্যাংড়া হ্যাদ্দিকে সরে আয়। আড়িয়া গুঁতায় দেবে। সরে আয়”, দাদি খিঁচায়।

৭) মাঈ গে! কত্ত উপরে বসে লোকগুলো খাচ্ছে! মাথা ঘুরি গেলে গিড়ে যাবে না? ষাট ডিগ্রি থেকে পঁয়তাল্লিশ হয়ে শূন্যতে এল তার ঘাড়।

৩) এইখান থেকে দাঁড়িয়ে কার কার কয়টা মুখ সে গুণতে পারছে তাই দিয়ে সে অপেক্ষাকে ভুলতে চাইলো।একটা বড়কা আলিয়া ভাট। দু’টা বড়কা রণবীর সিং। ছোটকা বিরাট কোহলি একটা। দুই, ছয়, এগারো, চোদ্দো , সতেরো, উনিশটা মমতা। একটা দীপিকা পাড়ুকোন বড়কা। বড়কা করিনা কাপুর একটা। মমতার পাশেরগুলোকে এখানে সে চিনছে না। তার ওখানে মমতার পাশে দোলন মণ্ডলের ছবি থাকে। দু’বারের পঞ্চায়েত। দোলন মণ্ডলের পায়ে ঝাঁপ দিয়েছিল বাপ। বাপের পর দাদুও। ‘কী করনু বলতো! পুরা দুসাধ পাড়াখান যদি বিজেপিরে নিজের ভাতার মানে হামি নাগর হয়ে কী হেইল্পটা করিলবো!’ — দোলন মণ্ডল একটা অসহায় মুখ করে বলেছিল। এগারোটা মোদী। তিনটা অমিতশা, চারটা দিলীপ ঘোষ। দু’টা রামদেব। রামদেবের পাশের চুঁহামুখাটাও দুই। চারটা মেয়েছেলের মুখ সে চেনে না। তিনটা ব্যাটাছেলেকে চেনে না । আর মুখ নাই। পোলে লাগানো কাগজগুলো পড়তে শুরু করে।

৮) একটা বাস এলো। পড়েই বুঝতে পারলো এ বাস তাদের নিয়ে যাবে না। দাদি তাও এগোয়। লোককে পুঁছে। আবার তার পাশে এসে দাঁড়ায়। বাস চলে যায়। পিচ থেকে ভাপ উঠে। দু’টা রাস্তার মাঝে কিছু পাতাবাহার আর কাগজ ফুলের গাছ দেখে চলে সে। তার, লোহা দিয়ে একখান জিরাফের মুর্তিও আছে এগুলার পাশে। তিনটা লোক তীরধনুক নিয়া মূর্তি হয়ে আছে। একটা বগুলা নাকি সারসের মূর্তিও খানিক দূরে। সবই লোহার আর তারের। তিন-চারজন মহিলা আর একদল মাগী রাস্তা পেরিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে আসছে।

৬) কুত্তাগুলার সাথে সাথে সেও আকাশের দিকে চাইল। প্লাস্টিক থেকে নাড়িভুঁড়ি বার করে চিলটা একটা শুকিয়ে যাওয়া ন্যাড়া গাছের মাথায় গিয়ে বসলো। নখে আঁকড়ে ধরে ঠোঁট দিয়ে টান দিল ভুঁটিটায়। মামার বাড়ির কথা মনে আসে। পছিয়া বইতে শুরু করার সময়ের পূর্ণিমায় জঙলি শূয়োর মেরে এনে ফিস্ট দেয় মেজলা মামা। ফরেস্টের লোকদের সাথে খুব খাতির মামার। ফরেস্টের লোকরাও আসে। রান্নাবাটির জুগাড় করে। খেতে বসার আগে ফরেস্টের ড্রেস খুলে দেয় । ড্রেসগুলা ছোটকা মামা ঘরে লিয়ে গিয়ে রাখে। স্যান্ডো গেঞ্জি আর হাফপ্যান্ট পরে চুখচুখ শব্দ করে খায় সবাই। খাওয়া শেষে ফরেস্টের ড্রেস পরে আবার ডিউটিতে চলে যায়। চিলটাকে শূয়োর কাঁধে ঝুলিয়ে আঙনায় পা রাখা মামার মতো লাগছে । তেঁতুলবিছনে তাকে দু’চারবার হরিয়াল মারতে নিয়ে গেছে মামা। বাবলার কাঁটা বাঁচিয়ে কী করে চলতে হয় শেখাবার চেষ্টা করেছে। পায়ে কাঁটা ঢুকলে কী করে আকন্দের দুধ লাগাতে হয় শিখিয়েছে। টিপই করতে পারে না সে। মামা খিস্তায়। ‘দুসাধদের ব্যাটা হয়ে পাখি মারতে পারেক লা ! শালা ভূঁইয়ারদের তলোয়ার দিয়েও হারাইছি, মেশিন লিয়েও হারাইছি রে বারবার’, মামা গুলতি দিয়েই উলটে দেয় হরিয়াল। ট্যাং ধরে নিয়ে এসে চার-পাঁচখান ফেলে দেয় রান্না ঘরে মায়ের সামনে। মা ঝেঁঝিয়ে উঠে। ভোজপুরিতে ঝগড়া করে চলে মা আর মামা। কিচ্ছু বোঝে না সে। ভোজপুরি এক ফোঁটাও জানে না । তার বাপও না। তার দাদুও না। ঝগড়া চলতে চলতে তার বাপকে শোনাবার জন্য তার মামা ভোজপুরি ছেড়ে বাংলা ধরে আবার।
-ইখানে আসি শূয়োর পালা ছোড়ি বকরি পাললে আর পাসোয়ান ছোড়ি রায় হয়ি গেলে কি বংগালি হই গেইল!
তার বাপ চুপ থাকে। তাদের বকরিগুলো কান ঝাপটাচ্ছে। খানিক দূরে জমিতে অল্পকিছু বাঁধাকপি বোনা আছে। শিশির জমছে পাতায়। বকরি, বাঁধাকপি এইসব ছাড়ায়ে খানিক দূরে জঙ্গল। তেঁতুলবিছন। বাবলার পর বাবলা জায়গাটাকে বিনা রক্তপাতে কাউকে না ঢুকতে দেওয়ার শপথ নিয়ে কাঁটাময়। তুঁত গাছগুলো লম্বায় বেড়েছে তাদের রেশম-উপযোগিতা না থাকায়। বাবলার সাথে পাঙ্গা নেওয়ার মতো ধক বইর আর খয়ের ছাড়া খুব কম গাছেরই থাকে। বইর আর খয়েরও রয়েছে বেশ কিছু। বাবলার ভয়ে সরস্বতী পূজা পেরুলেও বইরের গাছগুলায় ঢিল মারতে আসে না চ্যাঙড়া চ্যাঙড়িরা। তাই কুলের হরেক রকম বাস বাতাসে ভেসে এসে নাক ভরায় তাদের। মাঝে মাঝে আকন্দ। এইসব বাওয়ালের মাঝেও চাঁদ ঠিক সময় মেনে উঠে পড়ে। গিধড়ের দল ডাক ছাড়ে।
-বাবা চোহরমলের একটা ফোটো নাই ই বাড়িতে, রোবিন্দরনাথের ছবি লাগায়ে বাবু হোয়েছো! তুয়ার বাপ শালা দো ছটাক জমি পায়ে জ্যোতিবাবুকে প্রণাম করেলকে জ্যোতিদেওতার কাহানি শুরু কর দেওন আর জগদীশ মাহাতোর নাম অবধি ব্যাটাবেটিকে বলতে পারেক লা?
বাপ চুপ করে একমনে গিধড়ের ডাক শুনে চলে। মা ফের ভোজপুরিতে খেঁকিয়ে মামাকে চুপ করাতে থাকে। দাদু উঠে আসে বিড়ি ফুঁকতে ফুঁকতে। মামার দিকে তাকায়। ঘড়ঘড়ে গলায় বলতে থাকে,
-জগদীশ মাস্টারের পিছত ধরার দম কয়ডার ছিল শুনি? সে দম থাকিলে রামবিলাস পাসোয়ান আর উর বেটি পয়দা হতো না আর। শুধু চৌত্রিশটা ভূঁইয়ার মারি দিলেই কি নকশাল হওয়া যায়?
এইসব কিছু তার মাথায় ঘুরতে ঘুরতে আকাশে বোঁওও কেটে চলা চার-পাঁচটা চিল হয়ে গেল। খোলা ছাদে বসে কিছু লোক খাচ্ছে। বাঁশ বেয়ে বেয়ে নেমে আসছে কিছু লোক। তার পা শিরশিরায়। মনে হয় এখনই ধপ করে পড়তে থাকবে। পড়তে শুরু করলে আর থামবে না। প্রথম দিন তাকে যখন মেশিনের সামনে বসিয়েছিল তার মনে হয়েছিল আর বাঁচবে না। বেশিক্ষণ লোকগুলাকে দেখলে তার মাথা চক্কর কাটবে। লোকগুলা ওই উঁচু খোলা ছাদটায় খাচ্ছে। ছাদটাই কি লোকগুলাকে খাচ্ছে নাকি? মাথা ঘুরপাক দেয় তার।

১) প্লাস্টিকে ভরে কত্ত বড়কা বড়কা হাওয়াইমিঠাই বিক্রি হচ্ছে। এত বড়কা হাওয়াই মিঠাই সে আগে দেখে নি। সাদা হাওয়াইমিঠাইও দেখে নি। প্লাস্টিকে ভরা আছে গোলাপি আর সাদা। তার দাদু ছোটো ছোটো গোল গোল হাওয়াইমিঠাই নিয়ে আসে হাটের দিন। গোলাপি গোলাপি।

”বাস আসি গেইল রে দাদি”, দাদির হাত ধরে টান দিলে সব ৬-৮-২-৫ সব ঘুরপাক সিট পাবে কিনা’তে এসে ঠেকে। দাদি খালাসিকে গিয়ে বলে, ”কাঞ্ছারের রুগি হো, দুইঠো সিট কর দিলহো রে ভাতিজা…”। তার কখনোই সঅঅঅব দেখার আর সব জানার চুলকানি নাই। তাই মুড়ির টিনের মতো একটি বাস এলে সে আর দাদি উঠে পড়ে। ২৩ কিমি বাস। ৭ কিমি টোটো। ৪ কিমি আল। মা বকরি বাঁধার খুট্টিগুলো সব তুলে ফেলেছে। উললললললললু উলললললু উলললু উল ল — দিদি তুলসি গাছের সামনে। খানিক দূরে তেঁতুলবিছনের বন। বাবলা গাছগুলোর উপর চাঁদের আলো ছ্যাতড়াতে শুরু করেছে। এমন সময়কে তার চিরকাল বলে মনে হয়। সবকিছুকে ভালো ঠেকে। সে ভুলে যাচ্ছে তার অসুখ হয়েছে। তার বাপ দাদুকে সে দেখে নি তিনমাস। কাঠের গুমটিটায় তিন’চারটে লোক চা আর ডালেরবড়া খেতে শুরু করেছে তখন। গুমটিটার গায়ে একটা কাঠের বোর্ড। ফ্যাকাসে হয়ে এসেছে লেখাটা। প্রয়োজন বুঝেই অক্ষরগুলি নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে। গুমটিটা প্রয়োজন বুঝে উঠতে পারে নি কিংবা প্রয়োজন বুঝেই রয়ে গেছে। চোখে চাপ পড়ে বোর্ডটা পড়তে। খুবই ক্ষুদি ক্ষুদি অক্ষরে লেখা।

”লগা ফাঁদে বগা কাঁদে, কাম হবেই হবে জানতাম”, গুড়াগুর একটা হাল্কা রেখা ঠোঁটের পাশ দিয়ে গড়িয়ে পড়ল। মাড়িতে যথেষ্ট সংখ্যাক দাঁত থাকাকালীন গুড়াগু মুখে নিয়ে সে অনায়াসে কথা বলত, এক ফোঁটা গুড়াগু বেরিয়ে আসত না। এখন গুড়াগু ছাড়া মুখেও কথা বলতে তার অসুবিধা খুব। থুতু ছিটকায়। এইসব দিয়ে তার সাদা চুল বোঝে চিরকাল বলে আসলে কোনো কাল নাই। তারা এখনো শূয়োরই পালতো চিরকাল থাকলে। চিরকাল থাকলে তার পোতা-পোতিকে ইস্কুলে নিত? চিরকাল থাকলে তার দাদি এখনো হাঁটতো। শূয়োরের পাল লিয়ে তার দাদি সার সার তেঁতুল গাছের ভিতর দিয়ে হাঁটছে। দাদির প্রতিটা চুল সাদা। সাদা চুল লিয়েও দাদির পেট হয়েছে। তেঁতুল পাতাগুলার ছায়া দুপুরকে ঢুকতে বাধা দিচ্ছে। তেঁতুল ফেটে পড়ে আছে অনেক। দাদির পিছন পিছন সে। দাদি গান ধরেছে। দাদিকে সে কোনোদিন গাইতে শোনে নি এই গান। তার মা ধরে এই গান। দাদি গাইছে-

‘দিনোয়া গিনত মোরি ঘিষলি উঙ্গারিয়া
কি রহিয়া তাকত নয়না ঢুঁড়াই রে বিদেসিয়া
জিয়ারা উমঙ্গ আশ আঁশুয়া ম্যায় ঝুরাই রে বিদেসিয়া
কি রহিয়া তাকত নয়না ঢুঁড়াই রে বিদেসিয়া
দিনোয়া গিনত মোরি’


শূয়োরগুলো বকরির মতো ডাক ছাড়ছে কেন? দাদি তেঁতুল খেতে খেতে একটা তেঁতুলগাছে ঝট করে উঠে পড়লো। তেঁতুলগাছটায় ঝড় লেগেছে যেন। গোটা বনটা জুড়ে তেঁতুলগাছগুলো কাপছে। টুপটাপ করে তেঁতুল পড়ছে। পড়ছে আর ফাটছে। সে ছুট লাগাইছে। সামনেই একগোছা তেঁতুল পড়লো। সে কুড়াইতে এগালো। দেখে একটা তেঁতুল হয়ে পড়ে মাথা থেঁতলে গেছে পোতাটার, টুপ করে । মুত লেগেছে খুব। স্বপ্ন ভেঙে গেছে। ভোর হচ্ছে জানলায়। মুততে উঠতে হবে। পাশেই পোতা শুয়ে। মুখটা ভালো করে দেখে যেটুকু আলো মশারিতে ঢুকছে তা দিয়ে যতটা আশ মেটানো যায় মিটাচ্ছে । মা বলতো তার বাপের মুখ কেটে বসিয়েছে ভগবান তার পোতার মুখে। বাপকে সে দেখে নি। যেটুকু জমিন ছিল দেশে তার দলিল ঠিক করতে দেশে গিয়েছিল বাপ। সে তখন মায়ের পেটেই। যে দেশ ছাড়ি এখানে এসেছিল সেখানেই ফিরে যাবে তারা। মা’কে এমন সব কথা বলেই বাপ গিয়েছিল। আর ফেরে নি। সাতখান দুসাধ ভূঁইয়ারদের হাতে গায়েব হয়ি গেইল । তাতে কী? তাদের দেশের জমি লোপাট হয়ি গেইল। তাতে কী? ই’সবে খুব হল্লার রেওয়াজ ছিল না তখন। তাই সে পোতাকে দেখে, একটু একটু করে বাপকে দেখে। তার পোতা যেদিন বাপ হবে সেইদিন সে নিজের বাপকে পুরা দেখে ফেলবে, সে মানে পোতা। বাপ, তার সাধ সবকিছুতে মুত ধাক্কা মারে। উঠতেই হয়। বাইরে আসে। শালা পুরা বাড়ি কি কাল তার মতোই স্বপ্নে বেঁহুশ ছিল? একখান পাঁঠা গায়েব! মুত মাথায় উঠে যায়! বাকি বকরিগুলো আর পাঁঠাটা হেগে মুতে একসা করে এখন বসে বসে ঝিমোচ্ছে। রক্ত পড়ে আছে ফোঁটা ফোঁটা, শুকনা হয়ে। বুরমারানি গিধড়!
চিরকালের কথা সে ভাবতে গিয়ে ‘ভূঁইয়ার’কেও দোষী মনে করতে পারে না। কিন্তু দোষ আর দোষী সবসময়ই এখনের জন্য , তাই ‘ভূঁইয়ার’ দোষী। ‘ভূঁইয়ার’ও যে তাকে ভূঁইয়ার ভাবছে, এ ব্যাপারেও সে নিশ্চিত। কে কার জায়গার দখল নিয়েছিল, কে কার জায়গার দখল নিয়েছে, কে কার জায়গার দখল নিবে এইসব ভাবতে গেলে খুব চাপ পড়ে বুকে। ভূঁইয়াররাও নাকি আজকাল মোকদ্দমা লড়ে; দুসাধরা সব চাকরির দখল লিয়ে লিয়েছে বলে। তিনটা বকরি আর দুইটা পাঁঠাকে এই ক’মাসে খেয়েছে হারামজাদা। ধরা পড়ার আগেও তো মেরে ফেলেছিস বকরিটাকে! নেহাত একা পড়ে গেছে , তাই এত মুষড়ে আছে। মুষড়াবার আগে কী কম জ্বালিয়েছে! বকরিটার গলায় গিধড়ের হাপকানোর গর্ত। গলা ফাঁক হয়ে বকরিটা পড়ে আছে। ছুট লাগাতে চেয়েছিল পা দুটা, পারে নাই খুট্টির জন্য। দৌড়ানোর ভঙ্গিতেই চিতিয়ে আছে থেমে যাওয়া পা। একটু দূরে গঞ্জে একটা সেয়ানা লোক ধরতে গেছে তার বেটা। লোকটা আসি গেলেই ‘ভূঁইয়ার’-এর হিল্লা হয়ে যাবে। তাদেরও যা ক্ষতি হয়েছে তাদেরও অনেকখানি হিল্লা হবে। মরে যাওয়া বকরিটা খাসি বলে বেচতে পারলে তাও কিছু দাম উঠতে পারে। এইখানে বেচা যাবে না। গাঁ-শুদ্ধ লোক জানে এক মাস ধরি তার বাড়ির বকরি নিয়ে ভাগছে গিধড়। ক্ষতি যা হয়েছে ‘ভূঁইয়ার’কে ধরতে না পারলে দু-তিন বছরেও পোষাতো না। ফরেস্টেও জানাতে গিয়েছিল সে দুইবার। ফরেস্টের লোকরা গায়েই লাগালো না। এই বনটাকে অবশ্য তেমন গা করে না কেউ। শাল, সেগুন থাকলে তাও ফরেস্টের লোকদের নিজেদের চার থাকত। এখান থেকে দশমাইল দূরে মাদারের বন ছিল একখান আর নিশিন্দার ঝোপ। ফরেস্ট থেকে সব কেটে শাল-সেগুন বুনে দিয়েছে পুরা জায়গাটায়। সেই লাভ সরকার পাবে একদিন। তেঁতুলবিছনে হাতি, বাঘ, হরিণ থাকলে তাও লোকে ঘুরতে আসতো। আর বাবলা কাঠের প্রয়োজন আগের মতো থাকলে বনটাই থাকতো না। তার ছোটোবেলায় এই বনে তাও কিছু তেঁতুল গাছ ছিল। এখন একটাও নেই। ইঁটে রঙ আনতে তেঁতুল গাছের গা জ্বালানির জন্য লাগে ইটভাঁটাগুলায়। সব তেঁতুল গাছ তাই খতম। মোটরগাড়ি না আসলে বাবলা গাছগুলারও রামনামসত্য হতো। তার ছোটোবেলায় বাবলা দিয়ে গরু আর মোষের গাড়ির চাকা বানিয়েছে অনেক সে। গরু আর মোষের গাড়িই না লাগলে, চাকার আর কী দরকার? তাই এই তেঁতুলবিছনের বনে সার সার বাবলা বিনা কারণে দাঁড়িয়ে আছে। কারণ ছিল বলেই খরগোশ সব সাফ, থাকতেও পারে কয়েকটা। গুহিসাপ থেকে গেছে। বনমুরগিও অল্পকিছু। আর আছে গিধড়। এখানকার ছিল কিছু। সরকার থেকে ছেড়ে গেছে মেলা। ‘ভূঁইয়ার’ এখানকার নাকি সরকারি ছাড়া মাল কে জানে?

গিধড়টার নাম ‘ভুঁইয়ার’ দিল কেন দাদু সে জিজ্ঞাসা করেছিল। ‘ও বহুত লম্বা গল্প বেটা, শুনতে হবেক লাই’, সরু তার আর লোহার পাত দিয়ে লগা ফাঁদ বুনতে বুনতে দাদু বলেছিল কাল সন্ধ্যায়। লগা ফাঁদের একদিকে বকরিটাকে রাখা হয় বাকি বকরিদের চেয়ে আলাদা করে। বকরির খুট্টিতে প্যাঁচানো থাকে লগার সরুর তার। খুট্টিটা পোঁতায় হয় এমন করে যেন বকড়ি আর গিধড়ের জড়াজড়িতে খুট্টি গিড়ে যায়। আর খুট্টি গিড়ে গেলেই আশমান ভেঙে পড়ার মতো নেমে আসে লগা ফাঁদ। আগেও তিনবার চেষ্টা হয়েছে। তিনবারই ‘ভূঁইয়ার’ বকরি নিয়ে ভেগেছে বেশ কয়েক ফোঁটা রক্ত ফেলে রেখে। খুট্টি অনড় রেখে।  ‘মোবাইলে দেখিস তো বেটা গিধড় কেমন করে ধরা যায় লিয়ে কিছু কাজের কথা পাস কিনা’, দাদু তার হেইল্প চেয়েছিল। বাপের মোবাইল নিয়ে সে খুঁজেছিল: ‘শিয়ালকে ফাঁদে ফেলার পদ্ধতি’। দাদুকে, দাদিকে, মা’কে, বাপকে বলা যাবে না বলে সে দিদিকে গিয়ে পুঁছেছিল, ‘দিদি গিধড় আর মানুষের কী মিল?’। দিদি কিছুই বলতে পারে নি। আর কিছুই সে দিদিকে বলে নি। শুধু ভেবে গিয়েছিল: ছেলেদের ফাঁদে ফেলার জন্য যে প্রশ্নগুলো মেয়েরা করে, যে মেয়ের বিএফ আছে তাকে পটানোর কৌশল, মেয়ে পটানোর ১০০% কার্যকরি একটি কৌশল, ১ মিনিটে মেয়ে পটানোর মন্ত্র এগুলির সাথে নিশ্চয় গিধড়ের কোনো সম্পর্ক আছে। ‘পাই নাই কিছু’, দাদুকে জানালো সে। এইবারও যে ধরা যাবে এ আশা দাদুও করে নি। লটারি লেগে গেছে। মা আর দাদিকে খুশি খুশি দেখাচ্ছে। বাপ লোকটাকে নিয়ে এসেছে। দাদুর কাছ থেকে একটা বিড়ি চেয়ে খেয়েছে লোকটা। হাতে একটা শিশি ধরিয়ে দাদুকে জল তৈরি করতে বলেছে। মা চা এনে দেয়। শিশিটা পুরা উল্টে দিল দাদু গামলার জলে। চুমুক দিতে দিতে লোকটা বলে, ‘জলটা এবার খাইয়ে দাও শেয়ালটাকে’। শুনেই গিধড়ের জন্য গামলা নিয়ে দাদু এগায়। চুকচুক করে জল খায়। ঝিমাতে থাকে। আধঘন্টা পর থেকে হিক্কা তুলতে শুরু করে। মুখে ফেনা তুলে দু’বার ডাকার চেষ্টা করে খানিক দূরে বিকালের তেঁতুলবিছন বনটাকে। বন এগোয় না। স্থির চোখে ‘ভূঁইয়ার’ পা উল্টে দেয়। লাকড়ি নিয়ে অনেকবার খোঁচা মারে বাপ আর দাদু। নড়চড় নাই কোনো।  ‘দাম দর করলিয়েছেন তো পাক্কা?’ চাকুতে শান দিতে দিতে দাদু পুঁছে বাবাকে। ‘হ’, বাবা লোকটার দিকে তাকায়। পড়ে থাকা বকরির রক্তে একটা মাছি এসে বসেছে। লোকটা মোবাইল বের করে দাদু আর গিধড়ের ছবি তুলছে। ‘দাঁড়ান, ভিডিও চালু করি। মাল যে অর্জিনাল তার সবুদ থাকবে’— দাদু নিজের লুল্লুর করা দাঁত বের করে হাসে। তারপর গিধড়টাকেকে উলটে চাকুর টান দিতে শুরু করে।

কে এত জোরে ফুটবলের হুইসল বাজালো! দশ-বারোটা ফরেস্টের লোক আল দিয়ে তার বাড়ির দিকে ছুটে আসছে। তার বেটা ভাগার জন্য দৌড় লাগাতেই তিন-চারখান লোক ছুটে আসি জাপটে ধরলো। মোবাইল ধরা লোকটা ফরেস্টের একটা লোকের দিকে তাকিয়ে বলছে—
-কী বলেছিলাম স্যার! একটা ছোটোখাটো রিওয়ার্ড না পাইয়ে আপনাকে এখান থেকে যেতে দেব না। একদম বমাল। ভিডিও করা আছে। দুপুরেই খবর পেয়ে ছকে নিয়েছি। এদের যা লোভ তাতে দু’হাজার বেশি দর দিব বলতেই ঘুঘু ফাঁদে। 
শুকিয়ে আসা বকরির রক্ত থেকে মাছি উড়ে গিয়ে গিধড়টার চামড়ায় বসেছে। তার চোখের সামনে গাঢ়হা খয়ের রঙের চামড়ায় মাছিটা হারিয়ে গেল। তার বাপকে ফরস্টের তিন-চারটা লোক মিলে মাটিতে ফেলে লাথাচ্ছে। চ্যাড়চ্যাড় করে অর্ধেকটা চামড়া গুটিয়ে দাদু দাঁড়িয়ে আছে। বুরবক। গিধড়টাও অর্ধেক চামড়া খুলে ঝুলছে। চামড়াহীন মাংসল পা আর কোমর তিরতির করে কাঁপছে তেঁতুলবিছনের দিকে চেয়ে।

অলঙ্করণ: বৈশালী

লেখক পরিচিতি:
অভিষেক ঝা

জন্ম ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে। জন্ম ও বড় হয়ে ওঠা পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার গঙ্গা দিয়ারা অঞ্চলে।  কর্মস্থল কোচবিহার জেলার হলদিবাড়ির তিস্তা অববাহিকায় অবস্থিত। বর্তমানে বসবাস করেন জলপাইগুড়ি শহরে। অভিষেক মূলত গদ্যকার। তার গদ্যের একমাত্র সংকলন “হোঃ” নিষাদ থেকে প্রকাশিত। গদ্য লেখার পাশাপাশি অনুবাদও করে থাকেন অভিষেক। অদ্বয় চৌধুরির সঙ্গে সম্পাদনা করেছেন ‘কাশঃ কাশ্মীরি পণ্ডিত ও  কাশ্মীরি মুসলমানদের সাম্প্রতিকতম  ছোটোগল্পের অনুসৃজন’ । অভিষেকের সম্পাদনায় অহমীয়া ও অহমীয়া দোয়ান থেকে অনূদিত ‘ত্রস্তের শিকড়বাকড়: নির্বাচিত মিঁঞা কবিতা’ এখন অবধি যেকোনো ভাষায় মিঞা কবিতার একমাত্র সংকলন। 

Share