।। সম্পাদকীয়।।
এবার ২৫ বৈশাখে যারা রবীন্দ্রনাথের পর্যালোচনা করেন নি, যারা শুধু একাট্টা বিরোধিতা করেছেন, বিশেষত বাংলাদেশে — আমরা তাঁদের সঙ্গে একমত নই। এই কথাটা জানান দেবার জন্য আমাদের এই সম্পাদকীয়। এদিকে হিন্দুত্ববাদীরা যখন শান্তিনিকেতন-সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের দখলে নিয়ে যাচ্ছে, তখন রবীন্দ্রনাথের এক তরফা বিরোধিতা কাণ্ডজ্ঞানবর্জিত এবং অদূরদর্শিতা। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ-সহ ভারতে বিজেপি বা সংঘ পরিবার তার হিস্যা আদায় করতে অবশ্যই শান্তিনিকেতন আশ্রম বা বিশ্বভারতী-সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একে একে দখল করবে তাতে আর বিস্ময় কী! তার প্রমাণ হিশাবে ক্ষিতিমোহন সেনের নাতি অমর্ত্য সেনের পাছায় লাথি মেরে শান্তিনিকেতন থেকে বের করে দেবার চেষ্টাচরিত্তির খবর দেখছি আমরা। আমরা কি হাততালি দেব, নাকি ক্রুদ্ধ হব? দুঃসাহস তো হিন্দুত্ববাদীরা ইতোমধ্যেই অর্জন করেছে। কই সে নন্দিনী যে রাজার সঙ্গে লড়বে, মরবে! আর মৃত্যুকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে আবার অমর হবে?
রাজা – কোন্ বালক?
রক্তকরবী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
নন্দিনী – যে বালক এই ফুলের মঞ্জরি রঞ্জনকে এনে দিয়েছিল।
রাজা – সে যে অদ্ভুত ছেলে। বালিকার মতো তার কচি মুখ, কিন্তু উদ্ধত তার বাক্য। সে স্পর্ধা করে আমাকে আক্রমণ করতে এসেছিল।
নন্দিনী- তারপরে কী হল তার? বলো, কী হল? বলতেই হবে, চুপ করে থেকো না।
রাজা- বুদ্বুদের মতো সে লুপ্ত হয়ে গেছে।
নন্দিনী- রাজা, এইবার সময় হল।
রাজা- কিসের সময়?
নন্দিনী- আমার সমস্ত শক্তি নিয়ে তোমার সঙ্গে আমার লড়াই।
রাজা- আমার সঙ্গে লড়াই করবে তুমি! তোমাকে যে এই মুহূর্তেই মেরে ফেলতে পারি।
নন্দিনী- তারপর থেকে মুহূর্তে মুহূর্তে আমার সেই মরা তোমাকে মারবে। আমার অস্ত্র নেই, আমার অস্ত্র মৃত্যু।
রক্তকরবীর সেই নন্দিনী, যে কি না রাজশক্তির বিরুদ্ধে মরনপণ জেহাদের ডাক দিয়েছিল, সেই নন্দিনীকে আজ আমাদের দরকার। গণমানুষের, ভূমিমানুষের, কৃষিসমাজের বড় বাংলার মেটাফর যে নন্দিনী, সে নন্দিনী সে অবশ্য গুম হয়ে গিয়েছে অনেক আগেই। তার সন্ধান করতে করতে করতে আবার একটা রবীন্দ্রজয়ন্তী চলে এলো। একই সময়ে আমরা আরেকটি ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে। এই সময়টা পুঁজিতান্ত্রিক গোলকায়নের একটা শীর্ষ মুহূর্তের কাল। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্তযুদ্ধ আপাতত স্থগিত রয়েছে, কিন্তু ইউরোপ লড়ছে ইউরোপের সঙ্গে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে চলছে ইউক্রেনে ন্যাটোর প্রক্সি ওয়ার, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে চলছে রাশিয়ার নির্দয় ও নিষ্ঠুর স্পেশাল মিলিটারি অপারেশান। রাশিয়ার দিক থেকে আমরা শুনছি রুশ-চিন অক্ষশক্তির পুনর্গঠন, মার্কিন নেতৃত্বাধীন এককেন্দ্রিক বিশ্বের বিপরীতে বহুকেন্দ্রিক বিশ্ব গড়ে তোলার ডাক। মাঝখানে রয়েছে ধর্মেও আছি জিরাফেও আছি কূটনীতি নিয়ে মোদির হিন্দুত্ববাদী ভারত বা মোদিস্তান। এই সেই সময় যখন বড় বাংলার জনগণ অতীতের ভুল ও ক্ষতস্থান গুলো খুঁচিয়ে আবার ক্ষত তৈরি না করে বরং দরকার একসঙ্গে তাদের স্বার্থের কথা ভাবার সামর্থ্য অর্জন। হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে সীমান্তের দুই দিকে লড়াই জোরদার করা। আমাদের কি সেই দূরদর্শিতা আছে? এতো দেখছি কানার হাটবাজার!
এই টানাপড়েনের মধ্যে ঠাকুরকে আমরা কোথায় আসন দেব ? বিজেপির যূপকাষ্ঠে কোরবানি দেব, নাকি মনে করিয়ে দেব দরবেশী জোব্বা পরা ঠাকুরের বড় একটি আসন বাংলাদেশে পাতা আছে। সেখানে তাঁর গান লড়াকু বাঙালির জাতীয় সঙ্গীত। আমরা পছন্দ করি বা না করি ঢাকা দুনিয়ার সকল বাংলাভাষীর কাশি, সকল বাঙালির মক্কা। বড় বাংলার জনগণ হিশাবে যদি আমরা আমাদের ভাল চাই তাহলে পরস্পরের বোঝাবুঝি হিন্দুত্ববাদীদের বিভক্তি সৃষ্টির নীতির বাইরে গড়ে তুলতে হবে। যদি দিল্লীর আধিপত্য ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়তে হয় তাহলে বাংলাদেশকে অবশ্যই ভারতের হিন্দুত্ববাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক জনগণকে বন্ধু হিশাবে পেতে হবে। বাংলাদেশের জনগণকে এটাও বুঝতে হবে এই বন্ধুত্ব বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্যও জরুরি। সেই ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ এখনও আমাদের সম্পর্কের সূত্র। ্রবীন্দ্র পূজা যেমন বন্ধ করতে হবে, তেমনি একাট্টা রবীন্দ্র বিরোধিতার আত্মঘাতী পথও আমদের পরিহার করতে হবে।
এখন আমরা চাইলে রবীন্দ্রনাথকে নরেন্দ মোদির মন্দিরে পাঁঠার মতো কোরবানি দিয়ে দিতে পারি, অসুবিধা নাই। দেব কি? কারণ কলকাতার উচ্চবর্ণের হিন্দুর হাতে যে হিন্দুত্ববাদের জন্ম সেখানে রবীন্দ্রনাথেরও অবদান রয়েছে। তিনি ধোয়া তুলসি পাতা নন। অতএব বিজেপি তার হিস্যা আদায় করতে অবশ্যই শান্তিনিকেতন আশ্রম বা বিশ্বভারতী-সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একে একে দখল করবে, তাতে আর বিস্ময় কী! তার প্রমাণ হিশাবে ক্ষিতিমোহন সেনের নাতি অমর্ত্য সেনের পাছায় লাথি মেরে শান্তিনিকেতন থেকে বের করে দেবার চেষ্টাচরিত্তির খবর দেখছি আমরা। আমরা কি হাততালি দেব, নাকি ক্রুদ্ধ হব? দুঃসাহস তো হিন্দুত্ববাদীরা ইতোমধ্যেই অর্জন করেছে।
কিন্তু পশ্চিম বাংলার জনগণকেই ভাবতে হবে আমরা কি তা করতে দেব? করতে দেওয়া কি উচিত? নাকি অমিত শাহ এবং তার সাঙ্গপাঙ্গদের রুখে দেওয়া আমাদের কর্তব্য? বাংলাদেশের জনগন সশস্ত্র যুদ্ধে লড়ে তাদের দেশ স্বাধীন করেছে, অমিত শাহ তাদের ‘উইপোকা’ মনে করে। তাতে পশ্চিম বাংলার বাবু বাঙালির খিক খিক করে হাসবার কোনো কারণ দেখি না। কারণ, অমিত শাহের কাছে বাবু বাঙালি আরও নিকৃষ্ট কীট। যারা দিল্লীর পায়ে তাদের প্রাণমন সঁপে দিয়ে দাসবৃত্তির অধিক কিছু অর্জন করতে পারে নি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে শুকরিয়া জানাই। তিনি প্রতিবাদ করবার কথা বলেছেন। প্রতিবাদ করছেন।
রক্তকরবীর রবীন্দ্রনাথ কিংবা অচলায়তনের রবীন্দ্রনাথকে আমরা এখন আর খুব একটা চিনি না। ঠাকুর বজ্রশিখায় এক পলকে সাদাকালো মিলিয়ে দিতে আগুন জ্বালানোর ডাক দিয়েছিলেন বটে কিন্তু তাতে উপমহাদেশে হিন্দু-মুসলমানের বিভেদ মুছে যায় নি। তারপরও রবীন্দ্রনাথ এখনও ধর্ম নির্বিশেষে সকল বাঙালির; ‘সিদ্ধি দাতা গণেশ’ হতে না পারেন কিন্তু কাঁঠালের আঠা তো অবশ্যই। এখনও তিনি আমাদের জোড়া বা যুক্ত করে রাখছেন। সেই রবীন্দ্রনাথকে ফুৎকারে উড়িয়ে এমন এক রাবিন্দ্রীক বয়ান তৈরি হয়েছে যা হিন্দুত্ববাদের নরম ও মসৃণ সংস্করণ মাত্র। শুধু তাই না। পর্দার আড়ালে থাকা ওই অহঙ্কারি ও কর্তৃত্ববাদী রক্তকরবীর রাজারই প্রতিষ্ঠা ঘটেছে। রবীন্দ্রনাথের নাম করে এক প্রকার রাবিন্দ্রীক পৌত্তলিকতা তৈরি হয়েছে যার কোন ছাঁদছিরি নাই। অন্যদিকে দিল্লী যে রবীন্দ্রনাথকে সরকারি অনুষ্ঠান ও উৎসবের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা করতে চায় সেই রবীন্দ্রনাথ দিল্লীর আধিপত্য এবং আগ্রাসনের প্রতীক ছাড়া আর কিছু হয়ে উঠতে পারে না। এর ফলে বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথ বিরোধী মনমানসিকতা গড়ে উঠছে। কোনো কোনো পক্ষ থেকে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত বদলাবারও দাবি উঠেছে।
২৫ বৈশাখ যখন যাচ্ছে তখন বর্তমান ক্রান্তিকালকে আরও ঘনিষ্ঠ, ইতিহাস সংলগ্ন হয়ে বিচার করবার দরকার আছে। সর্দি লাগা নাকে রবীন্দ্র সঙ্গীত গেয়ে আর হার্মোনিয়াম বাজিয়ে রোমান্টিক আবেগে ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয় …’ আর কতো গাইব আমরা? আমাদের তো আসলেই মুক্তি দরকার। এখনও কি বঙ্গীয় বদ্বীপে সত্যি সত্যি মুক্তির জন্য সকলে একসঙ্গে জেগে হুংকার দেওয়ার সময় হয় নি? বিজেপিকে কি বলার সময় হয় নি যে ‘খামোশ, শান্তিনিকেতনে হিন্দুত্ববাদের দুর্গন্ধ ছড়াতে দেওয়া যাবে না। রবীন্দ্রনাথ যেমন সকল বাঙালির, অমর্ত্য সেনও আমাদেরই ছেলে, তাঁর বাপ দাদার জায়গা থেকে তাকে উৎখাত করা যাবে না।
আবার রবীন্দ্রজয়ন্তী এসেছে। চলেও যাচ্ছে। রবীন্দ্রসাহিত্য ও ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথের জীবন, সাহিত্য, চিন্তা ও কর্মের পর্যালোচনা বাদ দিয়ে রবীন্দ্রচর্চার নামে যে সাংস্কৃতিক কৌলিন্যপ্রথা গড়ে উঠেছে তাকে ভাঙা দরকার ছিল বহু আগে। সে কাজ হয় নি। এখন দেখছি রবীন্দ্রনাথকে খারিজ করতে উদ্যত হচ্ছে বড় বাংলার জাতীয় সাহিত্য ও সংস্কৃতির খোদ অন্দর থেকে। ঠিক যে বাংলার নবজাগরণ বলে যে অধ্যায় বা ‘সাংস্কৃতিক উন্মেষ’-এর কালপর্বকে চিহ্নিত করা হয়, সেই রেনেসাঁ ঔপনিবেশিকতার বাইরের কিছু না। তার পর্যালোচনা এবং ইতিহাস থেকে শিক্ষার দরকার রয়েছে। কিন্তু পেছনে ফিরে যাবার নয়, সামনে অগ্রসর হওয়ার জন্য।
রবীন্দ্রনাথের কঠোর সমালোচনা পর্যালোচনা হোক, অসুবিধা নাই । কিন্তু বড় বাংলার দিক থেকে তাঁর রাজনৈতিক তাৎপর্য যেন আমরা না ভুলি। তিনি আমাদের সেতুবন্ধন। এই গ্রন্থি যদি ছিঁড়ে যায় বাংলাভাষীদের বৃহত্তর বৈশ্বিক বৃত্ত ভেঙে যাবে এবং ভূ-রাজনৈতিক নতুন ভাঙাগড়ার মধ্যে এই বদ্বীপের জনগণ হেরে যাবে। আমাদের সমস্যা দিল্লির আগ্রাসন ও আধিপত্য, রবীন্দ্রনাথ নন। আমাদের শত্রু অমিত শাহ ও নরেন্দ্র মোদি, আর এসস, বিজেপি এবং নানান নরম, মসৃণ, উগ্র, কুৎসিত হিন্দুত্ববাদ। এর বিরুদ্ধে যদি আমরা উপমহাদেশে একসঙ্গে দাঁড়াতে না পারি বড় বাংলা আরও একশ বছর পিছিয়ে যাবে। নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় পিচ্ছিল জাতিবাদে আছাড় না খেয়ে আমাদের দূরদর্শী হতে হবে।
কই সে নন্দিনী যে রাজার সঙ্গে লড়বে, মরবে! আর মৃত্যুকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে আবার অমর হবে?
এহেন পরিস্থিতিতে দেখা গেল বিরোধী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথকে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন । আমরা একে রাজনৈতিকভাবে ইতিবাচক মনে করি। এই সময়ে ঠিক এ ধরনের পোস্টই দরকার ছিল। আমরা চাই তাঁর দল বিএনপি দিল্লীতোষণ নীতি থেকে বেরিয়ে আসুক। দিল্লী তোষনই এই দলের অধঃপতনের প্রধান কারন। ধর্ম নির্বিশেষে বাঙালি নিজেদের বৃহৎ স্বার্থ নিয়ে নিয়ে ভাবতে শিখুক। সারা দুনিয়া নতুন ভাঙাগড়ার দিকে দ্রুত ধেয়ে চলেছে। ভূ-রাজনৈতিক বিন্ন্যাসের নতুন সম্ভাবনার মধ্যে আমরা যেন আমাদের নতুন ভাবে আবিষ্কার করতে পারি।
তারেক রহমানের দল যে রবীন্দ্র বিরোধী নয়, সে কথা প্রমাণ হল বটে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে একদল হঠকারী তারেকের পোস্টে রিপোর্ট করল, পোস্টটি সাময়িকভাবে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল এর ফলে। পরে অবশ্য পোস্ট ফের দৃশ্যমান হয়। এই ব্যাপারে একটা বিষয় অনুমান করা যাচ্ছে যে তারেকের বিরুদ্ধে ক্ষোভের একটা কারণ হিসেবে অবশ্যই বাঙালি জাতীয়তাবাদের পালটা মুসলিম জাতিবাদ তো রয়েছেই, কিন্তু তার পাশাপাশি আরেকটি বড় অংশের কাছে অন্য একটি বিষয় ক্রিয়াশীল রয়েছে। সেটা হল, একদিকে দিল্লির সঙ্গে বিএনপির নেগোশিয়েশনের চেষ্টা, অন্যদিকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমাধানে প্রত্যক্ষভাবে ওয়াশিংটনের সাহায্য প্রার্থনা। ভূরাজনৈতিক টানাপড়েন এবং নতুন বিশববাস্তবতার বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির কোন স্বচ্ছ রাজনীতি নাই।
এদিকে এই দিল্লি পশ্চিমবঙ্গে যে কারবার চালাচ্ছে, তা ৫২ থেকে একাত্তরে করাচি ও ইসলামাবাদের কর্মপন্থার থেকেও বহুগুনে ভয়ঙ্কর। হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তানের রাজনীতি একদিকে ভারতের প্রতি পশ্চিমবঙ্গের যুক্তরাষ্ট্রীয় অধিকারকে খর্ব করছে প্রতিমুহূর্তে অন্যদিকে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিতে নামিয়ে এনেছে হিন্দি-হিন্দুত্বের প্রবল আধিপত্যের অধীনে। । রবীন্দ্রনাথ এক্ষেত্রেও তাদের টার্গেট, শান্তিনিকেতন আশ্রমের সকল সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, উৎসবে তারা লাগাম টেনেছে। পাঁচিল দিয়ে গোটা বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসকে শান্তিনিকেতন থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বা আশ্রম চত্বরে ঢোকা নিষেধ সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে প্রাক্তনীদের। অন্যদিকে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে তাঁর পরিবারের কয়েক প্রজন্মের ভিটেমাটি ‘প্রতীচী’ থেকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা চলছে। প্রতীচি শান্তিনিকেতন আশ্রমের একেবারে লাগোয়া। এদিকে রবীন্দ্রনাথের চিন্তা জগতকে নতুন প্রজন্মের কাছে বিকৃত করতে আরএসএস-বিজেপির তরফেও রবীন্দ্রচর্চার আয়োজন হচ্ছে, অমিত শাহ ভাষণ দিচ্ছেন রবীন্দ্রজয়ন্তীতে!
পশ্চিমবঙ্গে বাংলা ও বাঙালির সঙ্কটের পিছনে বাঙালিও অবশ্য কম দায়ি নয়। কেননা, তারা নিজেদের রাজনৈতিকভাবে বাঙালি ভাবতেও পারেননি কখনো, তারা সর্বভারতীয় জাতীয়তার চর্চা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ প্রশ্নে তাদের অবস্থান অচলায়তন প্রতিষ্ঠানে প্রাতিষ্ঠানিক রবীন্দ্রচর্চার মতোই। শুদ্ধতাবাদী, প্রমিত, কৌলিন্যময়, উচ্চবর্ণ ও অভিজাতদের রঙে রঙিন।
কই সে নন্দিনী যে রাজার সঙ্গে লড়বে, মরবে! আর মৃত্যুকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে আবার অমর হবে?