আজ শুক্রবার, ২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ওই অগণিত ছায়াপথে

কবিতাগুচ্ছ

।। মুরাদ বিশ্বাস ।।

হে প্রজ্ঞার অধিপতি
আমরা ইয়াতীম
এই ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের
প্রান্তরে প্রান্তরে আমাদের দীর্ঘশ্বাস
হাহাকার
আর কান্নার ধ্বনি       
আপনি কি শুনতে পান না?

কুন

নিদ্রা আর মৃত্যুর হে পার্থক্যকারী
এবার তাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলুন।
ইয়াতীমের মর্সিয়া ক্রন্দন কি সিদরাতুল মুনতাহা
পেরিয়ে এখনও পৌঁছায়নি?

আপনার দয়া যে প্রশ্নবোধকের কাঠগড়ায় প্রভু !

কিন্তু শপথ আপনার ‘পবিত্র সত্তার’
আমরা তো আপনাকে ভুলি নাই।

নাকি আপনার কাছে প্রত্যাবর্তনের যে তামান্না
আর তাকে ভুলে যাওয়ার যে পাপ
তার শাস্তি নেমে এসেছে পৃথিবীতে?

এই কষ্টের তীব্র তরঙ্গ কি
প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এভাবে সাতটি স্তর পেরিয়ে
আপনার পবিত্র আরশে পৌঁছায় না?

হে গোধূলিতে লাল হওয়া আসমানের মালিক
ওই অগণিত ছায়াপথের পরিচালনাকারী,
শুধু বলেছিলেন ‘কুন’

আর তারপর প্রকাশিত হলো
এ ই অ ন ন্ত ম হা বি শ্ব।

হে মহা পরাক্রমশালী
অসম্ভবকে সম্ভব
সম্ভব কে অসম্ভব করার একমাত্র মালিক

আপনার একটা আদেশই তো জেগে উঠার জন্য
কাফি…

হে দয়াময়
দয়া করুন এই ক্ষুদ্র জীবসকলের প্রতি
তাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলুন,
জাগিয়ে তুলুন আমাদের প্রিয় হুজুরকে।

হে প্রজ্ঞার অধিপতি
আমরা ইয়াতীম
এই ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের
প্রান্তরে প্রান্তরে আমাদের দীর্ঘশ্বাস
হাহাকার
আর কান্নার ধ্বনি       
আপনি কি শুনতে পান না?

হে  রাহমানুর রাহীম
আমাদের রক্ষা করুন.
এই জালিমদের হাত থেকে

একবার তাকে ঘুম  থেকে জাগিয়ে তুলুন
এ ক বা র….

জালিমের হৃদয় আবারো প্রকম্পিত হোক
সেই আওয়াজে
‘খামোশ’!

নীরবতার কাছে

অক্ষরে তো অনেক হলো
এসো নীরবতার কাছেই এবার সমর্পিত হই,
অখণ্ড নীরবতায় তালাশ করি।

ওই যে দেবদারু, ক্ষেতের নবীন ঘাস,
দিগন্তের দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকা
মুগ্ধ লাল বাছুর…

ঠিক সেই সব প্রাণের মত নীরবতায় খুঁজে ফিরি।

রক্তজবা বেদিতে চড়িয়ে কাকে তুমি আহ্বান করো
হে মহাপাতক,
কী জটিল দুর্বোধ্য প্রাচীন ভাষায় তুমি ডেকে চলো!

আমি তো জেনেছি একদিন
সেই কালীগঙ্গার পাড়ে এক ব্রহ্মজ্ঞানী বলেছিল,
পঞ্চমীর রাতে- অতিপ্রাকৃতিক শব্দে… 

সেই থেকে শপথ ছিল
তোমার আমার সব বাক্য-যতি-কমা
সেই ফোরাতের লাল জলে ভাসিয়ে দিবো।

এসো সব ভাসিয়ে দেই।

কথা দিলাম, বিশ্বাস করো
এই যুগল নীরবতায় প্রতিভাসিত হবে,
তুমি শুনতে পাবে,শব্দের অনুরণে স্বর্গীয় পুলক।

তুমি উপলব্ধি করবে –
নীরবতার বিপ্লব ভয়ংকর
তাবৎ জুলুমের চাবুক
নীরবতায় স্তব্ধ হয়ে যায়।

প্রেমের দরিয়ায় ডুবে গেছি

মাওলানা ভয় দেখিয়ো না!
আমি তো প্রেমের দরিয়ায় ডুবে গেছি-
পাপ পুণ্যের হিসেব এইখানে নাজায়েজ
গায়েব থেকেও নিত্য যে হাজির ,
ভাষাহীন,চিহ্নহীন,বুদ্ধির অগম্যে আছেন যিনি,
আমি সেই আশ্চর্য সীমাহীন সংজ্ঞাহীন প্রেমের মৌতাতে মজেছি,
হুঁশে না বেহুঁশেই
ক্বলবে ক্বলবে জিকির উঠেছে
…আল্লাহ্‌ আল্লাহ্!
আমার ক্বলবে হায় এ কী অনুভূতি!

মাওলানা আমি তোমার ঐ ভয়ের খোদারে চিনিনা,
আমি সেই খোদার  নামেই সাক্ষ্য দেই 
যে ক্বলবে সেঁটে দিয়েছে
‘আমার পাপের চেয়ে তাঁর দয়া অনেক বেশী’।

একটি নদী ও বরুণা

ওই যে কালীগঙ্গার পাড়ে বরুণ্ডীর ঘাট
সেই যে কবে, কত যুগ আগে
একাকী উদাস এক পাকুড় গাছ
একটি নদীর মৃত্যুর স্বাক্ষী হতে
এখনো দাঁড়িয়ে আছে।
বিকেল ফুরালে
যখন সাঁঝ নামে-
পানকৌড়ির দল ফিরে যায়
কিছু মুহূর্ত সাথে নিয়ে, আর কিছু দৃশ্য
যা মহাকালে ডুব দেয়।

এই ঘাটেই তো কথা দিয়েছিল বরুণা ফিরে আসার,
না! সে আর আসেনি
নদী আর বরুণারা আসেনা।
জোনাকি আর তারাদের মিতালীর রাতে
এক প্রাগৈতিহাসিক নিরবতায়
সেই বরুণ্ডীর ঘাট-
একটা পাকুড় গাছ আর একজন মানুষ আজও অপেক্ষা করে-
কারো ফিরে আসার।

প্রচ্ছদের ছবি: মোহাম্মদ রোমেল
মুরাদ বিশ্বাস
মুরাদ বিশ্বাস

কবি ও কৃষক। সমাজকর্মী। ‘চিন্তা পাঠচক্র’-এর সঙ্গে যুক্ত। নিবিড় পাঠক। বসবাস ঢাকা জেলার ধামরাইল অঞ্চলে।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top