আজ বৃহস্পতিবার, ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

যেন সে গৃহস্থের লোভী বিড়াল

গুচ্ছ কবিতা

।। সীমিতা মুখোপাধ্যায় ।।

যেন সে গৃহস্থের লোভী বিড়াল,
এক টুকরো মাছ চায়, একটু ভাত।
ঘরের ভিতর শতাব্দীর গুমোট অন্ধকার
তাকে ডাকে— আয়, আয়!
সে তার ডালপালা বাড়িয়ে উঠে আসে বিছানায়।

রাঙামাসির রূপকথা

রাঙামাসির পানের ডিবায় তুমুল কিছু রূপকথা।
সান্ধ্য-মজলিসে অবান্তর হাসি,
কষ বেয়ে গড়িয়ে পড়া লাভা— ঈষদুষ্ণ।
তার নির্লিপ্ত স্তনের আড়ালে ফালাফালা অপ্রাপ্তি
কথার ফুলঝুরি ছোটায়— বিষের মতো অব্যর্থ।
বয়সিনীর শুকনো জরায়ু থেকে মৃত গাছ
ডালপালা বাড়িয়ে কামড়ে ধরে দেয়াল
আর সেই ফাঁকে বাসন-কোসন ঝনঝনিয়ে
আঁষ-বিড়াল ঢুকে যায় ঠাকুরঘরে।

বিষাদমালা

তোমার কন্ঠস্বর
জমিয়ে রাখার কথা কখনো ভাবিনি,
ক্ষুধা-নিদ্রার মতো তারা আসতো নিয়ম করে,
রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেত অলৌকিক কিছু আলো।
তারপর ফুরিয়ে গেল বসন্ত বৌরির ভোর,
ভেঙে গেল বটবৃক্ষের ছাদনাতলা।
এখন শরতের অভিমানী মেঘ
ঠোঁট ফুলিয়েছে আকাশে, ফুল ঝরে গিয়ে
গুচ্ছ গুচ্ছ বিষাক্ত ফল ঝোলে জানালায়।

অপরাধের চিহ্ন স্বরূপ যা যা ফেলে গেছ—
আগলে রেখেছি দুঃস্বপ্নের ভিতর।
এত অপমানের পরে
উপঢৌকন চাই না আর কোনো,
কলকে ফুলের বিষাদমালা তোমায় দিলাম।

নেভানো শীতকাল

চলে যাওয়া শীতকাল
নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে লেপ-কম্বলে।

মধ্যরাতের নাছোড় জ্যাজ, ট্রাম্পেটের সুর,
অলৌকিক অ্যাকর্ডিয়ান।
চিন্তামালা চুপ-বিষাদে স্থির—
কবেকার ঝিনুকসৈকত, ঝাউবনের আদরবাহানা,
ছায়ামুকুট মাথায় পরিদের নাচ
অধরা থেকে গেল।

যে-ফুলের হাই তোলা, চোখ মেলা, ঘুম পাওয়া,
মুদে যাওয়া —সবই ছিল জানা,
আজ তার ঘ্রাণ এলোপথ ধরে দূরত্বে বিলীন।

কলকে ফুলের গাছ

থাকার মধ্যে ছিল একটা কলকে ফুলের গাছ,
দু-চারটে হলুদ রঙের খুশি—
ওরা কেটে দিল।

মাঝরাতে যখন কুকুরেরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদে
আর সাপের মতো বুকে হাঁটে কালো রাস্তা,
গাছটা আমার জানলা দিয়ে মুখ বাড়ায়—
যেন সে গৃহস্থের লোভী বিড়াল,
এক টুকরো মাছ চায়, একটু ভাত।
ঘরের ভিতর শতাব্দীর গুমোট অন্ধকার
তাকে ডাকে— আয়, আয়!
সে তার ডালপালা বাড়িয়ে উঠে আসে বিছানায়।

ডাইনি

ফুলবাহারে একা বন্ধা গাছ, পাতাটুকু সম্বল—
বাগানের এক কোণে অনাদর বেঁচে থাকা,
চোখে তার উড়ে যাওয়ার স্বপ্ন—
যেখানে কু-ঝিক-ঝিক ছোটে,
জানালায় পেনসিলে আঁকা পাহাড়।

ফলদায়ীনি উদ্ভিদেরা গর্ভবতী হয়—
যত্ন পায়, পরিচর্যা পায়।
পাখিরা সংসার পাতে বৃক্ষের শাখায়।

একাকিনী বিটপ সব দেখে,
অস্ফুট চোখের জলে বলতে থাকে—
আমি একটা আঁটকুড়ি ডাইনি;
মরুক, মরুক, তোদের সবার বাচ্চা মরুক!

সীমিতা মুখোপাধ্যায়

১৯৮২ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার গরলগাছা গ্রামে জন্ম। বেড়ে ওঠা উক্ত জেলার উত্তরপাড়ায়। প্রাণীবিদ্যায় স্নাতকোত্তর হয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পেশায়। আপতত দুটি কবিতার বই। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘যাপনচিত্র’ থেকে ২০১৫ সালের কোলকাতা বইমেলায় প্রকাশিত ‘দশভুজা সার্কাস’ ও দ্বিতীয় বই, ‘অস্ট্রিক’ থেকে ২০১৮ সালের কোলকাতা বইমেলায় প্রকাশিত ‘আমার অসময়গুলি’।

Share

1 thought on “যেন সে গৃহস্থের লোভী বিড়াল”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top