এ যুগের চাঁদ হলো কাস্তে

‘দিল্লির কৃষক আন্দোলনের প্রতি সংহতি’- আমাদের কথা

।। সম্পাদকীয় প্রতিবেদন ।।

আজ ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস। প্রজাতন্ত্রের বুলি আউড়ে যখন ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের জল-জমি-জঙ্গল, মাঠঘাট-ক্ষেত-খামার বহুজাতিক কর্পোরেটদের হাতে তুলে দিতে বদ্ধপরিকর ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার, যখন ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোকে সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংস করে একমাত্রিক হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তানি ব্যবস্থা কায়েম করতে বদ্ধপরিকর আরএসএস-বিজেপি, ঠিক তখন কৃষকেরা সরাসরি ভারতের রাজধানী দিল্লির রাজপথে বিদ্রোহে শামিল হয়েছে সাচ্চা প্রজাতন্ত্র কায়েম করার স্বপ্ন নিয়ে । আমরা তাদের সংগ্রামী অভিনন্দন জানাচ্ছি।

লম্বা সময় ধরে কৃষকেরা দিল্লির সিঙ্ঘু সীমান্তে অবস্থান করছিল, আজ সেই বিদ্রোহ চরম আকারে পৌঁছায়। ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে তারা দিল্লির রাজপথে ট্রাক্টর মিছিল বের করেছে। এমনকি লালকেল্লার মাথায় কৃষকেরা ভারতের রাষ্ট্রীয় পতাকার পাশাপাশি উড়িয়েছে স্বাধিকারের ঝাণ্ডা। ভারতের এই কৃষক বিদ্রোহ আজ গোটা উপমহাদেশের কাছে প্রেরণা। তাই বড় বাংলার সাহিত্য পত্রিকা ‘প্রতিপক্ষ’ এই বিদ্রোহের প্রতি সংহতি জ্ঞাপন করছে। ভারত-সহ গোটা উপমহাদেশের কৃষিজীবী মানুষের প্রতি সংহতি জ্ঞাপন করছে ‘প্রতিপক্ষ’।

ফসলের সুষমবন্টনের স্বপ্ন সাকার করার এই দিনে আমরা উচ্চারণ করছি দীনেশ দাসের সেই অমোঘ বাক্যগুলি,

বেয়নেট হোক যত ধারালো
কাস্তেটা শান দিও বন্ধু
শেল আর বোম হোক ভারালো
কাস্তেটা শান দিও বন্ধু

‘প্রতিপক্ষ’ বড় বাংলার সাহিত্য পত্রিকা। কিন্তু সাহিত্য কোনোভাবেই সমাজবাস্তবতা ও রাজনীতি বিযুক্ত নয়। আমরা দেখতে পাচ্ছি, ভারতের আরএসএস-বিজেপির সরকার গোটা উপমহাদেশের অর্থনৈতিক, ভাষিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকেও খারিজ করতে তৎপর। কৃষিসমাজ ও কৃষকের জমির দিকে তাদের নজর সে কারণেই। মূলত সাম্রাজ্যবাদী লগ্নিপুঁজির তল্পিবাহক হিসাবে গোটা উপমহাদেশকে কর্পোরেট লগ্নিপুঁজির একমাত্রিক বাজার হিসাবে বিনির্মাণ করতে তাদের এই প্রয়াস। এই কারণে বড় বাংলার ভাষা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, এখানকার ভাববৈচিত্র্য ও তা থেকে গড়ে ওঠা ঐতিহ্যবাহী সাহিত্যধারাগুলিও আজ থ্রেটের মুখে। ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতোই বাজারবাদ, হিন্দুত্ববাদ, হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তানি জাতিবাদ বড় বাংলার প্রাণ-প্রকৃতির ভারসাম্য এবং এখানকার ভাবজগতকে ধ্বংস করতে বদ্ধ পরিকর। নিজেদের সুবিধার্থে তারা গণঐক্য ভাঙার জন্যে নানাপ্রকার জাতিবাদকে উস্কানি দিয়ে যাচ্ছে। হিন্দুত্ববাদের উস্কানিতে উত্থান হচ্ছে মুসলিম জাতিবাদের। এই পরিস্থিতে বড় বাংলার সাহিত্য পত্রিকা প্রতিপক্ষ বৃহৎ বঙ্গের মানুষের মধ্যে সাহিত্যের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক ঐক্য দৃঢ় করতে অঙ্গিকারবদ্ধ। আর সে কারণেই উপমহাদেশের যেকোনো প্রকার কর্পোরেট লুন্ঠন এবং রাষ্ট্রবাদী ও জাতিবাদী ফ্যাসিস্ট কর্মকাণ্ডের বিপরীতে সাহিত্য-শিল্পের জায়গা থেকে শক্ত অবস্থান নেওয়াকে আমরা আমাদের কর্তব্য বলে মনে করি। আর তাই, আজ যখন দিল্লিতে কর্পোরেটপন্থী ভারতীয় কৃষি আইনের বিরুদ্ধে কৃষকেরা বিদ্রোহে শামিল হয়েছে, আমরা সেই আন্দোলনকে পূর্ণ সংহতি জানাচ্ছি। এই সংহতিজ্ঞাপনের পিছনে আরও একটি কারণ হলো, আমরা যারা বড় বাংলার সাহিত্যের কথা বলি, আমাদের সাহিত্য ভাবনার পিছনে সম সময় এই সমাজের কৃষিকেন্দ্রিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিষয়টি কাজ করে। এছাড়া প্রাণ ও প্রকৃতির ভারসাম্যের পাশাপাশি পরমসত্তা-প্রকৃতিসত্তা, জীব ও মানবসত্তার মধ্যে যে দার্শনিক সম্বন্ধ আমাদের বড় বাংলার ভাবজগতে, দার্শনিক আলাপে বারবার প্রতিফলিত হয়েছে, আমাদের সাহিত্য ভাবনাতেও তা স্বাভাবিকভাবেই মূর্ত হয়।

পাঠক, আপনি অবগত যে দিল্লির চলমান কৃষক আন্দোলনের বিষয়ে অভিজ্ঞতামূলক ও পর্যালোচনামূলক কয়েকটি লেখা ইতোমধ্যেই আমাদের পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এরপর আজ ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে কৃষক আন্দোলন পূর্ণমাত্রা নিয়েছে বলে আমাদের পত্রিকার সম্পাদকীয় দফতর থেকে এই আন্দোলনে আমরা সংহতিবার্তা আবারও জানিয়ে রাখলাম। এই আন্দোলনে আজ একজন কৃষক পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছেন। এর আগেও অনেক কৃষক ঠাণ্ডায় দিল্লির রাস্তায় বসে থাকতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন। আমরা তাঁদের স্মরণ করছি। আমরা জানি, শহীদের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না। সংগ্রামী কৃষকদের আবারও রক্তিম শুভেচ্ছা।

বাঁকানো চাঁদের সাদা ফালিটি
তুমি বুঝি খুব ভালো বাসতে?
চাঁদের শতক আজ নহে তো
এ যুগের চাঁদ হলো কাস্তে

উপমহাদেশের যেকোনো প্রকার কর্পোরেট লুন্ঠন এবং রাষ্ট্রবাদী ও জাতিবাদী ফ্যাসিস্ট কর্মকাণ্ডের বিপরীতে সাহিত্য-শিল্পের জায়গা থেকে শক্ত অবস্থান নেওয়াকে আমরা আমাদের কর্তব্য বলে মনে করি। আর তাই, আজ যখন দিল্লিতে কর্পোরেটপন্থী ভারতীয় কৃষি আইনের বিরুদ্ধে কৃষকেরা বিদ্রোহে শামিল হয়েছে, আমরা সেই আন্দোলনকে পূর্ণ সংহতি জানাচ্ছি। এই সংহতিজ্ঞাপনের পিছনে আরও একটি কারণ হলো, আমরা যারা বড় বাংলার সাহিত্যের কথা বলি, আমাদের সাহিত্য ভাবনার পিছনে সম সময় এই সমাজের কৃষিকেন্দ্রিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিষয়টি কাজ করে। এছাড়া প্রাণ ও প্রকৃতির ভারসাম্যের পাশাপাশি পরমসত্তা-প্রকৃতিসত্তা, জীব ও মানবসত্তার মধ্যে যে দার্শনিক সম্বন্ধ আমাদের বড় বাংলার ভাবজগতে, দার্শনিক আলাপে বারবার প্রতিফলিত হয়েছে, আমাদের সাহিত্য ভাবনাতেও তা স্বাভাবিকভাবেই মূর্ত হয়।

Share