।। কনকলতা সাহা ।।
প্রকৃতি এখানে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছে মানুষের কাছে। মায়াঘেরা এই ভ্রমণ আমাকে নতুন জীবন দিল। ফিরে এসেও ঝিঁঝিঁপোকা, পাখির ডাক আর পাহাড়ি ফুলেদের স্পর্শ যেন এখনও পাচ্ছি। এই স্বপ্নবাস্তবের দুনিয়া থেকে ঘুরে এসে বন্ধুদের শোনাতে বসেছি কুসুম আলোয় ফুটে থাকা পাহাড়ি গ্রাম, উপত্যকা, মানুষ, সারমেয়, ফুল ও ঝর্ণার কথা…
শরৎ অবকাশে কলিগের সঙ্গে প্ল্যান হল কালিম্পং শহরে বেড়ানোর। সেই সমস্ত ব্যবস্থা করে দিল। যথা নির্দিষ্ট দিনে রওনা দিলাম পাহাড়ের পথে। সিতেনের বাড়ি কালিম্পং শহরে, ওর এক আন্টির বাড়িতে আমার থাকার ব্যবস্থা হল। হঠাৎই ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে, তাই আমার সঙ্গে সময় কাটিয়ে দার্জিলিং পাড়ি দিতে হয়েছে ওকে। বিয়ের রিসেপশন পরে হবে। আপাতত বিয়ের আগের ব্যাচেলর জীবনের শেষ সময়টুকু আমার সঙ্গেই কাটাতে চেয়েছিল সে মায়ায় জড়ানো তার পাহাড়ি শহর ও শহর ছাড়িয়ে দূরের গ্রামে।
পাহাড়ে পৌঁছতে মনে হল এ যেন আমার ও শহর। বড় নরম মনের মানুষ নীলম আন্টি। কত যত্ন করে রাখলেন, ভালোমন্দ রেঁধে খাওয়ালেন। আমার সারথি হয়ে দীপকভাই পুরো শহরটির একটা ছায়াচিত্র গড়ে দিলেন পরের দিন। আমরা কালিম্পং শহরের দ্রষ্টব্য স্থানগুলি দেখতে দেখতে সারাদিন কাটিয়ে দিলাম। পাইনভিউ নার্সারি থেকে শুরু করে, বৌদ্ধমঠ ও ডেলো পার্ক ঘুরে বেড়ালাম। পথে সুস্বাদু মোমো, ফ্রায়েড রাইসের স্বাদ। আঁকা-বাঁকা পথে পৌঁছে গেলাম মর্গ্যান হাউস, ডাক্তার গ্রাহামের স্কুল ও চার্চে। ইতিহাস সেখানে কথা বলছিল। অদ্ভুত একটা নির্জনতা ঘিরে ছিল, সঙ্গে ছিল নতুনকে দেখার আবেগ-আনন্দ। পথ শেষে গৌরীপুর হাউস খুঁজতে একটু বেগ পেতে হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ এখানে থাকতেন কেন, তা সে এসেই অনুভব করলাম। রক্ষনাবেক্ষণ হয়নি বহুকাল, সদ্য কিছু কাজ চলছে দেখে একটু আশার আলো পেলাম। রবীন্দ্র সংগ্রহশালা চিত্রভানু সেদিন বন্ধ ছিল। সেখানে এখন একটি সেলাইয়ের স্কুলও তৈরি হয়েছে। পাহাড়ে ঘুরতে ঘুরতে ঋত্বিক ঘটকের কোমলগান্ধার আর জর্জ বিশ্বাসের কণ্ঠে ‘বিস্ময়ে তাই জাগে, জাগে আমার প্রাণ আকাশ ভরা’ মনে পড়ল। অনিল চট্টোপাধ্যায়ের সেই অভিনয়, কণ্ঠের জাদু, লেন্সের মুনশিয়ানা– এসব একঝলকে মাথায় এলো, শারদ অবকাশে আমিও মনে মনে গুণগুণ করে উঠলাম, ‘অসীমকালে যে হিল্লোলে, জোয়ার-ভাঁটায় ভুবন দোলে…’! লিরিকহীন সুর ভাঁজতে ভাঁজতে মেঘ মেখে পড়ন্ত দুপুরে চক্কর দিলাম গল্ফ কোর্সের পাশ দিয়ে। দেখলাম ক্যাকটাস বাগান, পাহাড়ি ক্যাফেতে বসে কিছুটা সময় কাটালাম।
কালিম্পং শহরের বৌদ্ধমঠটি আমায় দারুণভাবে টেনেছিল। মঠটির গর্ভগৃহের দেওয়ালচিত্র, তারা, মহাকালের মতো দেবদেবী ও বৌদ্ধ মহাজনেদের ছবি… মেঝেতে ধম্মপুস্তক পাঠ ও এবাদতের বন্দোবস্ত, শঙ্খ-সহ নানা বাদ্যি সাজিয়ে রাখা… জানালার বাইরে তাকালে বৌদ্ধ সমাধিস্থল…. অসাধারণ গুরুগম্ভীর ও পরিত্রতায় ভরা সেই জায়গায় আমার মতো অজ্ঞেয়বাদীর মনও উদাস হয়েছিল। বন্ধু মিতার সঙ্গে দেখা, দেখি সে নতমস্তকে বসে রয়েছে গৌতমমূর্তির সামনে। গর্ভগৃহ থেকে বের হয়ে সেই বন্ধুকে দেখি বৌদ্ধস্কুলে পড়া বাচ্চাদের সঙ্গে ফুটবল খেলছে। তাকে আর বিরক্ত করিনি। বিদায় নিয়ে রওনা দিয়েছি পরবর্তী গন্তব্যের দিকে। এর মধ্যে ছিল গ্রাহাম স্কুল।
স্কটল্যান্ডের মিশনারি চার্চের ড. জন অ্যান্ডারসন গ্রাহাম ১৯০০ সালে গ্রাহাম হোমস স্কুলটি স্থাপন করেন। কালিম্পংয়ে শিক্ষা প্রসারে তাঁর ভূমিকা স্মরণ করেন স্থানীয়রা। উপমহাদেশ তো বটেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিশু-কিশোররা পড়তে আসেন এই আবাসিক স্কুলে। পাহাড়ের ভাঁজে স্কুলটির পরিবেশ ও সৌন্দর্য অপূর্ব। তবে মধ্যবিত্তের পক্ষে এই স্কুলে ছেলেমেয়েদের পড়ানো কষ্টসাধ্য। এই স্কুলে ঘুরতে ঘুরতেই ডাক এলো কালিম্পং শহরের অদূরেই নির্জনে বসবাসরত এক বজ্রযানী বাঙালি সাধকের। একইসঙ্গে বৈদান্তিক, কালান্দর সুফি ও বজ্রযান সাধনায় তিনি সিদ্ধ। তন্ত্রচর্চার পাঠদানে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত। একই সঙ্গে কবি, চিত্রকর, শিক্ষক ও সাধক এই মানুষটি এক সময়ে আবার নকশালবাড়ির রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। এক বন্ধুর মুখ থেকে তাঁর কথা শুনেছিলাম। দেখা করলাম সাধুর সঙ্গে। তন্ত্র, বৈদান্তিক ও অবৈদিক দর্শন, ইসলাম, উপমহাদেশের রাজনীতি, সাহিত্য, শান্তিনিকেতন, সত্তর দশক, কমলকুমার– এসব নিয়ে আড্ডা হল। যদিও ক্লান্তির কারণে আড্ডায় আমিই ইতি টানলাম ক্ষমা চেয়ে নিয়ে। সেখান থেকে ফের আন্টির বাসায়। পরদিন কালিম্পং ছাড়িয়ে আরও উপরে, পাহাড়ি উপত্যকায় পাড়ি দেওয়ার পালা।
ডুকা-ভ্যালি ও মায়াগ্রাম
শহর ছাড়িয়ে পাহাড়ি গ্রামের সন্ধান করেছিলাম আগে থেকেই। ফেসবুক বন্ধু বর্ষা খুব ভালো গাইড করলেন। চারচাকা ছুটিয়ে রমন ভাই নিয়ে গেলেন ওঁদের গ্রামের কাছাকাছি একটি নির্জন পাহাড়ি উপত্যকায়। নেওড়া ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক ঘেরা একটি ছোটো গ্রাম, গ্রামটির নাম আমি রেখেছি মায়াগ্রাম। সবমিলিয়ে সত্তরের কাছাকাছি বাড়ি আছে বলে বোধ হল। কালিম্পং থেকে পনেরো কিলোমিটার এবং আলগারা থেকে আট কিলোমিটার এইরকম একটা দূরত্ব হতে পারে আগেই দেখে নিয়েছিলাম ম্যাপে। শরৎ কিন্তু তখনও বর্ষার আমেজ কাটেনি। ফলত কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা গেল না। দুপুরে এসে পৌঁছলাম গ্রামে। মায়াদিদি আর নবীন ভাইয়ের সুন্দর সাজানো গোছানো সংসার।
ওঁদের পরিপাটি দেখলে মনে মনে আশ্চর্য লাগে। অথচ বড়ো অল্পতেই এরা সন্তুষ্ট। ওঁদের একমাত্র কন্যা রোধা, যার নামের অর্থ ‘রোজ’ বা গোলাপ । ভারি মিষ্টি মেয়ে। পেয়ালা ভর্তি চা খেতে খেতে দেখি ফুল ঝরে পড়েছে মাটিতে। অ্যাজেলিয়ার লাল গোলাপি রঙের আর্কষন চোখ এড়ানো যায় না। বিলিতি গাঁদা, লাল ঝুমকা, চন্দ্রমল্লিকাও আপন করে নিল যেন। মায়া দিদি সযত্নে সাজিয়ে খাবার পরিবেশন করলেন। ডাল, ভাত, মাছের মাথা দিয়ে শাক, ডিমের কারি, আলু টমেটো কাঁচালঙ্কা দিয়ে টক ঝাল মাছের ঝোল, পাঁপড়, স্যালাড খেয়ে মায়ের রান্নার কথা মনে পড়ে গেল। খাওয়া শেষ করে বেরিয়ে পড়লাম ওদের পূর্ব পুরুষদের জমিদারি দেখতে। বেশ বড় একটা অঞ্চল। পাহাড়ের পাদদেশে এমন খেত-খামার দেখতে ভালোলাগে। ব্রিটিশ আমল থেকে ওঁদের রাই পরিবার। বসতির অনেকটা অংশ এখনও ওদের নিজেদের। ওখানে শর্টকাটে একটা রাস্তা আছে ওপরে চেক পোস্ট অবধি যাওয়ার। সেই বুনো পথেই কিছুটা এগিয়ে গেলাম। নিঝুম অথচ নির্ভয়ে চলা যায় এমন পথ। চারিদিকে রঙ বেরঙের বুনো ফুলের সারি । পথের একপাশে স্কোয়াশ ঝুলছে অজস্র। ওরা একে বলে ‘ইস্কুস’। আমার বড়ো প্রিয় সবজি। তাছাড়া ভুট্টা, বরবটি, উচ্ছে, হরেক রকমের শাক, ডল্লে খুরসানি , পাঁকা পাহাড়ি টমেটো । বাইরে থেকে অনেকটা ছোটো বেগুনের মতো দেখতে কিন্তু ভেতরটা টমেটোর মতোই।একে সেদ্ধ করে মাখা চাটনি করে এঁরা। এসব দেখতে দেখতে পাহাড়ের বাঁশ ও পাইন বনের কাছাকাছি চলে এসেছিলাম অনেকটা পথ। একবার পেছন ফিরে তাকালাম– এ যেন স্বর্গ রাজ্য।
প্রতিবেশী অনিতা আমাকে দেখে ওর বাড়িতে ডাকল। ওর স্বামী রিনচেন লাল চা করে খাওয়ালেন আদা দেওয়া। গল্পে গল্পে ওঁদের প্রেম ও বিয়ের কথাও উঠে এল। এখানে একটা তিক্ত ভাবনা মনের মাঝে ছড়িয়েছে যদিও। কী সেটা? শহর ছাড়িয়ে, কলকাতা, বীরভূম, শান্তিনিকেতন, শিলিগুড়ি, এনজিপি, কালিম্পং ছাড়িয়ে এত দূরে এলাম, তবুও জাতপাত আর বর্ণবৈষম্যের সমস্যা পিছু ছাড়ে না। অনিতারা আদিবাসী, তাই ‘উচ্চবর্ণ’র গোর্খারা ওঁদের থেকে একটু দূরে দূরে থাকেন! অনিতা আর তাঁর স্বামী সুন্দর ছিমছাম হোমস্টে করেছেন দুজনে মিলে। ওঁদের রান্নাঘরটি বেশ সুন্দর। সেখানে মাটির উনুনের ওপরে সারি-সারি কাঠের ফ্রেমে ঘরোয়া এক অদ্ভুত মেরিনেটেড কায়দায় শুকোচ্ছে বিফ। ওরা অ্যালুমিনিয়ামের বাসন ভালোবাসে, সেটা রান্নাঘরের সাজ দেখলেই বোঝা যায়। আসার আগে কিছু স্কোয়াশ ও পাহাড়ি টমেটো দিলেন খেতে ওঁরা। কিছুক্ষণ আরও এদিক ওদিক ঘুরে ফিরে এলাম মায়াদিদির বাড়িতে।
খারাপলাগা অনুভূতির পরেই একটি ইতিবাচক ভাবনাও এলো মনেও। সন্ধ্যা নামতেই দেখি, বিজয়া দশমী আর দশেরার উৎসব ওই গ্রামের সব বাড়িতে বাড়িতে। বলে রাখা দরকার, মায়াদিদিরা জাতিসত্তায় গোর্খা, নেপালীভাষী আর ধর্মে খ্রিস্টান। খ্রিস্টান কিন্তু উপমহাদেশীয় পরবগুলিতে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণ। আমায় ডেকে নিয়ে গেলেন মায়াদিদির বড়ো দিদি। পরিবারের একজনের মতো টিকা দিয়ে, চাল ফুল দিয়ে বরণ করে নিলেন। প্রণাম জানাতেই আদর করে একটা চুমু দিলেন মুখে। বাড়িতে ছোটদের তখন নাচ-গান ও ক্যাম্প-ফায়ারের ব্যবস্থা হয়েছে। মুরগির মাংস আগুনে ঝলসে বার্বিকিউ করতে করতে কত গান কত গল্প চলল রাত অবধি। কেউ চা, কফি, কেউ আবার রেড-ওয়াইন নিয়ে বসে বসে সেই আসরের আনন্দের স্বাদ নিচ্ছিল। কেউ সহযোগিতা করার জন্য ঘরোয়া কাজ সারছিল। ছোটদের মধ্যে একটি ছেলে পুমা বেশ মিষ্টি ছিল, আমাকে ওঁদের দলে টেনে নিল। রোধা আর ওঁর বন্ধুরা টেনে নাচ অবধি করিয়ে দিল। এ আনন্দ পাহাড়েই সম্ভব। এই আসরে আরও কিছু পর্যটক ও লিজ নিয়ে হোমস্টে চালান এমন মানুষদের সঙ্গে আলাপ হল। কিছু সময়ে ওঁরাও আমাদের বন্ধু হয়ে গেল। অনেক রাত অবধি চলল আড্ডা। রাতের আকাশে অর্ধেকচাঁদ তখনও জ্বলজ্বল করছিল। অনেক রাত অবধি নেপালী গানের পাশাপাশি মহীন, সঞ্জীব চৌধুরি, বব ডিলান আর অবশ্যই লালন সাঁইজির গান হল। গীটার বাজিয়ে গাইলেন বেহালার বাসিন্দা শুভ। শুভ আর বিপ্লবদা, কলকাতার লোক, পাহাড়ে হোম-স্টে লিজ নিয়েছেন। এখানেই বছরের বেশিরভাগ সময় কাটান। ওঁদের সঙ্গে বন্ধুত্ব হল। দারুণ কাটলো সময়।
সময় কাটলো শুধু পাহাড়ি মানুষদের সঙ্গে নয়, পাশাপাশি পাহাড়ি কুকুরদের সঙ্গেও। লিও, মর্ফি, র্যাম্বোর মতো দারুণসব মানুষ-বন্ধু কুকুরদের সঙ্গেও সময় কেটেছে। বড়ই মায়াবী তারা। লিওকে বোলপুরে নিয়ে আসতে মন চাইছিল। ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই। বোলপুর টু কালিম্পং গাড়ি নিয়ে গেলে হয়তো নিয়ে আসা যেত। কিন্তু না এনে ভালোই হয়েছে, কেন তাকে তার পাহাড় আর তার স্বজনদের থেকে বিচ্ছিন্ন করব! লিও মর্ফি, র্যাম্বোদের কথা মনে থাকবে। আবার কখনও দেখা হবে হয়তো, যদি তারা থাকে, যদি আমিও থাকতে পারি এই ধরাধামে!
পরের দিন সকালে রমনভাই নিয়ে গেলেন ডুকা ফলস ও ডুকা ভ্যালিতে। এক স্বর্গীয় অনুভূতি। ভ্যালির স্তরে স্তরে সাজানো বাড়িগুলি দেশলাই বাক্সের মতো মনে লাগছিল। পথের মানুষজনকে অদ্ভুতভাবে মনে হচ্ছিল বড় নিজেদের লোক। মিষ্টি হাসিমাখা মুখগুলো এখনও চোখের সামনে ভাসছে। ভ্যালির একেবারে ওপরে পৌঁছে একটা স্কুল ও একটি মাত্র হোমস্টে চোখে পড়ল। রাস্তায় দেখি হ্যানি ডিউ ড্রপের ঝোপের বেগুনি ফুলের বসে মধু খাচ্ছে হলুদ কালো মৌ। সেখানে বসে প্রকৃতির শোভা দেখতে দেখতে বিভোর হয়ে গেলাম মৌয়ের মতোই। ডুকার ঝরণার পাশে সুন্দর ছোট্ট একটা বাঁশের সাঁকো। সেই সাঁকোয় দাঁডিয়ে ঝরণার জল গায়ে মাখলাম। ডুকা উপত্যকায় দাঁড়িয়ে দেখি অদূরে সিকিম, আর মেঘের আড়ালে অস্পষ্ট নাথুলাপাস…
একটু চা খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম লাভার পথে। ঘন কুয়াশায় ঢাকা পথ দিয়ে এগিয়ে চলেছিল আমাদের গাড়ি। নেপালি ভাষার গান শুনতে শুনতে পৌঁছে গেলাম লাভার বৌদ্ধধামে। লামারাই দেখি পরিস্কার করেছেন মনেস্ট্রির বাগান ও চারপাশ। এটা স্কুলের শিক্ষার অংশ বলেই মনে হল। জীবন পথের ক্লান্তি চলে যায় এমন সাধনার স্হানে এলে। কালিম্পং শহরের মনেস্ট্রির চেয়ে এখানকার মনেস্ট্রির ভাবগতি একটু আলাদা মনে হল। বুদ্ধ শরণে বেশ কিছুক্ষণ থাকার পর ফেরার পালা। পথে চা, মোমো, ম্যাগি খেতে খেতে পৌঁছে গেলাম মায়াগ্রামে মায়াদিদির হোমস্টেতে। প্রকৃতি এখানে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছে মানুষের কাছে। মায়াঘেরা এই ভ্রমণ আমাকে নতুন জীবন দিল। ফিরে এসেও ঝিঁঝিঁপোকা, পাখির ডাক আর পাহাড়ি ফুলেদের স্পর্শ যেন এখনও পাচ্ছি। এই স্বপ্নবাস্তবের দুনিয়া থেকে ঘুরে এসে বন্ধুদের শোনাতে বসেছি কুসুম আলোয় ফুটে থাকা পাহাড়ি গ্রাম, উপত্যকা, মানুষ, সারমেয়, ফুল ও ঝর্ণার কথা… পাহাড়ের মুখ চেয়ে আবার বসে আছি, আশাকরি আবার পাহাড় ঠিক ডেকে নেবে শুভদিনে।
ছবি: কনকলতা
কনকলতা সাহা
বিশ্বভারতীর বাংলা বিভাগের প্রাক্তন ছাত্রী, বর্তমানে বোলপুর কলেজের বাংলার অধ্যাপক, বসবাস শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লীতে। গবেষণা ও লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত। ভ্রমণে বিশেষ আগ্রহ।