আজ রবিবার, ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বাংলা চিত্রগীতি

।। সৌরভ গুহ ।।

এ লপসি আমার মা, আমার জিনে যে রিফিউজি
কাঁটাতার পেরিয়ে চলেছে অবিরত গৃহ থেকে গ্রহানুপুঞ্জে
যে খুঁজে ফেরে উঠোন, ভিড়ে একলা হয়, উদাসীন
বাতাস তাকে রম্য ইশারা দিয়েছিল, ফেনী পাবনার
ফসলের ঘ্রাণ না পেয়েও যে মেতেছে গল্পের উত্তরাধিকারে

বিয়েবাড়ি

ব্যান্ড মাস্টার তুমি রিকশা টেনে এলে ?
ধুলোর সম্ভারে বিগত রাস্তার রেশ রয়ে গেছে
পায়ের ছাপ ফেলে চলে গেছে গ্রামজ কলোনি
তুমি এলে আজ বাঙাল পাড়ায় পরিযায়ী শীত
যেভাবে ক্ষণিকের সন্ধ্যা ভেজায় আকাশের অকরুণ অশ্রু
কনেবাড়ি থমকে থাকে আনন্দ স্তব্ধতার মধ্যবর্তী সীমায়
অস্ফুট গল্পে নীরবতা গাঢ় করে কানাগলি
চা দিলো কেউ ?
বেগুনি পোশাক পড়ে তুমি মেলে ধরো বাংলা চিত্রগীতি
তাবৎ আশির দশক, কুসুম কুসুম আহা আবেশ আবেশ
এত যে দহন তবু প্রহেলিকা কুয়াশাবিভোর
স্যক্সোফোনটা তোলো বাংলা সানাই জুড়ে কিছু আশকারা হোক
কারা যেন ঘুড়ির অছিলায় আকাশ দখলে মেতেছিল
ওদের পায়ের নীচে মাটি ছিল না কখনোই ছিলোনা মাটির আশ্বাস
সেই সব দিন বাজাও মাস্টার শীতের সন্ধ্যা আজও আবছা ভিজে থাকে

খিচুড়ি

চাল-ডালের এই নৈরাজ্য আমাকে শ্রেণিচ্যুতকরে
অনায়াসে দাঁড়িয়ে যাই ভিখারি পাগল আর
এলোমেলো মহিলার লাইনে

এ লপসি আমার মা, আমার জিনে যে রিফিউজি
কাঁটাতার পেরিয়ে চলেছে অবিরত গৃহ থেকে গ্রহানুপুঞ্জে
যে খুঁজে ফেরে উঠোন, ভিড়ে একলা হয়, উদাসীন
বাতাস তাকে রম্য ইশারা দিয়েছিল, ফেনী পাবনার
ফসলের ঘ্রাণ না পেয়েও যে মেতেছে গল্পের উত্তরাধিকারে

হে চাল ডালের জিয়ন শিয়ালদা প্ল্যাটফর্ম ক্যাম্প
হে শস্যের আঘ্রাণ আমাকে স্থানচ্যুত করো গভীরা গন্তব্যে
কমিউনিস্ট পার্টি আর ভারত সেবাশ্রম ঘিরে আমি ক্যাম্প ঘুরে ঘুরে
খিচুড়ি খেয়েছি যেদিন আমার আকাশ জমিন কিছু নেই
খিচুড়ির উত্তপ্ত ওমে আমার লালসা বেছে নেয় বাঁচতে চাওয়া

বেঁচেছে ধান্ধা বাজের মতো আমি বাঁচার ধান্ধা করেছি
জবরদখল করেছি জলা যেভাবে ব্যবস্থার ছায়া উৎখাত করে
দখল কায়েম করে পুনর্দখল হয়ে পড়ি কতবার আমি
খুঁজতে থাকি পুরোনো সুরের মতো বিরামহীন ব্যাধির মতো ওতপ্রোত সঙ্গ
আমাকে সঙ্গী ভেবে উড়াল দিতে চায় বিভ্রান্ত বিপ্লবী দূরগামী ব্যবসায়ী ও
বিহঙ্গ রাজনীতিক ভোট দিলে যে সেবা দেবে আরও কিছু দেবে পাহারা টাহারা

আমার শ্রমপরম্পরা তামাদি শস্যবীজ বাজার আমাদের বাতিল করেছে
আমাকে খাচ্ছে রোজ উদগ্র ক্ষুধা তার খাদ্য বানাচ্ছে
বানাচ্ছে খাদক ছদ্ম ক্ষুধা খাদ্য উপনিবেশ
রপ্ত হচ্ছি তার অনাহূত খাদ্য শৃঙ্খলায়

হে সোনালী অন্ন লপসি হয়ে ভাণ্ডারা হয়ে ভিক্ষা হয়ে তুমি
এসো মা-ময় আস্বাদ আঘ্রানে

মা

যে বাতাসে ভেসে আছে মায়ের চিতাভস্ম আমায়
সে যেন দুঃখ জালিকা পেড়িয়ে ডেকে যাচ্ছে দূরে
সুরের যেমন গতি স্থানু ও পারাপারে ছেয়ে থাকে তীরের বিকেল
মৃত্যু আসলে নদী জীবন ভাসিয়ে নিয়ে যাবে
সুর তো আমারই মা কোলাহল ও তার সহদোরা
যে শহরে দিনলিপি লিখব বলেই আসি
সে শহরে কত ছায়া হেঁটে গেলো সুরের টানে
গড়িয়াহাট অবাক চোখে দেখে ডবল ডেকার
উঁচু থেকে যন্ত্রণাগুলো ঢেকে যায় কেমন বাতাস এসে লাগে
ট্রেডার্স এসেম্বলির লালবাড়ি তুমি কি মা কে দেখেছো
ওষুধের গন্ধমাখা পরিত্রাণের এই পথমালা জুড়ে কিছু
অঙ্ক ভুল হওয়ারই তো কথা ছিলো মাতৃহীন ওকে
দ্যাখো কুসুম বালিকা স্বভাব বালকও যে বয়সে বেড়েছে
দুঃখভারেও জেগে ছিল কাম বোধ যৌনসম্বিত
নিজেকে অবাক করে দেখার মতো এ কী আত্মভ্রম
হে লাল রঙের নদী যে তুমি মা কে গড় কিশোরী শরীরে
আবছা ঘাটের দিকে টেনে নেবে বলে এ শহর মেঘলা হয়ে এলো

সৌরভ গুহ

পেশায় টেলিভিশন সাংবাদিক। নিউজ লেখেন, ফিচার লেখেন। কবিতা লেখেন। প্রকাশিত হয়েছে রম্য রচনার বই ‘চেনা নেতা অচেনা নেতা’। সম্পাদিত পত্রিকা ‘কবিতা কারিগর’। ২০১০ সালে প্রকাশিত হয় কবিতার বই ‘কলোনির কবিতা’। কালীঘাট পটুয়া পাড়া নিয়ে বানিয়েছেন তথ্যচিত্র ‘নগর পটুয়া’। খবরের পাশাপাশি টিভি চ্যানেলের জন্য বানান ডকু ফিচার।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top