সুখী মহিউদ্দীন

।। রাজু আহমেদ মামুন ।।

একবার রীতা বলেছিল, “ভাইসাব আপনি তো আমার স্বামীর মতো।” তাতে বেশ ক্ষুব্ধ হয়েছিল মহিউদ্দীন। বলেছিল, “মূল বই শেষ হওয়ার পর পরিশিষ্টে আর কোনো গল্প থাকে না রীতা…। এসব যেন কখনোই না শুনি।” রীতা বেশ ঘাবড়ে গিয়ে বলেছিল, “আমারে আর গহর ভাইরে তো আপনি পাইলা-পুইষা রাখেন। আপনি তো আমগো ভগমান, দুই জনেরই স্বামী। সেই অর্থে কইছি ভাইজান, মাফ কইরা দিয়েন।”

সুখী মহিউদ্দীন

কেশর ফোলানো ধাবমান ঘোড়ার মতো সুখের ঢেউ মহিউদ্দীনের শরীর থেকে শিহরণ তুলে যেন নেমে যাচ্ছে রীতারানি সাহার শরীরে। এবার শ্রান্তি নামবে,টেবিলের বইয়ের মতো পড়ে রবে- একে অপরের উপর, কিছুক্ষণ।

মহিউদ্দীনের বড় সাধ ছিলো সত্তর বছর বাঁচার। জীবনকে টেবিলে ফেলে খাতা-কলমে যেন হিসেব করে নেওয়া। ভাবনাটা চল্লিশ বছর বয়স থেকেই পেয়ে বসেছিল। যখন শরীরে ডায়েবেটিকসহ কিছু রোগ দেখা দেয়। স্বজনরা তখন পঞ্চান্ন-ছাপ্পান্নতে বুড়ো হয়ে মরত। কেউ কেউ বড়জোর ষাট-পঁয়ষট্টি পারি দিত। সে বিবেচনায় মহিউদ্দীনের সত্তর হলেই সই। মাঝখানের ত্রিশ বছরে কী কী সমস্যা হতে পারে তার একটা হিসেব আগে থেকেই মাথায় ছিল। যেমন, বাবা-মা মারা যাবে (গেছেও), দুই ছেলে দুই মেয়ের পড়াশুনার খরচ, বিয়ে-থা, চাকরি-বাকরিতে ঢুকানো, জমি-জমা নিয়ে ভাই-বোনদের সাথে ঝামেলা, শ্বশুর-শাশুড়ি-সহ নিকট আত্মীয়দের মারা যাওয়া, নিজের অথবা বৌয়ের অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা ইত্যাদি।

সোফিয়ার সাথে তার বিয়ে হয় আঠাশ বছর বয়সে। তখন সোফিয়ার বয়স একুশ। ত্রিশ বছরের মধ্যেই চার সন্তানের মা। ঝগড়াটে বৌ বলতে যা বোঝায় সোফি কখনওই তা ছিল না। কিছুটা স্বার্থপর মনোবৃত্তি ছিল বটে, তবে সে ছিল যথেষ্ট কৌশলি ও মৃদুভাষী। আবার কিছু রোগ-শোকও ছিল। কিন্তু ছিল বেশ গোছানো মানুষ, মহিউদ্দীনের মতো।

ত্রিশ বছরের পরিকল্পনায় যতগুলো দুর্ঘটনার কথা চিন্তা করেছে তার অনেকগুলোই ঘটেনি । আবার অনেকগুলো অকল্পনীয় ঘটনাও ঘটেছে। আর্থিক নিরাপত্তা নিয়ে বৌয়ের সাথে বড় মত পার্থক্য ছিল তার। যেমন সোফিয়া বলতো ঢাকার বিভিন্ন মহল্লায় জমি কিনতে, পাঁচ-সাত তলা বাড়ি করতে, চিরকাল বসে বসে শান্তিতে জীবন-যাপন করতে। মহিউদ্দীন মনে মনে হাসত। সোফিয়ার চিরকালের যেন শেষ নেই। যেন পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার পর্যন্ত তার আয়ুর মেয়াদ। অথচ পঞ্চাশ বছরের আর্থিক নিরাপত্তাই ছিল মহিউদ্দীনের কাছে অতিরিক্ত। সেই মতো সেই আমলে আঠের লাখ টাকা দিয়ে একটা বড় ফ্লাট কেনে মহিউদ্দীন। নিরানব্বই বছরের নিশ্চিত বাস।

কিন্তু বৌয়ের দুঃখের শেষ ছিল না, ছেলে মেয়েরা কোথায় থাকবে সেই ভাবনায়। মহিউদ্দীন বলত, দ্যাখো, আমরা ওদের যথেষ্ট যোগ্য করে বড় করতেছি, ওদের লড়াইটাও যদি আমরা লড়ে দেই তবে আমাদেরইবা স্বস্তি কোথায় আর ওদেরই-বা বেঁচে থাকার অর্থ কী! হয়েছেও তাই। দুই মেয়েই তাদের চাকরি, সংসার ছেলে-মেয়ে নিয়ে তুমুল ব্যস্ত। বড় ছেলে আমেরিকার একজন টেকনো জায়েন্ট,ব্যবসায়ী আবার ছোট ছেলে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। কেউ আর এই পুরনো ফ্লাটের বাসিন্দা নয়।

চিন্তা ছিল শুধু স্ত্রী সোফিয়াকে নিয়ে। কারণ, মহিউদ্দীনের ধারনা ছিল সোফিয়ার আগেই সে মারা যাবে। মেয়েদের গড় আয়ু একটু বেশি হয় আবার বয়সেও ছ-সাত বছরের ছোট। সে কারণে স্ত্রীর জন্য ছিল তার আলাদা সঞ্চয়। কিন্তু না, সোফিয়া বছর পাঁচেক আগেই মারা গেছে। অভাবনীয় এক টুকরো নিঃসঙ্গতাসহ মহিউদ্দীনের মধ্যবিত্ত জীবন। সামান্য ঘুষ-দুর্নীতিযুক্ত ব্যাঙ্কারের চাকরি, সঞ্চয়, সন্তানদের তৈরি করার সাফল্য, আর ত্রিশ বছরের চিরকাল, যা এখন পার হয়ে গেছে।

বিবেচনা প্রসূত জীবনের ছোট-ছোট চাওয়াগুলোর অধিকাংশই পূর্ণ হয়েছে তার। মানুষ, সমাজ, সভ্যতা নিয়ে মধ্যবিত্ত মহিউদ্দীনের কোনো বড় স্বপ্ন ছিল না। ছাত্র জীবনে অনেক বামপন্থী বন্ধুদের বিপ্লবের স্বপ্নে ধ্বংস হয়ে যাওয়া জীবনের কঙ্কাল দেখে যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল, তাতে এমন ভাবনা মনে এলেই সাথে সাথে ঝেঁটিয়ে বিদায় করে। কাজেই তার অপূর্ণ স্বপ্নের যন্ত্রণা বলে কিছু নেই।

নিজেকে স্বশব্দে প্রশ্ন করে, তুমি কি সুখী মহিউদ্দীন? নিজেই বলে, হ্যাঁ।
সব তৃষ্ণা মিটে গেছে?
হ্যাঁ।
এবার তবে নির্বাণ হোক, তাল তাল মাটির গহ্বরে যেভাবে মিশে গেছে পূর্বজরা, সেভাবে; ঘুমাতে যাও মহিউদ্দীন, জীবন অতৃপ্তির সমান।

রীতা চমকে উঠে প্রশ্ন করে, একলা একলা এইসব কী কন ভাইজান!

নীরবতা ভেঙে রীতারানির শরীরের উপর থেকে নামতে-নামতে বেশ সুখবোধ করে মহিউদ্দীন। বাহত্তর বছরের শরীরে যেন নতুন যৌবন দেখা দিয়েছে। অবশ্য এর কৃতিত্ব পুরোটাই রীতারানির। বছর পাঁচেক আগে মারা গেছে স্ত্রী সোফিয়া কিন্তু তারও দুয়েক বছর আগে থেকেই মহিউদ্দীনের মনে হতো কামনা-বাসনার বুঝি মৃত্যু হয়েছে তার। কিন্তু এ-কী! পঞ্চাশ বছরের রীতারানি ক্রমশই যেন যুবক করে তুলছে মহিউদ্দীনকে। মাসে এখন চার-পাঁচবার সঙ্গম করে সে।

আবছা অন্ধকারে রীতা তার খুলে রাখা শাড়ির প্রান্ত দিয়ে মুছে দেয় মহিউদ্দীনের ঘর্মাক্ত মুখ আর টাক মাথাটা। রীতার তৃপ্ত শরীর। পাশে শুয়ে তার পুষ্ট রানের মধ্যে টেনে নেয় মহিউদ্দীনের এক ঠ্যাং, বাহুর উপর তুলে নেয় মাথা। একটা চুমু কাটে। মহিউদ্দীন যেন তার স্বামী, আসলে স্বামীর চেয়েও বেশি। কিন্তু সেটা উচ্চারণও করা যাবে না। একবার রীতা বলেছিল, “ভাইসাব আপনি তো আমার স্বামীর মতো।” তাতে বেশ ক্ষুব্ধ হয়েছিল মহিউদ্দীন। বলেছিল, “মূল বই শেষ হওয়ার পর পরিশিষ্টে আর কোনো গল্প থাকে না রীতা…। এসব যেন কখনোই না শুনি।” রীতা বেশ ঘাবড়ে গিয়ে বলেছিল, “আমারে আর গহর ভাইরে তো আপনি পাইলা-পুইষা রাখেন। আপনি তো আমগো ভগমান, দুই জনেরই স্বামী। সেই অর্থে কইছি ভাইজান, মাফ কইরা দিয়েন।”

রীতার ভরাট স্তন মহিউদ্দীনের মুখে লাগে। যদিও কিছুক্ষণ আগে এদুটো ছেনে-ছুয়ে শান্তি লাভ করেছে সে। বেশ লাবণ্য ফুটেছে ইদানীং রীতার শরীরে। বছর দুয়েক আগে মহিউদ্দীন যখন তাকে এই ফ্লাটে নিয়ে আসে তখন বেশ রোগা আর অসুস্থ ছিল।

রীতার সাথে মহিউদ্দীনের প্রথম দেখা হয় গার্মেন্ট মালিক বন্ধু সোবাহানের অফিসে। রাস্তা পার হতে গিয়ে গাড়ির ধাক্কায় পা ভেঙে অসুখে ভুগছিল গার্মেন্ট কর্মী রীতা। প্লাস্টার পায়ে কিছু সাহায্যের আশায় এসেছিল মালিকের অফিসে। সেখানেই জানতে পারে রীতা খুব অসহায় একজন। ত্রিশ বছর আগে মেদিনীপুরের দিলীপ ঘোষ নামে এক লোক, যে ঢাকায় গার্মেন্টেসে কাজ করতে এসেছিল, রীতার ভাইয়ের সাথে বন্ধুত্বের সুবাদে জানা-শোনা, পরে পারিবারিক আয়োজনেই রীতার সাথে বিয়ে। সংসার টিকেছিল মাত্র দশ বছর। ততোদিনে এক ছেলে এক মেয়ের জন্ম। তারপর একদিন কিছু না-জানিয়েই নিজ দেশে ফিরে যায় দিলীপ।

হাড় খাটুনি দিয়ে দুই সন্তানকে বড় করে রীতা। বড় হয়ে ছেলে সুদীপ মেদিনীপুর গিয়ে একবার বাবার খোঁজ করেছিল। তখন না-কি বম্বের কোনো এক কারখানায় কাজ করে সে। তবে পিতার পুরনো স্ত্রী আর ছেলে মেয়েদের হাতে মার খেয়ে ফিরতে হয়েছে সুদীপকে। সুদীপও বড় হয়ে বিয়ে করে, নিজের মতো আলাদা থাকে। খোঁজ নেয় না রীতার। বাকি ছিল মেয়েটা, সেও বছর তিনেক আগে এক খ্রিস্টান ছেলেকে বিয়ে করেছে। তারা থাকে পার্বতীপুর। সেখানেও রীতার ঠাই হয়নি। খ্রিস্টান বিয়াইন পছন্দ করে না রীতার উপস্থিতি। গার্মেন্টসে কাজ করে বস্তির ঝুপরিতেই কাটছিল জীবন। মহিউদ্দীনের পক্ষ থেকে চিকিৎসার ব্যয়ভার, বাসায় থাকা-খাওয়া, মাসে পাঁচ হাজার টাকা বেতনের অফার ছিল রীতারানির জীবনের পরম পাওয়া।

সঙ্গম তৃপ্ত মাঝরাতের নীরবতা ভেঙে কথা বলে ওঠে রীতা, ভাইসাব, ওঠেন শরীর ধুইবেন না?
উঠে বসতে বসতে মহিউদ্দীন বলে, হু।

— ধুইয়া আইস্যা আপনার মাথা টিইপ্যা ঘুম পারাইয়া দিমু, তারপর ঘুমাইতে যামু।
— থাক, তুমি ঘুমাতে যাও। মহিউদ্দীন জানে রীতা তাকে খুব ভালোবাসে। হোক স্বার্থের জন্য, তবুও তো ভালোবাসা। একটু আবেগ ধরা গলায় রীতা বলে- এত শান্তিতে তো জীবনে কোনোদিন ছিলাম না ভাইজান। আপনি যতদিন বাইচ্যা আছেন ততদিনই আমার এই সুখ। আপনে না-থাকলে তো আবার কচুরিপানার মতো ভাইস্যা যামু।

মহিউদ্দীন অভয় দিয়ে বলে, আরে ধুর পাগলি, আমার ছেলে মেয়েরা আছে না! ওরা তোকে দেখবে। দেখস না ওরা যখন বাসায় আসে তোর জন্য কতকিছু নিয়া আসে।

মশারির ভিতর থেকে বের হয়ে মহিউদ্দীন তার এট্যাচ বাথরুমে ঢোকে। ছায়া-ব্লাউজ পরে রীতা তার রুমের দিকে পা বাড়ায়।

দু’হাজার স্কয়ার ফিটের এই অভিজাত ফ্লাটের বাসিন্দা আরো একজন, সে মূল দরজার পাশের রুমেই থাকে। পয়ষট্টি বছর বয়স্ক গওহর। মহিউদ্দীনের গ্রাম্য প্রতিবেশী, অনুজ প্রতিম। ছোটবেলায় বলখেলার টিমে মহিউদ্দীনের সাগরেদ হয়ে থাকতো। লেখাপড়া করেনি। স্ত্রী বিয়োগের পর ছেলেদের সংসারে বেশ কষ্টে ছিল গওহর। সারাজীবন পরিশ্রম করা দরিদ্র গওহরের শরীরও খুব খারাপ ছিল। গ্রামে ঘুরতে গিয়ে মহিউদ্দীন জানতে পারে গওহরের দূর্দশার খবর। তারপর সাথে করে নিয়ে আসে শহরের বাসায়। সেইথেকে গওহর মহিউদ্দীনের সার্বক্ষণিক সেবক ও সঙ্গী। অবশ্য ইদানীং রীতাকেও সাথে নিয়ে বের হয় মহিউদ্দীন। বিকেল হলেই তিনজন এদিক সেদিক ঘুরতে বের হয়। রীতার সাথে মহিউদ্দীনের সঙ্গম করার বিষয়টি গওহরের জানা বা না-জানা গুরুত্বহীন। সে কেবল পোষ্য মাত্র। আর মহিউদ্দীনেরও এতে কোনো পাপবোধ হয় না। যদিও রীতার সাথে যৌন সম্পর্কের বিষয়টি রীতিমতো অপ্রত্যাশিত ছিল। রীতার আগেও মরজিনা নামের এক যুবতী থাকতো বাসায়। সে অবশ্য মহিউদ্দীনকে দাদু ডাকতো। কিন্তু তাকে নিয়ে কোনদিনই যৌনচিন্তা হয়নি। এমনকী রীতাকে নিয়েও ছিল না। বছর দেড়েক আগে একদিন জ্বর হয় মহিউদ্দীনের। তখন সারারাত মহিউদ্দীনের খাটেই ছিল রীতা। শরীর টিপতে-টিপতে একপর্যায়ে লিঙ্গ স্পর্শ করতে থাকে। তারপর জ্বরের রাতকে সঙ্গমের রাতে পরিণত করে সে। সেই থেকে রীতা প্রবেশ করে মহিউদ্দীনের জীবনে। তবে এই কাজ যে শুধু তার একার সাথেই করে এমনটা নয়। রীতা গওহরের সাথেও শোয়। এই গোপন যে মহিউদ্দীনের জানা- তা তারা কেউ জানে না। এতে অবশ্য মহিউদ্দীনের কোন আপত্তি নেই। ভালো খাওয়া-দাওয়া এবং যত্নে পঞ্চাশ বছরের রীতার এখনও শুঠাম শরীর। কতোকাল সে স্বামীর সঙ্গম সুখ থেকে বঞ্চিত, জীবনে এ সুখ তার খুব দরকার। মহিউদ্দীন নাস্তিক মানুষ। এসবে তার কোনো বিকার নেই। অথচ গওহর ছয় বেলা নামাজ পরে। রীতার ঘরেও একটা বাক্স আছে পূজাপাঠের। সে নিয়ে একবার অবশ্য গওহর অভিযোগ করেছিল

— ইন্দু মাতারি তো ঘরের মধ্যে রাদা-কেশনোর পূজা করে।
— তাতে তোর সমস্যা কী গওহর? ও কি তোর রুমের জায়নামাজের কাছে গিয়ে করে?
— না না, আপনি কইলে আমার কোনো সমিস্যা নাই।

মহিউদ্দীন জানে, চাইলে গহওরকে দিয়ে সে পূজাও করিয়ে ছাড়তে পারে। কিন্তু এসবের প্রতি তার কোনো আগ্রহ বা বিশ্বাসের কারণ নেই, আছে শুধু করুণা। আল্লাহ-ভগবান তার কাছে রূপকথার মতো এই প্রবীণ বয়সে এ দুজনকে তার চিন্তার স্তরে উত্তীর্ণ করার কোনো দায়বোধ করে না মহিউদ্দীন। দুজনারই ছেলে-মেয়েরা মাঝে মধ্যে বেরাতে আসে। কিন্তু কেউ বাবা-মায়ের জন্য দু’টাকা দিতে আসে না, পারলে টাকা নিয়ে যায়।

মাঝ রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবে মহিউদ্দীন, সে যেন একটি গ্রন্থ, যার মূল অংশ পাঠ করেছে, ‘সময়’ আর এখন চলছে পরিশিষ্টের অংশ। তার কোনো দুঃখ নেই, কোনো অপ্রাপ্তি নেই। সন্তানরা যতোই ব্যস্ত থাকুক নিয়মিত খোঁজ নেয়, টাকা দিতে চায়। কিন্তু প্রয়োজন হয় না মহিউদ্দীনের। একটা সরকারী ব্যাঙ্কের জিএম হিসেবে অবসর নিয়েছে সে। দুর্নীতিগ্রস্থ সিস্টেমের কারণে যে টাকা স্পীড মানি হিসেবে ভাগ পেয়েছে তা খরচ করতে আরও পঞ্চাশ বছর বাঁচতে হবে।

যেন চোখ মেলতে মেলতে রোদের মতো স্বপ্নকে দেখতে পাওয়া এক জীবন, মহিউদ্দীন।

হঠাৎ মহিউদ্দীনের মাথায় কবিতা লেখার ঝোঁক আসে। শুয়ে শুয়ে মোবাইলের নোটপ্যাডে লিখতে শুরু করে-

মিটে গ্যাছে তৃষ্ণা, বৃষ্টি ঝুম-ঝুম পথ
কোথাও যাবে না বলে ছুটে চলে রথ
শুঁড়িখানা থেকে এক ফিরতি মাতাল
ওহ ধরণী, গুনতে চেওনা তার তাল।

খরচ তো হয়েই যাবে বাকি আছে যা
শূন্যে নামবে শূন্য, তবু রবে না রিক্ততা
নতুন পথিকে হবে, কালকে সকাল
পথ রচে দেবে পথ, ফাটিয়ে দেয়াল।

রাজু আহমেদ মামুন

কবি ও সাংবাদিক, বাড়ি বরগুনা জেলায়, বাস করেন ঢাকা শহরে। সাপ্তাহিক ধাবমান পত্রিকার সম্পাদক।

Share