আজ বৃহস্পতিবার, ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বিষুবরেখা টেনে দিও পাখিদের গতিপথ ধরে

।। ইসরাত জাহান গয়না ।।

যে-কারও সংসারের দায় ছেড়ে,
নিজের কিছু পালক ঝরে গেলেও
বুনোহাঁসের রুহ বলে দিবে তোমাকেই
একদিন এসো তুমি-
বাকি দিনে বলিও তোমার ব্যস্ততা থাকে

সহবর্তী

চায়ের কেটলিতে
ইরানি ফুল।
ভেজা চুলগুলিতে
বেলির দেউল।
লোনলি দাঁড়কাক
কা কা করছে।
বিচিত্র বকুলেরা
মিটিমিটি হাসছে।
বিকেল লাল আলোর
খুঁতখুঁতে ফকলোর।
ঝিমানো রিক্সা
নিয়া চলে তোমাকে।
হেলেদুলে বর্ষা
রয়ে গেল বুকে।
চুপচাপ ঘরটি
আধভেজা দরজা।
বিছানার চাদরে
ডাকে চড়ুই সাদরে।
অলিগুলি ডানাকাটা
খেয়ালি সন্ধ্যা।
মগডালে ডাকে পেঁচা
গাছেরা বন্ধ্যা।

কন্টিনিউস

কুঁচকানো শার্ট
লন্ড্রি দোকানে
নিয়ে তুমি দাঁড়িয়ে
ভাই ভাই টেইলার্সে।

ঝুলে পড়া ঘাস
চেয়ে আছে আকাশে
যেন যাবে উড়ে
মেঘের হাশরে।

আজিমপুরের রাস্তায়
ফোটে ফুল জেসমিন
শনশনে সন্ধ্যায়
নাকে ভুল নোজপিন।

আলো ভেসে অন্ধকারে
দেখি জাঁ-লুক গদার
কন্টিনিউস বিষণ্ণতা ঘিরে
এনায়েত বাজার।

সিনেম্যাটিক থার্সডে
রেখে সরকারি ছুটি
বসে থেকো বারান্দায়
ঢুকে অভ্যন্তরে পৃথিবীর।

উইন্টার নাইট

তোমাকে চলে যেতে দিলে,
হৃদয় তার সমস্ত দুঃখ নিয়ে
নার্সারির ভাঙ্গা গাছের মতো পড়ে থাকে।

মাঝে মাঝে অনেক সফরেরই উদ্দেশ্য জানা যায় না।
তোমার দিকে আমার সফরটা এইরকমই ,
যেখানে স্বয়ং উদ্দেশ্যটাই সফর করেছিল তোমার দিকে।

তাই তোমাকে চলে যেতে দিলে,
একা রয়ে যায় ভেজা পৌষে
আমার দোমড়ানো-মোচড়ানো মন।

তোমাকে যেতে দেওয়ার পর,
কোনো ঋতুতেই আমার শুনতে ইচ্ছে হয় না কোনো গান,
কোল্ডেস্ট নাইট অব দ্য ইয়ারের সমস্ত শীত জমে উঠে বুকে।

তুমি যাওয়ার পর

তুমি যাওয়ার পর,
তুমি নিয়ে গেছ আমার কথা
তোমার অতীতের ভিতর।
আসো, কমিটি বানাই,
সেখানে প্রেসিডেন্ট বানায়া দেই
তোমার উছিলায় মরা যাওয়া মনটাকে।
পোস্টমর্টেম করতে থাকি
তোমার চলে যাওয়ার মতো বিচ্ছিন্ন ঘটনা।
যেহেতু, যেহেতু কোনো ম্যালানকোলিক রাতে
তোমারে ট্রান্সলেট করা যাবেনা আর কোনোভাবেই
অজানা ভাষার গানগুলোর মতোন,
তাহলে তুমি চলে যাইও,
সব ফর্মাল লেটারের ‘আনএভয়ডেবল ইনসাইডেন্ট’ শব্দগুচ্ছের সহবতে।
তোমাকে চলে যেতে দিলেই
তুমি সারেঙ্গীর বেদনা হয়ে আরও
জোরে, জোরেশোরেই বাজতে থাকো আমার মাথায়।
তবু তোমারে অনুরোধ,
তুমি চলে যাইও তোমার অতীতের ভিতরে।

ফাঁকফোকর

কোনো জায়গায় তোমারে ভাবতে
আনকম্ফোর্টেবল হয়ে উঠলে
মনে হতে থাকে
ইস্রাফিলের শিঙায় ফুঁ দেয়ার মুহূর্তে নিয়ে আসছি আমি আমারে।

আমার দিনগুলো জানত তুমি এইখানে এইখানে থাকতা,
আমার বছরগুলিও হাঁইটা যাবে সামনে
তোমার মধ্যে দিয়া।

তুমি কেবল তোমার পরিত্যক্ত স্থানটাই আমার দিলা
আর আমার আনটোল্ড কনভারসনের সুরত
কল্পনা করার এলিমেন্ট,
কিন্তু তুমি নিয়ে গেছো তোমারে দূরে কোথাও
উড়ে যাওয়া কৃষ্ণচূড়ার পাপড়ির মতোন।
আর সেখানে টুপ করে ঝরে পড়তেছো
সিগারেটের ছাই হয়ে এস্ট্রেতে।
রাতের অপেরা সাজিয়ে শুনতেছো রেডিওহেড
কিন্তু বুঝতেছো না এসব এক্সপেন্সিভ ডেকোরেশনের ভিত্রে আমি নাই।
আমারে কেন রাখো না রবার্ট ডি নিরো?

কন্ট্রাডিকশন

তোমার ফিরে আসার সম্ভাবনায়
যেকোনো চূড়া থেকেই ফিরে চলে আসা যায় মুহূর্তেই।
যে-কারও সংসারের দায় ছেড়ে,
নিজের কিছু পালক ঝরে গেলেও
বুনোহাঁসের রুহ বলে দিবে তোমাকেই
একদিন এসো তুমি-
বাকি দিনে বলিও তোমার ব্যস্ততা থাকে।

বিষুবরেখা টেনে দিও
পাখিদের গতিপথ ধরে, তোমারই স্বরে।
মনে হতে থাকে যেন-
তোমার ফিরে আসার সম্ভাবনায়
যেকোনো নবজাতকের কান্না শুনেও চলে আসতে পারি,
যে-কারও লবণের বাটিতে বেখেয়ালে পানি ফেলে,
আমাদের নোনতা বাড়ির উঠান মাড়িয়ে
আমাকে আসতে দিও তুমি।
তোমার ফিরে আসার সম্ভাবনাটুকু দিও।

মায়া

কিছু খুঁজে না পেলে আমতা-আমতা অস্থিরে
কী যেন দোয়া পড়ে!
ভুলে যাই আমি, তাই আর খোঁজা হয় না তোমারে।
যতনে-অযতনে কিছু ট্যাবু আপব্রিংগিঙ করে মালিক বনে গেলে,
“বিপনি-বিতানে’ স্বাগতসম্ভাষণ-বলে লালরঙা কার্ড ছেপে
পায়চারি করে বিশ্বস্তমুখে কাকের ছানারা দলে দলে।
তাদেরও ফাঁকি দিয়ে কিচ্ছা হয়ে রইলে,
চেনা মানুষকেও চিনি কিনা পুনরায় ভাবতে বসলে,
উচ্চমার্গীয় মানসিক ঘূর্ণিতে ওড়ে অগুনিত পর্বতেরা।
মুর্দাবাদে ফ্যাকাশে প্রলাপের রজনী নামে।
ছ্যারাভেরা হয়ে রাত বহে,বাজেয়াপ্ত শরীরের যেন হয় আড়মোড়া দশা।
অভিজ্ঞতা আছে কিনা অভিজ্ঞের অভিনয় করে ভাবলে,
মাঝে মধ্যে কটু হতে ভালো লাগে তোমার দরবারে।
ভেঙে পড়া দিন চারচালা ঘরের দাওয়ায় রঙ খেলতে চাইলে,
মনের সংকটে পতিত মানুষগুলো হাহাকারে রোদন করে।
তখন খুব বেখেয়ালে বিনয়ী খোয়াব স্থান নেয় চোখের কোটরে।
মন ইউটার্ন আকৃতিতে বাঁক নিলে
ট্রাজেডির সুর ধরে,
চরতায় কাটতে থাকা সুপারি হই,
তোমার আঙ্গুলের ফাঁক গলিয়ে যাই,
বিবর্ণ ভনিতা করে কৌটায় রয়ে গেলে
মাঝে মাঝে পানের খিলিতে জায়গা হয়।
তখন নজরানা না দিয়ে এঁটে যাই তোমার কাছে।
কোনো শিলীভূত চিন্তার পসিবিলিটি না ধরা দিলে
অবয়বহীন হয়ে যাব তোমার ন্যাচারাল ফিকিরে।

ছবি: Laura Makabresku

ইসরাত জাহান গয়না

আগ্রহ বলতে কবিতা বা যাতে সেকেন্ডারি লেভেলে হলেও নিজের সাথে রিলেভ্যান্ট করে তোলা যায় তাৎক্ষণিক বা বিলম্ব যখনই হোক- এমন যেকোনো টেক্সট বা কনটেক্সটই দেখতে পছন্দ করেন গয়না। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট এন্ড ভালনারিবিলিটির স্টুডেন্ট। জন্ম বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলায়।

Share

1 thought on “বিষুবরেখা টেনে দিও পাখিদের গতিপথ ধরে”

  1. গয়না মূলত প্রেমিক; প্রেমিকা না। বাকিদিনের ব্যস্ততা নিয়ে গয়নার যে আক্ষেপ এইটা মূলত প্রেমিকস্বভাব।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top