আজ শুক্রবার, ৯ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

‘স্বাধীন বাংলা’- এক ব্যতিক্রমী সাময়িকপত্র

ফিরে দেখা

।। অরূপ দত্ত ।।

এই সাময়িক পত্র মূলত সাক্ষাৎকার, প্রবন্ধ ও চিঠিপত্র নির্ভর। গল্প ও কবিতা হাতে-গোনা দু-একটি কখনও স্থান পেয়েছে। এপার ওপার দুইবাংলার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাক্ষাৎকার, প্রবন্ধ ও চিঠিপত্র মূলত প্রকাশিত হয়েছে। যার মধ্যে ছিলেন অরুণ মিত্র, আহমদ শরীফ, আহমদ ছফা, সাহাবুদ্দিন, শামসুর রাহমান, অন্নদাশংকর রায়, অশোক মিত্র, শিবনারায়ণ রায়, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অমলেন্দু দে, প্রমুখ বহু কবি, ইতিহাসবিদ, চিন্তক।

‘স্বাধীন বাংলা’- এক ব্যতিক্রমী সাময়িকপত্র

দুই বাংলার মানুষের মধ্যে সংযোগসাধনের পত্রিকা হিসাবে ১৯৯৩ সালের ১৫ আগস্ট প্রথমবারের মতো কলকাতায় আত্মপ্রকাশ করে সাময়িকপত্র ‘স্বাধীন বাংলা’। ১৫ আগস্টে আত্মপ্রকাশের কারণ, ওই দিনেই ১৯৪৭ সালে রাষ্ট্রীয়ভাবে ভাগ হয়ে গিয়েছিল বেঙ্গল প্রভিন্স।

এই সাময়িকপত্রের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানটি ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ১৯৯৩ সালের ১৫ আগস্ট কলকারার রাসবিহারী মোড়ে এক পথ অনুষ্ঠানে, কালো পতাকা উড়িয়ে পত্রিকাটি প্রকাশ করা হয়। ভাবনাসূত্র জ্যোতির্ময় দত্তর। সঙ্গে ছিলেন কেশব মুখোপাধ্যায়, আজিজুল হক, সমীর রায় প্রমুখ। পত্রিকার আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেছিলেন সুমন চট্টোপাধ্যায়, আজকের কবীর সুমন।

প্রথম ৩টি সংখ্যা প্রকাশের পর জ্যোতির্ময় দত্ত কার্যনির্বাহী সম্পাদক কেশব মুখোপাধ্যায়ের হাতে সম্পাদনার ভার সম্পূর্ণরূপে সঁপে বিদেশে পাড়ি দেন। পরবর্তী সংখ্যাগুলো নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকে। ২০০০ সাল পর্যন্ত নিয়মিত প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই এই পত্রিকা অনিয়মিত হয়ে পড়ে। অর্থাভাব মূল সমস্যা ছাড়াও আরও অন্যান্য সমস্যা কারণ। এর মধ্যে রাজনৈতিক রক্তচক্ষুও রয়েছে। দুই বাংলার মধ্যে ভাষা, সাহিত্যের পাশাপাশি সামাজিক-রাজনৈতিক আলাপের আদানপ্রদান কেউ কেউ মেনে নিতে পারেনি। এই ‘কেউ কেউ’ অবশ্যই রাষ্ট্র সংশ্লিষ্ট। তবুও তার মাঝেও ‘স্বাধীন বাংলা’ সাময়িকপত্রের সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে মাঝে মধ্যেই। তবে অনেকটাই অনিয়মিতভাবে।

ত্রয়োদশ সংখ্যা প্রকাশিত হয় ২০০০ সালে। চতুর্দশ সংখ্যা ২০১০ সালে। পঞ্চদশ সংখ্যা ২০১৪ সালে। তারপর এই পত্রিকা আর প্রকাশিত হয় নি। সম্পাদক কেশব মুখার্জী এবছরের শেষে  ষষ্ঠদশ সংখ্যা প্রকাশের ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

এই সাময়িক পত্র মূলত সাক্ষাৎকার, প্রবন্ধ ও চিঠিপত্র নির্ভর। গল্প ও কবিতা হাতে-গোনা দু-একটি কখনও স্থান পেয়েছে। এপার ওপার দুইবাংলার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাক্ষাৎকার, প্রবন্ধ ও চিঠিপত্র মূলত প্রকাশিত হয়েছে। যার মধ্যে ছিলেন অরুণ মিত্র, আহমদ শরীফ, আহমদ ছফা, সাহাবুদ্দিন, শামসুর রাহমান, অন্নদাশংকর রায়, অশোক মিত্র, শিবনারায়ণ রায়, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অমলেন্দু দে, প্রমুখ বহু কবি, ইতিহাসবিদ, চিন্তক। ‘প্রতিপক্ষ’ ইতোমধ্যেই ‘স্বাধীন বাংলা’ সাময়িকপত্রে প্রকাশিত আহমদ ছফার সাক্ষাৎকারটি পুনর্মুদ্রণ করেছে। এজন্য ‘প্রতিপক্ষ; পত্রিকাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।

সমগ্র বাংলার গণমানুষের, বাঙলাভাষীদের, বাঙালির সমাজচিন্ত পুনর্নির্মানের ক্ষেত্রে এই সাময়িকপত্র বাতিঘর হয়ে থেকেছে। আজ যখন হিন্দুত্ববাদ, হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তানি জাতিবাদ ও তার কাউন্টারে মুসলিম জাতিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে বৃহৎ বঙ্গে, যখন পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুত্ববাদ ও হিন্দি সাম্রাজ্যবাদ কায়েম করার চেষ্টা চলছে পুরোদমে, তখন এই সাময়িকপত্রের নিঃসন্দেহে নতুন করে প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে। আমরা আশা করে আছি, ভবিষ্যৎ সংখ্যাগুলোও আমাদের এই পথে দিশা দেখাবে।

অরূপ দত্ত

সমাজ কর্মী। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির অধিকার সংগ্রামের একনিষ্ঠ কর্মী। নিবাস কলকাতা।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top