আজ বৃহস্পতিবার, ১লা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বর্ণ দিয়ে বর্ণবাদ মোছা: কিনডে ওয়াইলি

Author ফ্লোরা সরকার

Roots is not just a saga of my family. It is the symbolic saga of a people – Alex Haley.


It depends on your passion, to create an identity – Kehinde Willey.

শিল্পী এস. এম. সুলতানের তুলির আঁচড়ে যখন স্বাস্থ্যবান কিষান-কিষাণিকে দেখি, বিস্ময় জাগে, অবাস্তব মনে হয়, কিন্তু এক ধরণের ভালো লাগা কাজ করে। ভালো লাগে, কারণ সুলতান মূল বা শিকড়ে যেতে চান। যে শিকড় ছিঁড়ে আমরা চলে এসেছি। যে শিকড়ে বসবাস করতো এমন স্বাস্থ্যবান কিষান-কিষাণি। গোলা ভরা ধান আর পুকুর ভরা মাছের ভেতর যাদের একদিন ছিলো বসবাস। সেই কৃষকদের তিনি শুধু ফিরিয়ে আনতে চান না, সেই শিকড়ের সন্ধান এবং শিকড়ের শীর্ষে ওঠা যে সুখী মানুষেরা বসবাস করতেন সেই অবস্থান ধরে রাখতে চান। নিজেকে এবং নিজেদের চেনার এক আকুল বাসনা তার ভেতর কাজ করে। সাধারণ কৃষক অসাধারণ হয়ে ওঠে তার তুলির টানে।

মানুষের জন্যে শিল্পকর্ম। শিল্পকেই তাই এগিয়ে যেতে হয় মানুষের কাছে, মানুষ কখনো শিল্প এবং শিল্পীর কাছে আসেন না। নাট্যকার বাদল সরকার যখন প্রথম থিয়েটার “ যাত্রা ”, দ্বিতীয় থিয়েটার “ আধুনিক থিয়েটার ” পার করে তার “ থার্ড থিয়েটার ” নির্মাণ করেন, আমাদের বুঝে নিতে হয়, তিনিও একটা কিছুর অনুসন্ধান করতে চান। নিজেকে এবং নিজেদের অনুসন্ধান। যেহেতু যাত্রা শুধুই গ্রামভিত্তিক একটা নাট্যমঞ্চ, শহরে অচল এবং আধুনিক থিয়েটার, যা ব্রিটিশ কর্তৃক উৎসারিত, বাইরে থেকে চাপিয়ে দেয়া একটা শহুরে নাট্যমঞ্চ , কাজেই গ্রাম-শহর মিলিয়ে এমন এক থিয়েটার নির্মাণ প্রয়োজন, যেখানে শহর এবং গ্রাম দুই জায়গাতেই প্রদর্শন করা যায়। সেজন্যেই তৃতীয় থিয়েটার। সব থেকে বড় কথা, নিজেদের উদ্ভাবিত মঞ্চব্যবস্থা। থার্ড থিয়েটারকে অনেকে স্ট্রিট থিয়েটারও বলেন। রাস্তায় নেমে, খুব সাধারণ কিছু আসবাবপত্র নিয়ে, মানুষের কাছে সহজে নিজেদের নাটক উপস্থাপন করা। প্রদর্শন করলেই নাটক হয়ে যায় না। নাটকের কাজ জীবন, জীবনের গভীরে যেয়ে আরো বেশি কিছু দেখানো, বোঝানো , নিজেদের সঠিক ভাবে চিনে নিয়ে, সেই চেনা আয়নার উন্মোচন ঘটানো। যাতে সবাই সবাইকে চিনে নিতে পারে। এটা যেন এক নিরন্তর সংগ্রামের কাজ। এই কাজগুলো যারা যত নিপুণতার সঙ্গে করতে পারেন, করতে জানেন, তাদের কাছেই শুধু নাটক পৌঁছাতে পারে। বাকিরা হয় পিছিয়ে পড়ে নয়তো বিলুপ্ত হয়ে যায়। বাদল সরকার এই খুঁজে যাবার কাজটিই করে গেছেন নিরন্তর, যে কারণে তার নাটক বার বার দেখার, পড়ার এবং অনুসরন করার বিষয় হয়ে ওঠে। তবে প্রথমে যা বলেছিলাম, শিল্প মাধ্যমের যে কোনো শাখার, তা নাটক, সিনেমা, সাহিত্য, চিত্রকর্ম, ভাস্কর্য — যা-ই হোক না কেনো, এই কাজগুলো করার জন্যে মানুষের কাছেই যেতে হয় বারবার।

সাধারণ মানুষের কাছে শিল্প যত দ্রুত এবং সহজে পৌঁছাতে পারে, সেই শিল্পের প্রসারও তত দ্রুত এবং সহজতর হয়। ধীরে ধীরে সেই শিল্প সমাজ-সংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে ওঠে। আজকে যাকে ‘র্যা প মিউজিক’ বলা হয়, সেটা হিপ-হপ সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই গড়ে উঠেছিলো। ষাটের দশকে কিছু আফ্রিকান-আমেরিকান যুবক নিউ ইয়র্কের সাউথ ব্রঙ্কসে ভিন্ন মেজাজের নাচ, গান আর মিউজিকের সমন্বয়ে গড়ে তুলেছিলো এই সংস্কৃতি। তারা গতানুগতিক সঙ্গীতের ধারাকে ভেঙ্গে দিয়ে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে গড়ে তুলতে চেয়েছিলো তাদের এই সঙ্গীত চর্চ্চা। ’৭০ এবং ’৮০র দশকের বি-বোয়িং যা ব্রেক ডান্স নামে পরিচিত, তার প্রচলনও হিপ-হপ সাংস্কৃতিক ধারা থেকে এসেছে। নাচ আর গানের সঙ্গে যখন তারা শরীরের বিভিন্ন অংশ ভেঙ্গে দেন, তখন বুঝতে হয়, এটা শুধু শরীরের অঙ্গ ভেঙ্গে দেয়া না, সমাজের যত অনাচার, অবিচার, অত্যাচার আর অসমতা আছে, তার সবকিছু ভেঙ্গে চুড়ে সমান করে দেয়ার এক ইঙ্গিত বহন করে। তাদের এই সঙ্গীত চর্চ্চা “ স্ট্রিট ডান্স ” নামেও অভিহিত। রাস্তায় নেমে যখন তারা বাদ্যযন্ত্র, গান আর নাচের সঙ্গে সঙ্গীত পরিবেশন করতো, রাস্তার মানুষজনও তাদের সঙ্গে সামিল হতো। শিল্পচর্চ্চা এরকম উচ্চমার্গে পৌঁছালেই কেবল, সাধারণ মানুষও সেখানে যোগ দিয়ে, শিল্প এবং শিল্পীর সঙ্গে একাত্ম হয়ে যায়। শিল্পের সার্থকতা সেখানেই, যেখানে শিল্প, শিল্পী আর দর্শক একাকার হয়ে যায়।

আফ্রিকান-আমেরিকান চিত্রকর এবং ভাস্কর কিনডে ওয়াইলি, সেই হিপ-হপ সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এঁকেছেন তার শত শত চিত্রকর্ম। ইতিমধ্যে তার চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। ছবি আঁকার জন্যে ছুটে গেছেন সোমালিয়া, নাইজেরিয়া, ইথিওপিয়া থেকে ব্রাজিল, ভারত, শ্রীলংকা, ইজরাইল, চিনে। বাদল সরকারের থার্ড থিয়েটার অথবা হিপ-হপ আন্দোলনকারীদের মতো, নিউ ইয়র্কের রাস্তায় ঘুরে ঘুরে সাধারণ মানুষকে ধরে এনে মডেল করেছেন তার চিত্রকর্মের জন্যে। এঁকেছেন বিশাল বিশাল সব স্কেচ। মানুষ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে তার সেসব স্কেচের দিকে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে দেখেছে। দর্শক হতবাক হয়েছে তার আঁকা মডেলদের দেখে। সুলতানের কিষাণ-কিষাণির মডেলদের দেখে আমরা যেমন অবাক হয়েছিলাম, ঠিক সেরকম অবাক হয়েছে। কিনডে ওয়াইলির মডেলদের ঠিক হিপ-হপ স্টাইলের পোশাক পরানো হয়। নাটকীয় ভঙ্গিতে তার সব মডেলরা দাঁড়িয়ে থাকে কোনো এক অহং বোধ নিয়ে। একেবারে আক্ষরিক অর্থেই সেসব মডেল এক ধরণের অহংকার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এসব সাধারণ মডেল ছাড়াও, ওয়াইলি বেছে নেন সতেরো থেকে উনিশ শতকের আঁকা মডেলদের। তাদের তিনি নিয়ে আসেন একবিংশ শতকের দোরগোড়ায়। ইউরোপের ওল্ড মাস্টার্স পেইন্টিংসগুলির হুবহু অনুলিপি করেন। অনুলিপি, কিন্তু অসম্পূর্ণ । সেসব অনুলিপির সঙ্গে মিল থাকা সত্তেও, কি যেন একটা উধাও হয়ে যায় কিনডে ওয়াইলির আঁকা অনুলিপিতে। নেপলিয়ানকে তিনি আঁকেন, কিন্তু এ যেন এক অন্য নেপলিয়ান। এই নেপলিয়ানকে আমরা চিনিনা, কোনোদিন দেখিনি। যিশুখ্রিস্টও তার তুলির টানে বদলে যায়। একই যিশু, কিন্তু ভিন্ন আদলে গড়া। কি আছে তার তুলির আঁচড়ে, যা অতীতের সবকিছুকে শুধু ওলোট-পালট করে দেয়নি, অমূল বদলে দিয়েছে সবকিছুকে ? কিসের অহংকারে দাঁড়িয়ে থাকে তার তুলির মডেলরা ?

jackson

এখানেই কিনডে ওয়াইলির বিশেষত্ব। অতীতের সব সাদা বর্ণ মুছে দিয়ে, তিনি নিয়ে এসেছেন কালো আর খয়েরি বর্ণের মানুষদের। তার তুলিতে দিগ্বিজয়ী শ্বেতাঙ্গ নেপলিয়ান ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে, হাতে ঝান্ডা উড়িয়ে আসেন, কিন্তু এই নেপলিয়ান শ্বেতাঙ্গ নয়, অশ্বেতাঙ্গ, কালো কুচকুচে। শ্বেতাঙ্গ যিশুখিস্টকে দেখি কালো বর্ণের আকারে, মধ্যযুগের শ্বেতাঙ্গ সম্রাজ্ঞীরাও কালো অথবা খয়েরি। রাস্তায় সাধারণ একজন কালো বর্ণের আফ্রিকান-আমেরিকান তার হাতে হয়েছে, আকর্ষণীয়, আভিজাত্যপূর্ণ। বর্ণের বদল ঘটিয়ে, উপস্থিত হন কালো অথবা খয়েরি আভিজাত্য আর আকর্ষণীয় যুবক- যুবতীর আদলে। কোনো ব্রাজিলিয়ান অথবা সোমালিয়ান কালো তার ছবিতে দাঁড়িয়ে থাকে কোনো সম্রাটের আভিজাত্য ভঙ্গীতে। এ যেন বর্ণ দিয়ে বর্ণের বিপ্লব ঘটানো। তার প্রায় কোনো ছবিতেই ( কিছু চিন দেশের মডেল ছাড়া ) শ্বেতাঙ্গদের পাওয়া যায়না। শ্বেতাঙ্গরা যেন হঠাৎ উধাও হয়ে গেছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ইতিহাস, সমাজ আর সংস্কৃতি থেকে। আমেরিকা, ইথিওপিয়া, ব্রাজিল বা শ্রীলংকা যেখানেই গেছেন, বেছে বেছে কালো মডেল ধরে এনে তাদের এঁকেছেন। শুধু বর্ণ কালো করেই তিনি ক্ষান্ত হননি, সেই কালোদের আশেপাশে এঁকেছেন, জাঁকজমকপূর্ণ পশ্চাদপট। তার ছবির কালোরা, কালো বর্ণের ছটায় যেন আরো উজ্জল থেকে উজ্জলতর হয়েছে। এ যেন, সাদা বর্ণকেও হার মানিয়ে দেয়। কালো রং কত সুন্দর, চাকচিক্যময়, উজ্জল আর ভাবগম্ভীর হতে পারে, তা যেন ওয়াইলি স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেন। মানুষ তাই হতবাক হয়ে শুধু তার ছবির দিকে তাকিয়ে থাকেনা, সেই উজ্জল কালো রংএর ছটা তাদের চোখও ঝলসে দেয়। প্রশ্ন হলো, কেনো তার এই বর্ণবাদ বিরোধী প্রচেষ্টা ?

অ্যালেক্স হ্যালি অথবা এস.এম.সুলতানের মতো কিনডে ওয়াইলিও নিজেকে খোঁজার চেষ্টা করেছেন। ঘন্টার পর ঘন্ট রং নিয়ে ভেবেছেন। বর্ণের রাজনীতিটা ধরার চেষ্টা করেছেন। টেলিভিশানে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি নিজেই বলেছেন, “ সবকিছুর সঙ্গে রাজনীতি জড়িত।” কথাটা একেবারে যথার্থ অর্থে সঠিক বলেছেন ওয়াইলি। শিল্পকর্ম যত বড় হয় তার রাজনীতির আকারও তত বড় হয়। সেজন্যেই আমরা অতীতের ওল্ড মাস্টার্স পেইন্টিংস এ দেখতে পাই সেখানে কালো অথবা খয়েরি রং এর কোনো মানুষ নেই। তাদের সেসব চিত্রকর্ম দেখলে মনে হয়, পৃথিবীর ইতিহাসে কোনোদিন কোনো কালো বর্ণের মানুষের অস্তিত্বই ছিলোনা। যা ছিলো সব শ্বেতাঙ্গ। যদি কদাচিৎ কোনো কালো বর্ণের মানুষকে পাওয়া যায়, দেখা গেছে তারা কোনো প্রান্তিক অথবা সুবিধা বঞ্চিত শ্রেণী থেকে উঠে এসেছে।

এডওয়ার্ড মোনের বিখ্যাত চিত্র “ অলিম্পিয়া (১৮৬৩)” য়, অর্ধশায়িত শ্বেতাঙ্গ নগ্ন নারীর পাশে কালো কুচকুচে যে নারীকে হাতে ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়, আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয়না, অশ্বেতাঙ্গিনীটি সেই শ্বেতাঙ্গিনীরই কোনো কাজের লোক। মজার বিষয় হলো, সেই সময়ে মোনের সেই চিত্রকর্ম, নারীকে নগ্ন ভাবে দেখাবার জন্যে যত না আলোচিত-সমালোচিত হয়েছিলো, কালো নারী সম্পর্কে কিন্তু কেউ কোনো শব্দ উচ্চারণ করেনি। “ শো অফ ফোর্স ” টিভি অনুষ্ঠানে ওয়াইলি বলেন, “ প্রতিটা মুখ আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তার থেকে আরো গুরুত্বপূর্ণ আমেরিকায়, কালো আমেরিকানদের কোন্ দৃষ্টিভঙ্গী থেকে দেখা হয়।” নাইজেরিয়ান বাবা এবং আফ্রিকান-আমেরিকান মায়ের সন্তান হওয়ায় তাই তার আগ্রহ বেড়েছে, দৃষ্টি পড়েছে আফ্রিকান-আমেরিকান এবং বিশেষত আফ্রিকানদের উপর। তবে সেখানেও ওয়াইলি থেমে থাকেননি। তার “ ওয়ার্ল্ড স্টেজ সিরিজ ” এর জন্যে, ছুটে গেছেন পৃথিবীর সব কালো মানুষদের দেশে। বাছাই করেছেন কালে অথবা খয়েরি রং এর মানুষকে। এমনকি কালো নারীদের সাজিয়েছেন আরো লাস্যময়ী করে। তার তুলির কালো বর্ণ শক্তিশালী বর্ণে রূপান্তর ঘটায়। কিন্তু তা কি শুধুই বর্ণের শক্তিশালী রূপ ? অবশ্যই না। পৃথিবীর কালো মানুষেরাও যে তাদের মেধা, বুদ্ধিবল, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক দিক থেকে কতটা শক্তিশালী হতে পরে, সেখানে ওয়াইলি পৌঁছাতে চেয়েছেন। ২০১৩ সালে নিউ ইওয়র্ক টাইমসে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ওয়াইলি বলেন, “ আমার চিত্রকর্ম শুধু কিছু এঁকে যাওয়া না। তার থেকে বেশি কিছু আমি বোঝাতে চাই — নিজের চিন্তার ক্রমবিকাশে আমার বিশ্বাস, আমার চিত্রকর্মগুলোর ক্রমবিকাশে আমার কোনো বিশ্বাস নেই।” চিন্তার ক্রমবিকাশের কারণে তার ক্যানভাস শুধু বাইরের দিক থেকে বড় আকার ধারণ করেনি, অর্থের গভীরতায়, রাজনৈতিক-ঐতিহাসিক চিন্তার পরিসরকে বাড়িয়েছে শতগুন। মূল বা শিকড়ে যাবার একটা প্রশস্ত পথ যেন নির্মাণ করে দিয়েছেন তিনি। সাদা-কালোর ভেদরেখা তুলে দিয়ে বুঝিয়ে দেন, পৃথিবীর সব রং সমান গুরুত্বপূর্ণ।

সম্প্রতি একটা কথা বেশ জনপ্রিয় হয়েছে, সেটা হলো ‘Images may be culturally determined, but they also determine culture’। বাংলা অনুবাদ করলে যা দাঁড়ায়, তা হলো, ভাবমূর্তি হয়তো সংস্কৃতি দ্বারা নির্ধারিত হয়, কিন্তু তারাও সংস্কৃতি নির্ণয় করে। অর্থাৎ ছবি অনেক কথা বলে। অনেককিছুর অর্থকে একসঙ্গে দাঁড় করিয়ে দিতে পারে। কোনো একটা ছবি, তা ফটোগ্রাফি হোক অথবা চিত্রকর্মই হোক, তার পেছনে থাকে দীর্ঘদিনের ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক প্রতিফলন। একটা ফটোগ্রাফি অথবা চিত্রকর্ম সুন্দর অথবা অসুন্দর, নান্দনিক অথবা নান্দনিকতা বর্জিত — যেভাবেই তাকে উপস্থাপন করা হোক না কেনো, সবকিছুর ওপর ছবি একটা ছাপ রেখে যায়। কিনডে ওয়াইলির চিত্রকর্মগুলি যদি আমরা ভালো ভাবে লক্ষ করি, দেখবো, তারা কালো মানুষ হয়েও, আফ্রিকান-আমেরিকান। নিজেদের শিকড় সঙ্গে নিয়েই আমেরিকার জনপদে তারা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এভাবেই ওয়াইলি নিজেকে খুঁড়ে খুঁড়ে দেখেছেন। নির্ভয়ে এঁকেছেন তার শিকড়ের মানুষদের। মুছে দিয়েছেন সাদা-কালোর দূরত্ব। দিগ্বিবিজয়ী নেপোলিয়ানের মতো, কালো নেপলিয়ানের বিজয় পতাকা উড়িয়েছেন। এ যেন এক নৃতাত্ত্বিক রাজনৈতিক খেলা। যে খেলায় এতকাল শ্বেতাঙ্গরাই জিতে এসেছে। ঠাঁই দেয়া হয়নি, অশ্বেতাঙ্গদের। কিনডে ওয়াইলি তাই শুধু তার নিজের শিকড়ের কালোদের নয়, পৃথিবীর সব কালোদের জাগিয়ে তুলতে চান। দেখিয়ে দিতে চান, অশ্বেতাঙ্গরাও কতটা শক্তিশালী হতে পারে। আমরা যদি আরেকটু তলিয়ে দেখি, তাহলে বুঝতে পারবো, ওয়াইলি শুধু বর্ণের ভেদরেখা মুছে দিতে চানা না, ক্ষমতা এবং ক্ষমতাহীনের ভেদরেখাও মুছে দিতে চান। তার চিন্তার ক্রমবিকাশের পাঠ এখনও চলছে। আমরাও সেই পাঠে অংশ নিতে পারি।

৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top