হই ছিন্নমস্তা

জেহাদ

।। রূপসা ।।

যদি শরীরই হয় শরীরের শত্রু, তবে সে শরীর নিধনের জন্য, শরীরই যথেষ্ট। যে ভাবে নিজেকে ধ্বংস করে চলেন দেবী ছিন্নমস্তা। বিপরীত রতাতুরা সে নারী কর্তন করেন নিজের মুণ্ড, নিজেই পান করেন নিজের শোণিত। নেগেশন অফ নেগেশন। আর সেখান থেকে জন্ম নেয় আরও আরও শরীর। পুনর্জন্মের ধারাবাহিকতায় জন্ম নেয় আরও আরও আরও ছিন্নমস্তারা। যারা নিজের শরীর দিয়েই নিধন করে নিজের শরীর। করেই চলে, করেই চলে… আর জন্ম নেয় আরও আরও সহস্র যোনি। তারাই আমরা, এই উপমহাদেশের, এই বাংলাদেশের, এই ভারতের মেয়েরা। ধর্ষিতা হওয়ার সম্ভাবনা জেনেও বেরিয়ে পড়ি রাস্তায়, মধ্যরাতে পাহারা দিই জনপদ, পাহারা দিই ধর্ষিত-মৃত আত্মাদের, যাদের দাফন হয়নি, হবে না কোনও দিন।

এক রাত্রি পেরোলেই ঘরে ফিরবে উমা। তার নিজের বাড়িতে, মানে তার স্বামীর বাড়িতে। এই যে এই ক’দিন বাপের বাড়ি থাকল মেয়ে, সে বাড়ি কি তার নিজের? উমার নিজের বাড়ি কোনটা? স্বামীর বাড়ি, নাকি বাপের বাড়ি?
যাওয়া-আসা, ফেরা-না ফেরা নিয়েই তো মেয়েদের জীবন।
এই যে ঘরের মেয়ে উমা, তারই তেজ থেকে জন্ম হলো অন্য নারীর, করালবদলা, উগ্রস্বভাবা, সংহাররূপিনী সে মেয়ে উমার শান্ত-শিষ্ট-গেরস্থ ভাবনার ঠিক উল্টোপিঠ। শান্ত-এয়োতি নারী যখন ‘নিজের’ ঘরে রক্ষা করতে পারে না নিজেকে, ঘর ছেড়ে বেরোতে হয় তাকে। অন্য রূপে। সেই রূপের আরশ অন্য। চোখ ঝলসায়। ডান হাতে খড়্গ জ্বলে, বাঁ হাত করে শঙ্কাহরণ… এই নিঃশঙ্ক, নিঃসঙ্কোচ মেয়েকে ঘরে রাখা দায়, তাই বুঝি স্বামীর বুকে পা দেওয়া সেই নগ্ন নারীর চিত্রকল্পটি নেহাৎই শ্মশান-আশ্রিতা। উমা আর কালী তাই ঘর আর বাহিরের সংকেত।

ঘর-বারের দ্বন্দ্বে বারবার দ্বিধাবিদীর্ণ সংকীর্ণ মেয়েরা। ঘরের ভিতরে আশ্রয় নেই যার, বাহিরকে ঘর করতে গেলে ফের নিরাশ্রয় হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল— তা হলে কোথায় যাবে মেয়েরা? কোথায় যাব আমরা? ঘরেও নহে পারেও নহে, যে জন আছে মাঝখানে-র আধো রোমান্টিকতা নয়, গৃহহীনের সেই রোমান্টিকতা শোভা পায় না, তাই আমাদের নিয়তি ধুলো হয়ে যাওয়া। আর তারই রূপকল্প শ্মশানবাসিনী মেয়েটি, ভস্মধূলায় যার অঙ্গশোভা, নিশাচর শৃগালের নিঃসঙ্গতা নিয়ে যে হেঁটে চলে অন্ধকারে, মিশকালো হয়ে, ধরা পড়ে না। সেই নিঃসঙ্গতা আমাদেরও, এই উপমহাদেশের মেয়েদের।

বিচারের আশায়… কে দেবে বিচার? নিজের ইনসাফ নিজেকেই কায়েম করতে হবে

অন্ধকারের মেয়ে আমরা সকলে। যে অন্ধকার পেরোলে ভোরের আলোয় আমাদের লাশ দেখতে পাওয়া যায়। মাঠে-ঘাটে ছেঁড়াখোঁড়া লাশ। যে ঘরকে এতদিন আমরা ঘর বলে ভেবেছি, সেই ঘর আমাদের কাছে শ্মশান। আমাদের দাহ হয়ে গেছে। যে পোড়া লাশ আসলে বিস্তৃত এই পুরুষের পৃথিবীর আকাশে বাতাসে। আমরা ধুলো হয়ে গেছি, ভস্মকণা হয়ে গায়ে এসে পড়েছি পুরুষের। কারণ আমাদের জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। কখনও আমাদের শরীরে দখলদারির চিহ্ন গায়েব করতে, কখনও আমাদের মনের প্রতিরোধকে স্রেফ নেই করে দিতে।
তবু, শক্তি আর ভরের সাম্যের কথা মাথায় রাখলে কিছুই হারিয়ে যায় না। সেই ভাবেই থেকে যাচ্ছি আমরা। জেহাদ হয়ে। থেকে যাওয়ার জেহাদ, অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জেহাদ। যার খোঁজ পেতে গেলে মৃত আত্মাদের ভিড়ে যেতে হবে, মৃত আত্মারাই হাপিশ করে দেবে এই জ্যান্ত পৃথিবীর আশমানি খোয়াব।

মনীষা বাল্মীকিকে আমি চিনি না। শূদ্র ঘরের মেয়ে ছিল সে। আসমানি খোয়াব দেখতে দেখতে ‘ছিল’ নামক ক্রিয়াপদ ব্যবহার করি। অথচ সে আছে, যেভাবে রয়ে গেছে বাল্মীকির রামায়ণ। এক শূদ্রের কাব্য হয়ে, যেখানে কাব্য খুন করেছে খোদ কবিকে— তবু বাল্মীকি থেকে গেছেন। অবাক হই আমি, খোদ বাল্মীকি কি বিপন্ন বিস্ময়ে দেখেছিলেন তাঁর সৃষ্টিকে, যেখানে অন্তিম পর্বে এক শূদ্র তপস্বীকে হত্যা করেছিলেন তাঁর সৃষ্টি, রাম? মনে পড়ে মেরি শেলিকে। তবে কি আসলে ফ্রাঙ্কেনস্টাইন-ই বানিয়ে ফেলেছিলেন বাল্মীকি? যে অন্তিমে লিখবে তারই মৃত্যুর আখ্যান, আসলে লিখবে না, খুন করে ফেলবে তাকে? তবু বাল্মীকি ওই মৃতের আখ্যানের মধ্যেই মৃত আত্মাদের মতো থেকে যাবেন গোটা রামায়ণ কাব্যের ছত্রে ছত্রে, যে ভাবে মনীষা বাল্মীকি আছেন, ছিলেন, থাকবেন চিরশাশ্বত হয়ে, এই ব্রাহ্মণ্যবাদী সমাজদেহের গায়ে লেগে থাকা ধুলো হয়ে, যাকে কি না, ধুলো করে দিয়েছেন খোদ স্রষ্টাই, ধুলো হয়ে যাতে তিনি হয়ে উঠতে পারেন অবাধ-গতি।

পুলিশি পাহারায় মনীষা বাল্মীকির জ্বলতে থাকা লাশ। ব্রাহ্মণ্যবাদী ভারতীয় পিতৃতন্ত্র মনীষাকে ধর্ষণ করে এইভাবে লাশ পুড়িয়ে দিয়েছিল, যাতে ধর্ষণের প্রমাণ না মেলে!

অন্ধকারের প্রাণী আমরা। এই যে এত রঙিন পোশাক-আশাকের আবরণ, আভরণ— তা-ই দিয়ে ঢেকে রাখি আঁধার। যখন নগ্ন হই নিজের সামনে, আলোয় আসার উপায় নেই। অন্ধকারের মধ্যে মিশকালো হয়ে থেকে যাওয়াই আমাদের নিয়তিকাব্য। তাই যখন প্রকৃতিও ডাক দেয় বেদম, অন্ধকারকে সঙ্গী করতে হয়। আর বিশ্বাসঘাতক চাঁদের আরশে, যদি সে নগ্নচিত্র দেখে নেয় কেউ, আমাদের মৃত্যু অনিবার্য। শরীরের মৃত্যু।
আসলে আমরা একেকটি চলমান যোনি! যে যোনি বাঁধা আছে পরিবারের কাছে, রাষ্ট্রের কাছে। পুরুষের কাছে। তাই তো জমি দখলের রাজনীতিতে ধর্ষণই একমাত্র হাতিয়ার। গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব, দাঙ্গা— ধর্ষণ করো। ওদের মেয়েদের। মেয়েরা সবার। নিজেদের নয় শুধু। ঘরের মেয়েকে ধর্ষণ করো, ‘বারোয়ারি’ মাল বানাও, পুরুষের ‘ইজ্জত’-এ আঘাত করো। আসলে ইজ্জত তো পুরুষের, রাষ্ট্রের, পরিবারের। ইজ্জতের দরজা অজস্র যোনি, জনগণমনের মাল বইকী! লুঠ করো। মুসলমান মহিলার পেট ফুঁড়ে বার করো ভ্রূণ, ওখানেই তো বাঁধা শত্রু, অন্য কোনও সম্ভাবনাময় মুসলমান পুরুষ— পোটেনশিয়াল এনিমি। দলিত দমন করবে? ওদের মেয়েদের ভাঙো। ওদের মেয়েদের ‘ভোগ’ করায় বাধা নেই কোনও। বলে দিয়েছেন ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের ‘হিন্দু-হিন্দু-হিন্দুস্তানি” শাসন চলা এক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। মেয়েদের অধিকার করা মানে, পুরুষকে অধিকার করা। অন্যের জমি কর্ষণ করা মানে, পুরুষের জমি ছিনতাই করা। জানি আমরা। আমরা, মানে মেয়েরা।
তাই তো শাস্ত্র লিখেছে, মেয়েদের গোত্র নেই কোনও। গোত্রান্তরও নেই। নেই কোনও অব্যয় স্তম্ভ। মেয়েরা সম্পদ, যার ঘরে যাবে, তার ধন। সে ধন ব্যবহার করো, ইচ্ছামতো, খেয়ালমতো। মেয়েদের শরীরই তো একমাত্র জমি, যার উপর এই পুরুষ-পৃথিবীর বিজয়কেতন ওড়ে। আর মেয়েরা ধরিত্রী হয়ে ‘সর্বংসহা’ হয়। দেবী হয়ে ওঠে। দেবী— সেক্সলেস দেবী। যার রতি নেই, কাম নেই। যে শুধুই প্যাসিভ— সর্বংসহা।

ঘরে ঘরে শৌচাগার নেই, রাস্তায় আলো নেই। ঘরের ভিতরে নিরাপত্তা নেই। শুধু অন্ধকার আছে। যে অন্ধকারে ‘স্বামী’র কাছে প্রতিরাতে ধর্ষিতা হয় এই উপমহাদেশের বেশির ভাগ মেয়ে। শৌচাগারে আলো থাকলে বিপদ— হাজার চোখের ঝলকানি। আলোয় শরীরচিত্র যদি ফুটে ওঠে, তা হলে দখলদারির স্মিত অথবা ক্রুদ্ধ প্রস্তাব। কনসেন্ট চাই। না হলে ধর্ষণ অনিবার্য। শাড়ি পরেছ, শরীর দেখাচ্ছ— স্কিন শোয়িং— ধর্ষণ করতে মন চায় যে! হিজাব পরেছ, তাও তো ঢাকা যাচ্ছে না শরীর! প্রকাশিত প্রাকৃতিক। কারা যেন বলেছিল, প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সংগ্রামের কথা। প্রকৃতিকে নিজের আয়ত্তে এনে বানাও বিজ্ঞান, বানাও প্রযুক্তি। বেঁচে থাকা আরামদায়ক বড়। তেমনই নারীর সাথে সংগ্রাম। তাকে আনো নিজের আয়ত্তে। সামলে রাখো। দখল করো। ভোগ করো, নিজ প্রয়োজনে। সকলে— যার যেমন দরকার। ভোগ করো তার রক্ত, ভোগ করো তার শ্রম, ভোগ করো তার ঘাম।
ঘামতেলে দুর্গার মুখখানিও কী সুরম্য!

এবারের সংগ্রাম…

রমণী করেছ আমাদের। রমণযোগ্য। সুরম্য দেহ, সুগম্য নয় তবু জেনো। ভিতরে কী? ভিতরে কী? সে কি শুধু রক্ত-মাংস-হাড় আর গ্ল্যান্ডের সুষম বণ্টন? তারই তো খোঁজ করে চলো, তুমি, কিন্তু তল পাও না। তাই অতল শরীরকে শুধু শেকল পরিয়ে আত্মতোষে ভোগার কী মরিয়া চেষ্টা! আহা রে!
লাইসিস্ট্রাটার কথা মনে আছে জনাব? সেই কবে গ্রিক নাট্যকার লিখেছিলেন তাঁর কমেডি, যুদ্ধ থামাতে মেয়েদের যৌন হরতালের কথা। কিন্তু হলো কি শেষ পর্যন্ত? আরিস্তোফানেসও বুঝেছিলেন, রতি শুধু পুরুষের নয়, মেয়েদেরও। রতির দরদী তারাও। তাই হরতাল না-সফল। যুদ্ধ জারি। মেয়েরা নিজেদের শরীরের দখল নিলে যুদ্ধ হবে, পুরুষ।

তোমার সঙ্গে যুদ্ধ। নিজের শরীরের সঙ্গে যুদ্ধ। নিজের শরীরের উপর দখল কায়েমের যুদ্ধ। যে ভাবে যুদ্ধ করে ‘সর্বংসহা’ ধরিত্রীও। যে শরীরকে বেঁধে রেখেছ তোমরা, তোমাদের নীতি আর নৈতিকতা দিয়ে, সে শরীরের বাধ ভাঙলে ভয় পাবে নিশ্চিত। তাই উলঙ্গ হচ্ছি আমরা। দেখো আমাদের শরীর। পথ দেখিয়েছিল মণিপুরের মায়েরা। মনোরমার ধর্ষণ সহ্য করতে না পেরে ভারতীয় সেনার সামনে এগিয়ে গিয়েছিল নগ্ন হয়ে। ইন্ডিয়ান আর্মিকে বলেছিল, এসো, ধর্ষণ করো আমাদের। ভয় পেয়েছিল ওরা। যে ভাবে কালীর নগ্নরূপ আর অগ্নিনেত্র দেখে ভয় পাও তোমরা। ঘরে রাখো না তার মূর্তি, যদি বিপদ ঘটে যায় কোনও! সেই পূর্বজাদের কসম খেয়ে আজ উলঙ্গিনী আমরা। ভয় পাও আমাদের।

মণিপুরের মনোরমাকে ধর্ষণ করেছিল ইন্ডিয়ান আর্মি। তার প্রতিবাদে অসম রাইফেল ভবনের সামনে প্রতিবাদরত নগ্ন মায়েরা।

গভীর রাতে শ্মশানের প্রান্তে প্রান্তে আমরা হাঁটি। মাঝরাত্তিরে ফুটপাথ বদলাই। শরীর দেখে থমকে যায় পুরুষ, শরীর নিয়ে এগিয়ে যায় তারই দিকে। ক্যারাটে শিখিনি আমরা, নগ্নতা শিখেছি। শরীরের আগ্রাসন শিখেছি। শিখে নিয়েছি পাল্টা মারের কৌশল। পূর্বজাদের থেকে, পূর্বদেবীদের থেকে। তাই ঘর আমাদের আর বাঁধতে পারে না। আমরা শ্মশানবাসিনী। কালের গর্ভে ধুলো হয়ে উড়ি। হাসি অট্টহাস।
যদি শরীরই হয় শরীরের শত্রু, তবে সে শরীর নিধনের জন্য, শরীরই যথেষ্ট। যে ভাবে নিজেকে ধ্বংস করে চলেন দেবী ছিন্নমস্তা। বিপরীত রতাতুরা সে নারী কর্তন করেন নিজের মুণ্ড, নিজেই পান করেন নিজের শোণিত। নেগেশন অফ নেগেশন। আর সেখান থেকে জন্ম নেয় আরও আরও শরীর। পুনর্জন্মের ধারাবাহিকতায় জন্ম নেয় আরও আরও আরও ছিন্নমস্তারা। যারা নিজের শরীর দিয়েই নিধন করে নিজের শরীর। করেই চলে, করেই চলে… আর জন্ম নেয় আরও আরও সহস্র যোনি। তারাই আমরা, এই উপমহাদেশের, এই বাংলাদেশের, এই ভারতের মেয়েরা। ধর্ষিতা হওয়ার সম্ভাবনা জেনেও বেরিয়ে পড়ি রাস্তায়, মধ্যরাতে পাহারা দিই জনপদ, পাহারা দিই ধর্ষিত-মৃত আত্মাদের, যাদের দাফন হয়নি, হবে না কোনও দিন।

দেবী ছিন্নমস্তা

তোমরা তো স্রেফ জানো যোনি। আমরা জানি জরায়ু। তোমাদের মাতৃগর্ভ।
যে শরীর দখল করো তুমি, সেই শরীরকে নিয়েই এগিয়ে আসি আমি তোমার সামনে। আজ তাই, আমি, সেই শরীরের মালকিন, ধ্বংস করব নিজেকে— স্বহস্তে। তোমার সামনে— ধ্বংস হোক এ শরীর। ধ্বংস হোক তোমার মাতৃগর্ভ। ধ্বংস হোক তোমার স্ত্রীযোনি। এ বার তুমি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? অস্তিত্ব কোথায় তোমার? যে পথে পৃথিবীতে আসো, আর যে পথে পাও অস্তিত্বের নাড়ীস্পন্দন, যদি রুদ্ধ হয় সেই পথ— তুমিই তো স্রেফ নেই হয়ে যাবে!
আজ যদি, আমি সেই ঘরহারানো উন্মাদিনী দখল করি নিজের শরীর, যদি উল্টে দিই রমণের প্রকৌশল— গ্রহীতার বদলে হয়ে উঠি রতিদাত্রী, শুধু নিজ ইচ্ছাবলে— তা হলে সেই তবে জেহাদ। সে জেহাদের কাব্যের সাথে মিশ খাবে না লক্ষ্মীর বাধ্য পাঁচালি, আনুগত্যই যেখানে একমাত্র, একমাত্র, একমাত্র প্রতিপাদ্য। এ জেহাদের আখ্যান অন্য। সেখানে শুধু বিরাজ করেন দেবী ছিন্নমস্তা— সুখদায়িনী, বরদায়িনী ছিন্নমস্তা।
সেই সুখ গহীন সুখ। ঘরের কোণে নেই। আঁধারের সুখ। আলোর সুখ। আঁধার থেকে আলোর দিকে সেই যাত্রা।

হও শামিল

দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে সামনে এগোতে হয়। নির্ভয় হতে হয়। আমরা এই উপমহাদেশের মেয়েরা আজ নির্ভয়া। নির্ভয়া এক মৃত আত্মা, আমাদেরই মতো— যার উত্তরসূরী আমরা।
আমরা, এই মায়াহারা, ঘুমহারাদের দল, রাস্তায় হাঁটি। সমস্ত রাত জেগে থাকি। আর আমাদের সঙ্গে জেগে থাকে নিহত আত্মারা, নির্ভয়া হয়ে— যারা ধুলো হয়ে ঢেকে দিয়েছে আমাদের সর্বাঙ্গ, আমাদের নগ্ন শরীর, রাত্রির চাদরে।
সঙ্গমরত মানব-মানবীর উপরে দাঁড়িয়ে থাকি আমরা— আমাদের সঙ্গমসুখ নাই, সমর্পণ সুখ নাই— শুধু জেহাদ আছে, আর আছে জিতে যাওয়ার রক্ত-উল্লাস।
হই ছিন্নমস্তা

দশমহাবিদ্যা: প্রকৃতি বা নারীর দশটি রূপবিদ্যা।

লেখক পরিচিতি:
রূপসা
লেখক গায়েবে বা আড়ালে থাকতে ভালোবাসেন। তাই দালির আঁকা ছবিতে নিজেকে প্রকাশ করতে চেয়েছেন।

লেখক, গবেষক, সাংবাদিক। জন্ম ১৯৮৭ সালের ৫ আগস্ট৷ এক সময়ে বিপ্লবী কমিউনিস্ট ধারার ছাত্র রাজনীতি ও শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন৷ পড়াশোনা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক সাহিত্যে৷ এমফিল-এর কাজ চটকল শ্রমিকদের মৌখিক ইতিহাস নিয়ে, স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গের ইতিহাস, আন্দোলনের ইতিহাস, সত্তার ইতিহাস। প্রিয় লেখক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস আর সুদানের তায়েব সালিহ।

Share