যোগেন মণ্ডলের পূর্বকাণ্ড (১৯৩৭-১৯৪৭)- দ্বিতীয় পর্ব

ধারাবাহিক পর্যালোচনা

।। সৌরভ রায় ।।


পাকিস্তানের প্রথম আইনমন্ত্রী যোগেন মণ্ডলকে ‘মুসলিম-তফশিলি জোট রাজনীতির ব্যর্থ প্রচারক’ বলে বর্ণনা করে নিম্নবর্গের রাজনৈতিক সক্রিয়তার ইতিহাসচর্চাকে খারিজ করতে হিন্দুত্ববাদীরা। এর বিপরীতে দাঁড়িয়ে মাত্র হাতে গোণা কয়েকজন লেখক, ইতিহাসবীদ, সমাজতাত্ত্বিক লেখালেখি করেছেন। হিন্দুত্ববাদের বিপরীতে দাঁড়িয়ে যোগেন মণ্ডলকে নিয়ে প্রতিপক্ষে ধারাবাহিকভাবে লিখছেন সৌরভ রায়। প্রকাশিত হলো দ্বিতীয় পর্ব ।

এই লেখার শেষ অংশ আমি তাই বরাদ্দ রাখছি যোগেন মণ্ডলের রাজনীতি হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিকে বোঝার ও রোখার যে গভীর ক্ষমতা রাখে সেই সংক্রান্ত আলোচনায়, যা আজও আমাদের কাছে খুব জরুরী হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৭-এর ঘোলা রাজনীতিতে যোগেন মণ্ডল কিভাবে ‘কংগ্রেস ও হিন্দু মহাসভার অঘোষিত জোটের অঘোষিত নেতা’ (পৃষ্ঠা ১০২৭) শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির ‘অপর’ বা other হয়ে উঠেছিলেন, তা দেবেশ রায়ের লেখায় বারবার উঠে এসেছে।

যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল

যোগেন মণ্ডলের পূর্বকাণ্ড (১৯৩৭-১৯৪৭)- দ্বিতীয় পর্ব

” Ambedkar cites the list of Scheduled Castes in all the provinces from a 1935 survey by the Government of India and calls it a ” terrifying ” list…there exist four hundred and twenty-nine communities!” ( p. 223, Soumyabrata Choudhury, Ambedkar and Other Immortals : An Untouchable Research Programme, (New Delhi: Navayana, 2018) )

জাতিভেদব্যবস্থার শক্তি ঠিক এখানেই– Graded inequality বা Graded non-sovereignty, যেখানে প্রতিটি দলিত দলকে আরেকটি দলিত দলের তুলনায় কিছু আলাদা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। যাতে Gordon Allport-এর The Nature of Prejudice-এর  in-group / out-group হিসাব মতে মনে হয়, আমরা যত খারাপই থাকি, অমুকদের এবং তমুকদের থেকে তো ভালো আছি। আমরা আর যাই হই, সবচেয়ে নিচু জাত নই। অতএব এই বিভাজনের অতিপ্রাচীন রাজনীতির কাছে ব্রিটিশ-এর ‘divide-and-rule’ তো শিশু!

কিন্তু সংখ্যার রাজনীতিকে সদর্থকভাবে ব্যবহার করে মুসলমান-তপশিলি জোট বেঁধে ‘শক্তিসাম্যের নিয়ামক ও বাংলার ভাগ্যনির্ণায়ক’ (পৃষ্ঠা ৫৮৯) হবার দূরদৃষ্টি বলাই বাহুল্য বাকি ৩০ জন তপশিলি নেতার ছিল না। বর্ণহিন্দু প্রভুজাতি ‘তু’ বললে ছুটে যাওয়ার মজ্জাগত অভ্যাস, ও এই সুযোগে জাতে ওঠার লোভ তো ছিলই – যদিও যোগেন তাঁদের মনে করিয়ে দেয় যে বহু সচ্ছল নমশুদ্র বহু প্রজন্ম ধরে পইতে পরে ও বামুনদের দান করেও জাতে উঠতে পারেনি – তার থেকেও বেশী ভয় ছিল বর্ণহিন্দু প্রভুজাতি্দের ‘না’ বলার স্পর্ধা দেখালে তার ফলাফল কি হবে। অতএব যোগেনের মুসলমান-তপশিলি জোট রাজনীতির বিরোধিতা হিসেবে তপশিলি নেতা পি আর ঠাকুর (হরিচাঁদ ঠাকুরের উত্তরসুরী) যে অভিযোগ আনেন – “আপনি রাজনীতিতে এই জট পাকিয়ে দিয়েছেন। তপশিলিদের এন্টি-হিন্দু পরিচয়কে প্রধান করেছেন…আপনি নিজেই তো দাঙ্গায় প্ররোচনা ও নেতৃত্ব দিলেন গোপালগঞ্জে । হিন্দুদের মহাসম্মিলনও করতে দেন নি।”(পৃষ্ঠা ১০২৩) আর হিন্দু মহাসভার নতুন নেতা কালীশ বিশ্বাস যে অভিযোগ আনেন, “এই শিডিউলগুল্যাই মোছলাগুলির সাথে মিইল্যা মোছলাগো ত্যাজ বাড়াইয়্যা দিছে।” (পৃষ্ঠা ৭২৬) দুটিতেই আমরা শুনি আচমকা-চোট-খাওয়া বর্ণহিন্দুস্বার্থের শক্তিতন্ত্রের গজরানি।

আর মুসলমান জোট? যেই জোটের কাঁধে কাঁধ মেলাবে বলে যোগেন সলতে পাকাচ্ছিল? সেই রাজনৈতিক জোট কি শুধু মুসলমানত্বের কারণে বাংলায় হাতে-গরম তৈরি হয়ে ছিল? না। ফজলুল হক  একদিকে জমিদারি হঠানোর মত সার্বজনীন জিগির বাংলার গ্রামে গ্রামে তুলেছিলেন। আবার বাংলার শহরে আলাদা-আলাদা বিভিন্ন মুসলিম  শ্রমিকগোষ্ঠী (লশকর, দর্জি) এদের সাথে মুখোমুখি বসে তাঁদের সুবিধা-চাহিদা মত আলাদা-আলাদা প্রতিশ্রুতি দিয়ে কৃষক প্রজা পার্টির জন্য এক নিম-টেঁকসই মুসলমানি জোট পাকিয়ে তুলেছিলেন, যাকে জিন্না তাঁর মুসলিম লিগের জন্য টুপ করে পেড়ে নিয়েছিলেন, হকশাহেবকে খাঁচায় পুরে ফেলে। “মুসলিম নেতারা মুখে যাই বলুন, এবং জিন্না যতই যোগেন মণ্ডলকে তুরুপের তাস হিসেবে সর্বভারতীয় কংগ্রেসের বিরুদ্ধে চালাবার চেষ্টা করুন, মুসলিম লিগের বঙ্গীয় নেতারা কিন্তু তফসিলি জাতিদের আনুগত্যের ব্যাপারে মোটেই নিশ্চিত ছিলেন না। হারুন-অ-রশিদ সংকলিত মুসলিম নেতাদের চিঠিপত্র থেকে দেখছি, সোহরাওয়ার্দি ১৯শে মে ১৯৪৭ তারিখে লিয়াকত আলিকে বেশ উৎসাহের সঙ্গে লিখছেন, ‘যোগেন মণ্ডলের সাথে দীর্ঘ কথা হল। আমরা বোধহয় ওঁর সম্বন্ধে অনাবশ্যক হতাশ হয়েছিলাম। উনি বর্ধমান, খুলনা ও ২৪-পরগণায় খুব ভালো মিটিং করেছেন।  সেখানে তফসিলি জাতিদের শীঘ্রই আমাদের দিকে নিয়ে আসা যাবে বলে মনে হয়।’ মাত্র দু-দিন বাদে, ২১শে মে তারিখে, তিনি ঠিক উলটো কথা লিখছেন – অনুমান করা যায় অন্য সূত্রে ইতিমধ্যে খবর পেয়ে তাঁর আগের মত বদলাতে হয়েছে। এবার লিখছেন, ‘একমাত্র বর্ধমান ডিভিশনে দুটো মিটিং ছাড়া আর কোথাও আমরা তফশিলি জাতিদের সঙ্গে মিটিং করতে পারিনি। তাছাড়া তাঁদের মধ্যে কিছুটা সাড়া জাগাতে সক্ষম হলেও তাঁদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সকলেই বাংলার পার্টিশনের পক্ষে ভোট দেবে। শুধু তাই নয়, ভারত-পাকিস্তান ভাগ নিয়েও এবার ঘোষণা হয়ে গেলে, বর্ণহিন্দু বা তপশিলি কারো মতই আমাদের পক্ষে থাকবে না। এই নিয়ে যদি মারামারি হয়, পশ্চিমবাংলার মুসলিমরা সম্পূর্ণ মুছে যাবে, কেউ তাদের বাঁচাতে পারবে না। একই ভাবে, পূর্ব বাংলার হিন্দুরা একেবারে মুছে যাবে। আমরা যতই বর্ণহিন্দু আর তফশিলিদের মধ্যে তফাৎ গড়ে তোলার চেষ্টা করি না কেন, সাম্প্রদায়িক সংঘাত শুরু হলে কোনো তফাৎ বজায় থাকবে না। ক’দিন আগেই কুমিল্লা আর নোয়াখালীতে মুসলিমরা তফশিলি হিন্দুদের আক্রমণ করেছিল, ঠিক যেমন কলকাতা আর বিহারের হিন্দুরা কংগ্রেসি মুসলমানদেরও আক্রমণ করেছিল।’” (চট্টোপাধ্যায়, পৃষ্ঠা ৬৫)

অতএব যোগেন মণ্ডল বর্ণহিন্দুদের কাছে হলেন ‘যোগেন মোল্লা’ ও মুসলমানদের কাছে হলেন ‘চোরা-হিন্দু’, তাঁর শ্যাখ-শুদ্দুর মিলনের রাজনীতি-আদর্শ একমাত্র ব্যক্তিগত জীবনে পালন করতে পারলেন তিনি – কিছুদিনের জন্য পাকিস্তানের আইনমন্ত্রী হয়ে। সেখানেও উগ্রহিন্দুবিদ্বেষের শিকার হয়ে তাঁকে জীবন বাঁচাতে ইস্তফা দিয়ে পালিয়ে আসতে হল। এই র‍্যাডিকালি দিকপরিবর্তক রাজনীতির সম্ভাবনা যে বুদবুদের মত যে কোন সময় বিলীন হয়ে যেতে পারে, সে কথা সুভাষ যোগেনকে আগেই বলেছিলেন – “কিন্তু আপনার মতটায়, আপনি বলছেন, আপনি পৌঁছেছেন থ্রু ইয়োর বিলংগিং টু দিজ ইয়ারমার্কড আনটাচেবল কাস্টস। এটা কোন মত নাও হতে পারে। এটা শুধু একটা অনুভুতিও হতে পারে। অনুভূতি থেকে ধারণা তৈরি হতেও পারে, নাও পারে। ধারণা থেকে মত তৈরি হতেও পারে, নাও পারে। মত থেকে একশন তৈরি হতেও পারে, নাও পারে।” (পৃষ্ঠা ৭৪৯) যোগেন মণ্ডলের এই ঘোর ব্যর্থতার মহাকাব্যিক ট্রাজেডিকে কন্ডুয়ন করা ও সুভাষচন্দ্রের মহাকাব্যিক ট্রাজেডির সাথে এর তুলনামূলক আলোচনা করা পিপলস পাঠচক্র নিবিড়পাঠপ্রকল্পের এজেন্ডার বাইরে। এই ট্র্যাজিক ব্যর্থতার কারণ পার্থবাবু বর্ণিত আলুভাতে বাইনারি ‘তত্ত্ব বনাম কৌশল’ কিনা তা আমরা এর পরে দ্বৈপায়ন সেনের ‘The Decline of the Caste Question: Jogendranath Mandal and the Defeat of Dalit Politics in Bengal’ (Cambridge University Press, 2018) পড়ে আরও ভালো বুঝতে পারব। কিন্তু এই উপন্যাসে পাটচাষী আর পাটকলমজুরের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির প্রসঙ্গে একটি লাগসই উপমা আছে, যেটি হিন্দু-মুসলিম মেরুকরণ রাজনীতির জাঁতাকলে পিষে যাওয়া তপশিলি রাজনীতির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। (পৃষ্ঠা ৮৭২) এক রথের মেলায় যদি কোন বাবু দশটাকার খুচরো করে শুধু অন্ধ আর কুষ্ঠরোগীদের মধ্যে বিলি করবেন বলে ঘোষণা করেন, তাহলে সব ভিখিরিই হয় অন্ধ নয় কুষ্ঠরোগী বলে নিজেকে পরিচয় দেবে। কেউ বলবে না, আমার দৃষ্টিশক্তিও আছে, কুষ্ঠরোগ-ও নেই, কিন্তু আমিও ভিখিরি বাবু, আমারও ভিক্ষে চাই।

বর্ণহিন্দু প্রভুজাতি ‘তু’ বললে ছুটে যাওয়ার মজ্জাগত অভ্যাস, ও এই সুযোগে জাতে ওঠার লোভ তো ছিলই – যদিও যোগেন তাঁদের মনে করিয়ে দেয় যে বহু সচ্ছল নমশুদ্র বহু প্রজন্ম ধরে পইতে পরে ও বামুনদের দান করেও জাতে উঠতে পারেনি – তার থেকেও বেশী ভয় ছিল বর্ণহিন্দু প্রভুজাতি্দের ‘না’ বলার স্পর্ধা দেখালে তার ফলাফল কি হবে। অতএব যোগেনের মুসলমান-তপশিলি জোট রাজনীতির বিরোধিতা হিসেবে তপশিলি নেতা পি আর ঠাকুর (হরিচাঁদ ঠাকুরের উত্তরসুরী) যে অভিযোগ আনেন – “আপনি রাজনীতিতে এই জট পাকিয়ে দিয়েছেন। তপশিলিদের এন্টি-হিন্দু পরিচয়কে প্রধান করেছেন…আপনি নিজেই তো দাঙ্গায় প্ররোচনা ও নেতৃত্ব দিলেন গোপালগঞ্জে । হিন্দুদের মহাসম্মিলনও করতে দেন নি।”(পৃষ্ঠা ১০২৩) আর হিন্দু মহাসভার নতুন নেতা কালীশ বিশ্বাস যে অভিযোগ আনেন, “এই শিডিউলগুল্যাই মোছলাগুলির সাথে মিইল্যা মোছলাগো ত্যাজ বাড়াইয়্যা দিছে।” (পৃষ্ঠা ৭২৬) দুটিতেই আমরা শুনি আচমকা-চোট-খাওয়া বর্ণহিন্দুস্বার্থের শক্তিতন্ত্রের গজরানি

এই লেখার শেষ অংশ আমি তাই বরাদ্দ রাখছি যোগেন মণ্ডলের রাজনীতি হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিকে বোঝার ও রোখার যে গভীর ক্ষমতা রাখে সেই সংক্রান্ত আলোচনায়, যা আজও আমাদের কাছে খুব জরুরী হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৭-এর ঘোলা রাজনীতিতে যোগেন মণ্ডল কিভাবে ‘কংগ্রেস ও হিন্দু মহাসভার অঘোষিত জোটের অঘোষিত নেতা’ (পৃষ্ঠা ১০২৭) শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির ‘অপর’ বা other হয়ে উঠেছিলেন, তা দেবেশ রায়ের লেখায় বার বার উঠে এসেছে।

যোগেন মণ্ডলের শূদ্রত্ব জীবনব্যাপী অভিজ্ঞতা থেকে তৈরি। তাই ব্রাহ্মণ্যবাদ-সঞ্জাত হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের চালচলন বুঝতে অন্য উচ্চবর্ণদের মতো তাঁর দেরী লাগে না। অন্যদিকে মুসলমানেরা কয়েকশো বছর ধরে বাংলায় হিন্দুদের পাশাপাশি থাকলেও জাতপাত সংক্রান্ত নানা প্যাঁচপয়জার নিয়ে অনেক সময়েই সম্পূর্ণ অজ্ঞ। যেমন এক বিত্তবান, প্রবীণ, অভিজ্ঞ মুসলিম ব্যবসায়ী দুধু মিয়া যোগেন মণ্ডলের কাছেই প্রথম অস্পৃশ্য শুদ্রত্বের কথা শুনে বলে ওঠেন, “আমরা শুধু শিখ্যা রাখছি হিন্দুরা মুসলমানগ ছোঁয়ও না, ছোঁয়াও খায় না। হিন্দুরা যে হিন্দুগ ছোঁয়াও খায় না, এমন আজব জীব খোদাতালা বানাইছিল ক্যা।” (পৃষ্ঠা ৭১৯) ১৯৩১-এর জনগণনার ভিত্তিতে ১৯৩২-এর ‘কম্যুনাল এওয়ার্ডের’ পরে যোগেন মণ্ডলের নেতৃত্বে তপশিলিরা তাদের হিন্দু পরিচয় ঝেড়ে ফেলে মুসলমানদের সাথে জোট বাঁধার তোড়জোর করার পরে নানা হিন্দুত্ববাদী সংগঠন তেড়েফুঁড়ে নামে মুসলিমদের ধর্মান্তরিত করার কাজে, যদিও তা হিন্দুশাস্ত্র মতে অসিদ্ধ। কিন্তু হিন্দুত্ববাদীদের মতে বাংলার সব মুসলিমই কয়েকশো বছর আগে
আগে জবরদস্তি করে ধর্মান্তর করা নিচুজাতের হিন্দু। কিন্তু প্রামাণ্য ইতিহাস বলে বাংলায় ইসলাম ধর্মান্তরণের ইতিহাস অনেক বেশী প্রাচীন ও জটিল। মুসলিম শাসকদের প্রভাবে ও প্রকোপে যত না ধর্মান্তরণ হয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশী হয়েছে স্বেচ্ছায়, ইসলামে জাতপাত-বর্ণবিভাজন না থাকায়, ফকির-দরবেশ-সুফিদের প্রভাবে। (দেখুন Richard M. Eaton, “The Rise of Islam and the Bengal Frontier, 1204-1760”, University of California Press,1996) হিন্দুদের দল ভারি করার জন্য চাপ দিয়ে এই যে মুসলমানদের হিন্দু বানানো হতো, হিন্দুসমাজে তাদের স্থান হতো কিন্তু শূদ্র হিসাবে। কারণ হিন্দুসমাজে শ্রম এবং হিংসার জন্য শুদ্দুরের চাহিদা কখনও কমে না। অর্থাৎ ‘আয় ভাই (নমশুদ্দুর) বুকে আয়, রায়টের সময় বাঁচাস।’ (পৃষ্ঠা ১০২৩) অন্য সময় তফাত থাকিস আর গায়ের খাটনিগুলো মাগনায় বা সস্তায় খেটে দিস।

একই ফ্রেমে ডানদিক যোগেন মণ্ডল ও বি আর আম্বেদকর। ডানদিক থেকে তৃতীয়জন যোগেন মণ্ডল এবং বাম দিক থেকে দ্বিতীয়জন আম্বেদকর।

এক ভোটদানকারী রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে বাংলায় মুসলিম সমাজের উত্থানে ‘শেষের সেদিন ভয়ঙ্কর’-এর জুজুতে, নিজেদের শতাব্দীপ্রাচীন ক্ষমতার ভিত হারানোর ভয়ে সাধারণ ও উচ্চকোটির বর্ণহিন্দুরা অস্থির হয়ে উঠেছিল কিন্তু এই অস্থিরতা থেকে ভদ্রতার মুখোশ ছিঁড়ে ফেলা তাদের পক্ষে সহজ ছিল না। “হিংসুটে, তালেবর, ছুঁকছুঁকে, সবজান্তা, গোঁড়া, হাফ-স্বদেশী, এন্টি-মুসলিম কিন্তু…চাকরির সুবাদে এন্টি-হিন্দুও, নিঃসংশয়ে ঘুষখোর…এরাই সেই নতুন শ্রেনী…যাদের ওপর বাংলার রাজনীতি নির্ভর করছে বা করবে” (পৃষ্ঠা ৪১১)  সেখানেই শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী ও বাংলা কাগজ হয়ে ওঠে বর্ণহিন্দুদের ছুপা-মুসলিম ঘৃণার আত্মস্বরুপ। এই ঘৃণা ও ভয়ই শেষ পর্যন্ত বাংলা ভাগ ডেকে এনেছিল। বাংলার মুসলিম জনমত অখণ্ড বাংলা পাকিস্তানের শাসনাধীন হতেই চেয়েছিল। “তফসিলি সমাজের ভেতর বাংলা ভাগ নিয়ে বিতর্কে যোগেন্দ্র নাথ নিশ্চিতভাবে পরাজিত হলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি যুক্তি দিলেন, বাংলা যদি ভাগ হয় তাহলে পূর্ববঙ্গে বিত্তশালী বর্ণহিন্দুরা অনায়াসেই পশ্চিমে এসে নতুন করে বসবাস করতে পারবে, কিন্তু হতদরিদ্র তফশিলিরা কোথাও যেতে পারবে না। উচ্চবর্ণহীন পূর্ববঙ্গে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের হাতে মারা পড়বে। উত্তরে রাধানাথ দাস নোয়াখালির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে লিখলেন, আমরা যদি পশ্চিমবাংলার পক্ষ থেকে নোয়াখালির নমঃশূদ্রদের আহ্বান করি এদিকে চলে আসার জন্য, তাহলে যোগেনবাবু তাঁর স্বজাতির একজনকেও নোয়াখালিতে ধরে রাখতে পারবেন না। দরিদ্র তফশিলিরাই বরং অনেক সহজে নিজেদের বাসস্থান বদলাতে পারে, কারণ তাদের সম্পত্তি বলে কিছুই নেই।”(চট্টোপাধ্যায়, পৃষ্ঠা ৬৬-৬৭) এই কুযুক্তি যে কত ভয়ঙ্কর ভাবে ভুল তা আমরা প্রফুল্লকুমার চক্রবর্তীর ‘প্রান্তিক মানব’ পড়ার সময় বুঝেছি।

বর্ণহিন্দুর রাগ-ভয়-ঘেন্না শুধু শ্যামাপ্রসাদের বকলমে জ্বালামুখী বক্তৃতা হয়েই বেরোয়নি, তা বেরিয়েছে বিপুল পরিমাণ গোঁড়াহিন্দু ব্যবসায়ী অর্থসাহায্যে তৈরি এক দাঙ্গানির্মাণ কর্মকার্যে। এর এক ছক আমরা দেখি গোপালগঞ্জে যেখানে এক খুঁড়ে তোলা মন্দিরে রাতারাতি বিগ্রহ স্থাপনে য়ার তার চারপাশে ব্রাহ্মণ পাড়া গড়ে তুলে। তারপর কয়েকজন শূদ্রদের সেই মন্দিরের ত্রিসীমানায় জুতো পরে আসার জন্য মারধর বা খুনজখম করলেই কেল্লা ফতে। এই শয়তানি থামাতে গিয়ে এক ভাড়া করা পশ্চিমা বামুন গুণ্ডার ছোঁড়া ইঁটে জখম হয় যোগেন, আর দাঙ্গা থামাতে গিয়ে দোষী হয় দাঙ্গা বাধানোর জন্য।(পৃষ্ঠা ৪৩৫) দেবেশ রায়ের কলমে আমরা পড়ি যোগেন মণ্ডল ও রসিকলাল মণ্ডল লাউজানিতে কিভাবে এক ঘনসম্বদ্ধ, বহুমাত্রিক দাঙ্গাকর্মসূচীকে বানচাল করে। (পৃষ্ঠা ৫৬৭-৫৮১) এর প্রথম মাত্রা হল হিন্দুত্ববাদী কাজকর্মের জন্য স্থাননির্বাচন, ও সেখানে মঠ-অফিস খুলে মোটা মাইনে দিয়ে শিক্ষিত, শহুরে, বলিয়ে-কইয়ে দেখনদার লোক মোতায়েন। “মিশন বা সংঘ বেছে-বেছে এই সব জেলাতেই আসছে…যেখানে হিন্দু বসতির চাইতে মুসলমান বসতি অনেকগুণ বেশি। তাঁরা মধ্য ও উত্তরবঙ্গের হিন্দুপ্রধান জেলাগুলিতে যাচ্ছে না…মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, হাওড়া, হুগলী, বর্ধমান, বীরভূম – এইসব জিলায় তো সিকিভাগ মুসলমানও নেই। তাই সেখানে (হিন্দু) মিশনও নেই। এমনকি যেখানে আট-আনি মুসলমান, সেখানেও নেই, মুর্শিদাবাদ-দিনাজপুরে।”(পৃষ্ঠা ৫৮১) এই স্থাননির্বাচনের প্রধান কারণ হল, হিন্দুদের মনে সংখ্যালঘুত্বের ভয় প্রতিষ্ঠা করা এখানে সহজ।

দাঙ্গাবিধ্বস্ত কলকাতা, ১৯৪৬

বর্ণহিন্দুর রাগ-ভয়-ঘেন্না শুধু শ্যামাপ্রসাদের বকলমে জ্বালামুখী বক্তৃতা হয়েই বেরোয়নি, তা বেরিয়েছে বিপুল পরিমাণ গোঁড়াহিন্দু ব্যবসায়ী অর্থসাহায্যে তৈরি এক দাঙ্গানির্মাণ কর্মকার্যে। এর এক ছক আমরা দেখি গোপালগঞ্জে যেখানে এক খুঁড়ে তোলা মন্দিরে রাতারাতি বিগ্রহ স্থাপনে য়ার তার চারপাশে ব্রাহ্মণ পাড়া গড়ে তুলে। তারপর কয়েকজন শূদ্রদের সেই মন্দিরের ত্রিসীমানায় জুতো পরে আসার জন্য মারধর বা খুনজখম করলেই কেল্লা ফতে। এই শয়তানি থামাতে গিয়ে এক ভাড়া করা পশ্চিমা বামুন গুণ্ডার ছোঁড়া ইঁটে জখম হয় যোগেন, আর দাঙ্গা থামাতে গিয়ে দোষী হয় দাঙ্গা বাধানোর জন্য।(পৃষ্ঠা ৪৩৫) দেবেশ রায়ের কলমে আমরা পড়ি যোগেন মণ্ডল ও রসিকলাল মণ্ডল লাউজানিতে কিভাবে এক ঘনসম্বদ্ধ, বহুমাত্রিক দাঙ্গাকর্মসূচীকে বানচাল করে।

দ্বিতীয় মাত্রা হলো, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বা কম্যুনাল রায়টের ডিসকোর্স সমাজে ছড়িয়ে দেওয়া। যেহেতু কলকাতা শহরে বাংলা কাগজপত্র বেশীর ভাগ বর্ণহিন্দুদের হাতে ছিল, মুসলমানদের হাতে ছিল ইংরিজি আর উর্দু কাগজ, তাই পুর্ববঙ্গে নানা জায়গায় ক্রমান্বয়ে রায়টে হিন্দুরা আক্রান্ত এই খবর ক্রমাগত শহুরে ও গ্রাম্য বাঙালী বর্ণহিন্দুদের মধ্যে জাহির করা খুব একটা শক্ত নয়। এই খবর বেশীর ভাগ সময় ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত ভুলে ভর্তি, কিন্ত সেই ভুল – জায়গার ভুল নাম, জাতিওয়াড়ি ও ধর্মওয়াড়ি জনসংখ্যার ভুল অনুপাত – এগুলো খুব বিচক্ষণ স্থানীয় লোকপ্রতিনিধি ছাড়া কারোর বোঝার উপায় নেই। কিন্ত এই সুনির্মিত ‘ফেক নিউজে’ কোন খুনের কথা থাকত না, বরং সরকারবাহাদুরের সেপাইরা যে ঠিক সময়ে গিয়ে খুনি মোল্লাদের আটকেছে সেই কথা থাকত। নইলে সরকারপক্ষ থেকে হিংসক গুজব ছড়ানোর অপরাধে সম্পাদকের গ্রেপ্তার হবার ভয় ছিল। কিন্তু এই খবরগুলি পুরোপুরি হাওয়া থেকে তৈরি মনে করা ভুল হবে, গাঁয়ে বিশেষতঃ গরীব মানুষের মধ্যে ঝগড়া-মারামারি-খুনোখুনি লেগে থাকে, যার প্রধান কারণ অর্থনৈতিক ও সামাজিক, ধর্মভিত্তিক নয়। এই নানা ঘটনার টুকরো টুকরো মালা গেঁথে তাতে সাম্প্রদায়িকতার রং লাগিয়ে তাকে রায়ট বলে চালানো হত। দুই বিরোধী পক্ষে দুই ধর্মের দুটি নাম পাওয়া গেলেই হল। আনন্দবাজারও এই কাজে পোক্ত ছিল বলে শোনা যায়।

তৃতীয় মাত্রা হলো, যারা নিরক্ষর তাদের মধ্যে ইসলামবিদ্বেষের গল্প ছড়িয়ে দেওয়া। স্থানীয় কোন হিন্দু-মুসলিম সমন্বয়ধন্য জনপ্রিয় পির-গাজী-দেব-দেবীর আখ্যানকে একটু বদলে তাতে ইতিহাস থেকে মুসলিম দ্বারা হিন্দু নিপীড়নের মালমশলা ঢুকিয়ে তাকে ‘ইতিহাসের আসল ভাষ্য’ বলে নানা ভাবে প্রচার ও প্রসার করা হত। অতএব আমরা দেখি সংবাদের মাধ্যমে হোক বা লোককথার মাধ্যমেই হোক হিন্দুত্ববাদ আকর্ষক, হিংসক অথচ বিশ্বাসযোগ্য কল্পগল্প তৈরি করায় বড়ই পটু। আর আমার মতে এই দক্ষতার জিন লুকিয়ে আছে ব্রাহ্মণ্য পুরাণরচনারীতির মধ্যে। যেখানে গল্পের ভেলা ভাসিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয় সবকিছু।

১৯৪৬-এর দাঙ্গায় কলকাতার কলেজ স্কোয়ারে বিধ্বস্ত ‘ইসলামিয়া লাইব্রেরি’

বহুমাত্রিক দাঙ্গাকর্মসূচীর চতুর্থ মাত্রা হলো, এই সব কাল্পনিক দাঙ্গার মিথ্যা হিন্দু ভিক্টিম তালিকা তৈরি করা। বিরাট বড় এক তালিকা তৈরি করা হতো, যেখানে একই জায়গার নাম নানাভাবে বদলে বদলে লেখা থাকত, যেমন একটা গ্রামের বিভিন্ন মহল্লার নাম আলাদা আলাদা গ্রাম হিসাবে লেখা থাকত, আরেক সুচতুর মিথ্যা। এইবারে হিন্দুদের কাছে গিয়ে জনে জনে বলা হত, শহর থেকে অনুদান এসেছে,  আপনারা হিন্দু ভিক্টিম, রিলিফ নিন – টাকা, চাল, কাপড় ইত্যাদি। সৎ মানুষ অবাক হয়ে বলতেন, না না আমরা ঠিকই আছি, কিসের দাঙ্গা, কিসের রিলিফ? নিয়ে যান, লাগবে না। তাঁদের জোরাজুরি করা হত, পাচ্ছেন, রেখে দিন, আমাদের হিসেব মেলাতে হবে। আর মতলববাজ হিন্দুরা বুঝে যেত এই ব্যাসকূট, যে দাঙ্গা লাগান হবে, আর হিন্দু মিশনের পক্ষে লাঠি ধরার জন্য এটা আগাম ঘুষ। এতে হিন্দুত্ববাদী সংস্থাগুলির জন্য দাঙ্গার আরো একটা কাগুজে প্রমাণ তৈরি হ্তো। শহুরে কাগজে এই দাঙ্গাবিদ্ধস্ত-দের দান-ধ্যানের কথা পড়ে বর্ণহিন্দুবাবুদের বুক দশহাত হত, সঙ্ঘের দানপেটী আরও উপচে উঠত। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের এইভাবে দিনের পর দিন কাঠি করে যাওয়াতে, একদিন তাদের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙত, এতদিন ধরে ফুঁকে ফুঁকে তোলা মিছে দাঙ্গার ফুল্কি, মিথ্যেবাদী রাখালবালকের গল্পের মত, একদিন সত্যি দাঙ্গার দাবানল হিসেবে দেখা দিত, তখন গেরুয়াবাদীরা সব দাঁত-নখ বের করে বলত, কেমন? আগেই বলেছিলাম কিনা!

সুনির্মিত ‘ফেক নিউজে’ কোন খুনের কথা থাকত না, বরং সরকারবাহাদুরের সেপাইরা যে ঠিক সময়ে গিয়ে খুনি মোল্লাদের আটকেছে সেই কথা থাকত। নইলে সরকারপক্ষ থেকে হিংসক গুজব ছড়ানোর অপরাধে সম্পাদকের গ্রেপ্তার হবার ভয় ছিল। কিন্তু এই খবরগুলি পুরোপুরি হাওয়া থেকে তৈরি মনে করা ভুল হবে, গাঁয়ে বিশেষতঃ গরীব মানুষের মধ্যে ঝগড়া-মারামারি-খুনোখুনি লেগে থাকে, যার প্রধান কারণ অর্থনৈতিক ও সামাজিক, ধর্মভিত্তিক নয়। এই নানা ঘটনার টুকরো টুকরো মালা গেঁথে তাতে সাম্প্রদায়িকতার রং লাগিয়ে তাকে রায়ট বলে চালানো হত। দুই বিরোধী পক্ষে দুই ধর্মের দুটি নাম পাওয়া গেলেই হল। আনন্দবাজারও এই কাজে পোক্ত ছিল বলে শোনা যায়।

যোগেন মণ্ডল এই বহুমাত্রিক দাঙ্গাছক এক অতিসফল মডেল হয়ে ওঠার আগেই তাকে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বুঝেছিলেন ও এবং বুঝেছিলেন এই ছকের প্রধান শক্তি হলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি ও তাঁর বিষাক্ত, জ্বালামুখী ভাষণ। ঐ ভাষণের কয়েক সপ্তাহ বা এক মাসের মধ্যেই ঐ জায়গায় দাঙ্গা অবধারিত। অতএব যেখানে যেখানে তাঁর প্রভাব ছিল, যেমন গোপালগঞ্জে তিনি শ্যাখ-শুদ্দুর শক্তিকে এক করে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জিকে সভা করতে দেওয়া তো দুরস্থান, স্টিমার থেকে নামতেই দেন নি। কিন্তু ধীরে ধীরে রাজনীতিতে কোনঠাসা হতে থাকেন তিনি, এসে যায় ১৯৪১-এর সেন্সাস, যাতে কংগ্রেস ও হিন্দুমহাসভা জোট মরিয়া হয়ে ওঠে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতা তৈরি করার, ঢাকার রায়ট যার এক বিষময় ফল, সেই বিষ আরও বাড়িয়ে তোলে আর ছড়িয়ে দেয় শ্যামাপ্রসাদের তত্ত্বাবধানে ‘ফারদার হিন্দু রায়টার রিক্রুটমেন্ট ভায়া সিলেক্টিভ রিলিফ’-এর রাজনীতি।

যারা নিরক্ষর তাদের মধ্যে ইসলামবিদ্বেষের গল্প ছড়িয়ে দেওয়া। স্থানীয় কোন হিন্দু-মুসলিম সমন্বয়ধন্য জনপ্রিয় পির-গাজী-দেব-দেবীর আখ্যানকে একটু বদলে তাতে ইতিহাস থেকে মুসলিম দ্বারা হিন্দু নিপীড়নের মালমশলা ঢুকিয়ে তাকে ‘ইতিহাসের আসল ভাষ্য’ বলে নানা ভাবে প্রচার ও প্রসার করা হত। অতএব আমরা দেখি সংবাদের মাধ্যমে হোক বা লোককথার মাধ্যমেই হোক হিন্দুত্ববাদ আকর্ষক, হিংসক অথচ বিশ্বাসযোগ্য কল্পগল্প তৈরি করায় বড়ই পটু। আর আমার মতে এই দক্ষতার জিন লুকিয়ে আছে ব্রাহ্মণ্য পুরাণরচনারীতির মধ্যে। যেখানে গল্পের ভেলা ভাসিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয় সবকিছু।

বাংলার তপশিলি-মুসলমান-বর্ণহিন্দুর জটিল রাজনীতির ভাণ্ডার ও আমাদের সমসময়ে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে তার থেকে কোন কোন অস্ত্র আমরা তুলে নিতে পারি, তা বুঝতে গেলে যোগেন মন্ডলের উত্তরকাণ্ড আরও বহুমাত্রিকভাবে পড়তে হ’বে।

ছবি সূত্র: indianexpress.com ও news18.com

পরবর্তী পর্বে,
যোগেন মণ্ডলের উত্তরকাণ্ড

লেখক পরিচিতি
সৌরভ রায়

বাংলা ও ইংরিজি এই দুই ভাষার লেখালেখিতে রত আছেন সৌরভ রায়, এছাড়া বাংলা থেকে ইংরাজিতে নিয়মিত নানা কিছু তিনি অনুবাদ করে থাকেন। তাঁর প্রথম দিকের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে। প্রায় এক দশক বিজ্ঞাপনী জগতে চাকরি করেছেন। তার পরে চিত্রবিদ্যায় দুটি স্নাতক (Dr. Bhau Daji Lad Museum – Mumbai 2012-13, School of Arts & Aesthetics, Jawaharlal Nehru University – New Delhi , 2014-16) করেছেন এবং Tasveer Ghar Fellowship 2017-18 পেয়েছেন। বর্তমানে দুটি গবেষণাপ্রকল্পের (স্বাধীনতা-পরবর্তী ভারতের সেক্যুলারিজম বিষয়ক চিত্রজগত, আন্তর্জালে ভারতীয় Queer পুরুষদের চিত্রজগত) সঙ্গে যুক্ত। এছাড়া লন্ডনের Stimulus -> Respond Magazine-এর সাহিত্য সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত

পড়ুন প্রথম পর্ব
যোগেন মণ্ডলের পূর্বকাণ্ড (১৯৩৭-১৯৪৭)- প্রথম পর্ব:

Share