।। মুরাদ কিবরিয়া ।।
আমি ওপর নিচে মাথা নাড়তেই ঘড়ির এলার্ম বেজে উঠল। বুঝলাম স্বপ্নের ভেতর আছি কিংবা ছিলাম, কিন্তু কিছুতেই এ স্বপ্ন থেকে বেরিয়ে যেতে ইচ্ছে করল না। চোখ বন্ধ রেখেই এলার্ম অফ করে ভীষণ চেষ্টা করলাম আবার স্বপ্নটার ভেতর ঢুকে যেতে, আধঘন্টা কশরত করেও সম্ভব হল না। উঠে বসে কিছুক্ষণ ভাবলাম। মাথা ঝিমঝিম করছে, গতরাতে অলসতা করে খাওয়া হয়নি।
গোরখোদক
ব্যস্ত শহরের রোদ তাতানো দুপুরে এক বিরাট বিল্ডিংয়ের একুশ তলায় শীতাতপনিয়ন্ত্রণে ঠাণ্ডায় জমে যেতে যেতে আমার ডাক পড়ল। জবুথবু হয়ে বসলাম, আমার সামনে এক ভদ্রলোক। চোয়ালের নিচে চিন ঝুলে গেছে, এরকম ঝুলে যাওয়া চিন বয়সের চেয়ে বরঞ্চ আভিজাত্য বেশি প্রকাশ করে, গাত্রবর্ন দেখে বোঝার উপায় নেই বাঙালি, কী কারণে কে জানে, চামড়ায় চেহারায় লালচে বর্ণের আধিক্য। মুখে হাসি, বিগলিত হাসি।
বেশ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নিজেই দাড়িয়ে আমাকে অভিবাদন জানালেন, বললেন, আসুন, বসুন বসুন।
বললেন, তা আছেন ভালো কবির সাহেব? আসতে কষ্ট হয়নি তো!
না। কষ্ট হয়নি।
তা বলেন কী খাবেন, চা নাকি কফি?
সেধে খাওয়াচ্ছে যখন, কফিই খাই।
বললাম, কফি।
গরম ধোঁয়া ওঠা কফিতে চুমুক দিলাম। কী হচ্ছে বোঝার উপায় নেই। সামনে বসা ভদ্রলোকের পেছনে কাঁচের পর্দা উঠানো, বহুদূরে হাতিরঝিল দেখা যাচ্ছে, হাতিরঝিল দিয়ে ওয়াটার বোট যাচ্ছে বোঝা যাচ্ছে। প্রায়ই হাতিরঝিল দিয়ে যাই কিন্তু এত সুন্দর লাগে না তো! কাচঘেরা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘর থেকে সম্ভবত সবই সুন্দর লাগে।
তারপর বলেন, আপনার শরীর কেমন?
জ্বি, ভালো।
আপনি আমাদের এখানে কবে থেকে জয়েন করতে পারবেন?
আচমকা এই প্রশ্নে কিছুটা থতমত খেয়ে গেলাম। মশকরা করছে না তো? মাঝে মাঝে এরকম হয়, ইন্টারভিউ বোর্ডে ডেকে আচমকা মশকরা করে লক্ষ্য করা হয় প্রার্থীর রেসপন্স কেমন? সাইকোলজিক্যাল টেস্ট। আমি স্বাভাবিকভাবেই বললাম, এক সপ্তাহ। যদি সব কিছু ঠিক থাকে।
বেশ কিছুক্ষন আর কোনো প্রশ্ন নেই। আস্তে আস্তে চুমুক দিয়ে কফি খাচ্ছি। কাচের এপাশ থেকে আকাশ মেঘলা লাগে আসলে কিন্তু তা না। বাইরে প্রচণ্ড গরম। দু’মিনিট হাঁটলে ঘেমে একাকার হয়ে যেতে হয়। আমি ভদ্রলোকের পেছনে পর্দা তোলা কাচের দিকে তাকিয়ে আছি দেখেই কিনা কে জানে, তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার কি এরকম ভিউ-সহ একটা রুম দিলে হবে?
রুম? আমার জন্যও রুম? আমি বেশ লক্ষ্য করে একবার তাকালাম। মনে হচ্ছে না সে ফাজলামো করছে। তবুও আমি কিছু বললাম না।
এবার সেই ভদ্রলোক একটু ঝুঁকে এসে বললেন, ‘গোরখোদক’ গল্পটা আপনি কীভাবে লিখলেন? এত জীবন্ত, এত চমৎকার। সচরাচর তো দেখা যায় না। এটা তো বাংলা সাহিত্যে একটা অনবদ্য অবদান।
নিজের লেখা নিয়ে চাকরির ইন্টারভিউতে এরকম উচ্ছ্বাস পাব আমি কল্পনাতেও আশা করিনি। আর তাছাড়া গল্পটা আমার নিজের খুব ভালোলাগলেও অন্যরা তেমন পাত্তা দেয়নি। এমনকি ভালো কোথাও ছাপাও হয়নি। শেষ পর্যন্ত এক ভুঁইফোড় অনলাইন পত্রিকার ঈদ সংখ্যাতে ছাপা হয়, নিতান্ত অবহেলায়। সে গল্প এই ভদ্রলোক খুঁজে নিয়ে পড়েছেন? কিছুটা বিগলিত হয়ে গেলাম কি? বললাম, আপনি পড়েছেন?
না না, আমি পড়িনি। আমাদের চেয়ারম্যান স্যার পড়ে আমাকে বলেছেন। তিনি বলেছেন, আপনারা হচ্ছেন কবি সাহিত্যিক। জাতিকে পথ দেখাবেন। কবি সাহিত্যিক যদি না জন্মে তবে এ জাতি আগাবে কীভাবে? আপনাদের স্বাধীনচেতা মনকে বিবেচনায় আনতে হবে, তা না হলে তো দেশে ঘোর কলিকাল নেমে আসবে। আপনাকে কোনো নিয়মের বেড়াজালে আটাকানো হবে না। স্যার বলেছেন, আপনাকে একটা ভালো ভিউ-সহ কামরা দিতে। আপনি আসবেন। কোনো বাঁধাধরা নেই। মাঝে মাঝে কোম্পানিকে দু’চারটি সৎ পরামর্শ দেবেন। কবিরা হচ্ছে ভবিষ্যতদ্রষ্টা। সেভাবে একটু আধটু পথ বাতলে দেবেন আর কী! স্যারের কাছে, কবির সম্মানের চেয়ে বড় কিছু নেই। আপনার আত্মশ্লাঘায় আঘাত হয় এমন কিছু যদি ঘটে, কাইন্ডলি আমাকে জানাবেন।
অবাক হলাম। পরক্ষণেই মনে হলো, মিথ্যা তো বলেনি তার চেয়ারম্যান স্যার। জিজ্ঞাসা করলাম, পেমেন্টের বিষয়টা?
ভদ্রলোক হাসলেন, বললেন, পেমেন্ট আর কী। আপনাকে একটা চেক বই দিয়ে দেয়া হবে। যখন যা লাগে তুলে নেবেন। তবে কোম্পানির ফান্ড দেখে, একটু বুঝে শুনে আরকি! ওটা কোনো সমস্যা হবে না আশা করি।
এরপর তিনি ‘মকবুল মকবুল’ বলে ডাক দিলেন, আমার কামরা ঠিক করে দিতে বললেন আর বললেন আজকেই আমার নামে একটা ব্যাংক একাউন্ট খুলে দিতে, টাকা ডিপোজিট করে দিতে। আমাকে বললেন, আজকে আপনি ঘন্টা দুয়েক সময় দিন, কিছু সই-স্বাক্ষর নিতে হবে।
আমি ওপর নিচে মাথা নাড়তেই ঘড়ির এলার্ম বেজে উঠল। বুঝলাম স্বপ্নের ভেতর আছি কিংবা ছিলাম, কিন্তু কিছুতেই এ স্বপ্ন থেকে বেরিয়ে যেতে ইচ্ছে করল না। চোখ বন্ধ রেখেই এলার্ম অফ করে ভীষণ চেষ্টা করলাম আবার স্বপ্নটার ভেতর ঢুকে যেতে, আধঘন্টা কশরত করেও সম্ভব হল না। উঠে বসে কিছুক্ষণ ভাবলাম। মাথা ঝিমঝিম করছে, গতরাতে অলসতা করে খাওয়া হয়নি।
স্বপ্নটা মাথার ভেতর ঢুকে গেছে। স্বপ্নে হোক আর বাস্তবে হোক, যে জীবন একবার পেয়েছি তা অন্তত একদিনের জন্য উপভোগ করা যাক। অফিসে ফোন করে জানালাম আজকে আসতে পারব না। কলিগ জিজ্ঞাসা করলো, কেন? অন্য সময় হলে মিথ্যা কিছু বলতাম, কিন্তু আজকে কেন যেন মনে হল, কেন মিথ্যা বলব! বললাম, ইচ্ছে হচ্ছে না ভাই। দোয়া করেন কালকে যেন ইচ্ছে হয়।
কলিগ একটু থতমত খেয়ে গেলেও পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, ঠিক আছে কবির ভাই। আপনে রেস্ট নেন। আমি ম্যানেজ করে নেব।
সাধারণত সকালে চা খাই না, বলতে গেলে চা খাবার ফুসরত পাই না। আজকে নিজেই চা বানালাম। বিশাল সফল ব্যক্তিরা চা নিজে বানান বলে পত্র পত্রিকায় পড়েছি, কাজেই সমস্যা হল না। চা খেতে খেতেই ভাবতে বসলাম, চাকরিখানা তো হলো। এখন টাকা-পয়সা খুব একটা বিষয় না, কী করা যায়!
আম্মাকে সিঙ্গাপুরে একটা ফুল-বডি-চেকআপ করানো দরকার। মাঝে মধ্যেই তার হাঁপানি উঠছে, ডায়াবেটিস বেড়ে যাচ্ছে, ইত্যাদি। অবশ্য তেমন ব্যাপার না। প্রাইভেট জেটে যাবে আর আসবে। ঘন্টা দুতিনেকের ব্যাপার। মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের নাম জানি, আরো কিছু হাসপাতালের নাম জানা দরকার। একটা ফ্ল্যাট কেনা যায়। আজকাল একুশ-বাইশ তলায় ফ্ল্যাট পাওয়া যাচ্ছে। সবচেয়ে ভালো হয় হাতিরঝিলের কাছাকাছি হলে। হাতিরঝিল মুখো একটা ফ্ল্যাট। ছোটভাইকে বিদেশ পাঠিয়ে দেয়া যায়। কয়েক বছর ধরে চাচার পেছন পেছন ঘুরছে, চাচা তেমন একটা পাত্তা দিচ্ছে না। ওর ইচ্ছে মালয়েশিয়া। মালয়েশিয়া গিয়ে কি হবে? ইউরোপের দিকে চেষ্টা করা যায়। নাহ, অনেক কিছু। একটা খাতা কলম নিয়ে বসতে হবে।
খাতা কলম নিয়েই বসলাম, পয়েন্ট এক- আম্মার চিকিৎসা (সিঙ্গাপুরে), পয়েন্ট দুই- সুবীরের বিদেশ গমন (ইটালি) ইত্যাদি।
সাদিয়ার জন্য কি কেনা যায়? নাহ, সেটা সাদিয়াই ঠিক করবে। ওর রুচি আবার আমার সাথে মিলবে না। মেয়ে মানুষের ব্যাপারে নাক বেশি না গলানোই ভালো।
লিস্ট করার পর কয়েক জায়গায় ফোন দিয়ে ফেললাম। আমি ভেবেছিলাম যত উপরের দিকে হবে তত ফ্ল্যাটের দাম বেশি। আসলে ব্যাপার তা না। পাঁচ থেকে নয় তলা পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি দাম। উপরের দিকে আরো কম। একেবার হাতিরঝিলের কাছে তেরোতলায় একটা ফ্ল্যাট পাওয়া গেল, এগারো হাজার টাকা স্কোয়ার ফিট। মোট সতেরশ স্কোয়ার ফিটের। আমি অবশ্য আড়াই হাজার থেকে তিন হাজারের মধ্যে চেয়েছিলাম, তবে তাদের এত বড় ফ্ল্যাট নেই। আমার অফিসের ঠিকানায় আসতে বললাম, কালকে বা পরশু। অবশ্যই যেন ফোন করে আসে।
বিকাল নাগাদ মোটামুটি আমি স্বপ্নের সেই ক্যারেক্টারের মধ্যে ঢুকে গেলাম। সন্ধ্যা নাগাদ আমার নিজেরই ভয় লাগতে শুরু করল। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো, মিথ্যা তো কিছু নয়। ইনফ্যাক্ট স্বপ্নও তো মিথ্যা না। বরঞ্চ অনেক মহাসত্য স্বপ্নের মাধ্যমেই তো প্রকাশ পায়। এই রিয়েলিটিই তো বরঞ্চ মিথ্যা। কয়েকদিন আগেও স্টিফেন হকিং রিয়েলিটির উপর যে ডকুমেন্টারি করেছেন, সেটা দেখে মুর্খও বুঝবে, আমাদের এই রিয়েলিটি একটা প্রচণ্ড মিথ্যা। একটা প্রোগ্রাম মাত্র। তো এই মিথ্যা নিয়ে মেতে থাকার আসলে কোনো কারন নেই। এই বাস্তবতায় যে ডুবে থাকবে সে শেষ। আসলেই তো, নিদেনপক্ষে সফল মানুষের কথাও যদি শুনি, তারাও তো বলে, স্বপ্নের মধ্যে বাঁচো, সবকিছু মেনে নিও না, ইত্যাদি।
পরদিন অফিসে এসেই মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল। টেবিলের উপর একটা চিঠি। গতমাসে বেতন হয়নি, তার আগের মাসে অর্ধেক হয়েছে। তিন বছর ধরে কোন উন্নতি নেই। একজন কবিকে যদি এসব নিয়ে ভাবতে হয় তাহলে কিভাবে হবে! চিঠি এসেছে ট্যাক্স অফিস থেকে, গতবারও এসেছিলো। দৌড় ঝাঁপ করে আমি সবকিছু সেটেল করে আসলাম আর আমার বস এমডি’র রুমে গিয়ে হাত ঘষে ঘষে সব ক্রেডিট নিয়ে গেল। প্রমোশনও হলো, বোনাসও হল। নাহ, এসব নিয়ে ভাবার কিছু নেই।
চিঠি খুলে দেখছি এমন সময় বসই আসল আমার কাছে। আমি তাকে সরাসরি বললাম,
আপনি তো লোক ভালো না। কাজ করি আমি কিন্তু কোনো বেনিফিট তো পাই না।
আমার সরাসরি কথা শুনে বস একটু থতমত খেলেন।
বললেন, এভাবে কথা বলো না কবির। এভাবে কথা বলতে হয় না।
এক চামচা আমাকে শিখাচ্ছে কিভাবে কথা বলতে হবে। আমি একটা কড়া উত্তর দিতে পারতাম কিন্তু দিলাম না। পরে দেখে নেব।
বিকাল নাগাদ আসল ফ্ল্যাটের লোক। একটু অবাক হল। অবাক হবার কী আছে কে জানে!
বারবার জিজ্ঞাসা করল, স্যার ফ্ল্যাট কি আপনার জন্য?
বললাম, হুম।
স্যারের স্যালারি কি রকম জানতে পারি কি?
কেন?
না এমনি। আমাদের ক্লায়েন্ট প্রোফাইল তৈরি করার জন্য লাগে, তাই।
আমার ফিক্সড কোনো স্যালারি নেই। একটা খালি চেকবই দেয়া আছে, যখন যা লাগে তুলে নেই।
অবাক চোখে ফ্ল্যাট বিক্রির লোকটি আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল। যাবার সময় আমার কয়েকজন কলিগের সাথে কথা বললো, কার্ড দিলো। সম্ভবত আমার ব্যাপারেই কিছু একটা বললো। ফ্ল্যাটের লোক চলে যাওয়ার পর আমার পাশের ডেস্কের কলিগ জিজ্ঞাসা করল, ভাই কি ফ্লাট বুকিং দিতেছেন নাকি? তার কন্ঠে ইয়ার্কির ভঙ্গি।
বললাম, ফ্লাট কী? বলেন ফ্ল্যাট। আর ‘দিতেছেন’ ‘করতেছেন’ এগুলো কী? শুদ্ধ করে আগে কথা বলা শিখুন।
কলিগ সঙ্গে সঙ্গে দমে গেল।
সন্ধ্যা নাগাদ আমার ডিপার্টমেন্টের হেড আমার সাথে একান্তে বসলেন। জিজ্ঞাসা করলেন কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা আমার। বেতন বাকি সবারই, কোম্পানির খারাপ সময় যাচ্ছে। তবে সহসাই সব ঠিক হয়ে যাবে।
আমি বললাম, কোম্পানির ভালো খারাপ দেখা একজন কবির কাজ নয়, বরঞ্চ কবির ভালো-খারাপ দেখা হচ্ছে কোম্পানির দায়িত্ব। একজন কবি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান।
তিনি আমার দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ, তারপর বিড়বিড় করে আবার জিজ্ঞাসা করলেন, কী হয়েছে কবির? আপনার শরীর ঠিক আছে তো?
আমি তার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে উলটো জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি আমার ‘গোরখোদক’ গল্পটি পড়েছেন?
কী খোদক?
গোরখোদক। গোরখোদক মানে হচ্ছে যে কবর খোঁড়ে।
না পড়িনি।
যে দেশের একটা বড় কোম্পানির একটা একটা ডিপার্টমেন্টের হেড আমার গোরখোদক গল্পটি পড়ে নি, সে দেশ পুটকি মারা খাবে, এ আর বিস্ময়ের কী?
আমার মুখে অশ্লীল শব্দটা শুনেই কি না কে জানে, তিনি একটু ঘাবড়ে গেলেন। আমার ইমিডিয়েট বসকে ডাকলেন।
তেমন কিছুই হয়নি। আমি আমার ডেস্কে বসলাম। পরদিনই আমার পাওনা টাকা আমাকে দিয়ে দেয়া হলো। দেয়ার সময় একাউন্টস অফিসার বললো, আপনি খুব চালাক ভাই। প্যাঁচ দিয়ে টাকাটা নিয়ে নিলেন। আমি কিছু বললাম না, হাসলাম।
এক সপ্তাহের মধ্যে মোটামুটি আমি আমার স্বপ্নের জীবনে বেশ আরামদায়কভাবেই ঢুকে গেলাম। ঠিক স্বপ্নের বলা যাবে না, কাছাকাছি। আগের ফ্ল্যাটের লোক ফোন ধরছে না। আরেক কোম্পানির একটা ফ্ল্যাট দেখে আসলাম, একটু দূরে। তবে তাদের বারো তলার ফ্ল্যাট থেকে বেশ ভালো ভিউ পাওয়া যায়। খুব শীঘ্রই আমি বুকিং দেব, এ মর্মে কথা দিয়ে আসলাম।
বুঝলাম, জীবন আসলে ফাও, স্বপ্নই সত্যি।
হঠাৎ আমার ছোটভাই সুবীর আসলো। আম্মা অসুস্থ, আমাকে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। আমি বললাম, বেশীদিন অপেক্ষা করতে হবে না। দেখি আগামি মাসেই সিঙ্গাপুর পাঠাবো। তুই এর মধ্যে আম্মার পাসপোর্ট ভিসায় কী কী লাগে খবর নে।
ছোটভাই বললো, তুমি আগে চলো। আম্মা ডাক্তারের কাছে তোমাকে দেখার জন্য বসে আছে। অগত্যা উঠতে হলো।
আমি আম্মা আর সুবির এক মহিলা ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছি। ডাক্তার আম্মাকে ওষুধ দিলেন। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে সুন্দর করে হেসে বললেন, আপনার গোরখোদক গল্পটি আমি পড়েছি। খুব সুন্দর।
শুনে ভালো লাগলো। তবে কিছু বললাম না। ভালো তো লাগবেই। বাংলা সাহিত্যে এমন আর কেউ এরকম সাহিত্যকর্ম তৈরি করতে পারেনি। কিন্তু এখনকার সাহিত্যিকরা বুঝল না। চেকবইটা হাতে আসলে কয়েকটা কবি-সাহিত্যিককে চাকরের মতো পালতে হবে।
এসব ভাবনার মধ্যেই ডাক্তার জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার চোখের নিচে কালি পড়েছে কেন? রাতে ঘুম হয় না নাকি? আপনার প্রেসারটা একটু মেপে দেখি?
কয়েকদিন যাবত ঘুম হচ্ছে না সত্যি। আবার স্বপ্নের মধ্যে ঢোকার চেষ্টা করছি। কোম্পানিটার নাম মনে করতে পারলেই হবে। সেখানে যাওয়া দরকার। এমনিতে সব ঠিক আছে তবে চেকবইটা দ্রুত পাওয়া গেলে ভালো হয়। যদিও আমার নিজেকে এটা নিয়ে বেশি বদার হওয়া মানায় না। একটু সময় লাগছে এই যা। এসব চিন্তা করতে করতেই ভুলেই গেলাম ডাক্তার কি বলেছিলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কী বলছিলেন?
বলছিলাম আপনার চোখের নিচে কালি পড়ে যাচ্ছে, ঘুম হচ্ছে না সম্ভবত। আপনার প্রেসারটা মেপে দেই?
মাপতেই পারে। আমি সায় দিলাম।
আমার প্রেসার মাপতে মাপতে ডাক্তার জিজ্ঞাসা করলেন আমি এত কী ভাবি সারাক্ষণ?
ভাবনার কি শেষ আছে? আম্মার শরীর আসলেই খারাপ, তাকে সিঙ্গাপুরে না নিলেই নয়। সুবীরেরও একটা গতি হওয়া দরকার। কিন্তু চেকবইটাই আসছে না। এই ডাক্তারকে কিছু বলা দরকার? এই দুই পয়সার ডাক্তারণী কী বুঝবে? আমি বললাম, তেমন কিছু না। ঘুম হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
প্রেসার মাপার পর ডাক্তার বললেন, আপনার প্রেসারে প্রবলেম আছে। খাওয়া দাওয়া ঠিকমত করেন না, না?
ইচ্ছে হলে করি। না হয় করি না। একজন কবিকে খাওয়া নিয়ে চিন্তা করা মানায় না।
তা ঠিক। তো আপনার প্রেসারের জন্য ওষুধ দেই? ওষুধ খেলে একটু ঘুম আসবে, একটু দূর্বল লাগতেও পারে। সকালে আর সন্ধ্যায় খাবেন। দেবো?
কীরকম ঘুম হবে?
এই ধরুন, দিনে দশ-এগারো ঘন্টা। বেশ ক্ষুধা পাবে। প্রথম প্রথম একটু খারাপ লাগতে পারে, তারপর ঠিক হয়ে যাবে।
গভীর ঘুম হবে?
হুম। গভীর ঘুম হবে। সবচেয়ে ভালো হয় আপনি যদি আপনার মায়ের কাছে গিয়ে কিছুদিন থাকেন। মাকেও দেখাশোনা করা হবে, আর আপনারও খাওয়া-দাওয়া যত্ন-আত্নি হবে।
তার দরকার হবে না। সাদিয়াকে বললেই ও চলে আসবে।
সাদিয়া কে?
নাহ। সাদিয়ার কথাটা এভাবে বলে দেয়া ঠিক হয়নি। আমি বললাম, কেউ না। আমার পরিচিত।
সুবীর অনেক করে ধরলো বাসায় গিয়ে থাকতে কিছুদিন। গেলাম না। এখন হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ সময়, এখন একটু একা থাকা দরকার। মামুন এসে পড়লে তো একা থাকাও দায় হয়ে পড়বে। কিন্তু আম্মাকে কষ্ট দেয়া যাবে না। বললাম, আগামী সপ্তাহে আসব। আম্মা ফোন করে চাচার সঙ্গে কথা বলিয়ে দিলেন, আমি চাচাকে নিশ্চিন্ত থাকতে বললাম। মালয়েশিয়া ফালয়েশিয়া না, সুবীরকে ইতালি পাঠাবো। টাকার ব্যবস্থা হচ্ছে। চাচা এব্যাপারে কিছু বললেন না। গ্রামের বাড়িতে যেতে বললেন খুব শীঘ্রই আম্মাকে নিয়ে, জমি জমা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে নাকি। এই সামান্য জমি জমা নিয়ে এসব করার সময় নেই আমার। তবু চাচাকে কিছু বললাম না, আসব জানিয়ে বিদায় নিলাম।
রাতে খাবার পর ওষুধ দুটা খেলাম। ডাক্তারের কথা যদি ঠিক হয় তবে বেশ একটা ঘুম হবে। ঘুমটা দরকার আমার। চেকবইয়ের বিষয়টা সুরাহা না হলে কোন কিছুই আগাচ্ছে না। সাদিয়ার সাথে দেখা করা দরকার। ফ্ল্যাট বিষয়ে ওর মতামত না নিলেই নয়।
ঘুম ভাঙলো পরদিন বারোটায়। প্রচন্ড ক্ষুধা। ঘুম থেকে উঠেই দেখি সুবির বসে আছে। জিজ্ঞাসা করল, এখন কেমন আছো ভাইয়া?
মাথা ভার লাগছে। কথা জড়িয়ে যাচ্ছে কি? হুম। তবু কোনরকমে উঠে বসে জড়ানো কন্ঠেই বললাম, ভালো। ঘুম ভালো হয়েছে। তুই এখানে কী করছিস?
ভাত খাবা?
ঘুম থেকে উঠেই কেউ ভাত খায়? ফ্রেশ হতে দে-
নাহ, ডাক্তারণীর ওষুধ খেয়ে মাথাও টলছে। কোনরকম ফ্রেশ হয়ে ভাত খেলাম। এত গভীর ঘুমের মধ্যে ছিলাম যে কী হয়েছে কিছুই মনে নেই। স্বপ্নটায় কী ঢুকতে পেরেছিলাম?
সুবীরকে জিজ্ঞাসা করলাম, আমার নামে বাসায় কোনো চিঠি বা চেকবই এসেছে কিনা দারোয়ান জিজ্ঞাসা করিস তো!
সুবীর মাথা নিচু করে আস্তে করে বললো, ঠিক আছে।
বিকেলে বের হতে হবে। অফিসটা খুঁজে পাওয়া কঠিন কিছু না। একুশ তলা বিল্ডিং খুব বেশি নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক বাইশ তলা, এটা জানি। ইদানিং আরো কিছু হচ্ছে তিরিশ চল্লিশ তলা। প্রতিদিন দুইটা বিল্ডিং করে খোঁজ নিলে পনেরদিনের বেশি লাগবে না। কিন্তু বিকালে বের হওয়া গেল না। সুবীর জোর করে ধরে নিয়ে গেল ডাক্তারের কাছে, আম্মার ব্যাপারে নাকি একটা কিছু বলবে।
নাহ, চেকবইটা না পেলে হচ্ছেই না। একটু চিন্তাও আসল মনে মনে। খারাপ কিছু নয়তো?
সুবীরের সাথে বেরিয়ে পড়লাম। আধঘন্টা পর আমাদের ডাক আসল। তার রুমে ঢুকেই তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, খারাপ কিছু কি আছে ?
না, তেমন কিছু না। ডায়াবেটিস একটু বেড়েছে। দূর্বলতা আছে। এই আর কী!
সিরিয়াস কিছু নাতো!
টেস্ট এর সব রেজাল্ট এখনো আসেনি, আসলে আপনাকে আবার ডাকবো। ডাকা মাত্র চলে আসবেন, কেমন?
তা তো বটেই। মায়ের সমস্যা হলে ছেলে তো বসে থাকবে না।
এবার আপনার কথা বলুন। ঘুম হয়েছিল ভালো?
হয়েছে। বেশিই হয়েছে।
আপনি নাকি আপনার মাকে সিঙ্গাপুর নিয়ে যাবেন?
সেরকম চিন্তাভাবনা আছে। দেখি।
আমাকে বলবেন? তাহলে সেভাবে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। মানে কবে নাগাদ বা কিভাবে নেবেন। অনেক এক্সপেনসিভ তো-
টাকা তেমন সমস্যা না। একটা জায়গায় আটকে আছে।
কী? আমাকে বলা যাবে?
একটু পারসোনাল।
আচ্ছা থাক তাহলে বলার দরকার নেই। আপনি ওষুধগুলো এক সপ্তাহ খান। আপনার ঘুমের সমস্যা চলে যাবে। খাবেন তো?
হুম। খেতে হবে। একটা স্বপ্ন দেখা দরকার। দেখতেই পাচ্ছি না।
কীরকম? আমাকে বলুন না-
আপনি বুঝবেন না। আমরা আসলে যে রিয়েলিটিতে বাস করি তার বাইরেও রিয়েলিটি আছে। সেই রিয়েলিটি স্বপ্নের মাধ্যমে আসে মাঝে মাঝে। এই আর কী- আপনার ওষুধগুলো খেলে খুব ক্লান্ত লাগে। কথা জড়িয়ে যায়।
ঘুমের ওষুধে এরকম একটু হয়।
ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে সুবিরকে বললাম ভালোভাবে আম্মার খেয়াল রাখতে। সুবীর জানালো আম্মা নাকি খুব কাঁদে আমার জন্য। আমি বাসায় গিয়ে মাসখানেক থাকলে আম্মা খুশি হবে। কিন্তু আম্মাকে খুশি করার চেয়ে আম্মার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা আরো জরুরী। ডাক্তার বারবার ডাকছে, লক্ষণ ভালো না। হয়তো কোনো খারাপ কিছু করেছে, এখনো বলছে না। ধীরে ধীরে সময় নিয়ে বলবে। হঠাত বললে হয়ত শক খাব, এজন্য এত কথা। সুবির বিষয়টা বুঝছে না। সময় খুব ক্রিটিকাল জিনিস। দেখা গেল এমন সময় চেকবইটা আসবে যখন আর সময় নেই। সুবিরকে বিদায় দিয়ে আমি গেলাম মতিঝিলের দিকে। ঢাকা ভবন নামে নাকি বিশাল এক ভবন হয়েছে, সেখান থেকেই শুরু করা যাক।
একুশ তলার উপর উঠতে বেগ পেতে হল না। সমস্যা বাঁধল অন্য জায়গায়। একুশ তলায় কারো অফিসেই তো বিনা কাজে ঢোকা যায় না। আমার নামে কোনো পরামর্শক আছে কিনা জিজ্ঞাসা করলেই বেরিয়ে আসবে। দুটি অফিসে জিজ্ঞাসা করে জানলাম নইম কবির নামে কেউ এখানে চাকরি করে না। বিপত্তি বাঁধল তৃতীয় অফিসে গিয়ে, আমাকে রীতিমতো জেরা করা শুরু করল। কেন আমি অফিসে ঘুরে ঘুরে এই নামের কাউকে খুঁজছি। কেউ জিজ্ঞাসা করলে কী বলব সেটা আগে থেকে ঠিক করে রাখতে পারিনি। এটা একটা বিশাল ভুল হয়েছে। দুজন সিকিউরিটি গার্ড সমেত যখন ভয়ানক জেরা করা শুরু করল, আমার আর উপায় থাকল না। সত্য কথা বলতেই হল। স্বপ্নের কথাটা শুনে তারা বেশ আশ্চর্যই হলো তবে আর আর যাই হোক সত্য কথা শুনে তারা শান্ত হল। হবেই না বা কেন? সত্যের শক্তি তো কম নয়। ভেতর থেকে একজন মহিলা বেরিয়ে এলেন। তাদের এখানে সে নামে কেউ চাকরি করেন না। তিনি নরম কন্ঠে জানতে চাইলেন আমার পরিচিত কারো নাম্বার আছে কিনা যাকে কল দিলে এসে আমাকে নিয়ে যাবে। আমি বললাম, দরকার নেই। কিন্তু তিনি নাছোড়বান্দা-বললেন, আমাদের প্রোটোকল আছে। আপনি যেহেতু একটা ঝামেলা করে ফেলেছেন, হয় আমরা আপনাকে থানায় রেখে আসব কিংবা আপনার পরিচিত কাউকে ফোন দিয়ে বলব আপনাকে নিয়ে যেতে। ডাক্তারের ওষুধ খেয়ে শরীর শ্লথ, তা না হলে মহিলাকে প্রোটোকল শিখিয়ে ছাড়তাম। পুলিশি ঝামেলায় না গিয়ে আমি মামুনের নাম্বারটা দিলাম, বললাম, একে ফোন দেন। আমার বন্ধু, আমরা একসাথেই থাকি। একটু প্যাঁচ লাগিয়ে দিলাম। মামুন ঢাকাতেই নেই। কিন্তু ঘটনা ঘটল ঠিক উলটো। আধাঘন্টা পরেই মামুন এসে হাজির। ওদের সাথে টুকটাক কথা বলে আমাকে নিয়ে রওনা হলো। বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত। মাঝখানে মামুনকে কফি খাওয়ালাম।
বাসায় এসে বললাম, তুই এসেছিস আমি জানতামই না।
সকালে এসেছি। তুই ছিলি না।
হুম। ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম। আম্মার শরীর ভালো যাচ্ছে না।
শুনেছি, আমাকে সুবীর ফোন করেছিল। ও বলেছে। তোর শরীর এখন কেমন?
আমার শরীর তো ভালো।
রাতের ওষুধ খেয়েছিস?
না, এখন খাবো।
তোর সাথে একটু বলা দরকার।
বল।
তোর এইসব স্বপ্ন টপ্ন ইত্যাদি কিন্তু অনেকেই মানসিক সমস্যা হিসাবে দেখছে। স্বপ্নে কেউ চাকরি করে চেকবই পায়?
সেটা আসলে তোরা বুঝবি না। আমি যদি বলি পদার্থ বিজ্ঞান আমার তত্ত্বকে সমর্থন করে তাহলে তুই কী বলবি?
আমার কথা বাদ দে। অন্যদের কথা ভাব। আজকে যেখানে গেলি ওরা তো তোকে পুলিশে দিতে পারত।
তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে আমি কিছু বুঝি না। আমি বুঝি, এজন্যই তো ওদেরকে আগে কিছু বলিনি। মুর্খ মানুষ, ওরা এসবের কী বুঝবে? কিন্তু পরে যখন চেপে ধরল, তখন না বলে উপায় থাকল না।
অফিসে আবার কবে জয়েন করতে পারবি?
চাইলে ত কালই জয়েন করতে পারি। কিন্তু ওই অফিসে আর যাব না।
কেন?
ব্যাপার আছে, তুই বুঝবি না। ওখানে কোন মান-সম্মান নেই। একজন কবিকে কী করে সম্মান করতে হয় ওরা জানে না। ফালতু সব।মামুন কী যেন চিন্তা করল। তারপর বলল, ঠিক আছে। তবে সাবধানে থাকিস। সবাই তো সবকিছু বোঝে না।
ঠিক আছে।
ডাক্তারের ওষুধ খেয়ে ঘর থেকেই নড়তে পারি না। কথা জড়িয়ে আসে। ভালোভাবে হাঁটতেও পারি না। মাথা ব্যথা করে। টানা চারদিন ওষুধ খেয়েও স্বপ্নটা ফেরত আনতে পারলাম না। বিষয়টা উদ্বেগজনক। তারচেয়ে বড় ব্যাপার, থেকে থেকে কেবলি মনে হতে থাকল, স্বপ্নের বিষয়টা আসলে একটা মানসিক ব্যাপারই। এটাকে এত গুরুত্ব দিয়ে লাভ নেই। কিন্তু পরক্ষনেই মনে হল, গুরুত্ব না দিয়ে হেলায় হারানোও তো ঠিক হবে না। ভালোভাবে চিন্তা করতে গেলেই মাথা ব্যথা করে। ঘুমের ওষুধের প্রভাব। নাহ, ঠিকমতো চিন্তা করতে হলে মাথা ফাঁকা রাখতে হবে। দরকার নেই আমার ঘুমের, ওষুধ খাওয়া আপাতত বন্ধ রাখি।
দুইদিনের মধ্যেই আমি সুস্থ হয়ে গেলাম। বিশাল ভুল করতে বসেছিলাম। ভুল দরজায় নক করতে করতে আমার জীবনটা যাবে। একুশ তলা বিল্ডিং থেকে হাতিরঝিলের ওয়াটার বোট দেখা যায়, তার মানে, বিল্ডিংটা গুলশনে বা তেজগাঁয়ে হওয়াই যুক্তিযুক্ত। তেজগাঁও থেকে গুলশানের দিকে হাঁটা দিতে হবে। একুশতলা বিল্ডিং দেখলেই একশন। এবার বলতে হবে আমি ডিবি পুলিশ, সরকারে পক্ষ থেকে এসেছি, তথ্য সংগ্রহে। তার আগে নীলক্ষেত থেকে একটা আইডি কার্ড বানাতে হবে। আইডি কার্ড ছাড়া কেউ বিশ্বাস করবে না। আগে নীলক্ষেত যেতে হবে। তারপর তেজগাঁও। মামুন অফিসে যাবার পর বেরোতে হবে। ইদানিং খুব জেরা করে আমাকে। সুযোগ বুঝে মামুনকেও একটা শাল্টিং দিতে হবে।
নীলক্ষেত সমস্যা হবার কথা না। তবে সমস্যা হল ডিবি পুলিশের আইডি কার্ড কেউ বানাতে চাচ্ছে না। দু’তিন দোকান পর এক দোকানদার বললো, সে পারবে। একটু সময় লাগবে। কাউকে যেন না বলি। আমি বললাম, আমি কাকে বলব? আপনিও কাউকে বলবেন না। অমায়িক লোক। ছোট দোকান, তবু আমাকে টুল এনে দিয়ে বসতে দিলো। চা দিল, যদিও রাস্তার চা খাওয়া আমার ঠিক না, তবু নিলাম। নাহলে লোকটা কষ্ট পেতে পারে। চা শেষ করেছি কেবল, এর মধ্যেই দুজন পুলিশ এসে আমাকে মোটামুটি চ্যাঙদোলা করে শাহবাগ থানায় নিয়ে গেল। ভুল হয়েছে আমার, স্বীকার করলাম। কিন্তু ভুল কাজ করলেও, এর পেছনে যে একটা বিশেষ কারণ আছে সেটাও বললাম। সেই একই কথা, বাসার কেউ এসে আমাকে নিয়ে যেতে পারে। আবার মামুনকে ফোন দিলাম। দুপুর নাগাদ মামুন এসে আমাকে উদ্ধার করল।
সরাসরি ডাক্তারের চেম্বার। না করতে পারলাম না। কিছু জিজ্ঞেসও করতে পারলাম না। আম্মার কোনো সমস্যা না তো! ডাক্তারে কাছে আজকে আর সিরিয়াল দিতে হলো না। আমার জন্যই নাকি অপেক্ষা করছিলো। আমাকে দেখেই রাগ করে বলল, আপনি নিশ্চয়ই ওষুধ খান নি?
খেয়েছি। দুইদিন ধরে মিস দিচ্ছি। ওষুধ আর খাবো না। ঘুমের দরকার নেই। আমার অনেক কাজ বাকি।
আপনাকে কিন্তু ওষুধ খেতে হবে। আপনার জন্য না হলেও আপনার আম্মার জন্য।
কেন? আম্মার কী হয়েছে?
আপনার আম্মার কিছু টেস্টের রেজাল্ট বাকি আছে। আগামী সপ্তাহে দেবে। এর মধ্যে যদি আপনি ঝামেলায় পড়ে যান তাহলে আমি কার কাছে বলব? আপনিই তো বড় ছেলে, তাই না?
ডাক্তারণীর বয়স কম হলেও কথার প্যাঁচ জানে। বললাম, আমাকে কী করতে হবে।
নিয়মিত ওষুধ খাবেন। আর শনিবার আপনি আমাদের ক্লিনিকে ভর্তি হয়ে যাবেন। ইন্ডিয়া থেকে ডাক্তার আসবেন। উনি আপনার স্বপ্নের কথা শুনতে চান। খুব আগ্রহী। ভর্তি হবেন?
ভর্তি হতে হবে কেন? তাকেই বা আমি বলতে যাবো কেন? দরকার নেই।
তাহলে থাক। তবে আপনার আম্মা চাচ্ছে আপনি ভর্তি হন। তিনি আগেই টাকাও দিয়ে রেখেছেন। বিদেশি মানুষ, তিনি একটা উপায় বাতলে দিতেও পারেন। আপনার উপকার হতে পারে।
আম্মার যন্ত্রণায় থাকা গেল না। ডাক্তার দেখাতে কাউকে ভর্তি হতে হয়। সব ডাকাতি। নিশ্চয়ই এক গাদা টাকাও নিয়ে নিয়েছে। আম্মা টাকা পেয়েছে কোথায় এ প্রশ্ন কি ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করা কি ঠিক হবে? আর কথা বাড়ালাম না। বললাম, ভর্তি হবো।
‘কবিদের কিন্তু এক কথা’- একথা বলে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল।
কথার প্যাঁচ ভালোই জানে ডাক্তারণী। আসবার সময় ওষুধের ডোজ বাড়িয়ে দিলো। ডাক্তারে ওষুধ খাবার কোন কারন নেই। আমার আর ঘুমের দরকার নেই। কিন্তু যেহেতু বিষয়টা নিয়ে একটা ঝামেলা হয়েছে, আমি কিছু বললাম না।
তিনদিন ওষুধ খেয়ে আমি মড়ার মতো ঘুমালাম। আমার কেবল আম্মার কথা মনে হল। মাঝে মাঝে সেই গোরখোদকের কথা মনে পড়ল।
গোরখোদকের সাথে আমার দেখা হয়েছিলো সুনামগঞ্জে। হাওড়ের পাড়ে। সেদিন সেই গোরখোদক, তার ভাষায় বেশ কিছুটা ভাং খেয়েছিলো। ভাং কী আমি জানতাম না। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কী করেন আপনি?
কবর খুঁড়ি।
কবরস্থানে?
কবরস্থানে, বাড়িতে। যেইখানে মরণ সেইখানে আমি, হাহা।
আপনার বাসা তো মনে হয় না এদিকে।
অরজিনাল বাড়ি নারায়ণগঞ্জ।
আমাকে হাওড়ের পাড়ে রেখে বন্ধুরা গেছে বাজার করতে। সারা রাত নৌকায় থাকবে রান্না হবে। হাঁটতে হাঁটতে অন্ধকারে হোঁচট খাবার মতই দেখা হয় তার সাথে। নাম রমজান। অনেকটা মজা করার স্বরেই আমি তাকে বলি, আপনি কত লোকের কবর খুঁড়েন, আপনার কবর কে খুঁড়বে জানেন?
না, জানি না।
আপনে নিজেই সময় হলে খুঁড়ে রাখতে পারেন। বলে যাবেন যেন আপনাকে যেন সে কবরে কবর দেয়।
সেইটা আর সম্ভব না। এক কালে সম্ভব ছিল, এখন আর সম্ভব না।
কেন সম্ভব না?
সত্যই শুনতে চান?
হু।
এরপর গোরখোদক রমজান যেটা বলেছিলো সেটা একটা আশ্চর্য বিষয়। গল্পের প্লট হিসাবে চমৎকার। কিন্তু তখন আমি বিশ্বাস করিনি। কবর খুঁড়লেই নাকি সে টের পায় এই লাশ বেহেশতে যাবে নাকি দোযখে। যেই লাশ বেহেশতে যাবে সে কবর নাকি থাকে ঠান্ডা। তার ভাষায়, ‘দিঘীতে সইল ডুবাইলে যেমন ঠান্ডা, তেমন’। আর দোযখের? গরম। ‘গা পুইড়া যাওয়া গরম’। এমনও হয়েছে, ভীষণ বৃষ্টি, এর মধ্যে কবর খুঁড়তে হবে। বারবার পানি উঠে যাচ্ছে কবরে। কিন্তু কবরে নামলেই আগুন গরম। এতটুকু ঠাণ্ডা নাই। এটা কি শুধু রমজান নিজেই বোঝে? রমজান বোঝে। অন্য গোরখোদকেরা বোঝে কি না রমজান জানে না। রমজান কাউকে যেমন কিছু জিজ্ঞাসা করেনি, তেমনই রমজানের কাছেও কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করেনি। তবে রমজানের ভাষায়, ‘যেরা বোঝার তারা বোঝে। দেখেন না, এইজন্য অর্জিনাল গোরখোদকেরা কম কথা বলে’।
এমনিতেও মরার আগে নিজের কবর খোঁড়া নিষেধ। কিন্তু রমজান অন্য ভয় পায়। সে জানতে চায় না সে কি দোযখে যাবে নাকি বেহেশতে। এই অনিশ্চয়তাটুকু কেটে যাওয়ার ভয়ে সে ভীত।
আমি বলি, সমস্যা কী? আপনি নিজের জন্য খুঁড়বেন। যদি দেখেন সমস্যা, মানে, দোযখে যাচ্ছেন, তবে ইবাদাত বন্দেগী বাড়িয়ে দেবেন, তওবা করবেন। আপনার তো সমস্যা নেই। আপনি তো আর মৃত না।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে জিজ্ঞাসা করেছিলো রমজান, আর যদি দেখি আমি বেহেশতে যাইতেছি? তাইলে? পত্যেকদিন বাঁইচা থাকব কীভাবে?ঠিকই তো। এভাবে তো ভাবিনি!
এর কিছুক্ষণ পরেই ‘আপনারে বলাই আমার ভুল হইছে, ভাং খাইছি বইলা এতবড় ভুল করছি’ বলে সে হনহন করে চলে যায়। রমজানের সেই কাহিনী নিয়েই লেখা আমার গল্প ‘গোরখোদক’।
ওষুধের প্রকোপেই হোক আর অন্য কারণেই হোক, বুধবার নাগাদ আমি বুঝে গেলাম এক ভীষন অন্ধকারের জালকে আমি আটকে পড়েছি। মামুনের কথাই সত্য। এক অন্ধকার মানসিক বিপর্যয়ের দিকে আমার যাত্রা শুরু হয়েছে। এ থেকে আমার মুক্তি নেই। সারাদিন আমি ঝিমাতে থাকি। আম্মার অসুখ নিশ্চয়ই বাড়ছে। আমার করার কিছু নেই। একবার মনে হয় সব সত্যি, শুধু চেকবইটা হাতে পাওয়ার অপেক্ষা। কত মিরাকলই তো ঘটে পৃথিবীতে। পরক্ষনেই মনে হয়, এই অবাস্তব জিনিস কিভাবে আমি বাস্তব মনে করি!
এর মধ্যেই আশ্চর্য্যজনকভাবে আমি একরাতে আমার সেই আরাধ্য স্বপ্নের ভেতর প্রবেশ করি। সেই ইন্টারভিউ ঘর। সেই ঝুলে যাওয়া চিনওয়ালা লালাভ ভদ্রলোক। আমি তার ঘরে বসে আছি। বেশ নরম স্বরে তিনি বললেন, সরি সরি কবির সাহেব, একটু দেরি হচ্ছে। মোতালেব, মোতালেব।
আশ্চর্য্য, মোতালেব নামে যে আসে তার নাম আসলে রমজান। ঘরে ঢুকেই রমজান আমাকে চোখ টিপ দেয়। আমি বুঝে যাই। কিছু বলি না। কী দরকার বলার? আমার দরকার চেকবই। সালাম দিয়ে মোতালেব আমাকে বলে, আমার সাথে আসুন স্যার, এদিকে।
মোতালেব কিংবা রমজানের পেছন পেছন হাঁটতে হাঁটতে আমি আরেকটা কামরায় গিয়ে পৌঁছাই। মোতালেবের কামরা, কিংবা রমজানের। আমি জিজ্ঞাসা করি, আপনি এখানে কী করেন?
আপনি কী করেন?
আমি তো চাকরির ইন্টারভিউ দিতে এসেছি।
আমি তো অলরেডি চাকরি করছি।
চেকবই কবে পাবো?
রমজান হাসে। স্যার আপনি গুবলেট করে ফেলছেন। চেকবই তো পাবেন জয়েন করার পর। জয়েন করার আগে কীভাবে পাবেন?
আমি তো জয়েন করতে চাই-ই। কিন্তু আপনাদের অফিসই তো খুঁজে পাই না।
রমজান হাসে। কীভাবে পাবেন। আপনাকে তো মরতে হবে। এই আমি মরে গেছি। এখন এখানে চাকরি করি। সব ফিটফাট।
বলেন কী?
আপনার ভাগ্য ভালো, মরার আগেই চাকরি পেয়ে গেলেন। চেয়ারম্যান সাহেব আপনার গল্প পড়ে খুব পছন্দ করেছে।
আমি একটু লজ্জা পেলাম। বললাম, আপনার কাহিনীটাকে একটু এদিক-সেদিক করে গল্প বানালাম। আপনি আবার মাইন্ড করেননি তো।
আরেহ না। এইখানে মাইন্ড করা যায় না। তবে আপনি ঠিক লেখেন নি। আমি নিজের কবর খুঁড়ি নি। দুই তিনবার এটেম্পট নিয়েছিলাম, কিন্তু সাহসে কুলায়নি। যাক সেসব কথা। দেন এখানে একটা সাইন দেন।
আমি কবে জয়েন করতে পারবো?
আপনার এপোয়েন্টমেন্ট লেটার রেডি থাকবে। মরার পরদিন থেকেই জয়েন করতে পারবেন। মরলে তো আপনার ডাবল লাভ, আপনার তো লাইফ ইনস্যুরেন্স করা আছে। ওইখানেও লাভ, এইখানেও লাভ- কী বলেন স্যার। হা হা হা।
রমজানের হাসিতেই কি না কে জানে ঘুম ভেঙে গেল। আমি আর ওষুধ খেলাম না। রমজানের কথাটা মনে ধরেছে। আসলেই তো, ডাবল লাভ। ইনস্যুরেন্সের টাকাও কম নয়। আম্মার চিকিৎসা আর সুবীরের বিদেশ হয়ে যাবার কথা। কিন্তু একথা কাউকে বলা যাবে না। বললেই বাধ সাধবে। মরতে হবে এক্সিডেন্টে। সুইসাইড বুঝলে কোম্পানি টাকাও দেবে না। একজন সাক্ষী রাখলে ভালো হয়। রেললাইনে মরা যাবে না। কোম্পানি বিশ্বাস করবে না। গল্পের মতো সবকিছু সুনিপুণভাবে সমাধা করতে হবে। আজকে রাতেই কাজ সারতে হবে। পূর্ণিমা আছে। একজন কবির মৃত্যুর জন্য পারফেক্ট। রাত বারোটার দিকে বেরোতে হবে। মামুনকে নিতে হবে সাথে।
নিজের পরিকল্পনায় নিজেই মুগ্ধ হয়ে গেলাম। দুপুরের দিকেই মামুন চলে আসল। বলল, কালকে সকালেই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে আমাকে। আমি মাথা নাড়লাম। জিজ্ঞাসা করল ওষুধ খেয়েছি কিনা! একজন কবি মিথ্যা বলে না সাধারণত, কিন্তু আমাকে বলতেই হল। রাতের বেলা মামুনকে বললাম, চল হেঁটে আসি। একটু ভনিতাও করতে হলো- বললাম, কালকে তো হসপিটালেই ভর্তি হতে হবে। একটু হেঁটে আসতে ইচ্ছে করছে।
ঠিক রাত বারোটা বারো মিনিটে একটা ট্রাক আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে গেল। মৃত্যু হলো কি না জানি না।কী রকম একটা ভীষণ ঘোরের মধ্যে সাঁতার কাটলাম, কতক্ষণ বা কতদিন কে জানে! এই আলো এই অন্ধকার। দূর থেকে আসা শব্দ। সবকিছু শান্ত হয়েও আসল একসময়। এরকম অন্ধকার থেকে আলো, আলো থেকে অন্ধকারে ঘুরে বেড়াচ্ছি, হঠাৎ দেখা হয়ে গেল রমজানের সাথে। হাওড়ের পাড়ে।
রমজানকে দেখা মাত্রই আমি চিৎকার করে উঠলাম, এই যে রমজান কী ব্যাপার?
কী ব্যাপার?
আমার বিষয়টা কী বলেন তো?
আপনার বিষয়টা তো জটিল। আপনি সুইসাইড করতে গেলেন কেন?
আপনি না বললেন, মরার পরে জয়েন?
আহহা, মরা আর সুইসাইড কি এক?
এখন আমি কোথায়?
আপনার শরীর হাসপাতালে। তবে রুহ ঘুরছে। রুহ কবজ হচ্ছে না।
হচ্ছে না কেন?
প্যাঁচ লাগিয়ে ফেলেছেন।
কী প্যাঁচ?
আপনারে বেহেশতে যাবার কথা। সে হিসেবেই আপনাকে চাকরিটা দেয়া হয়েছিলো। শুধু বেহেশতিদেরকেই আমাদের কোম্পানি চাকরি দেয়। দোজখিদের চাকরি দেয়ার নিয়ম নাই। আপনি তো সুইসাইড করে ফেলেছেন। সুইসাইড তো মহাপাপ।
তাহলে আর কী? জয়েনিং ক্যান্সেল করে দিন।
কিন্তু আপনি তো আপনার মায়ের জীবন বাঁচানোর জন্য সুইসাইড করেছেন। মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। এখন সবাই হিসাব নিয়ে বসেছে, কোনটা টিকবে। দেখা যাক।
এখন আমার কী হবে?
ঠিক হবার আগ পর্যন্ত আপনার রুহ আটকা থাকবে। এরপর কবজ হতেও পারে আবার আপনাকে আরেকটু সময় দেয়া হতে পারে। আপনি আসলে ঝামেলার লোক।
আমার মন খারাপ হওয়ার কথা কিন্তু তেমন মন খারাপ হল না। আম্মার জন্য একটু মনটা হাহাকার করতে লাগল শুধু।
জিজ্ঞাসা করলাম, দু একটা জিনিস জানা যাবে?
কী?
আম্মা কী খুব কাঁদছে?
তা তো কাঁদবেই। দুইবার বেহুঁশ হয়েছে।
ইনস্যুরেন্স?
মনে তো হচ্ছে এ যাত্রায় পেয়ে যাবেন, যদি রুহ কবজ হয়।
এখন আমার কী করা উচিত?
আপনার কিছুই করতে হবে না। আপনার আর কিছুই করার নেই।
ধীরে ধীরে রমজানের কণ্ঠও ফিকে হতে লাগল। আর আমি একবার অন্ধকার থেকে আলোয়, আবার আলো থেকে অন্ধকারে ঘুরে বেড়াতে লাগলাম।
মুরাদ কিবরিয়া
নিবাস- ঢাকা, গল্পকার, পেশা- চ্যাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট।
মুরাদ ভাই, এই শীতের রাইতে গ্রামে খুবই শীত, তার উপর আমি এক প্রকার ঘরের বাইরে। মানে আমাদের বাড়ির ছাদের উপরে টিন শেডের ঘর ঐখানে শুইছি। চালের উপরে টাপুর টুপুর নানান কিছু পরার শব্দ হইতেছে, মনে হয় কুয়াশা! আশপাশে এতো শিয়াল হাঁকডাক দিচ্ছে, তার ভেতরেই আমি আপনার এই গল্পে বিভোর হইয়া গেছিলাম। অনেক দিন পর এমন লম্বা লেখা পড়লাম।