কয়েকটি শ্যামাসঙ্গীত শুনুন রিমিক্স ভার্সানে

কবিতা সিরিজ

।। অত্রি ভট্টাচার্য ।।

আমার ডেনিম ঘুচে যাক
আমার কোলগেট ঘুচে যাক

হে ভদ্রে,
এমন ক্রীড়া হোক
এমন লীলা হোক
এমন রক্তপদ্ম ফুটুক

শরীর থেকে মুছে যাক আমার, কলোনির দাগ…

কয়েকটি শ্যামাসঙ্গীত শুনুন রিমিক্স ভার্সানে

১.

ব্যা ব্যা বলে ডাকি, এই আমি বলিপ্রদত্ত ছাগমস্তক, বাবা বলিনা কেন? কেন লিখিনা বাবা? সাজিয়ে রেখেছে ওখানে, পায়ের কাছে, মাঝখান থেকে চিড়েছিল, ধড় ও মুন্ডু- আমার তো রক্ত নেই, তাই জলের ফিনকি, তাই থানে ও থানে পড়ে আছে ভাঙা হাত, মাংসের নয়— মাটির, তীব্র গতিতে ধেয়ে আসা খড়গ, নিজেকে তিন ম্যাট্রিক্স ভাঙ্গি, ভাঙতে হয়— তার একটাই রূপ ও প্রকাশ বিভিন্ন, বিড়ি ফুঁকতে থাকা সেই বহুরূপী চোয়ালে আমার কোনো দাগ নেই।

কসাইয়ের তীক্ষ্ম নাক থেকে ঘাম যেদিনই মূর্ত হল, যেদিনই ছাড়িয়ে নেওয়া হল পৃথিবীর ধুলোবালি মাখা ছাগলের চামড়া— মাংস থেকে, সেদিন থেকেই সাধ আমার, মাকে খাওয়াবো কোকাকোলা, মাকে খাওয়াবো জিরা-রাইস।

মায়ের কথা ভেবে, আমি তাকাবো মাংসের দোকানের দিকে…

২.

যেই ধ্যানে একমনে, সেই পাবে কালিকা তারা— এসবই দৈনিক অন্ধকারে টিকিয়ে রাখছে, রাত নিজের সাতটি জিভ লকলকিয়ে কাকে দেখাতে চাইছে হরর সিনেমা? এদিকে চৌকাঠের ওপারে ঠান্ডা হাওয়ার হাত ডাকছে, আর সেই হাওয়া তেতে যায়, আগুন জিভ নাড়ে

কান, নাক, চোখ, ত্বক ও জিভ সবই আছে তোমার, আমার, হাওয়ার, এখানে ঘুমোলেই খুন হয়ে যাবে, তোমার শিবিরে ঢুকে হো হো অট্টহাসিতে ফেটে পড়বে, ওই রক্তাশ্যনয়না কসমিক ভয়ঙ্করী

সে হাসিতে, ঘনকৃষ্ণ নাইটআউট ক্রমশ ব্ল্যাকআউট হতে হতে ব্ল্যাকআউট হতে হতে ব্ল্যাকআউট হতে হতে হতে হতে সে প্রথমে পজ করলেও পরে রিওয়াইন্ড করবে এবং বাজতে থাকবে কালী কালী মহাকালী

এই সাউন্ডস্কেপ পেরিয়ে, শিব উমাকে বিয়ে করতে যাবে।

৩.

কালোগাড়ি এসেছে, নিয়ে যাবে শরীরসমেত, স্পিডোমিটার ছুঁয়ে থাকো, থাকো ছুঁয়ে স্পিডোমিটার, যাবি যখন আরও কিছু নিয়ে যাবি, নিয়ে যাবি কাচের সেই ঘর যেখানে চোখে তুলসীচন্দন আমি ঘুমাই, নিয়ে যাবি ওই-ই হাত যা মরা দেখলেই অভ্যাস ও রিফ্লেক্সবশত: ঠেকে যায় কপালে, নিয়ে যাবি বঁটি দিয়ে কাটা চারফালি সংস্কার, তিনখানা চোখ ও ইরার জল, সুষুম্নার ছায়া, পিঙ্গলার মাটি

তোল আমার বুকের ওপর পা
তোর জিভকাটা দেখবে বলে ঘড়ির কাঁটা সরছেনা…

৪.

মাটিতে আনন্দ ফুটে আছে, কাকে বলি আনন্দ? ডান্স ডান্স, হুররে হুররে, কাঁপতে থাকা মোলায়েম কাঁধের নিরবচ্ছিন্ন ড্র্যাগনট্যাটু এসবেও ডুবেছি, খেদ নেই

আনন্দ আনন্দ আনন্দ আনন্দ আনন্দ আনন্দ আনন্দ আনন্দ আনন্দ— নয় বার এই বীজমন্ত্র বলি, শ্বাস টানি, ঢুকে যাই আনন্দময়ীর ভিতরে

নিরানন্দে থাকি মা, থাকতে দে…

৫.

শবারূঢ়া মা আমার
শ্মশানগৃহবাসিনী মা আমার
দুই শবশিশু কর্ণে ধারণকারী মা আমার

আমার ডেনিম ঘুচে যাক
আমার কোলগেট ঘুচে যাক

হে ভদ্রে,
এমন ক্রীড়া হোক
এমন লীলা হোক
এমন রক্তপদ্ম ফুটুক

শরীর থেকে মুছে যাক আমার, কলোনির দাগ…

Source: geraldine meeks. pinterest.

অত্রি ভট্টাচার্য

লেখায় ও পথেঘাটে সর্বক্ষণের রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে নিজের পরিচয় দিয়ে থাকেন লেখক। সময় পেলে প্রিয় বদ্রিয়ারের একটি ম্যাক্সিম আওড়ান: ‘What is a society without a heroic dimension?’ এবং জীবনের প্রতিপাদ্য হিসাবে এই প্রশ্নটিকেই লালন করেন। অভিনেতা হওয়ার তাগিদে অ্যাকাডেমিক জীবনের দুটি বছর খুইয়েছেন, আপাতত ‘কোয়ার্ক পাবলিশার্স’ নামক একটি আঁভগার্দ একটি প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত। এছাড়াও অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের বাংলা মুখপত্র ‘প্রতিরোধে আমার দেশ’-এর দায়িত্ব সামলান। প্রকাশিত বই দুটি: ট্রায়ালরুম (২০২০) ও ঘুম সম্পর্কিত একটি টেক্সট (২০২২)।

Share