ফ্যাসিস্ট, ফুলপাখি লতাপাতা

।। সাইদ উজ্জ্বল ।।

এমনকী আমরা চিৎকার করতে পারি না
তোমার পালিত কুকুরগুলো
আমাদের মুখ গহ্বরে বন্দুক নিয়ে বসে আছে
আমাদের হা করতেও বারণ।
আমাদের চোখগুলো শুধু খোলা
এমনকী মরে গেলেও খোলাই থাকে।

দ্বিখণ্ডিত কুটির বিল

আজ এই বিষণ্ণ কুটির বিলে
নেমে এসেছে অসংখ্য শাদা পরী
ডুবন্ত সূর্যকে সাক্ষী রেখে

দীর্ঘ ছায়াকে পিছনে ফেলে
নেমে এসছে তারা পৃথিবী শেষপ্রান্তে।

লাল পিঁপড়ার ঘরে

কারা যেন রেখে গেছে গোক্ষুর সাপের বিষ

তারা হয়তো জানে না
এখানে ডিম নিয়ে বসে থাকে কুড়াপক্ষী।

গল্পের পরীদের সাথে নেমে আসে পাতিহাস
আর, এই বিহান বেলায়
দ্বিখন্ডিত হয়ে যায় কুটির বিলের হৃৎপিণ্ড।

ফ্যাসিবাদের কালে

ক্রমশ আটকে যাচ্ছে মানুষের নিঃশ্বাস
আর, তল্লাটে তল্লাটে নেমে আসছে হাবিয়া দোজক।

বিধ্বস্ত কবরে জীবিত আটকে আছি
আয়ুর রশি ধরে ঝুলে আছে আমার ক্ষুর্ধাত সন্তানেরা
শূন্য উনুন ঘিরে বসে আছে তারা
ডেগের ভিতর হাওয়া বসিয়ে
তাদের চোখকে শান্ত করছেন আমার স্ত্রী।
কিন্তু মিথ্যা গল্পে তো আর পেট ভরে না
তবু তুমি একই গল্প বারবার বলে যাও।

এমনকী আমরা চিৎকার করতে পারি না
তোমার পালিত কুকুরগুলো
আমাদের মুখ গহ্বরে বন্দুক নিয়ে বসে আছে
আমাদের হা করতেও বারণ।
আমাদের চোখগুলো শুধু খোলা
এমনকী মরে গেলেও খোলাই থাকে।

সেই ক্ষুধার্ত এবং মৃত চোখগুলো দিয়ে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি
হে পরপীড়ক
তোমাদেরও একদিন ঘিরে ফেলবে মানুষের হাত।

হায়েনা পাথর

আমাদের হাতগুলো দানা বাঁধে রোজ
নিহত মানুষগুলো নিতে আসে খোঁজ

ভয়ের বাড়ির পাশে আমাদের ঘর
রোজ এসে হানা দেয় হায়েনা পাথর

পাথরের নাম ধাম সব কিছু জানা
ভাতারের মতো তার নাম বলা মানা

এমন আজব কালে আমাদের বাস
জীবিত মানুষগুলো যেন মরা লাশ

একদিন লাশগুলো যদি জেগে ওঠে
সে আশাতে দিন গুনি এই মড়া-ঘাটে।

ধানের কবরের পাশে

মাঠের শরীর সবুজ পাখির রূপে
স্থির যেন এক সন্ধ্যা বেলার কাছে
ঘুমিয়ে যাবার জিরিয়ে নেবার কালে
পাথর দিনের গান করে নিশ্চুপে।

বীজের ক্ষেতের পাশেই পোকার ঘর
নদীর মায়ের একটি কন্যা আছে
কন্যা তোমার স্রোতের ঘূর্ণিপাকে
ভাঙলো ধানের অনন্ত কবর।

নতুন চারার পাতার মৃত্যু দেখে
পাথর পাখির শোক জাগে হররোজ

কান্না এবং রক্ত নদীর চোখে
ঘর বাঁধে এক দুরন্ত খরমুজ।

ছবি- লুবনা চর্যা

সাইদ উজ্জ্বল

কবি ও রাজনৈতিক কর্মী
প্রকাশিত কবিতার বই:
মম বাক্য ধরো (২০১৬)
দ্বিতীয় প্রজাপতি (২০১৯)
জন্ম: কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ।

Share