।। মুনিরা মেহেক।।
১
জলের গভীরে নদী অতল হয়ে যাচ্ছে
দ্বীনবন্ধু আমার
পাতালে রেলগাড়ি চড়ে পৌছে যাবো
এমন কথা তোমার পড়শিও জানে
আমার বাড়ির কোনো ঠিকানা নাই
কিন্তু তুমি লিখতে জানো
সেসব স্মৃতি সেতারে মোলায়েম টানছে কেবল
দ্বীনবন্ধু আমার
কেন এখন মেহেক মেহেক বলে ডাকছো!
২
মাথার ভিতরে একটা টমেটো ভাজা হচ্ছে—
যেন এই সকাল ধূর্ত শিয়ালের মতো পালিয়ে কোথাও যেতে চায়।
কোথায় এমন লোক— যে দেহভার রেখে দৌড়ায়;
তার ঘরের ভেতর আছে আয়না
আমার মাথার ভিতরে লাল টমেটো।
[ সে কথা থাক— আল্লাহ লোকেদের মনোবাসনা জানেন
তাই তারা পুড়তে পুড়তেও সোনা হতে পারে না।]
দরজা খুলে কেউ পালিয়ে যাচ্ছে যেন
আমার কোনো আবদার নাই— তোমার ভেতরে ঢেউ
আমারে উড়িয়ে নেয় উনুনের উপর।
পুড়তে পুড়তে লোক সমাগম বেড়ে যায় মাথায়
তুমি কি সেই ধূর্ত শিয়াল প্রিয়— যার কাছে আমার হৃদয় ফেলে আসি তন্দ্রাল ভোরে
আর কাক কা-কা শব্দে ভুলিয়ে দেয়
মাথার ভিতরে টমেটো ভাজা শেষ।
৩
বিষাদ ফুরিয়ে যাচ্ছে খুব এমন সংবাদ
তোমার মৃত মুখ নিয়ে আসছে প্রিয়—আজ চমৎকার দিন হতে পারতো
হাওয়া বদলের জন্য আমরা সমুদ্রে
যেতে পারতাম—লবণ চাষিদের আমার ঈর্ষা হয়
সে কথা আমার প্রেমিকেরা জানেনা।
তোমার মৃত মুখেও দু’টি চোখ আছে
আমি দেখতে পাই—পৃথিবীর সকল আনন্দ কোথায় জমা আছে
একথা আমাদের পড়শিও জানে।
আমার তেমন কোনো বেদনা নাই আর
তুমি জানো— বিষাদ ফুরিয়ে যাচ্ছে প্রিয়
তোমার মৃত মুখের ভিতর আমার মুখ
অদৃশ্য হতে হতে ভেসে উঠছে কেবল।
৪
সৎকার শেষ প্রিয়— জানালায় শীতার্ত রাত
ঘুমুন্ত দু’টি চোখ উড়ে উড়ে
আমার ভেতর দিয়ে সংসার হয়ে যায়।
সৎকার শেষ— যেন হাওয়াগুলো আরো মাতাল
মাটির উপরে নরম কোমল ঘাস
কাঠের দরজা ছিঁড়ে সেই তো বাড়ি।
এমন ঘরোয়া ঝড়— যেন বহুকাল ধরে
বাড়ির উঠোন নিয়ে যায় কেউ
আমার হাতে হাত নাই আর
পায়ের তালুতে নাই পায়ের পরশ
তবু জানালায় তোমার আর্ত চোখ
চলে যাওয়ার দিকে তুমুল মাতম নিয়ে
যেন কারে ডাকে, যেন নেই আর কেউ।
৫
মেহেক
মেহেক
মেহেক
কেউ যেন ডাকছে আমায় তুমুল বৃক্ষের তলে
আমি যাই না, গৃহবন্দী পোষার মতন পড়ে থাকি শুধু।
তবুও কেউ ডাকছে আমায়—
মেহেক
মেহেক
মেহেক
প্রস্তুতি শেষ। বোবা ঘর সাঁজাতে লোকের ভিড়।
কোথাও বাঁজছে সানাই। আমার নাকের ভেতর সন্ধ্যা।
শুনতে পাই হাসি। কেউ যেন আরো ডাকছে—
মেহেক
মেহেক
মেহেক
প্রচ্ছদ ফটোগ্রাফি: মোহাম্মদ রোমেল
মুনিরা মেহেক
সিলেটে জন্ম, বড় হওয়া ঢাকায়। লেখালেখির সঙ্গে চলছে লেখাপড়া।