।। ইসরাত জাহান গয়না ।।
তোমাকে শুনাইনি কেনো ধর্মীয় পণ্ডিতরা ভুলে গেছে মারিফাতের চূড়ান্ত ফয়সালা! আমাদের ছোট ছেলেগুলো বড় হয়ে সেইসব ছেলেদেরও বাইরে চলে গেছে— যারা মিছিলে মিছিলে নিজেদের শবদেহে মর্গ সাজিয়ে তুলেছিল প্রিয় আম্মার শাসনামলে— তারা এখন পথে-প্রান্তরে বটগাছ হয়ে শিকড় গজিয়ে বসেছে যেন যেকোনো দিন তারা দখল করে নিবে এই ভূখণ্ড। সরকারি হিসেবে আমাদের চারটি মাথার যোগফল এখন এক। যেখানে গলার স্বর ডুবে যেতে থাকে, সেখানে ইউনিফর্ম তৈরি করতে হয় জনতার ঝকঝকে সাদা কাফনে।
তারা দখল করে নিবে এই ভূখণ্ড
১
কবরের দিকে বাড়ি পিছলে যাচ্ছে, অন্তরীক্ষে পুঁতে দিচ্ছি বনফুলের নিমগাছ। করাতের ধার দিয়ে বেঁধেছি স্থানীয় গাছেদের আয়ুকাল। এই আজিমপুরে তোমার ব্যস্ততা ফুটতেছে আমার টবে খণ্ডকালীন ফুল হয়ে— সব ঋতুতে। দড়ি দিয়ে মানুষকে বেঁধে রাখার চেয়ে ধারালো অস্ত্র উত্তম, হৃদয় কাঁটাতারের সীমান্ত হারিয়ে ফেলার পর অতিক্রম করার আর কী-ই বা থাকে! চড়ুই পাখির মতো সুন্দর সকালে ট্র্যাকের উপর ক্রস করে ফেলে দেয়া প্রতিটি রক্তবিন্দু উড়ে যায় ক্লাস সিক্সের বইয়ে— একটি গাছের প্রস্বেদন ঘটাবে বলে। এবং মুখহীন মানবদেহগুলো জীবন নামে তাদের হাসির উপরে কাটাকাটি খেলে যায়। তোমাকে শুনাইনি কেনো ধর্মীয় পণ্ডিতরা ভুলে গেছে মারিফাতের চূড়ান্ত ফয়সালা! আমাদের ছোট ছেলেগুলো বড় হয়ে সেইসব ছেলেদেরও বাইরে চলে গেছে— যারা মিছিলে মিছিলে নিজেদের শবদেহে মর্গ সাজিয়ে তুলেছিল প্রিয় আম্মার শাসনামলে— তারা এখন পথে-প্রান্তরে বটগাছ হয়ে শিকড় গজিয়ে বসেছে যেন যেকোনো দিন তারা দখল করে নিবে এই ভূখণ্ড। সরকারি হিসেবে আমাদের চারটি মাথার যোগফল এখন এক। যেখানে গলার স্বর ডুবে যেতে থাকে, সেখানে ইউনিফর্ম তৈরি করতে হয় জনতার ঝকঝকে সাদা কাফনে। আমাদের উপযুক্ত সময়ে শীঘ্রই অনাথের দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ব্যবসায় নামতে হবে। এই ভেবে ভেবে যখন আমরা শুনবো দেশে বেকারত্বের হার শূন্যের কোঠায়; তখন আমরা ভাবব, আমরা এখন জমিদার। বস্তুত কোনো অনাথের নাম জনগণ হয় না, হলেও বা এমন ঘোরতর মোমেন্টে সেও কি ভাবে পেটের দাম কবে কমবে? মানবাধিকারের নাটকীয় প্লটে আমাদের ছুঁড়ে ফেলা হচ্ছে ইঁট-সুড়কির মতো। আমাদের কবরগুলো কোথায় সাজায়? তোমাকে তাও বলিনি— অবশেষে কেউ না কেউ একজন আছে যে তলােয়ার এবং বন্দুকের প্রতি কড়া পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। ঘাড় হলো চুম্বনের আবাস, তার উপর ছোরার বসতি কেন স্থাপন করা হয়? আবার এর মাঝেও আরেকটি মহল সবসময় আমাদের নাম এবং ঠিকানা মনে রাখে এবং প্রতিটি উত্তাল ইস্যুর পরেও মনে রাখবে। বেঁচে থেকেও হঠাৎ মৃত্যু আমাদের দরজা ঠেলে যাচ্ছে, আমাদের প্রতিবেশীদের কারাে কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে! অথচ এত বাড়ির আঙিনায় অস্ফুট ক্রন্দনের বিষাদে সব বাড়িকেই নিজের আবাস মনে হতে থাকায় আমরা নিজেদের ঠিকানা ভুলে যেতে থাকি। অথচ রাজদণ্ডের খেয়ালি মৃত্যু আমাদের বাড়িতে পৌঁছে যায়। রোজ রোজ।
২.
আম্মার দুঃখ
বহুবছর পরও আম্মার কিছু দুঃখ পানের থালায় শুকনো চুন হয়ে লেঁপে থাকলে, ভাবি একটা ভালো ধারণার মতো মনোবল নিয়ে মন্থন করি আম্মার ছায়াশীতল দু’টি হাত। আম্মার দুঃখে সান্ত্বনা রেখে জলে ডুবা প্রান্তরে ভাসা ভাসা আইল হয়ে আম্মার দিকে হাঁটতে গেলে, মনে মনে হাঁটার চেয়ে হাঁটতে চাওয়ার লোভটাকেই বেশি সংবরণ করি।
৩.
নাকফুলের পাশের নদী
মাগরিবের ওয়াক্তে বহুল ব্যবহৃত ‘সাংসারিক কোলাহলে’ বরইফুলের মতোন একটা ফুল তোলা নাকফুলের পাশে মুচড়ে যায় বহু নদী। মা’দের কাঁদতে দেখলে দূরে থেকেও বেদনায় গেঁথে যায় তার সন্তান, আমাদের ছোট গাঁয়ের ছোট ঘর ছেড়ে জান্নাতের বোরাক মাকে যেন চোখে চোখে রাখে।
৪.
সকালে
গাছের পালকে, ক্রাউডেড পাতার হামাগুড়ি জপে আমার ভালোলাগাগুলি প্রেফার করে তোমাকে। ঘোরতর কোন্দলে, চেনা সুরে শিশুতোষ ছড়াগুলি নুয়ে পড়ে আম্মার শীতলপাটির না মিলতে চাওয়া লতাটিতে।
৫.
গজব
আম্মা গজব দিয়ে যাচ্ছেন বিতৃষ্ণায়, তার অন্তঃকরণের বিষাদ ঝড়ের ফেনায় ছড়িয়ে পড়ছে। শুধুই আমার চামড়ায় সীমাবদ্ধ থাকছে না কিছু, আম্মা স্বয়ং ভাঁপা ভাঁপা অশ্রুপাতে উড়ে পুড়িয়ে দিচ্ছেন চারপাশ। আর তৃষার্ত হয়ে আমি মরে যাচ্ছি জীবন্ত। ভাবছি মৃত্যুর সময়ে ফেরেশতা আজরাইল আমার মা’র কথা রাখবেন কিনা! এক যবুক এসেছিল এমন দুঃখ বলতে গতবছর, তাকে খুঁজে পাওয়া জরুরি এই মুহূর্তে কেননা আমাদের দুজনের অন্তরে অভিশাপ চাপিয়ে নরকে নাটকীয় পাঠশালা বসাচ্ছেন আমাদের আম্মা’রা।
ইসরাত জাহান গয়না
আগ্রহ বলতে কবিতা বা যাতে সেকেন্ডারি লেভেলে হলেও নিজের সাথে রিলেভ্যান্ট করে তোলা যায় তাৎক্ষণিক বা বিলম্ব যখনই হোক- এমন যেকোনো টেক্সট বা কনটেক্সটই দেখতে পছন্দ করেন গয়না। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট এন্ড ভালনারিবিলিটির স্টুডেন্ট। জন্ম বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলায়।