।। হাসান রোবায়েত ।।
আরেক বার
দেখতে আসিও,
যাচ্ছি বলেই
কখনও শেষ হয় না ফিরে আসার পথ
১
মরে গেলে—
কোথাও একটা সাইকেল
থেমে যাবে
হঠাৎ বেলের আওয়াজ
দুপুরের আড়া-জঙ্গল পার হয়ে
ঘুমিয়ে পড়বে
আতনা ফুলের মায়ায়
খাটিয়ায় শুয়ে শুয়ে মনে হবে
আমাকে ভুলিয়ো না, সোনা
যেতে হয় বলেই
মানুষ সাঁকো বানায় নির্জন বিষণ্ণতার উপর—
২
মরে গেলে—
ভেড়াগুলোকে দূরের মাঠে ছেড়ে দিও
একটা আমের পাতা
ঝরে যাচ্ছে
ক্রমলীন সুরে
নতুন স্যান্ডেল খুলতে শিশুরা
ব্যথা পায় যেমন—
৩
মরে গেলে—
কুয়াশা বোঁটাতে বোঁটাতে
চলে যেও
নাড়াকাটা চকে
সেখানে পাকুড় গাছ
জঙ্গলের পেছনে আতনা ফুল শাদা হয়ে পড়ে আছে মাঠে
কারা যেন
বিবাহবিলীন হাওয়ায়
তাকায়া আছে খাটিয়ার দিকে
গোসল করাইলে
অপরাহ্ণ ছুঁইয়া দেখিও, সোনা
মানুষ চলে গেলে
পৃথিবীর সকল রাস্তাই কেমন পরিচিত লাগে
৪
মরে গেলে—
সন্ধ্যার নাভিতে লাটিম ঘোরাতে ঘোরাতে
বাড়ি ফিরবে কেউ
তার স্যান্ডেলে গোরের কাদামাটি
নিমের সহজ ফুল—
মানুষ ভুলে গেলে
মরণও, ছোট এক পাখির উড়ে যাওয়ার মতন—
৫
মরে গেলে—
সন্ধ্যার মাঠ থেকে ফিরে আসবে
নির্জনতার হাওয়া
দূরে
একলা বাড়ি
বকরিরা চড়ে বেড়াচ্ছে কোলায়
ছোট ফুলটার গন্ধে
মিঠাই হয়ে আসছে বিকাল
আরেক বার
দেখতে আসিও,
যাচ্ছি বলেই
কখনও শেষ হয় না ফিরে আসার পথ
৬
মরে গেলে—
বাঁশের আড়ায়
আটাশরির জঙ্গলে
খিতখিতে কাদায় হয়তো কেউ
দওয়ের পাশের
ছোট ঘরটাতে
কানবে ফোঁপায়ে—
আমাকে ভুলো না—
মানুষের চলে যাওয়া
রেন্দায় পালিশ করা কাঠে
আস্তে আস্তে
গভীর হাত বুলানোর মতন—
৭
মরে গেলে—
গোরের পাশে রেখে যেয়ো আগরবাতি
ধোঁয়ারা উড়তে উড়তে
চলে যাবে
দূরে, বকুল ফুলের কাছে
পাঁপড়িরা সারারাত
শাদা হয়ে পড়ে থাকবে
নদীটার তীরে—
সন্ধ্যার ব্যাপ্ত অন্ধকারে
আজ আর কোথাও বাকি রইলো না
তোমাকে দেখার জীবন—
৮
মরে গেলে—
দুপুরের কোমল গান্ধারে
খালি মনে হবে
তোমার মুখখানা
যদি দেখতে পেতাম
আর একবার—
হাসান রোবায়রেত
জন্ম ১৯ আগস্ট, ১৯৮৯; বগুড়া। শিক্ষা : পুলিশ লাইন্স হাইস্কুল, বগুড়া। সরকারী আজিজুল হক কলেজ; বগুড়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রকাশিত বই — ঘুমন্ত মার্কারি ফুলে [কবিতা; চৈতন্য, ২০১৬] ঘুমন্ত মার্কারি ফুলে [ভারতীয় সংস্করণ, বৈভাষিক, ২০১৮] মীনগন্ধের তারা [কবিতা; জেব্রাক্রসিং, ২০১৮] আনোখা নদী [কবিতা; তবুও প্রয়াস, কলকাতা, ২০১৮] এমন ঘনঘোর ফ্যাসিবাদে [কবিতা; ঢাকাপ্রকাশ, ২০১৮] মাধুডাঙাতীরে [কবিতা; ঐতিহ্য, ২০২০] ই-মেইল : hrobayet2676@gmail.com