।। জ্যোতি পোদ্দার ।।
যোগল কোচ নিজের আঙিনায় নিজেরই উদ্যোগে খুলেছেন কোচ ভাষা শিখন— শেখানোর কার্যক্রম। অনেক ছেলেমেয়েই রোজ আসে। যোগল চিৎকার করে করে আঙিনা মাথায় তোলেন। কী ভীষণ মমতায় তিনি চেষ্টা করছেন রোমান হরফে লেখা কোচ ভাষা তার কমিউনিটির কোচ ছেলে মেয়েদের শেখাতে। যদি ভাষার ভেতর আবার জেগে ওঠে ক্ষত্রিয়দের ক্ষাত্রবল? আবার যদি ফিরে পায় কোচের টান টান সিনা গজারির বৃক্ষের মতো। যোগল কোচ বুকের হাপর ফুলিয়ে যখন উচ্চারিত শব্দ বলে, সে শুধু উচ্চারিত শব্দে স্বপ্নই আঁকে না; খুব নীরবে খুব বড় দীর্ঘশ্বাসও বেড়িয়ে আসে। তখন চোখ ভরে জলে আসে। পাহাড়ি বাণের মতো জল। ঘোলা জল। কতদিন দেখেছি তখন যোগল টাল সামলাতে না পেরে বাঁশের খুঁটি আঁকড়ে দাঁড়িয়ে পড়ে।
উন্মূল জীবন
এবারের বর্ষায় কাঁকর মেশানো মাটি সরে যাওয়ায় গজারি গাছের শেকড় হামুখ করে আছে। জলের তোড়ে মাটি সরে গেছে। বিস্ফারিত গাছের শেকড়বাকড়। টানটান সম্পর্ক ঢিলে হয়ে গেলে যেমন মানুষ আলগা হয়ে যায়; যে যার মতো করে একাকী লড়াই করে মরতে মরতে বাঁচে তেমনি গজারি গাছগুলো মাটিবিহীন কোনো মতে দাঁড়িয়ে আছে। একাকী জীবনের ভার বড্ড ভারি। ক্লান্তি আসে শরীরে মনে আর ভাব ভাবনায়। মৃত্যেতে খুঁজে ভার লাগবের নিস্তার— তেমনি করে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি গজারি— বির্বণ। একটু ঝরে হয়তো বা কাত হয়ে পড়বে এমনই গজারির যাপন। তবু সটান শিরদাঁড়া নিয়ে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে গজারি। সিনা টান করে আকাশ ছোঁয়াই গজারি নিয়তি;তার স্বধর্ম— তার পৌরুষ।
গজারির খুব কাছে এসে খসখসে বাকলে হাত রাখতেই কেমন যেন তেতো একটা ভাব শরীরের ভেতর সঞ্চারিত হলো। দুলে উঠল মাথা।পড়ে যাবার আগে কাউকে জাপটে ধরার মতো করে ধরে ফেললাম গজারির কোমর। একদলা থুতু উগড়ে ফেলে দিলাম ক্লান্তি আর অবসাদে। এমন তেতো বিষের অবসাদ আগে কখনো লাগেনি। ভেতরে ভেতরে ক্ষয়ে যাওয়া মানুষ বেশি দূর দেখতে পায় না। ঝাপসা দেখে — সব ঝাপসা দেখে; একহাত দূরে যেমন শীতের কুয়াশার ঝপসা চাদর থাকে; তেমন ঝাপসা। পায়ের কাছেই পরে থাকে দৃষ্টির সীমানা। তেমনই হয়েছে আমার।
গজারি আকাশ ছুঁয়ে ছুঁয়ে আলগা মাটি নিয়েও সটান।টান টান সিনা। আমার শুধুই দীর্ঘশ্বাস। আকাশেও তাকাতে পারি না–সামনেও কেবলই কুয়াশা আর কুয়াশা।কোথাও আমার পা নেই।দাঁড়াবার মাটি নেই।মাটির শরীরে শিবা কামড় দেবার আগেই পা সরে সরে যায়–কোমর বেঁকে যায়। উবু হয়ে ঝুঁকি পড়ি মাটির দিকে।মাটিতে আর শেকড় বিস্তরণ করতে পারে না। স্থানচ্যূত আমার পা। আমার অস্তিত্ব। কাঁকর মাটি সরে গেলেও গজারি এখনো সটান; আর আমি কিনা কেবলই ধনুকের মতো ছিলা বিহীন বৃত্তচাপ।
কে কবে সিনা টান করা গজারি হতে পেরেছে মাটির গভীরে শেকড়ের বিস্তরণ না ঘটিয়ে? মাটি সরে গেছে তবুও সটান— তবুও শক্ত।ঘাড় কাৎ করে উপড়ে আকাশের দিকে তাকাতেই দেখি গজারি বাতাসে দুলতে দুলতে পড়শি গজারির গায়ে আলতো করে ছুঁয়ে হেলে পড়ছে একবার ডানে আরেকবার বামে।
ডান হাতে বেড় দিয়ে গজারি ধরে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না।খসে পড়ল হাত— নাকি বৃক্ষই খসিয়ে দিলো? উদ্বাস্তুর সাথে কারোরই বন্ধন হয় না। না সহ-শরনার্থীদের সাথে; না আশ্রয় দাতার সাথে। সবখানেই সবার সাথে উন্মুল জীবন।বিচ্ছিন্ন ও ছিন্নতার জীবন। এক রেখার বিয়োগ জীবন।কোথাও সে— না পায় মাটি না পায় আকাশ; না একটু হেলান দেবার খড়ি লাকড়ি।
ঠোঁটের কোণে দলানো থুথু’র সাথে যে হাসিটুকু ঠিকরে পড়ছিল তা আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম। এই হাসি এক জীবনের শুধু নয়— বহু জীবনের সঞ্চিত ব্যর্থতার ফলাফলের হাসি।
চিন চিন ব্যথার হাসি। পায়ে পায়ে চলা অস্বস্তির হাসি।
গজারিও আমাকে নিলো না। বৃক্ষও তার শরীর থেকে আমার হাত খসিয়ে দিলো। আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না। হাঁটতে হাঁটতে বুঝতে পারছিলাম হাঁটাও আমার নিয়ন্ত্রণে নেই।খানিক হেঁটেই একটা টঙঘরের পাটাতনে ওঠে বসলাম ক্লান্তি আর অবসাদে।
চারদিক খোলা চৌচালা টঙঘরের পাটাতন বেশ উঁচু। কয়েক ধাপের একটা বাঁশের চঙ্গ দিয়ে পাটাতনে উঠতে হয়। টঙঘরের নীচে ফাঁকা। পাটাতনের উপরেও চারদিক ফাঁকা। শুয়ে শুয়ে দেখছিলাম টঙঘরের জীবন। আমারই মতো একাকী টঙঘর। ছয় খুঁটির উপর দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। মাটির খুব গভীরে কি গেছে রড সিমেন্টের খুঁটির গোঁড়া? কী জানি! মাথায় খোপা বাঁধবার মতো করে ছয় খুঁটির উপর শুধু টিনের চৌচালা ঘর, টঙঘর। একটা ন্যাংটা ঘর।
টঙঘর এমনই হয়। ক্ষণিকের চাতাল। বসতের ঘ্রাণ এখানে নেই। পড়শীর হল্লা এখানে নেই। স্ত্রীর বাহুডোরের স্পর্শ নেই এখানে।নেই গিন্নীর মেলে দেয়া সাদা ভাতের ধোঁয়া ওঠা হাসির ঝিলিক। নেই নিভাঁজ শাড়ীর ভাঁজে থলথলে ঝুলে পড়া স্তন কিংবা মেদবাহুল্য সাদা চামড়ার বৃত্তের চাপ।
টঙঘর শুধুই টঙঘর— ন্যাটো টঙঘর। পাটাতনে হাতের কনুইয়ে মাথা রেখে একপাশ হয়ে শুয়ে শুয়ে ভাবছি আর দেখছি কত জীবনই তো উন্মূল জীবন। এই যে ধিঙ্গি মাইয়া মাইনসের মতো একহারা গড়নের টঙঘর। না দেয় ছায়া বিচালি; না দেয় মায়ার ম্যাজিক ও মিউজিক।এমনকি তাতানো রোদের প্রলাপও নেই তার। প্রলাপের জন্যও বন্ধন দরকার। শরিকি বন্ধন দরকার।তবে কে আর নাকের ডগায় মিহিদানা ঘাম ঝরিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে দাঁত খিচিয়ে উচ্চারিত শব্দে পাড়া মাথায় তোলে? বন্ধনে না জড়িয়ে কে কবে ঝগড়া করেছে, শুনি?
আমার মতই এই টঙঘর। নন্দভিটার টঙঘর। পিড়াবিহীন টঙঘর। পিড়া আর মেঝেই তো বসতের চাতাল। জীবনের বিস্তার।উৎসবের উন্মুখতা। ‘সাজলে পরলে নারী আর লেপলে পুছলে বাড়ি— লোকমুখ বাহিত এই প্রবাদ মিথ্যে নয়। প্রবাদে জড়িয়ে থাকে লোকস্মৃতি স্থানিকের প্রজ্ঞান। লেপা পুছা বাড়িতেই রোপিত হয় আকাঙ্খার বীজ। সজ্জিত নারীর গর্ভে উপ্ত হয় বীর্য। একদিন অন্ধকার মাটি ফেটে কচি চারা মুখ তোলে আলোতে — প্রকাশ্যে; অপরের সাথে মিলবার আর মেলাবার সার্ধম নিয়ে।
টঙঘরের তেমন যাপন নয়। সে লেপা পুছা বাড়ি নয়। লাল আলতা পরা সলজ্জ সজ্জিত নারী নয়। সে কেবলই এক হারা গড়নের ধিঙি বাঁজা নারীর কোল। এক উন্মূল জীবনের ভাঙা কোল।
সিমেন্টের খুঁটিতে হেলান দিয়ে পা ছড়িয়ে বসতে বসতে চারদিকে একটু দেখে নিলাম। কতবারই তো এখানে এসেছি। এই নন্দ ভিটায়। এই টঙঘরে। সকলের নৈঃশব্দের সাথে শেষ বিকেলের ঝুপ করে নামা অন্ধকার শীত গ্রীষ্মে বা বর্ষায় আলাদা আলাদ রূপ লাবণ্য নিয়ে আসে। কতদিন এই টঙঘরে একা একা বসে বসে দেখেছি এই নন্দভিটার নানা বিভা। নানা কারুকাজ।
নন্দভিটা এখন কেবলই স্মৃতি। একটা মিথ। লোকমুখে প্রচারিত এক গাও বুড়ার ভিটা। প্রতাপ আর দাপটের ভিটা। অপরকে হীন করার ভিটা। গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব আর মুখ না দেখাদেখি হিংসায় পুড়ে যাওয়া ভিটা। টঙঘর তার সাম্প্রতিক সংস্করণ মাত্র। নন্দভিটায় একদিন যে জীবন ছিল উন্মুখ মুখরতার উচ্ছ্বাস সেই ভিটা এখন কেবলই এক উন্মূল জীবনের কাব্যনাট্য।
মাটি থেকে একটু উঁচুতে চাতাল হবার কারণে সেই ছোট্ট চঙ্গ দিয়ে উপরে থেকে নিচে নামলাম। একপাশে গজারির ঘণ বন। পাশেই ঢালু রাস্তা। রাস্তা বরাবর কাঁকর মাটি বিহীন গজারির শেখর হামুখ করে আছে।অন্য পাশে আমনের বিস্তার।ধান পেকে ঝুঁকে পড়েছে একে অপরের গায়।থোকা থোকা সন্তান-সন্ততি নিয়ে প্রসূতি ধানের গোছা সকালের রোদে খলবল খলবল করে ঝিলিক দিচ্ছে।
জমিতে নেমে আলতো করে ধানের ছরা ছিঁড়ে ইচ্ছে করছিল কানের দুল করে পরি। আলতা গুটি জলে গুলে পায়ে আঁকি লাল বেড়ি। সাদা পায়ে লালে লালে লাল আলতা পা যখন দেখি একটু উঁচিয়ে ধরা শাড়ির ফাঁক দিয়ে তখন কী যে ভাল লাগে! আহা! কী যে ভালো লাগে। দুলে নারীদের দারুণ লাগে। আলতা পায়ে নারীর সাদা পা যেন ধ্রুপদী নাচের মূদ্রা। কেবলই মাটি থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে উঁচুতে উড়তে উড়তে চলছে। যেন উড়ক্কু পা।কী সুন্দর মুখ তখন মুখরিত মুখশ্রী! ইচ্ছে করে বিভাবতী মুখমণ্ডল আমার আঁজলা ভরে রাখি সারাদিন।উড়ক্কু পা দেখি সারাদিন।
ইচ্ছে করছে ধানের ছরা দিয়ে কানের দুল গড়ি। দুল পরি। ইচ্ছে করছে মাথার ডানে আঁকা আমার চুলের সিঁথিতে টিকলির মতো ঝুলিয়ে দেই পাকা ধানের ছরা। কত কত ইচ্ছে আমার উন্মূল জীবনে শুশুকের মতো নদীর গভীর থেকে উঁকি দেয় হঠাৎ হঠাৎ; আবার নিমেষে সন্তর্পণে ডুবে যায় জলের গভীরে জলের পাকে পাকে।সেই ইতিহাস আমি জানি। সে আমার উন্মূল জীবনের ইতিহাস।
সে যাক। এখন যে বাতরে দাঁড়িয়ে আছি সে বাতর ইজমালি বাতর।এক পায়ে হা্টা পথের বাতর। আর এই জমিন কোচদের জমিন। সবটুকু না— কিছু লিজের জমি কিছু বন বিভাগের কিছু দখলে রেখেছে অন্য কেউ। আবার কিছু জমির আরওআর নেই। দাগ নং নেই।পর্চা নেই— এজমালি জমিন। সবুজ ঘাসের মাঠ। সেখানে দড়ি ছাড়া গরুদের যৌথ খাবারের খামার।সকালেই গরুগুলো এখানে রেখে যায় কোচ কৃষক শুধু নয়— মুসলমান কৃষকেরাও। কোচদের মতো তারা স্থানীয় নয়— নানা জায়গা থেকে এসে এখানে বসতি গড়েছে । সংসার পেতেছে। কোচ মুসলমানের পাশাপাশি বাস। লাগালাগি বাতরে চাষ। এই তল্লাটের জমি বারো ভাতারের জমি। তবে হ্যাঁ— এই তল্লাটের বেবাক জমিন একদিন কোচদের আছিল।
কোচের জীবন জমিলগ্ন জীবন।জল জঙ্গল জমির জীবন।মাটি কামড়ে পড়ে থাকা জীবন। পাথুরে জমিনকে কোচেরাই একদিন পোয়াতি জমিতে রূপান্তরিত করেছিল এ তল্লাটে। তারাই ছিল এ তল্লাটের জমির মালিক। কোচ সামন্ত এই উত্তর জনপদে উড়িয়ে ছিল একদিন শাসনের পতাকা। শ্রীবরদীর কান্দাপাড়া, বালিঝুড়ি, চুকচুকি থেকে শুরু করে ঝিনাইগাতির শালচূড়া, নকশী, রাংটিয়া, বাঁকাকূড়া, হালচাটি, গাজনী হয়ে নালিতাবাড়ী দাওধরা, খলচাঁন্দা, বুরুঙ্গা, সমশ্চূড়া, সোহাগপুর, দাওয়াকুড়া পর্যন্ত বিস্তৃণ তল্লাট ছিল কোচ রাজার রাজ্যপাট।
এই রাজ্যপাটে সর্বশেষ রাজা ছিলেন দলিপা কোচ । স্থানিক ইতিহাস চর্চায় একমাত্র ১৪১২ সালটি চিহ্নিত হয়ে আছে। ১৪১২ তার পরাজয়ের সাল। নিহিত হবার সাল। তুমি শুনে অবাক হয়ে যাবে এই উত্তর জনপদের এই কোচ রাজার এছাড়া পূর্বাপর আর কোন ইতিহাসের নেই।নেই যাপন কথকতা। কোচ ভাষার দলিপা নামটি লোকমুখে বিরর্তিত হতে হতে এখন উচ্চারিত হয় জরিপা নামে। সামন্ত দলিপা কোচের রাজধানী গড়দলিপা এখন গড়জরিপা। রাজা নেই রাজ্য নেই রয়ে গেছে শুধু রাজধানী। একবার তোমাকে নিয়ে গেছিলাম, মনে আছে?
সব শাসনামলে যেমন হয় তেমনি কোচ দলিপা’র শাসন ব্যবস্থায় হয়েছিল।একদিন যে শাসন ছিল কল্যাণের শাসন; পুত্রসম পিতার শাসন। সে-শাসনে রাজ্যের মহিমা রাষ্ট্র হয়ে যায় ; তেমনি একই কাজের একই ভাবে পূর্বের ন্যায় করতে করতে ব্যবস্থার ভেতর জন্মে গরিমা, দম্ভ,বিদ্বেষ। অপরকে হীন করে দুর্বিপাকে ফেলে ঠোঁঠের কোণে হাসি ঝুলিয়ে রাখার সময়েই শাসন ভাঙতে থাকে। ভেদ বাড়তে বাড়তে। বিভেদের দেয়াল ওঠে চারদিক। শাসনের এই এক অনিবার্য চক্র।
একদিন পতনের ঘণ্টা বাজে। পরাজিত হয়। জয়ীর ইতিহাস সোনার জলে ধুয়ে লেখা হয় ইডিহাস। পরাজিতের ইতিহাস নেই। ইতিহাস হয় না। তার কেবলই ভাঙন আর ভাঙন। টুকরাটাকরা হতে হতে মাটি বিহীন ছিন্ন বিচ্ছিন্ন। কেবলই মরতে মরতে বেঁচে থাকার লড়াই। উন্মূল জীবনের কথকতা। কোচদের ক্ষেত্রে তাই হয়েছে।যাপনকলায় আর নিজস্ব রঙ নেই।নিজস্ব ভাষা নেই। ভাষা নেই তো প্রকাশেও নেই যাপনের খুঁটিনাটি। শুধু তাদের চেহারায় গড়নে প্রকৃতি তার শেষ সাক্ষ্যটুকু রেখে দিয়েছে মাত্র।
ধীরেশ কোচ যখন টঙঘরে বসে বসে কথাগুলো বলছিল, খুঁটিতে হেলান দিয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম। পাশে বসে যদি শুনতে পেতে,তবে গল্পের শরীর থেকে চুৃঁয়ে পড়া বেদনা আর মনভাঙা বুকের হাপরে উঠানামা দেখতে পেতে। উচ্চারিত শব্দে থাকে কামার শালার হাপরের বাতাসে কয়লার লাল আগুনের আর্তনাদ। লিখিত অক্ষরে আনতে পারি কই? তোমাকে লিখতে লিখতে ভাবছি এ তো স্রেফ উনুনের পাশে স্তুপ করে রেখে দেয়া কয়লা। কোনো উত্তাপ নেই। তবুও লিখছি তোমাকে।
ধীরেশ চোখ ছানিপরা চোখ। কোটরে ঢুকে গেছে। মাথার পেছনে যে ক’ গাছি চুল রয়ে গেছে তাই দিয়ে বেঁধে রেখেছে টিকি। টিকিতে গিট্টু দিতে দিতে টিকি ইংরেজি অক্ষর এস’র মতো হয়ে আছে। বয়সের ভাবে যত না মাথা নড়ে তার চেয়ে অধিক নড়ে ‘এস’ আকৃতির টিকি।
দেশভাগের সময় তিনি তখন পনেরো। স্পষ্ট মনে আছে তার। বয়সের ভারে ঝুকে পড়লেও ঘটনার নানা পর্ব আর পর্বান্তর ঠিকই মনে আছে তাঁর। দাঁত নেই মুখে,কথা বেশ খানিকটা জড়িয়ে গেলেও ধীরেশ কোচ বলেন যখন, তখন একটু অধিক মনোযোগ দিয়েই তার কথা শুনতে হয়। নইলে শ্রোতা হিসেবে খেই হারিয়ে যাবার সম্ভবনায় বেশি।
সামন্তীয় পক্ষের লেঠেল ক্ষত্রিয় ধীরেশ এখন কৃষ্ণের ভক্ত। কথাটি পাড়তেই তিনি ফোকলা দাঁতে হাসলেন। দন্তবিহীন হাসির যে মাধুর্য তা শুধু অনুভবই করা যায়; শব্দে আঁকা গেলেও তার সেই নিষ্পাপ সৌরভ তুমি যে পাবে না সে আমি জানি। ধীরেশ এখন প্রসাদভোজী মানুষ। তাঁর গোবিন্দকে নিবেদিত ভোগারতি দেবার পরই নিজে মুখে অন্ন তুলেন।
রাজসিকতা ত্যাগ করেছেন বহু আগে। সাত্ত্বিক ভাবে সাধ ও সাধনা করেন কৃষ্ণের আরাধনা আর জপ মালায় তার ইষ্টদেবতার শরণ করে করেই। তীর ধনুক ছেড়েছেন বহুদিন। হাতে উঠেছে এখন জপ মালার ঠুলি। যে বৃদ্ধা আঙুল আর তর্জনি দিয়ে ছুড়েছে তিরের ফলা ধনুকের ছিলা টান টান করে তাক করে– সেই তর্জনি আর বৃদ্ধা আঙুলে ঘুরে তুলশি কাঠের গুটির মালা।
প্রশ্ন করতেই, জানো, কী বললেন ধীরেশ? সবই নিয়তি। অদৃষ্টের লিখন। পরাজিতের বেঁচে থাকার ফন্দি ফিকির। কোটরে দেবে যাওয়া ধীরেশের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম অনেকক্ষণ। উন্মূল জীবনের কথাকতার শেষ নেই!
সেবার তোমাকে নিয়ে বেড়াতে গিয়ে ছিলাম কোচ পাড়ায়। ওদের যাপন দেখেই তো বললে তুমি কোচ সমাজ সনাতন হিন্দুর সাধ ও সাধনার পথের দ্বারা রূপান্তরিত হওয়া মানুষ। যেমন ভিড়ের ভেতর হারিয়ে গিয়ে ভিড়ের রঙ ধারণ করে নিজেকে বাঁচায় তেমনি নানা বাঁকে নিপীড়িত হতে হতে কোচ সনাতনীদের ঘাটে ভিরেছেন। ধর্মে হিন্দু তিব্বতি-বর্মীর ভাষিক জাতির এখন ভাষা বাংলা। ঘরের দাওয়ায় নিজের সাথে নিজের বা পরিজনদের সাথে বর্ণহীন ভাষার বাতচিত করে করে স্বপ্ন দেখে নিজের ভাষায় ফিরে যাবার আকুতি।
যোগল কোচ নিজের আঙিনায় নিজেরই উদ্যোগে খুলেছেন কোচ ভাষা শিখন— শেখানোর কার্যক্রম। অনেক ছেলেমেয়েই রোজ আসে। যোগল চিৎকার করে করে আঙিনা মাথায় তোলেন। কী ভীষণ মমতায় তিনি চেষ্টা করছেন রোমান হরফে লেখা কোচ ভাষা তার কমিউনিটির কোচ ছেলে মেয়েদের শেখাতে। যদি ভাষার ভেতর আবার জেগে ওঠে ক্ষত্রিয়দের ক্ষাত্রবল? আবার যদি ফিরে পায় কোচের টান টান সিনা গজারির বৃক্ষের মতো। যোগল কোচ বুকের হাপর ফুলিয়ে যখন উচ্চারিত শব্দ বলে,সে শুধু উচ্চারিত শব্দে স্বপ্নই আঁকে না; খুব নীরবে খুব বড় দীর্ঘশ্বাসও বেড়িয়ে আসে। তখন চোখ ভরে জলে আসে। পাহাড়ি বাণের মতো জল। ঘোলা জল। কতদিন দেখেছি তখন যোগল টাল সামলাতে না পেরে বাঁশের খুঁটি আঁকড়ে দাঁড়িয়ে পড়ে।
তোরঙ্গে রাখা নিজেদের লেফেন পরে সরকারি অনুষ্ঠানে নেচে গেয়ে মুখরিত করে হলঘর। করতালির শব্দে কানের পর্দা ফেটে যায়। প্রশাসন খুশি হয়। অর্চনা কোচের নাচ দেখে তালিয়া পড়ে ঘনঘন। সকলের চোখে মুখে উপজাতি মেয়েটি নাচে তো বেশ! ওরা কীভাবে শিখে গো? কেউ আর উত্তর দেয় না। সেদিন অনুষ্ঠানে তুমিও ছিলে।আমিও ছিলাম। সবাই মুগ্ধ। ওরা কিভাবে এমন যৌথতার নাচ শেখে? কেউ জানে না। কেউ জানে না। ভাত নেই।জল নেই। আবার নেত্ত?
তবু সরকারি খাতায় কোচ কখনো তপশিলি কখন উপজাতি কখনো নৃ-গোষ্ঠী। তাও আবার ক্ষুদ্র। ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী। চাকুরি কোটা-সুযোগে আদীবাসী।এখন সেই কোটাও নেই। আর কাউকে আদিবাসীও বলা যাবে না। এমন কি লিখা যাবে না—পরিপত্রে ঘোষিত হয়েছে প্রজ্ঞান। বলতে হবে নৃগোষ্ঠী। সরকারের অর্ডার। জমিকে পোয়াতি করা মানুষদের নানা নামে নানা সময়ে সংজ্ঞায়ন করতে করতে সরকার বাহাদুরদের অবস্থা লেজে গুবরে অবস্থা। তাই না?
তুমিই তো শেষ চিঠিতে লিখেছে, জাতি রাষ্ট্রে সংখ্যাধিক্যের সুবিধা এই যে অল্পকে নানা গল্পে গল্পে খুপড়িতে ভরে ফেলা যায়।নানা রঙে আঁকা যায়। একটা ঊণতা থাকেই। একটু খামতি থাকবেই। যেমন ঊনআশি— আশি নয়। একটু কম। একমাত্র সংখ্যাধিকের গল্পটি ঠিকঠাক। কানায় কানায় পূর্ণ কলসি। একমাত্র সহিগল্প।
তোমার কথাটি বলতেই, ধীরেশ কোচ তোবড়ানো গালে হাসল শব্দ করে। আর সাড়ে সাত প্যাচের পৈতে ঠিক করতে করতে কাশতে কাশতে দাঁতহীন মাড়ি লাল করে ফেলল। দেখতে দারুণ লাগে।টঙঘরে পাটাতনে পা ঝুলাতে ঝুলাতে আমিও হাসি আর ধীরেশ কোচের দাঁতের মাড়ি দেখি। এখানেই তো একদিন সারি সারি দাঁত ছিল।কয়লার গুড়ায় প্রতিদিন ঘষা দাঁতের ঝিলিক ছিল। দাঁতের কামড় ছিল। দাঁতের কামড় সাপের বিষের চেয়ে বিধ্বংসী। ছিল দাঁত খিঁচিয়ে ঠোঁট কামড়িয়ে অপরকে দেখে নেবার সাড়ে চার হাতের হুশিয়ার। সাবধান। মাড়ির মাটি আলগা হয়ে গেলে কী আর দাঁত থাকে? শিবা সহ ওঠে আসে মুখ গহ্বরে। ভরাটমুখ হয়ে পড়ে তোবড়ানো গাল। কেবলই টোল পড়ে; বড় বড় গর্তের টোল।
এই যে নন্দভিটার টঙঘরের পাটাতনে ধীরেশ কোচ আর আমি বসে আছি।সেই ভিটাতেও একদিন গজারি খাম ছিল। চৌচালা ঘর ছিল। নিকানো উঠানে গোয়ালঘর ছিল। রোদে মেলে দেয়া ছিল আমনের বিস্তার ছিল। কাঁচা ধানের গন্ধ ছিল। পাকা ধানের গন্ধ ছিল। ছিল নাড়ার আগুনে পুড়তে থাকা ভাপ ওঠা সিদ্ধ আমনের কড়া গন্ধ। সে-আর কিছুই নেই। সে এখন এক জন জাতির বিচ্ছিন্নতার উন্মুল জীবনের মহাকাব্য।
পরাজিত কোচ আর এক উঠানে থাকতে পারিনি। বারবার উঠান ভেঙেছে। পরাজিতের উঠান ভাঙেই। সহজাত নিয়মেই ভাঙে।সমস্ত উঠান এখন কেবলই দাগের পর দাগ আর আড়াআড়ি খাড়াখাড়ি সীমা খুঁটি।বিভেদের দেয়াল। আলাদা উঠানের এখন আলাদা নাম। কোনটা ‘তিনটিকিয়া হারগিয়া,চাপ্রা,মারগার,ওয়ানং শংকর সাতপাড়ি ও মারগান। এইসব নামে বিভক্তির পর্চা নং। এই পর্চার মুখরোচক নাম বর্ণবাদ। পরিচয়বাদ। নিজের বর্ণকে উচুতে রেখে অপরে ঊণতা দেবার প্ররোচনা।
সনাতন হিন্দুর যে বর্ণ একদিন ছিল সমাজ পরিচালনা করবার সামাজিক রীতিনীতি সেই বর্ণই একদা হয়ে গেলে জন্মগত পরিচয়। যা ছিল একদিন কর্মের তাগিদে সময়ের ও সমাজের যথাযথ তাগদায় তাই একদিন হয়ে গেলো ধর্মের নিক্তিতে জন্মের আাঁধা ধরা নিয়মের নিগড়ে।
বিভক্তির পরই জাত্যাভিমান। একে অপরকে হীন করার চেষ্টা। সনাতন হিন্দু অপর বর্ণকে হীন করার চেষ্টা কে না জানে। মনুস্মৃতিতে যেমন পোক্ত করে লিখিত তেমনি লোকস্মৃতির গভীরে প্রোথিত পরিচয়বাদের বয়ন ও বয়ান। নদীর জল ঘোলা হলেও ভালো। জাতের মেয়ে কালো হলেও ভালো। মনন্দকোচের প্রভাব প্রতাপের মাটি সরে যায় এই জাত্যাভিমানের তোড়ে। বাণের জলে।রক্তের হোলি খেলায়। জাতি ভেদের সাথেই যুক্ত হয় নিকিনি মানে গোত্রের প্রবেশ।
জানো, ধীরেশ গোটা চব্বিশের গোত্রের নাম শুনিয়ে বলল এই হচ্ছে কোচের গোত্রমালা। সামাজিক পর্বান্তরে একেক গোত্রের বসত।নিদিষ্ট সীমানা খুঁটি। কোন দাগের নাম বারুম ডম্বা তেলাং বা হাচুক। সনাতন হিন্দুর বর্ণ ও গোত্রও এখানে কোচের গোত্রের পাশে সনাতনী গোত্রের নামে মিলিয়ে দিয়েছে।
এবারের বর্ষায় ভিটির দক্ষিণের মাটি আলগা হয়ে সরে গেলে মাড়ি ফেটে দাঁত বের হবার মতোই বেড়িয়ে পড়ে সেই কবেকার ব্যবহৃত বর্শা।ধনুকের ছিলা। আর জংধরা ডেকচি পাতিলের ভাঙা টুকরো।মাটি কী আর সব ধরে রাখতে পারে? মাটি সরে যায়। আলগা হয় শিবা সীমা খুঁটি বা সম্পর্ক। কেবলই যায় স্মৃতি— নন্দভিটা;কিংবা সাম্প্রতিক সংস্করণ টঙঘর।
উন্মুল জীবন নানা বহরের জীবন। কেউ পরাজিত হয়ে চেয়ারের খুঁটি কাঁধে নিয়ে বশ্যতা মানে। কেউ পালায় লোকালায়ের বাইরে লোকচলাচল লোকচক্ষুর আড়ালে কেউ বা ঘাড় ত্যাড়া করে মুখোমুখি দাঁড়ায়। আবার কেউ বা গঙ্গা জল গঙ্গায় মেশার মতো করে মিশে যায় ভিড়ে নানা মতে নানা পথের সাথে। পরাজিতের এই এক নির্মম নিয়তি। সব কালেই ক্ষমতার দাপদে পরাজিত নানা রূপে মিশে যায়। মিশে যেতে হয়।তবুও উন্মূল জীবন কেবলই মাটি বিহীন শিবাহীন।
জানো তো আমি এই উন্মুল জীবন নিয়ে চলছি এখানে সেখানে। কোথাও আমার শিবা নাই। কোনো মাটিই আমার মাটি নয়।মাটির শরীরেকোন ছাপই নেই। কোথাও আমার যুক্ততা নেই। শুধুই ছিন্ন আর বিচ্ছিন্নতার অল্প অল্প আল্পনা আঁকে। সে এক কর্পদকহীন অপদার্থ। সে কোথায় মিশতে পারে না। তুমি হয়তো সেই আল্পনায় আঁকা রেখায় দেখেছো এক মুষ্টিবদ্ধ হাত শুধু নয়— দেখেছো দুই বাহুর মুষ্টিবদ্ধ উত্তোলিত হাতের তীব্র ও তীক্ষ্ণ হাতের রেখা। সেটি কিন্তুু আমারই ছিল নানা মিছিলে মিটিংয়ে। ময়দানে।
গজারি বৃক্ষ যেমন খসিয়ে দিলো সরিয়ে দিলো আমার হাত তার গা থেকে তেমনি, তুমি জেনে থাকবে হয়তো; হয়তো আল্পনায় দেখে থাকবে— আমাকে সেখান থেকেও খসিয়ে দিলো সরিয়ে দিল ছিন্ন করে দিলো। মিছিল অনেক দূরে চলে গেছে। মিটিঙের গুঞ্জন এতোদূর থেকে আর শুনতে পাই না।পরিবার থেকে দূরে আমি। বন্ধুতা থেকে দূরে আছি। সমাজ মিছিল রাষ্ট্রসভা থেকে দূরে আমি। বাজার থেকে দূরে আমি। এমন কী সটান গজারি বৃক্ষের থেকে দূূরে আমি। সবাই আমাকে খসিয়ে দিল। সরিয়ে দিলো এক অদ্ভুত গল্পে গল্পে ছেঁড়াতাঁরে।সেখানে কোন সুরই বাজে না। কোন স্বরই ফুটে না।কী অদ্ভুত উন্মুল জীবন! তাই না?
জ্যোতি পোদ্দার
জন্ম ১৯৭৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। বাংলাদেশের নয়ের দশকের কবি। বাসস্থান বাংলাদেশের শেরপুর জেলার নালিতা বাড়ি। পেশা শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত। প্রকাশিতকাব্যগ্রন্থ: ‘(a+b)2 উঠোনে মৃত প্রদীপ’ (১৯৯৭), ‘সীতা সংহিতা’ (১৯৯৯),
‘রিমিক্স মৌয়ালের শব্দঠোঁট’ (২০০২), ‘ইচ্ছে ডানার গেরুয়া বসন’ (২০১১), ‘করাতি আমাকে খুঁজছে’ (২০১৭) এবং ‘দুই পৃথিবীর গ্যালারি’ (২০১৯)।
অসাধারণ লিখনি স্যার।কোচ সমাজ সংস্কৃতির অনেক অংশই প্রতিফলিত হয়েছে।অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে যুগোপযোগী লেখনি ধারণ করার জন্য।ধীরেশ কোচের মত আরো অনেক কোচই পরিবর্তিত হচ্ছে।পূর্বাপর রীতি নীতির অনেক অংশই আজ বিস্মৃতির অতল গব্বরে অবলীলায় তলিয়ে যাচ্ছে।
‘লেপা পুছা বাড়িতেই রোপিত হয় আকাঙ্খার বীজ।’
‘পরাজিত কোচ আর এক উঠানে থাকতে পারিনি। বারবার উঠান ভেঙেছে। পরাজিতের উঠান ভাঙেই।’
‘সেখানে কোন সুরই বাজে না। কোন স্বরই ফুটে না।কী অদ্ভুত উন্মূল জীবন!’
এমনই অনেক অভিব্যক্তিতে দারুণ একটি লেখা। নির্দয় বাস্তবের নিপুণ চিত্রায়ন। ‘মানুষের জন্যে শিল্প’-এর প্রাণময় সম্পৃক্তি। অনিঃশেষ শুভ কামনা, শ্রদ্ধেয়।
পুরো লেখাটি এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম। মনে মনে বললাম জ্যোতি এত সুন্দর শব্দের গাঁথুনি দেয় কি করে। পড়লাম আর গজারির বনে, কোচ পাড়ায় হাঁটলাম। বন আর পাখির জন্য যে হাহাকার সেটা প্রকট হলো। জানলাম দলিপ কোচের কথা।
প্রথমে “উন্মুল” শব্দের অর্থটি বোধগম্য হচ্ছিল না। পড়তে পড়তে চোখ ভিজে যাচ্ছিল তখন “উন্মুল” শব্দের অর্থটি হৃদয়ঙ্গম হলো। কষ্ট হলো কোচ জাতিগোষ্ঠী, গাজারি সর্বোপরি প্রকৃতির জন্য। অসাধারণ লেখা। চলুক…….