।। রওশন আরা মুক্তা ।।
আবার সে যেন জাগে
একই গানে সুর মেলানো জাগা কারা যেন
অবাস্তব সব আসে
চেয়ে দেখি, সমস্ত মানবসভ্যতা এক হয়ে যেন
ঘুমায় আমার পাশে
কেউ না থাকুক তবু কেউ তো দেখে
কেউ না রাখুক তবু কেউ তো রাখে
প্রতিরাতে আয়াতুল কুরসি পড়ে যেন কেউ
তার ওই গলন্ত মুখে
প্রতি রাতে আয়াতুল কুরসি পড়ে যেন কেউ
একজন হত্যা হয়ে যাবে
এরপর তার হত্যাকারীদের পক্ষ নিয়ে গড়ে উঠবে রাজনৈতিক দল।
সভা সমিতি হরতালের ডাক সবই হবে;
শান্তির বার্তায় কানভরা সব লোকগুলি
একদিন ভুলে যাবে—
কেউ কোনোদিন কোথাও হত্যা হয়েছিল
একই
তারপর আমি এফএম ছাড়ি
হিন্দি আর বাংলা মিলে একই গান বাজতে থাকে ঘুরে ফিরে;
একই রকম শীত নামে ধারালো দাঁতের শহরে।
এমন দিনে তোমাদের যেসব বন্ধুরা মদ খায়
এবং যারা খায় না— তারা সবাই
একত্রে উত্থিত হবে একই রকম ভাবে।
— কী করে অস্বীকার করবে তুমি, খোদাতালার এই পুরষ্কার?
ওহ! কেন একই রকম বৃষ্টি নামে বারবার
ভাসান
আলো-আঁধারে হারানো দেশ ভাসে
তার মৃদু মুদিত দুই চোখে
ইলিশের ঘ্রাণে কলাইয়ের ক্ষেতে
আবার সে যেন জাগে
একই গানে সুর মেলানো জাগা কারা যেন
অবাস্তব সব আসে
চেয়ে দেখি, সমস্ত মানবসভ্যতা এক হয়ে যেন
ঘুমায় আমার পাশে
কেউ না থাকুক তবু কেউ তো দেখে
কেউ না রাখুক তবু কেউ তো রাখে
প্রতিরাতে আয়াতুল কুরসি পড়ে যেন কেউ
তার ওই গলন্ত মুখে
মাটির বিস্কুট
(উৎসর্গ: বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত)
উত্তরার স্বামী গেছে মল্লযুদ্ধে
কোরবানী কি গায়েব আল্লাহর আদেশ নাকি
মুসলিম জাতির পিতা প্রতিনিধি ইব্রাহিমের ইচ্ছামতে…
জ্ঞান জ্ঞান জ্ঞান-গরিমা
মাংসে মিলায়, সুইস একাউন্টের স্বাস্থ্য বাড়ায়
মানুষের পাপে আজ অ্যামিবার খাদ্যগ্রহণ বন্ধ করে দিতে হবে
পেট জ্বলে যায় পেট পুড়ে যায়
মাটি যদি মাটিকে খেয়ে নেয়
কার আদেশ, কী দোষ তাতে
তথাপি
তোমার দিকে যাওয়ার একশো একটা পথ ছিল
আমি বাকি একশোটা পথ বন্ধ করার পথে নেমে পড়েছিলাম…
ক্রমাগত
মিস হয়ে যাওয়া পরীক্ষার লাইনে দাঁড়িয়ে
কুকুরটাকে খুঁজে পাই না,
জ্যামহীন গলিগুলোর দু’পাশে একই দৃশ্য দেখি;
ঘর দুয়ার বন্ধ করে
— বাঁচার কী তীব্র আশায়
বনফুল খুঁটে খায় ঘাসফড়িংটা।
রোগ
উত্তর গোলার্ধে প্রজাপতির পাখা ঝাপটানোর কারণে
দক্ষিণ গোলার্ধে হয়ে যেতে পারে টর্নেডো;
যেমন প্রেজেন্টার মেয়েটির জামার সেফটিপিন
ভেঙে দিতে পারে প্রসূতির আয়না অহংকার।
একটাও মার পিঠে পড়েনি
তবে কেঁদেছে সে বারংবার!
— যেভাবে স্বাস্থ্যটুকু ছুয়ে গিয়েছিল…
তেমনই, তুই মরে যাস নাকি—
আমার মৃত্যুই তোকে চিবিয়ে যায়
আপাতত
মাটি খুঁড়ছো, খোঁড়ো,
গভীরে যেতে যেতে একদিন আবার ওঠা শুরু করবে;
পরে আবার ডিঙাবে সেই মাটির পাহাড়,
আমিও যাব তোমার সাথে!
আড়ালে থাকা মৃদুবাতাসি ঢেউয়ের সমুদ্রটায়
পা ভিজিয়ে বসে থাকব;
ঘর্মাক্ত দিনগুলো তোমার মতোই,
এতটাই অবশ্যম্ভাবী ও রূঢ় যে—
দাঁতমুখ খিঁচে, — জীবনের মতোই ভালোবাসতে থাকি—
তোমাকে।
গোয়ালিনী
আমি তোমাকে পালব
মৃদু পাখির মতো;
আরামের বিড়াল—
ছানা হাঁসের মতো!
একদিন আমি ব্যথা লুকিয়ে,
পৃথিবীর তৃষা নিবারণে
কচলে দিব তোমাকে—
যেভাবে গাভীর বাটে
হাত রাখে কৃষক…
দুধ দুধ,
সাদা দুধ-
সাদা সাদা ফেনা
অনন্ত বোধি
এমন একটা দিন যার পাখা নাই
এমন একটা আকাশ যার নীল নাই।
এমন একটা হাওয়া যেটা ওড়ায় না—
অন্ধ মন নিয়ে তুমি
শুকনো পাতার উড়ে যাওয়া দেখছো;
চোখে তোমার
এক সমুদ্র বৃষ্টি…
— মাথায় শুধু বোধ, বোধ আর বোধ
টোপ
পথের মধ্যে ধান বিছিয়ে দিয়ে পাখিদের তাড়িয়ে দাও
এ বছর একটা চালও যেন এদিক-ওদিক না হয়।
জায়গায় বসে না হয় উড়লেই তুমি কোনো শঙ্খচিলের সাথে
দূর্বাঘাসের কাছে না হয় করলে ধানের প্রার্থনা;
তোমার না থাকাতে কেউ জেনে নিতে পারে—
আত্মপ্রবঞ্চনাকে অন্তর খেতে দিতে আমরা মূলত খরচ করি বিশ্বাস
রওশন আরা মুক্তা
মূলত কবি। চিন্তা করতে ভালোবাসেন, চিন্তার পথে কোথাও থেমে যেতে চান না। বুলি সর্বস্ব মানবিক পৃথিবী না, নির্বাক প্রেমের পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেন।
তাঁর জন্ম ১৯৮৮ এপ্রিলের ১২ তারিখ।
রওশন আরার মুক্তার এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইগুলো – অপ্রাপ্তবয়স্কা (আদর্শ, ২০১৩), এলদোরাদো (ঐতিহ্য, ২০১৬), কেন দোলনচাঁপা (শ্রাবণ প্রকাশণী, ২০১৮)। গল্পগ্রন্থ: টরে-টক্কা (অনিন্দ্য প্রকাশ, ২০১৮)। গল্পগ্রন্থ: ঘুঘু (বৈভব ২০১৯)।