আজ বৃহস্পতিবার, ১৩ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৮শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

তুলে আনি সাযুজ্য ভাষার

।। নীলাদ্রি বাগচী ।।

সংসার বিক্রি করে
তুলে আনি সাযুজ্য ভাষার

দেহাতি রুটির শীতে
হাঁটা পথ পিচ্ছিল হয়

জীবন জলের দোষ
মাফলার ও কম্বলের ওম

পিটুনিয়া যাপনে রৌদ্র করে সরল আঘাত

দিনকাল (পৌষ)

১।

অর্ন্তলীন এই ভাষাচিত্র যেভাবে সেজেছে
অবসরপ্রাপ্ত ঘুমে, কাশির সিরাফে
দূর্বল স্নায়ুতন্ত্রে এবং আগাছা ঘেরা এবারের শীতে

কাঁপুনি ধরিয়ে গেছে হাড়েমাসে বেঘোর জীবনে

শরীরে জলের কারুকাজে

শাখা ভাঙে- বৃক্ষ বা নদী
আমাদের বিদ্যালয়গুলি
ক্ষয় হয় শ্লথ ও বেকুব

তবু কৃষিদিন ডাকে
ঝুমঝুমি বেজে ওঠে বৃদ্ধের আনত চাওয়ায়

২।

সংসার বিক্রি করে
তুলে আনি সাযুজ্য ভাষার

দেহাতি রুটির শীতে
হাঁটা পথ পিচ্ছিল হয়

জীবন জলের দোষ
মাফলার ও কম্বলের ওম

পিটুনিয়া যাপনে রৌদ্র করে সরল আঘাত

৩।

জলের দৃঢ়তা দেখে হতভম্ব শ্লথ অঙ্গগুলি;
রঙ আসে, দাপাদাপি মশা সন্ধ্যা ঘন হয়
বালিশ আভাসে।
সে ফোটে,
ফুটন্ত মুখে চিনি চা পাতা ঢালি,
এ এক তরল যার স্বাদ আঠামাখা
কোমল গরল…

জেঠু সদৃশ স্নেহ, তদুপরি সন্দেহবাতিক
চা কাপে জড়িয়ে থাকে

রাত্রে অনুরূপ ধাতু ঘুম হানে বিবশ শরীরে…

৪।

সন্তর্পণে ভাবি

বেদনাতাড়িত সেই সবুজ পাহাড়ে
স্মৃতির জোঙ্গা চলে
পথেঘাটে গা এলায় লোকায়ত ঘুম

ইদানীং মনেও পরে না
চাকা রাস্তা ভেজা মাটি
সরল উল্লাসে ডোবা অনাবৃত রাত্রিগুলি

কেবল কুয়াশা আছে
কোয়ার্টার সংলগ্ন পেঁপে গাছে
যেরকম পতিতপাবন

তালা আর মোবাইলে
দুপুরের সুবাস ছড়ায়

দিনকাল (অঘ্রাণ )

ক।।

এখানে শীতের দিন ঘন হয়
হয়তো কুয়াশা আর হয়তো কম্বল ঘ্রাণে পাশ ফিরে ঈষৎ হারাই

শরীরে বার্ধক্য আসে, শহরে অঘ্রাণ……

খ।।

ম’রে গেলে শুয়ে থাকতে হবে।
এতক্ষণ একটানা কীভাবে সম্ভব ?
ভাবি প্রাণ সে তো নেই নাকি সে রয়েছে
ক্ষিদে বাড়ে, পা বাড়াই-চলি

গাঢ় হয় জীবন অভ্যাস….

গ।।

কলম হারালে বুঝি
লেখার অভ্যাস, ছেড়ে গেছে বহুকাল
এখন বোতাম প্রিয়। রক্তে মেশা ঋতু- শীত
আঙুল অক্ষম করে, শব্দগুলি দ্যোতনা হারায় …

অঘ্রাণে ফুল ফোটে, বিকেলের দিকে
মনে হয়ে জ্বরে আছে
ঘোর লাগা শহরতলিতে….

ঘ।।

যাপনের নুন মেশে জীবনের স্রোতে..

প্রবাল প্রাচীরে পা রেখে বুঝেছি
ক্ষয়ে গেছি, হড়কে যাব
আর একটু পেছল বেশী হলে…

ঢেউ ওঠে, দূরে ভয় , জীবনের বোধ….

ছবি- লুবনা চর্যা

নীলাদ্রি বাগচী

নব্বই দশকের কবি। বসবাস- পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়িতে। ‘বিজল্প’ পত্রিকার সঙ্গে দীর্ঘ সময় যুক্ত থেকেছেন। রয়েছে একাধিক কাব্যগ্রন্থ। পশ্চিমবঙ্গের লিটিল ম্যাগাজিন আন্দোলনে বিশেষ অবদান রয়েছে। পেশাসূত্রে প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হলেও নীলাদ্রির পরিচিতি অবশ্যই কবি হিসাবে। লেখার পেশাপাশি নিবিড় পাঠকও তিনি। কবিতা ও কথাসাহিত্যের পাশাপাশি বিশ্ব চলচ্চিত্র বিষয়ে তাঁর আগ্রহ গভীর।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top