।। অতনু সিংহ ।।
সকলকে শারদ শুভেচ্ছা ও শুভ বিজয়ার প্রীতি, ভালোবাসা, প্রণাম, সালাম। আজ বিজয়া দশমী। উমা বন্দনায় মেতে আছে গোটা বড় বাংলা-সহ উপমহাদেশ ও বিশ্বের নানা জায়গা। শারদোৎসব হল বছরে একবার মা মেনকার ঘরে উমার ঘুরতে আসার উৎসব। কিন্তু উমাকে মহিষাসুরমর্দিনীর মতো সহিংস রূপে প্রকাশ করার বিষয়টা কোনও অবস্থাতেই অনার্য, কালো-বাদামি চামড়ার মানুষের দেশ বড় বাংলার ভাবের সঙ্গে যায় না। তারপরেও হরগৌরির পুরুষ-প্রকৃতির দ্বৈতাদ্বৈত রূপপ্রকাশকে জনমানস থেকে সরিয়ে দিয়ে অনার্য মহিষাসুরকে ত্রিশূলবিদ্ধ করা বৈদিক দেবীর আস্ফালনকেই উমার আরেকটি রূপ বলে প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু মহিষাসুরমর্দিনী উমা যে এক নয়, তা নিয়ে নানাস্তরে আলাপ শুরু হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগেই। (পড়ুন- তন্ত্রের উমা ও দশমহাবিদ্যা এবং বৈদিক দুর্গা প্রসঙ্গে) এবং মহিষাসুর ‘অশুভ’ শক্তি আর বৈদিক দেবী দুর্গকে দৈব ‘শুভ’ শক্তির সম্মিলিত নারীরূপে প্রকাশ হিসেবে দেখানোর যে বাইনারি তাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে নতুন করে। বড় বাংলার ভূমিজ পারম্পরিক সংস্কৃতির মধ্যে দাঁসাই নৃত্য ও কাঠিনাচের খুবই গুরুত্বপূর্ণ আচারিক শিল্প যা মূলত মহিষাসুরের শাহাদতকে স্মরণ করে শোকের প্রকাশ এবং যা ঐতিহ্যগতভাবেই প্রতিবছর দুর্গাপুজোর মহানবমীর দিন অনুষ্ঠিত হয়। মূলত অসুর জনজাতি এবং সাঁওতাল ও কুড়মিরা এই দুই নৃত্যে শামিল হন। দাঁসাই নাচের সঙ্গে যে গান গাওয়া হয় তা সাঁওতালি ভাষায় এবং কাঠি নাচের গান কুড়মালি ও বাংলা ভাষার মিশ্রনে বাঁধা হয়। কিন্তু এই পারম্পিক রিচ্যুয়ালিস্টিক কলার বাৎসরিক প্রকাশের ভিতরকার অর্থ, সামাজিক ও রাজনৈতিক বার্তা অনেকটাই ম্রিয়মান হয়ে পড়ে বর্ণুহিন্দু বাঙালির দুর্গাপুজোর ব্যাপক আড়ম্বরে এবং বড় বাংলার বড় উৎসবগুলোর প্রথম সারিতে দুর্গাপুজোর উঠে আসার মধ্যে দিয়ে। পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলার কুড়মি জনজাতি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, লেখক-গবেষক চারিয়ান মাহাতো তাঁর পত্রিকায় সম্পাদকীয় লিখে বলতে শুরু করেন যে বৃহৎ বঙ্গ তথা উপমহাদেশের ভূমিজ জনজাতিগুলোকে কালচারালি অপমান করা হয়, দুর্গাপ্রতিমার পায়ের নীচে শূলবিদ্ধ অসুরকে দেখিয়ে। অসুরের মূর্তিতে অনেকেই স্মরণ করেন, উচ্চবর্ণের আগমন ও তাদের সাম্রাজ্য বিস্তারে কীভাবে নিজ জম-জমি-জঙ্গল থেকে উচ্ছেদ হতে হয়েছিল অনার্য জনজাতির গণমানুষকে। তাঁরা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন কালো-বাদামি চামড়ার মানুষের নেতা হুদুড়দুর্গা বা মহিষাসুরের নেতৃত্বে। কিন্তু যুদ্ধের নীতি লঙ্ঘন করে নানা ছলাকলায় হুদুড়দুর্গা বা মহিষাসুরকে পরাস্ত করেন বৈদিক দেবী। চারিয়েন মাহাতো এই ব্যাপারে ইতিহাস পূর্ব ইতিহাস অর্থাৎ মিথের ভিতরকার ঐতিহাসিক ইশারাকে জনমানসে প্রকাশ করেন তাঁর পত্রিকা ‘লয়া সুরজ’-এর সম্পাদকীয়তে। এরপর মহিষাসুরমর্দিনী মূর্তির বিরুদ্ধে গণআন্দোলনে নামতে চান আদিবাসী সমাজের একাংশ। কিন্তু সামাজিক ভারসাম্য ও সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য এ নিয়ে আন্দোলনের বদলে শারদোৎসবের মহানবমীর দিন মহিষাসুর স্মরণ অনুষ্ঠানের ডাক দেন তিনি। শুরু হয় অসুর স্মরণ অনুষ্ঠান। শহীদ মূর্তি বানিয়ে তাতে পুষ্পার্ঘ নিবেদনের পাশাপাশি ভূমিজ মানুষের অধিকার আদায়ের প্রসঙ্গ, ব্রাহ্মণ্যবাদ, আর্য আধিপত্য ইতাদি বিষয়ে বক্তব্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। আর পারম্পরিক দাঁসাই নাচ এবং কোথাও কোথাও কাঠি নাচ তো রয়েছেই। এরপর পশুপতি মাহাতো-সহ আরও কিছু আদিবাসী সমাজের বিশিষ্টজন পশ্চিমবঙ্গে এই অসুর স্মরণ উৎসব করেন। ক্রমে চারিয়েন মাহাতোদের উদ্যোগে এই অনুষ্ঠান গোটা ভারতে ছড়িয়ে যায়। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া-সহ জঙ্গলমহল এবং পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যের উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ারের মতো জেলাগুলোতে অনুষ্ঠান মহানবমীতে পালিত হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি ঝাড়খণ্ড, বিহার, ছত্তিশগড় ও মধ্যপ্রদেশের কোথাও কোথাও এই অনুষ্ঠান পালিত হয়। সব মিলিয়ে বর্তমানে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার জায়গায় গোটা ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের অসুর স্মরণ অনুষ্ঠিত হছে। মহিষাসুর স্মরণ নিয়েই আলাপ চলেছিল চারিয়ান মাহাতোর সঙ্গে। ‘প্রতিপক্ষ’ পত্রিকায় সেই আলাপের অনুলিখন প্রকাশ করা হল।
মুখোমুখি চারিয়ান মাহাতো
প্রতিপক্ষ: অসুর স্মরণ অনুষ্ঠান কবে, কোথায় প্রথম শুরু হয়েছিল?
চারিয়ান মাহাতো: ২০১১ সালে পুরুলিয়ার কাশীপুর ব্লকের সোনাঝুড়ি হাইস্কুল ময়দানে। তারপর ২০১৮ সাল থেকে পুরুলিয়ার মাখড়াবেড়াতেও এই স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছি। ক্রমে বলরামপুর-সহ পুরুলিয়ার বিভিন্ন জায়গায় স্মরণ অনুষ্ঠান হচ্ছে। ১৯৯৭ সালে মহিষাসুর বা হুদুড় দুর্গাকে নিয়ে আমি আমাদের ‘লয়া সুরজ’ পত্রিকায় প্রথম সম্পাদকীয় লিখি। পরে সেটা ২০১০ সালে অন্য একটি বড় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তারপরে মূলনিবাসীর অনেকেই ওই লেখায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সরাসরি দুর্গাপুজোর বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে চায়, আমি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সামাজিক ভারসাম্যের কথা মাথায় রেখে সেই আন্দোলনে সায় দিইনি। বরং আমি প্রস্তাব রাখি, শুধু দাঁসাই নাচ না করে হুদুড় দুর্গা বা মহিষাসুরকে স্মরণ করার অনুষ্ঠান হোক। আমার ভাবনা ছিল এ নিয়ে রাস্তায় নেমে আন্দোলন না করে অসুরের মূর্তি তৈরি করে স্মরণ অনুষ্ঠান করলে একভাবে উচ্চবর্ণের সহিংস প্রতিমাকে ঘিরে যে মূলনিবাসীদের চেতনায় আঘাত করার উৎসব, তার সরাসরি বিরোধিতার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া যাবে। ২০১১ সালে একটি কমিটি করে এই অনুষ্ঠান চালু করি। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে দিল্লির সচির পর্যায়ের এক আধিকারিক (আইএএস) ড. স্বপন বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করি। উনি এসেছিলেন। পরে ২০১৪ সালে ওনার ছেলে সৌগত বিশ্বাস, যিনি লাদাখের ডিএম ছিলেন, তিনিও এসেছিলেন স্বপনবাবুর সঙ্গেই। ২০১২ সালে এসেছিলেন প্রাক্তন আইপিএস আধিকারিক ও বিশিষ্ট লেখক ড. নজরুল ইসলাম। এই অনুষ্ঠানে এক বছর আমরা ঝাড়খণ্ড ও বিহার থেকে বেশ কিছু অসুর জনজাতির প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। ওনারা এসেছিলেন। ওঁদের সম্মান জ্ঞাপন করেছিলাম। প্রথমবার অসুর স্মরণ অনুষ্ঠানের জন্য আমি যে লিফলেটটা ছাপিয়েছিলাম সেটা ড. ইসলাম তাঁর ‘মূলনিবাসীদের করণীয়’ শিরোনামে বইটিতে ছেপেছিলেন।
প্রতিপক্ষ: ঠিক কী কী হয় এই স্মরণ অনুষ্ঠানে?
চারিয়ান মাহাতো: মূলত মহানবমীতে অথবা কোথাও কোথাও তারপরেও অসুর স্মরণ অনুষ্ঠান হয়। শহীদ মহিষাসুরের মূর্তিতে মাল্যদান, তাঁর স্মরণে বক্তব্য, ব্রাহ্মণ্যবাদী আর্য সংস্কৃতির আধিপত্যের বিষয়ে বক্তব্য, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, দাঁসাই নাচ- এসবই হয় আর কী।
প্রতিপক্ষ: পাঠকদের সুবিধার জন্য যদি দাঁসাই ও কাঠি নাচ সম্পর্কে একটু বলেন।
চারিয়ান মাহাতো: দুটোই শোকের নাচ। সাদা কাপড় পরে পুরুষরা নাচেন। হুদুড় দুর্গা বা মহিষাসুরের স্মরণে। দাঁসাই নাচের গান সাঁওতালি ভাষায়। আর কাঠি নাচের গান কিছুটা বাংলায় কিছুটা কুড়মালিতে।
( নোট: মূলনিবাসীরা মনে করেন, বৈদিক সাম্রাজ্যবাদী সমরশাস্ত্র পারদর্শী এক নারীকে সামনে রেখে অনৈতিক এক যুদ্ধে ছলে-বলে হুদুড়দুর্গাকে পরাজিত করে জল-জমিন-জঙ্গল -সহ সম্পদ দখল করেছিল আর্যরা। গণহত্যা চলেছিল। যেকজন পুরুষ বেঁচেছিল, তারা সাদা থান পরে নারী সেজে নগর ছেড়ে কোনোক্রমে ঘন অরণ্যে গিয়ে আশ্রয় নেন। সেই ঘটনার কথা মাথায় রেখেই দাঁসাই নাচ হয়, সাদা থান পরে। কাঠিনাচীর বিষয়ও এটা, আঙ্গিক ও নৃত্যগীতের ভাষা ভিন্ন)
প্রতিপক্ষ: : শারদোৎসবের নামে বৃহৎ বঙ্গের নানা জায়গায়, বিশেষত কলকাতায় সর্বজনীন দুর্গাপুজোর এই যে আড়ম্বর এবং তাকে ঘিরে বাঙালি হিন্দু-সহ বাংলার তামাম মধ্যবিত্তের বড় একটা অংশের এই গণ উন্মাদনা, একে কীভাবে দ্যাখেন আপনি বা আপনারা?
চারিয়ান মাহাতো: আমরা এই সার্বজনীন দুর্গোৎসবকে এক কথায় অনার্যকে লুঠ করে আর্যদের ঔপনিবেশিক ও সাম্রাজ্যবাদী বিজয় তারই সেলিব্রেশন হিসেবে দেখছি। আমরা মনে করি মহিষাসুরমর্দিনীর মূর্তিকে সামনে রেখে এই উৎসব করাটা জাতীয় সংহতি বিরোধী। কারণ বাংলা বলেন কিংবা ভারত কিংবা উপমহাদেশ, সর্বত্রই আর্য-অনার্য এখন মিলেমিশেই আছে। তো এই মিশ্র ও বহুত্ববাদী সমাজে কেন একটি মূলনিবাসী জনজাতির বিরুদ্ধে যায় এরকম একটি উৎসব অনুষ্ঠান কী গণঐক্য বিরোধী হচ্ছে না? কারণ, আদিবাসী সমাজের বড় অংশই মনে করেন যে তাঁদের পূর্বপুরুষ মহিষাসুর তাঁদের উচ্ছেদ করতে, জল-জমিন-জঙ্গল-সহ সম্পদ লুঠ করতে অনৈতিক এক যুদ্ধে মহিষাসুরকে পরাজিত্ত করা হয়েছিল। আপনি হয়ত অসুর সম্প্রদায় বৃহৎ একটি মূলনিবাসী জনজাতি। ভারতের শিডিউল ট্রাইবের মধ্যে সংখার নিরিখে অসুররা সর্ববৃহৎ। তো মহিষাসুরের সেই পরাজয়ের স্মৃতিকে উস্কে দিয়ে, আমাদের পূর্বপুরুষের পদানত ত্রিশূলবিদ্ধ রূপ আমরা কেন মেনে নেব? কিন্তু এটাই তো হয়ে আসছে উচ্চবর্ণের দ্বারা যা ঘোরতর জাতীয় ঐক্য বিরোধী বলেই আমরা মনে করি। তাই মহিসুরমর্দিনীর মূর্তিকে সামনে রেখে আমরা এই উৎসবের চরম বিরোধী। আমরা মনে করি অবিলম্বে এই ব্যাপারটা বন্ধ হওয়া উচিত। ১৯৯৭ সালে আমি প্রথম এই ব্যাপারে আমি লেখালেখি শুরু করি। এই যে মহিষাসুরকে ‘অশুভ’ শক্তি বলা হচ্ছে, এটা সাম্রাজ্যবাদীদের বয়ান। সাম্রাজ্যবাদী লুঠেরা আর্যরা আমাদের জান-মাল-সম্পদ লুঠ করতে যে হামলা চালালো আর তা প্রতিহত করতে গিয়ে শহীদ হলে হুদুড় দুর্গা বা মহিষাসুর, তো তিনি অশুভ হয়ে গেলেন? এই প্রশ্নকে সামনে রেখে আমি সম্পাদকীয় লিখি। আমাদের সাফ বক্তব্য, শুভ, অশুভ এসব তো আপেক্ষিক শব্দ। ব্রিটিশ সাম্র্যাজ্যবাদীদের চোখে যেমন নেতাজী সুভাষ কিংবা ক্ষুদিরাম বোস অশুভ সন্ত্রাসবাদী আর দেশবাসীর কাছে জাতীয় হিরো বা শুভ শক্তি, তেমনই আর্য সাম্রজ্যবাদী এবং তাদের বৈদিক পরম্পরার চোখে অসুর অশুভ শক্তি হতে পারেন, কিন্তু আমরা যারা মাটির মানুষ, এই ভূমির সন্তান, আমাদের চোখে তিনি একজন দেশপ্রেমিক শহীদ।
প্রতিপক্ষ: পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি থেকে শুরু গোটা ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির ক্ষেত্রে উচ্চবর্ণের আধিক্য। হুদুড় দুর্গা বা অসুর যদি ভূমিসন্তানদের পূর্ব পুরুষ তাহলে সেই মিথ অনুযায়ী অন্তত আপনাদের ভাষ্যমতে মহিষাসুরকে ছলেবলে পরাজিত করেই বহিরাগত উচ্চবর্ণ বা আর্যরা আপনাদের থেকে এ দেশ ছিনিয়ে তারা সাম্রাজ্য বা আধিপত্য বিস্তার করেছিল। তো আজকের রাজনীতিতেও তো সেই বাউন-কায়েত-বদ্যিদের আধিক্য। তো সেক্ষেত্রে রাজনৈতিকভাবে এই সামগ্রীক বিষয়টাকে কীভাবে দেখছেন?
চারিয়ান মাহাতো: অবশ্যই আমাদের রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত হওয়া দরকার। যারা মূলনিবাসী আছেন, তাঁরা সংগঠিত হয়ে ক্ষমতায় আসতে পারলে, তার চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে!
প্রতিপক্ষ: মূলনিবাসীদের স্ট্রাগল যদি ঐতিহাসিকভাবে ব্রাহ্মণ্যবাদ বিরোধী হয়, তাহলে বিজেপিরর মতো ব্রাহ্মণ্যবাদী-মনুবাদী ঔপনিবেশিক আগ্রাসী শক্তি কীভাবে মূলনিবাসীদের একটা বড় অংশের ভোট পেল পশ্চিমবঙ্গে বা অন্যত্র নানা জায়গায়? কীভাবে কিছু ক্ষেত্রে মূলনিবাসীদের মধ্যে সংগঠন তৈরি করতে পারল এই বহিরাগত হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তানি দল? কীভাবে আদিবাসী-দলিত-মুসলিম ঐক্যকে কিছুটা হলেও বিনষ্ট করে আপনাদের একাংশের এবং দলিতদের একাংশের মধ্যে ইসলামবিদ্বেষের রাজনীতি ঢুকিয়ে দিতে পেরেছে! কী মনে করেন আপনি?
চারিয়ান মাহাতো: প্রথমত মানুষকে ইতিহাস ভুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দ্বিতীয়ত ক্ষুদ্র স্বার্থে মানুষকে আটকে ফেলা হচ্ছে। মূলনিবাসীরাও এটার শিকার। প্রকৃত শিক্ষার অভাব তো রয়েছেই। মূলনিবাসীদের অনেকেই এখনও শিক্ষার ব্যাপ্তি কম। আবার এটাও ঠিক যে আদিবাসী সমাজের অনেক তথাকথিত শিক্ষিতরাও বিজেপি-আরএসএসের ছত্রছায়ায় চলে গেছেন। গভীরভাবে বৃহৎ রাজনৈতিক স্বার্থের কথা না ভেবে ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থে পরিচালিত হচ্ছেন অনেকেই। তবে আমি মনে করি, যুগ যুগ ধরে যেভাবে ইতিহাসকে সম্পূর্ণ উচ্চবর্ণের দৃষ্টিকোণ থেকে নির্মাণ করে সমাজের নিম্নবর্ণ ও নিম্নবর্গকে দমন করে রাখা হয়েছে, সেই ব্যবস্থাটা একদিন ভাঙবে।
প্রতিপক্ষ: আপনার পাঠানো একটি ছবিতে দেখলাম, একটি ব্যানারে সম্রাট অশোককে অসুর সম্রাট বলা হচ্ছে। ব্যাপারটা কী?
চারিয়ান মাহাতো: আপনার হয়তো জানা নেই যে সম্রাট অশোক অসুর সম্প্রদায়ের ছিলেন বলে অনেক গবেষক জানাচ্ছেন। এর পক্ষে-বিপক্ষে কথাবার্তা বিস্তারিত আলাপ ও লেখার সুযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে ভিন্ন পরিসরে কথা হতে পারে।