আজ বৃহস্পতিবার, ৮ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

এ লড়াই রক্তিম, এ লড়াই বড় বাংলার লড়াই

।। নজরুল আহমেদ ও অতনু সিংহ ।।

এই আন্দোলন কেবলমাত্র বাংলাদেশে সীমাবদ্ধ নয়, বরং বড় বাংলায় ছড়িয়ে গিয়েছে এই ‘লাল’ অভ্যুত্থানের জোশ। মনে রাখা দরকার বাংলাদেশের বাঙালি জাতিবাদী ফ্যাসিবাদের ‘ফুয়েল’ দিল্লির ‘হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তানি’ জাতিবাদের এক্সটেইনশন মাত্র। এবং দিল্লির ফ্যাসিবাদের পিছনে মদত দিয়ে যাচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী গায়েবি বৈশ্বিক পুঁজি। মনে রাখা দরকার, দিল্লি একদিকে তাদের সম্প্রসারণবাদকে ক্রমেই বাংলাদেশে যেভাবে উপনিবেশবাদের চেহারায় পর্যবসিত করেছে, অন্যদিকে সেই উপনিবেশবাদী জুলুমের বাইরে নয় পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও ত্রিপুরা।

বাংলাদেশের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আজ রক্তিম হয়ে উঠেছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ছাত্র-জনতা এই আন্দোলনকে প্রত্যক্ষ সমর্থন জানিয়ে, সংহতি প্রকাশ করে তাঁদের ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম-সহ বিবিধ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ডিপি ‘লাল’ করে দিয়েছেন। শুধুই বাংলাদেশ নয়, বাংলাদেশের সমর্থন বড় বাংলার পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরবঙ্গ ও ঈশানবঙ্গের প্রচুর সংখ্যক তরুণ-সহ সর্বস্তরের সংবেদশীল মানুষ তাঁদের ডিপি পরিবর্তন করেছেন। রক্ত নিশানের মতোই লাল ঝড় উঠেছে আজ বড় বাংলায়। বহুদিন পর আবারও সমাজ পরিবর্তনের আকাঙ্খায় উজ্জীবিত ও সংকল্পবদ্ধ বাংলাদেশের জনতা। বাংলাদেশকে দেখে প্রাণিত হচ্ছে বড় বাংলা। বড় বাংলার ‘প্রতিপক্ষ’ পত্রিকা এই বৈপ্লবিক পরিস্থিতিতে নিজেদের আরও নতুন করে পুনর্গঠিত করার সংকল্প নিয়েছে। বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার এই আন্দোলন হয়ে উঠতে পারে, বড় বাংলার সমস্ত ধরনের বৈষম্য, জাতিবাদ বিরোধী সংগ্রামের আধার। হয়ে উঠতে সাম্য-মৈত্রীর সমাজ গঠনের দিকনির্দেশনা।

মনে রাখা দরকার, এই আন্দোলন বাংলাদেশের কোটা সংস্কারের প্রেক্ষিতে তৈরি হলেও আজ আর তা কেবলমাত্র অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুযোগ-সুবিধার দাবিদাওয়ার আন্দোলনে সীমাবদ্ধ নয়। এই আন্দোলন বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদ বিরেধিতায় মুখর। এই আন্দোলন সমাজ বিপ্লবের ডাক নিয়ে এসেছে। কমরেড বদরুদ্দীন উমর যথার্থই বলেছেন, ১৯৫২ থেকে বাংলাদেশে যতগুলো গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, তার মধ্যে ছাত্র-জনতার এই অভ্যুত্থান ব্যাপক।

এই আন্দোলনের কেবলমাত্র বাংলাদেশে সীমাবদ্ধ নয়, বরং বড় বাংলায় ছড়িয়ে গিয়েছে এই অভ্যুত্থানের জোশ। মনে রাখা দরকার বাংলাদেশের বাঙালি জাতিবাদী ফ্যাসিবাদের ‘ফুয়েল’ দিল্লির ‘হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তানি’ জাতিবাদের এক্সটেইনশন মাত্র। এবং দিল্লির ফ্যাসিবাদের পিছনে মদত দিয়ে যাচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী গায়েবি বৈশ্বিক পুঁজি। মনে রাখা দরকার, দিল্লি একদিকে তাদের সম্প্রসারণবাদকে ক্রমেই বাংলাদেশে যেভাবে উপনিবেশবাদের চেহারায় পর্যবসিত করেছে, অন্যদিকে সেই উপনিবেশবাদী জুলুমের বাইরে নয় পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও ত্রিপুরা। এই তিনটি রাজ্য দিল্লি নিয়ন্ত্রিক ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেই অবস্থিত। তথাপি, ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে নিকেষ করে সেই রাষ্ট্রকে এক জাতি, এক ভাষা ও এক ধর্মের জাতিবাদী কাঠামোয় রূপান্তরিত করার যে পাঁয়তারা করছে দিল্লির শাসক বিজেপি তথা সংঘ পরিবার, তার প্রত্যক্ষ শিকার পশ্চিমবঙ্গ, ঈশানবঙ্গ (অসম) ও ত্রিপুরবঙ্গ। আমরা ইতোমধ্যেই দেখেছি, এনআরসি, সিএএ’র মতো হিন্দি-হিন্দুত্বের জাতিবাদী প্রকল্প ও আইনকে সামনে রেখে কীভাবে আঠারো লক্ষ বাংলা ভাষাভাষী মানুষকে অসমে রাষ্ট্রহীন করেছে ভারত সরকার। তার মধ্যে ৫ লাখ মানুষকে ডিটেইনশন ক্যাম্পে বন্দি করে রাখা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে ও ত্রিপুরাতেও একই পাঁয়তারার ছক কষা হচ্ছে। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গকে ভাগ করার চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি। এসবই বড় বাংলার ওপর দিল্লির হামলা। আর এই হামলায় বাংলা-বিরোধী, বাংলার গণমানুষ বিরোধী শক্তি হিসাবে নতুনভাবে হাজির হয়েছে বাংলাদেশের শাসক দল আওয়ামী লীগ। আদানি-আম্বানি ও সংঘ পরিবারের রাজনীতির প্রত্যক্ষ সহায়ক শক্তি আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে যেন ইজারা দিয়েছে দিল্লিকে। আর তাই কোটা সংস্কারের মতো নিরীহ দাবি তোলার জন্য ছাত্র-জনতার ওপর আওয়ামী ফ্যাসিবাদের হামলায় প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করেছে গেরুয়া বিজেপি নিয়ন্ত্রিত ভারতের ইউনিয়ন সরকার। বিভিন্ন ফুটেজে দেখা গিয়েছে, হিন্দি ভাষায় একদল মানুষ বাংলাদেশের রাষ্ট্রযন্ত্রের পোশাক পরে গুলি চালাচ্ছে শিশু থেকে শুরু করে তরুণদের উপর। আর ঠিক তার সমান্তরালে পশ্চিমবঙ্গেক ভাগ করার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। অতএব ভালভাবে বুঝে নেওয়া দরকার, বাংলাদেশের এই আন্দোলনে দিল্লি বিরোধিতার যে স্বর তা ভারতর জনগণের বিরুদ্ধে নয়, বরং ঢাকা ও দিল্লির শাসকের বিরুদ্ধে। উপমহাদেশীয় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। পশ্চিমবঙ্গের ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে বহু মানুষ আজ বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার প্রতি সংহতি জ্ঞাপন করেছেন। হাসিনা ও মোদির বিরুদ্ধে কলকাতায় বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুধু তাই নয় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং তাঁর সাংবিধানিক এখতিয়ারের কথা মাথার রাখার পরেও বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন। গণহত্যার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন এবং ঘোষণা দিয়েছেন, বাংলাদেশের কেউ পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় চাইলে রাষ্ট্রসংঘের নিয়ম মেনেই তিনি তাঁদের ঠাঁই দেবেন।

বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও ভারত সরকারের টানাপোড়েনের বিষয়টি এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যকে কেন্দ্র করে কটাক্ষ, হুঙ্কার ও হেনস্থা শুরু করেছেন বিজেপির ছোট, বড়, মেজ নেতারা। মমতার বিরুদ্ধে ঢাকা থেকে দিল্লিতে অভিযোগ জানানো হয়েছে। আর তার প্রেক্ষিতেই দিল্লির সরকার বলছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখতিয়ার বহির্ভুত কাজ করেচেন। বৈদেশিক ইস্যুতে তিনি নাকি বলতে পারেন না! উত্তরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ বলেছেন, ‘‘আমায় এসব বলতে আসবেন না। আমি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোটা বুঝি।’’ তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন বিদেশ নীতিটা তিনি অনেকের থেকেই ভালো জানেন। কেউ যেন তাঁকে এই বিষয়ে শেখাতে না আসেন। অনেকে হয়তো ভারতের সংবিধান এবং বিদেশ নীতিকে শুধুমাত্র সাদা-কালোর দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্লেষণ করে বলবেন, মমতা ভুল করছেন। ‌ না, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোন ভুল করেননি। বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে মমতার মন্তব্য যেমন সাহসী, মানবিক ও বৈপ্লবিক, অন্যদিকে সেটাকে কেন্দ্র করে ভারত রাষ্ট্রের বিবৃতির পাল্টা তাঁর ফ্যাসিস্ট সরকার মানবাধিকারের প্রশ্নে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এ মন্তব্যকে যে ভালোভাবে নেবেন না সেটাই তো স্বাভাবিক। ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনের মাধ্যমে কেন্দ্রকে পাঠানো চিঠিতে হাসিনা সরকার বলেছে, ‘‘বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা বলেছেন সেটি উস্কানিমূলক এবং নানা অসত্য তত্ত্বে ভরপুর। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়েও অবাঞ্ছিত সুর রয়েছে তাঁর মন্তব্যে।’’ এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের ইউনিয়ন সরকারের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়, ‘‘অন্য কোনও দেশ বা বৈদেশিক বিষয় নিয়ে পদক্ষেপ করার অধিকার কোন রাজ্য সরকারের নেই । ভারতীয় সংবিধান সেই অধিকার দেয়নি রাজ্যকে। বিষয়টা একান্তভাবেই ভারত সরকারের হাতে। আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে কোন রাজ্যের নাক গলানোর প্রয়োজন নেই।’’ কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার চিরাচরিত ভঙ্গিতেই এর পাল্টা জবাব দিয়েছেন। তিনি কোনও বিষয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও হুমকিকে তোয়াক্কা না করে গত দু দশকের ওপর পশ্চিমবঙ্গের শাসন পরিচালনা করছেন। এক্ষেত্রেও তিনি দিল্লির কাছে কাছে মাথা নত করেননি। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, ‘‘বিদেশ নীতিটা অন্য কারোর চেয়ে ভালো জানি। আমাকে শেখানোর প্রয়োজন নেই। বরং পরিবর্তিত ব্যবস্থা থেকে তাদের শেখা উচিত।’’

বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষিতে দলীয় মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেটা বলেছিলেন বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সংহতিই বোঝাই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই দিনের বক্তব্য নিঃসন্দেহে ছিল মানবিক, যুক্তিপূর্ণ এবং বৈপ্লবিক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ঠিক জায়গাতেই তিরটি মেরেছেন তার প্রমাণ হাসিনা সরকার ও মোদি সরকারের এই যৌথ বিষোদগার। হ্যাঁ এটা ঠিক, ভারতীয় সংবিধানের সপ্তম তফশিলে বৈদেশিক কোনও বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারকে সমস্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তার মানে এটা নয় যে বিদেশের কোনও ব্যাপারে কোনও মন্তব্য কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী করতে পারেন না। রিফিউজিদের আশ্রয় দেওয়াটা রাষ্ট্রসংঘের প্রস্তাবে বলা আছে। এটা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদের সঙ্গেও যুক্ত। এটা বুঝতে হবে সমস্ত কিছুর ওপরেই মানবাধিকার। মানবাধিকারের দিক থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেটা বলেছেন সেটা যথার্থ। হাসিনা সরকারের তরফ থেকে যে ‘উস্কানিমূলক’ মন্তব্যের বার্তা এসেছে সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বাংলাদেশের বিষয় নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের হুমকিকে গুরুত্ব না দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা যে মন্তব্য করেছেন সেটা ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র কাঠামোকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রেও একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ভারতীয় সংবিধানের প্রথম অধ্যায়ে পরিষ্কারভাবে বলা আছে, ‘‘India, that is Bharat, shall be a union of state।’’ অর্থাৎ ভারত কোনও এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র নয়। ভারত একটা যুক্তরাষ্ট্র। গত দশ বছর ধরে ফ‌্যাসিবাদ কায়েম করে ভারতকে এককেন্দ্রিক জাতিবাদী রাষ্ট্র বানানোর করার সব প্রচেষ্টা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এবারের লোকসভা নির্বাচনে কোনওক্রমে সরকার ধরে রাখলেও একটা বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে মোদি। এই অবস্থায় ভারতবর্ষের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে শক্তিশালী করার জন্য সমস্ত অবিজেপি রাজ্য সরকারগুলির পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবরই সে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে শক্তিশালী করার কথা বলেছেন। আর যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোগুলিকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে রাজ্যের হাতে আরও যাতে ক্ষমতা আসে সে ব্যাপারেও সোচ্চার হওয়া উচিত। বাংলাদেশে কোনও বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটার প্রেক্ষিতে সেখানকার মানুষ যদি অন্য কোনও জায়গায় আশ্রয় চান তাহলে তাদের প্রথম পছন্দ হবে পশ্চিমবঙ্গ। অর্থাৎ দায়ভারটা তো পশ্চিমবঙ্গ কেই নিতে হবে। তাহলে কেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু বলতে পারবেন না? আর সবচেয়ে বড় কথা কেবল রাষ্ট্রনৈতিক যুক্তিক্রম থেকে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশেকে দেখলে চলবে না। দেখতে হবে ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক মিল-মোহাব্বতের জায়গা থেকে।

১৯৪৭-এ দেশ ভাগের কথা বলা হলেও আসলে ভাগ হয়েছিল বাংলা ও পাঞ্জাব। বাংলা ভাগ হলেও দুই বাংলার মধ্যে সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান এখনও অম্লান। আর তাই বড় বাংলার মানুষের মধ্যে জাতিবাদী বিভাজন এ বিদ্বেষ ছড়াতে ম্যানুফ্যাকচারড হয় নানা ধরনের প্রোপাগান্ডা, যেমন এখন প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে যে বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন থেকে ভারত বিরোধিতার সুর তোলা হচ্ছে। ভারত বিরোধিতা আর দিল্লি বিরোধিতা কি এক? দিল্লির ফ্যাসিস্ট শাসক যেভাবে বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টদের সঙ্গে এক হয়ে লুঠপাট ও গণহত্যায় মদত দিচ্ছে, তাতে করে দিল্লি বিরোধিতা জায়েজ হবে নাই বা কেন! বাংলাদেশের একজন মানুষও ভারতের জনগণের বিরোধী নয়। পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে তাঁরা ভাই-বোনের চোখেই দেখেন। বাংলাদেশের জনগণ মনে করেন, তারা মনে করেন হাসিনা সরকারের প্রত্যক্ষ মদতে দেশের সার্বভৌমত্ব দিল্লির কাছে বিকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সূত্রের খবর, হাসিনা সরকার নাকি ভারতের সঙ্গে খুব শীঘ্রই একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে চলেছেন। যে চুক্তির জেরে ভারতের রাষ্ট্রযন্ত্র প্রত্যক্ষভাবে বাংলাদেশের মাটিতে গিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে সেইফ করতে পারবে! এমনটা হলে তো বাংলাদেশের জনগণ আরও বেশি করে দিল্লি বিরোধী হবেন। আবারও বলছি বাংলাদেশ শুধু একাই নিষ্পেষিত হচ্ছে না। নিপীড়িত হচ্ছে বড় বাংলা। পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে ন্যায্য পাওনাগণ্ডা ও অর্থনৈতিক হিস্যা থেকে বঞ্চিত করছে দিল্লি। পশ্চিম পাকিস্তান একদা পূর্ব বাংলায় যে কাজকাম করত, সেটাই এখন দিল্লির তরফে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে করা হচ্ছে। যার বিরুদ্ধে সরব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। বাংলাদেশের আজকের ছাত্র-জনতার যে আন্দোলন তার ঢেউ সংহতির প্রশ্নে পশ্চিমবঙ্গেও পড়েছে। আমরা মনে করছি লড়াইটা এক, এ লড়াই বড় বাংলার লড়াই। এই লড়াইয়ে পথ দেখাচ্ছে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top