।। অভিমন্যু মাহাত ।।
বড় আদরের ইশারা, অচেনা ঘোর
নামগানে খেলা করে মাটির শরীর
দূরের গাছে ধরেছে ঐ কদম্বফুল–
মেঘমাসে আবার কাঙাল হল মন
সাতকাহন
বিধি জড়াইল
বিধি জড়াইল আবেগে
আজকাল শুনি না দরজার আওয়াজ
কে বাহির- কে ভিতর, পুরাতন সবকিছু
একদা প্রত্যুষকাল সুদীর্ঘ ছিল
স্নানদীর্ঘ ছিল কংসাবতী স্রোতে
বদলের সম্ভাবনা নিমের দাঁতনে
নদীর গায়ে বর্ণনার আদর,
বৃথা হইল শ্বাস
তিতা আরও গ্রাস করে অরণ্যের দেহে
অপঠিত নুন ছিটা, যদি সাধ ধরে
বিভূঁই দেশে বাড়ে জল সোহাগে সোহাগে
সর্বজয়া
চলো যাই মাটি আনিতে
টুসু বানাব
নেত্র, শব্দময় প্রাণ, সূর্যসাক্ষী জল…
পিদিম জ্বললে স্পর্শসুখ।
বড় আদরের ইশারা, অচেনা ঘোর
নামগানে খেলা করে মাটির শরীর
দূরের গাছে ধরেছে ঐ কদম্বফুল–
মেঘমাসে আবার কাঙাল হল মন
ছায়ার ভাগি তুমি
এই যে মানভূম,
যেমন চোখ ভরা কাঁসাই-দামোদর–
আজ তবে অভাবী মায়ের কুলুঙ্গিতে
রেখে যাই ভাদু জাগরণ…
শিলালিপি
নির্জন শালের কেঁপে ওঠা দেহে
ভাসিত জোছনা,
হাতে জল নাও–
গাছের মত তুমিও অক্ষর এনো
পদচিহ্ন নেই,
তবু হলুদবর্ণ কষ্ট বয়ে আনে!
জোছনার বারবেলা বনে
এল লাউডগা শীত,
নতুন শিবলিঙ্গের জনম দেয় কুমারী নদী
তুমি তাকে দিও আলতা সিঁদুর…
তীর্থ
সমতলে দুই যাত্রী হাত ধুয়ে টুয়ে
পারাপার নিখিলে।
সন্ধা-ঘণ্টা বাজলে
তুমি উপস্থিত, আরেক যাত্রী ইস্তাহারে
শুনলাম নগরকীর্তন, খোলধ্বনি
কর্তাল খেপাটে বলে, সত্য খেলাঘর।
যতটা শোনাবার ইচ্ছা– সরে যাওয়া
ততটা নিজস্ব নিঃশ্বাস। কথা ফুরালে
নতুন চিরুনি,
ভাঙা চুল পড়ে থাকে
বৈশাখের কোণে– জটিলতার গায়ে
হাতপাখা উপহার দিও সংসারে
বাতাস খেলুক দখিনা দুয়ার থেকে,
প্রিয় আষাঢ়ই কদম্ব ডাল, কৃষিগানে…
বিপরীত
তারপর ডুঙরিধারে পড়ে আছে সেই পরব
তোমার ব্যক্তিগত দিনলিপি, অসহিষ্ণুতা
এবং জঙ্গলধারে গরাম থান, দুরাকাঙ্খা
ঐ যে একা ময়ূরবাহন ঘুরছে অকালে
তার আশেপাশে ততখানি খরতাপ নেই
পদযুগল মেপে বসন্তদিন চলে গেছে
আঁধার খুঁড়ছে পাহাড়ের মন, পছিম আকাশ
তুমি যতটা সংগোপনে সজল, বিরহী
ততটা উদাসীন হলে না রাঢ় নদীপাড়ে
অভিমন্যু মাহাত
জন্ম পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামে। কর্মসূত্রে থাকেন এখন কলকাতায়। পেশায় সাংবাদিক। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ পাঁচটি। কুড়মালি ভাষায় অনুবাদ করেছেন রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি। ‘মাটি’ কাব্যগ্রন্থের জন্য পেয়েছেন সাহিত্য একাডেমি (যুব) পুরস্কার। এছাড়া পেয়েছেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায় পুরস্কার।