![](http://protipokkho.com/wp-content/uploads/2020/10/rsz_1simita_1.jpg)
।। সীমিতা মুখোপাধ্যায় ।।
লাটাইওয়ালা
কাটা-ঘুড়ির মতো অনেকদিন আটকে আছি
তোমাদের পাড়ার ল্যাম্পপোস্টে আর দেখছি―
তুচ্ছ যত জীবনের আস্ফালন।
নিচে বয়ে যাচ্ছে কল্লোলিনী রিকশা, সময়,
জন্মান্তরে ফিরে ফিরে আসা কুকুরের দল
অথবা রাত ন’টার শুনশান চুমু!
শুনছি— অফিসফেরতা তীব্র কলহ,
অ্যাম্বুলেন্সের গগনবিদারী চিৎকার,
কিম্বা ঝিঁঝিঁর ডাক, কখনও ঘরপোড়া হরিনাম,
ক্যারামের ঠুকঠাকের সঙ্গে বেকারত্বের উল্লাস,
মাতালের গোঙানি।
আমি যেন কার্ত্তিকের আকাশপ্রদীপ—
হাঁ করে চেয়ে আছি, ও গো লাটাইওয়ালা,
যদি ফিরে আসো…
মা-বাবা
মায়ের দুই হাতে রূপালী মাছ কিলবিল করে—
সেই মৎস্যগন্ধা হাত কপালে রাখলে
মধ্যরাতের শিউলির মতো
আমার অনিশ্চয়তাগুলি একে একে ঝরে যায়।
সারা গায়ে রোদ্দুর মেখে বাবা বাজার থেকে ফিরলে
আমি চুপ করে দেখি—
মাথার ওপর বিশাল আশ্রয়ের মতো
গজিয়ে উঠছে এক বটবৃক্ষ!
দুপুরের গরমভাত আর বিকেলের চায়ের মাঝখানে
তোমাদের গা-ঘেঁষে আরও দুদণ্ড বসব বলে
আমি গঙ্গার জলে বয়ে যেতে দিই সময়।
তারপর একসময় দুনিয়ার প্রত্যাখ্যান কাঁধ থেকে
ঝেড়ে ফেলে দিয়ে চোয়াল শক্ত করে উঠে দাঁড়াই—
কিছু একটা করতে হবে বাবা-মায়ের জন্য…
রিমলেস
ভোর হয়েছে, আকাশের গায়ে পাহাড় ফুটেছে।
ঝুলে আছ রিমলেস, বিপজ্জনক পাথরের মতো,
গড়িয়ে যেতে পার যে-কোনো মুহূর্তে।
আমি যেন ভাঁটায় জেগে ওঠা শহরের শরীর,
তিমির অসহ্য কোরাস শুনে ঘুম ভাঙে যার,
সমুদ্রের ঘুম পাড়ানি গানে যে ঘুমিয়ে পড়ে রোজ!
আমার আলোহীন বিছানায়
ডুব সাঁতার থেকে জেগে ওঠা মুণ্ডু, সেই রিমলেস—
সমস্ত বাইফোকাল নীরবতা এড়িয়ে
আরেকবার নেকড়ে হয়ে যাও।
অলঙ্করণ: বৈশালী
সীমিতা মুখোপাধ্যায়
![](http://protipokkho.com/wp-content/uploads/2020/10/1_25.jpg)
১৯৮২ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার গরলগাছা গ্রামে জন্ম। বেড়ে ওঠা উক্ত জেলার উত্তরপাড়ায়। প্রাণীবিদ্যায় স্নাতকোত্তর হয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পেশায়। আপতত দুটি কবিতার বই। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘যাপনচিত্র’ থেকে ২০১৫ সালের কোলকাতা বইমেলায় প্রকাশিত ‘দশভুজা সার্কাস’ ও দ্বিতীয় বই, ‘অস্ট্রিক’ থেকে ২০১৮ সালের কোলকাতা বইমেলায় প্রকাশিত ‘আমার অসময়গুলি’।
Besh bhalo lekha
“আমি যেন ভাঁটায় জেগে ওঠা শহরের শরীর,
তিমির অসহ্য কোরাস শুনে ঘুম ভাঙে যার…”
ঘুম ভেঙ্গে উঠে পড়াই ভালো। এমনই লেখা গুলো। মন কেমন করে দ্যায়। দারুণ ইমেজারি। পড়তে পড়তে এই লাইন গুলো মনে দাগ ফেলতে ফেলতে যায়।
“আমি যেন কার্ত্তিকের আকাশপ্রদীপ—
হাঁ করে চেয়ে আছি, ও গো লাটাইওয়ালা,
যদি ফিরে আসো…” এটা পড়তে পড়তে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলতে হল। এতে হয়তো কথাগুলোর আয়ু বেড়ে গেল।
কী এক জীবন আছে এই কথা গুলোয় যা আশ্রয় দ্যায়,
“মায়ের দুই হাতে রূপালী মাছ কিলবিল করে—
সেই মৎস্যগন্ধা হাত কপালে রাখলে
মধ্যরাতের শিউলির মতো
আমার অনিশ্চয়তাগুলি একে একে ঝরে যায়।”