।। লুবনা চর্যা ।।
বিষণ্নতার ঔষধ গেলার চাইতে গুটিকয়েক মাল্টার রস
খাওয়া জরুরি। সাইকিয়াট্রিস্টের ফি দেয়া টাকায়
ঘুরে আসো সেন্টমার্টিন। গাংচিলের সাথে পুষ্যা নক্ষত্রের
পরিচয় করিয়ে দেয়াটা বরং জরুরি। সমুদ্রের যেমন চিরকাল
এই স্যাঁতসেঁতে জলের আগল ভাঙা প্রয়োজন, তোমারও
তেমনি মগজে জট পাকানো পাখির বাসার মতো
প্রেমের ধারণা বদলানো দরকার। একটা জানালায়
ফাল্গুন হাওয়া আর অন্য জানালায় যুদ্ধের গরম নিঃশ্বাস।
তবু জানালাগুলো খোলাই রেখো, অনেক রাতে যদি
আমাদের কুশল নিতে আসে কোনো ফুটফুটে জোনাকি।
সখিনা, বিগত প্রেমের শবদেহ ঘিরে কান্নাকাটি করার চাইতে
এক হাড়ি ধোঁয়া ওঠা ভাত রান্না করা দরকারি।
দরজা খুলে দাও
দরজা খুলে দাও। কিছু শান্তি শান্তি ঠান্ডা বাতাস ঢুকে পড়বে ঘরে। সারাদিন দোয়েল পাখিটা শিষ দিয়ে ডাকে তোমাকে আমগাছে বসে, ঐ পাখিটার সাথে তোমার দেখা হবে। পাখিটা আসলে তোমার ছদ্মবেশী প্রেমিক, যে থাকে সাত সাগর আর চৌদ্দ নদীর ওপারে। সে-ই তোমাকে দেখতে আসে প্রতিদিন দোয়েল পাখি হয়ে। গোধূলির রেণু মেখে সময় নেচে যায় সমুদ্রের নিকটে। গাঙচিলের ডাক বাতাসের দেয়ালের এপাশে ওপাশে ধাক্কা খেতে খেতে পৌঁছে যায় স্বর্গে। স্বর্গ আসলে আমাদের অক্ষত শৈশব— এই বড় হয়ে যাওয়ার কারাগারের একমাত্র গুপ্ত দরজা। সেই দরজা খুলে দিলেই ঢুকে পড়বে শান্তি শান্তি ঠান্ডা বাতাস- তার তোড়ে রাস্তায় ছেঁড়া কাগজ, ধুলো আর পলিথিনের মতো উড়ে যাবে মনের ভার। দরজা খুলে দাও।
এইসব চন্দ্রগ্রস্ত রাতে
এইসব চন্দ্রগ্রস্ত রাতে ঘরের মধ্যে থাকতে নেই, এই সময় ঘরে থাকলে ভূত এসে কাঁধে চেপে বসে। যেতে হয় খোলা মাঠে, ছাদে বা নদীর ধারে— তাও সম্ভব না হলে হাঁটতে হয় পথে পথে। এমন ধবধবে দুধের ক্ষীরের মতো রাতে গ্রামে বসে যাত্রাপালা। দীর্ঘ দীর্ঘ ধানক্ষেত পাড়ি দিয়ে বাচ্চা-বুড়ো যায় পালা দেখতে আর তাদের পিছে পিছে যায় ঝাঁকে ঝাঁকে সারস পাখি। চাঁদ যেন একটা বিশাল থালা, যে থালাভর্তি বাতাসা, মুড়কি, নাড়ু রাখা আছে তাদের জন্য। চাঁদ সবসময় উৎসবের আমেজ দেয়, এমনকি ঘোর যুদ্ধক্ষেত্রেও, ভাংচুর শহরে ফোটায় চন্দ্রফুল। হঠাৎ মৃদুমন্দ বাতাসে গাছের পাতাগুলো প্রজাপতির ডানার মতো নেচে ওঠে আর আমি ভাবি তোমার শহরেও এমন রাতে সেনাবাহিনী নয়, অতর্কিতে ঢুকে পড়েছে কিছু যাযাবর প্রজাপতি।
ঘুম
ঘুম পেলে প্রতিটা মানুষই শিশু হয়ে যায়। দুর্দান্ত দাপট যে লোকটার, সেও ঘুম পেলে হয়ে যায় সবুজ প্রান্তরে ফড়িং-এর পিছে ছুটে বেড়ানো চঞ্চল শিশু। আমি তো এমনও দেখেছি, বাঘের থাবা থেকে পালাতে পালাতে হরিণী ঘুমিয়ে পড়েছে গর্জন গাছের নিচে আর বাঘ ফের ফিরে গেছে অন্ধকার হৃৎপিন্ডের মতো অরণ্যের গহীনে। তাগড়া জলহস্তি যখন নাক ডেকে ঘুমায়, ফিঙে পাখিরা তখন তার কানের মধ্যে ঢুকে প্রেম করে নিরাপদে। আর মহিষ কাদাপানিতে লেপ্টে যখন মুখ হাঁ করে ঘুমায়, তখন বকের ঝাঁক এক পায়ে দাঁড়িয়ে মেডিটেশন করে তার পিঠে। পৃথিবীর সব ঘুমের দৃশ্যই স্বচ্ছ জলের মতো নিষ্পাপ। কাওরান বাজারে ঝুড়ির মধ্যে শুয়ে যারা নিশ্চিন্তে একটা ঘুম দেয়, তাদেরকে আমার মানুষ না- অ্যাঞ্জেল মনে হয়। আর তোমার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হয়, এর চেয়ে সুন্দর কবিতা আর কী হতে পারে!!
সখিনাকে অনুরোধ
সখিনা, এই প্রেমের জন্য হা-পিত্যেশ করার চাইতে
এক হাড়ি ধোঁয়া ওঠা ভাত চড়িয়ে দেয়াটা দরকারি।
বড্ড ক্ষুধা নিয়ে শুয়ে আছি নীলাকাশের নীচে—
তাহলে কি আজ রাতে আমরা তারকা চিবিয়ে খাবো?
বিষণ্নতার ঔষধ গেলার চাইতে গুটিকয়েক মাল্টার রস
খাওয়া জরুরি। সাইকিয়াট্রিস্টের ফি দেয়া টাকায়
ঘুরে আসো সেন্টমার্টিন। গাংচিলের সাথে পুষ্যা নক্ষত্রের
পরিচয় করিয়ে দেয়াটা বরং জরুরি। সমুদ্রের যেমন চিরকাল
এই স্যাঁতসেঁতে জলের আগল ভাঙা প্রয়োজন, তোমারও
তেমনি মগজে জট পাকানো পাখির বাসার মতো
প্রেমের ধারণা বদলানো দরকার। একটা জানালায়
ফাল্গুন হাওয়া আর অন্য জানালায় যুদ্ধের গরম নিঃশ্বাস।
তবু জানালাগুলো খোলাই রেখো, অনেক রাতে যদি
আমাদের কুশল নিতে আসে কোনো ফুটফুটে জোনাকি।
সখিনা, বিগত প্রেমের শবদেহ ঘিরে কান্নাকাটি করার চাইতে
এক হাড়ি ধোঁয়া ওঠা ভাত রান্না করা দরকারি।
বিষণ্নতার ঔষধ গেলার চাইতে কিছু তরতাজা মাল্টার রস খাওয়া উপকারী।
লুবনা চর্যা
জন্ম: ৩ ডিসেম্বর, ১৯৮১, খুলনায়। বেড়ে ওঠা ওখানেই। কৈশোরে থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তারপর একসময় থিয়েটার ছেড়ে নিজের লেখা ও আঁকার দিকে মনোযোগী হন। মাস্টার্সের পর ঢাকায় বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কপি রাইটার হিসাবে কাজ করেছেন। একসময় সেটাও ছেড়ে দিয়ে এখন সম্পূর্ণভাবে স্বাধীনভাবে লেখালেখি করেন, ছবি আঁকেন, লুবনার বক্তব্য, “নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়াই…”।
খুব ভালো লাগলো। নক্ষত্র চিবিয়ে খাওয়ার প্রসঙ্গটা ভুলবার নয়।