আজ বৃহস্পতিবার, ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

আমার পেছনে হাওয়ার মতো ধাওয়া করেছে ঈশ্বর

কবিতাগুচ্ছ ও গান

।। দীপাংশু আচার্য ।।

ক্রমশ কপালচোখে
তমসা ভাসানো নেশা
আলোর ফিনকির মতো জাগে

ব্যক্তিগত স্নায়ুতন্ত্র নিত্যযুক্ত ব্রহ্মাণ্ডশিরায়

কাছ থেকে ভয়ঙ্কর লাগে

দূর থেকে নক্সা বোঝা যায়

অনন্তের নক্সিকাটাকুটি

ভেদবুদ্ধি বিবর্তনফল, মনুষ্যমগজে…

১৩. ০৮. ২০২০

কানাইনৌকোয় যায় বলরামমাঝি

কৈবল্য চাই আজ; আজ মানে আজই

মা তুমি উঠছ সেরে
ত্রিগুণ সবলা

বেসুরের সুরে বাজে শিশুর দু’হাতে কাঠের দেবতা

শীতলসুন্দর এই
অভিভাবকের নাম
লেবুছায়াতলা

সমস্ত স্নানের জল কাঁপে

কুলুঙ্গিতে চেতনার বিভিন্ন রূপক
ধ্যানগন্ধ ধোঁয়ার গোলাপে

দুধের কপালে হেঁটে
বাঁ-আঙুল আরোগ্য টিপেছে
আর অমৃতমলম

ফিরে গ্যাছে বিধবার ওম

সমুদ্রসবুজ টুপি সরুঘরে পরমপানীয়, শরীরের নুন

ধ্রুবকের মতো ঝোলে আর দোলে
হীরের হাওয়ায়
অল্পধুলো মনমাখা জন্মের বেলুন

একঘরে চারজন্ম থাকে

একঘরে চারজন্ম খায়

একঘরে চারজন্ম খ্যালে

একঘরে চারজন্ম শোয়

বলরামমাঝি ভাসে কানাইনৌকোয়


গোধূলিগরীব গেঁয়োযোগী

চারের রোদ্দুরে ভেজা মাটি
 
মহাবিশ্ব মা-আমার

একা

হোমিওডাক্তারপথে হাঁটি

দু’ধারে গাছের মতো কয়েকটি শ্রমিক

তুলসীকণ্ঠির সাথে স্বল্প পেঁচিয়ে গ্যাছে রুদ্রাক্ষমালাটি

পোশাকের ভেতরে পোশাক
পোশাকের ভেতরে পোশাক
পোশাকের শেষে সৎচিৎ

দেহের দহন নাও দত্তক দত্তক দেহী, হে চিরহরিৎ

খুকখুক কাশিকান্না উড়ে যাচ্ছে রান্নাঘরভেদী

পেরিয়ে পাতালঘর, বিস্কুটের সাংসারিক, তাসফুলের বেদি

ক্রমশ কপালচোখে
তমসা ভাসানো নেশা
আলোর ফিনকির মতো জাগে

ব্যক্তিগত স্নায়ুতন্ত্র নিত্যযুক্ত ব্রহ্মাণ্ডশিরায়

কাছ থেকে ভয়ঙ্কর লাগে

দূর থেকে নক্সা বোঝা যায়

অনন্তের নক্সিকাটাকুটি

ভেদবুদ্ধি বিবর্তনফল, মনুষ্যমগজে

মানুষটি অসুস্থ তাও
প্রচণ্ড তন্দ্রার ঘোরে
নিজস্ব পয়সার থলি খোঁজে

মহানক্সা মা-আমার

ওঠো

জলজ্যান্ত শান্ত পলিমাটি

তুলসীকণ্ঠির সাথে দু’বেলা জড়িয়ে যায় রুদ্রাক্ষমালাটি


আমার পেছনে হাওয়ার মতো ধাওয়া করেছে ঈশ্বর 

নিকোলা টেসলাকে জানাচ্ছিলাম কৃতজ্ঞতা টেবিলফ্যানের দিকে বিগ্রহজ্ঞানে তাকিয়ে আর হাওয়ায় জুড়িয়ে যাচ্ছিল প্রাণ। মানুষ যা খুঁজে বের করতে চায়, শরীরেই তা নিহিত আছে, রাদার শরীরে যা-যা নিহিত আছে, মানুষ তা খুঁজে বের করবেই, অনুসন্ধানকারী যদি হয় মুক্ত, অর্থাৎ, ভ্রান্তির পিছুটানে ভারাক্রান্ত না হ’য়ে সত্যের দিকে ধাবিত; ইন্দ্রিয়াতীত অভিনিবেশে। শ্রম, নিজেকে জোর খাটিয়ে হয় না। শ্রম ফুলের মতো ফোটে দীর্ঘদিনের নিবিড় সংশ্লেষে; তিল-তিল অপেক্ষার শিহরিত কায়ায়। তার কাছে স্পষ্ট হয় দেহতত্ত্বের মানচিত্র, যে-কোনও রাস্তায় হাঁটলেই গুপ্তধন এমন ঐশ্বর্যময় ভূখণ্ড

(৯.০৮.২০১৮)


বোধি আমায় খুঁজে পাচ্ছে-না

জ্ঞানের রাস্তায় ধারালো কাচের অসংখ্য টুকরোর মতো ছিটিয়ে আছে ভাষা, যারা হাঁটবে এরপরও, ভাষায় বিঁধে রক্তময় হবে যাতায়াত, যন্ত্রণার গর্ভে অনুশীলনের ঔরসে জন্মাবে সহিষ্ণু।  সহিষ্ণু বয়েসে বাড়লে তাকে দেখে ধ্যান মনে হবে। ধ্যান চিরস্থায়ী ও কাল্পনিক।  ভাষা সহিষ্ণুকে ধ্যান ভাবে। ভাষা আর তাকে স্পর্শ করতে পারে-না। সকলই অব্যক্ত হয় স্পর্শাতীত হওয়ার দরুন ; থাকে জ্ঞান

(০৯.০৮.২০১৮)


গান

সন্ধ্যেময় সন্ধ্যে হয়
শোলোক-দেয়ালা বাঁধে অসীম…
সন্ধ্যেময় মেখেছি হিম
শাঁখের বিষাদে কাঁদে পিদিম…

সন্ধ্যেময় অনন্তে ভুগেছি
যেমন আঁধারে ডোবে আদিম…

সন্ধ্যেময় ভিজেছে রেণু
মায়ার মুঠোয় পাখির ডিম…

সন্ধ্যেময় সন্ধ্যে হয়
শোলোক-দেয়ালা বাঁধে অসীম

বিজনে বিজনে
বাঁশি বাজাবো না
সাজাবো উঠোন ধুলোখেলায়
অভিমান যেন
স্নায়ু দিয়ে বোনা
ছিঁড়ে ছিঁড়ে যায় অবহেলায়…

সন্ধ্যেময় সন্ধ্যে হয়
শোলোক-দেয়ালা বাঁধে অসীম…
সন্ধ্যেময় মেখেছি হিম
শাঁখের বিষাদে কাঁদে পিদিম…

সন্ধ্যেময় অনন্তে ভুগেছি
যেমন আঁধারে ডোবে আদিম…

সন্ধ্যেময় ভিজেছে রেণু
মায়ার মুঠোয় পাখির ডিম…

সুরের শরীর
হয়ে আনমনা
ফিরে যায় তার ছেলেবেলায়…
অভিমান যেন
স্নায়ু দিয়ে বোনা
ছিঁড়ে ছিঁড়ে যায় অবহেলায়…

সন্ধ্যেময় সন্ধ্যে হয়…

প্রচ্ছদের ছবি: Lucien clergue, France

দীপাংশু আচার্য

পশ্চিমবঙ্গের শূন্য দশকের কবি ও লেখক। গীতিকার, জাদুকর, অভিনেতা ও কমেডিয়ান। জন্ম ১৯৮৫ সাল। বসবাস, হুগলী জেলার শেওড়াফুলিতে।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: যেটা খুশি বেছে নাও (২০০৬)
অন্যান্য কবিতার বই:
উবু সব মাদারির ভিড় (২০১০)
মায়ার মাদুলি (২০১১)
দ্বিচারী (২০১২)
জ্বরের জাদুকর (২০১৭)
চ্যুত ; লুন্যাটিক (২০২০)
সদ্য প্রকাশিত আধ্যাত্মিক বই:
Parama Tatva – The Theory of Everything (2020)

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top