।। কাউসার হামিদ জাওয়াদ ।।
বারিশ নামলে আমি শোকরগুজার করতে পারি না
আমার দিল কাঁপে ভিটা ডুবার ভয়ে
রাস্তা ডুবার ভয়ে
রাস্তায় নামলে আমিও কী মইরা যাবো কারেন শক খায়া?
বাজারে গেলে মুখে রা ফোটে না
তেলাপিয়ার দিকে তাকায়া আমি রূপ-চান্দার কথা ভাবি
গোশতের বাজার, পিরিতের বাজার, সবখানে অচ্ছুৎ
ধর্মে মুসলমান কিন্তু পূর্বপুরুষের মতো আজও আমি নমঃশূদ্র রয়া গেছি
রামাদানুল ফিলিস্তিন
আসরের মোনাজাত আমরা ধরলাম যখন
মুসল্লিরা চুপচাপ ছিলেন
শুধুমাত্র হুজুর কানতেছিলেন
তার মুখ দিয়া ‘গাজা’ নামটা বারবার নির্গত হইতেছিল
আমরা ভাবতেছি তখন রমজান এবং তদসংশ্লিষ্ট মউজ-মাস্তি
এবং ইফতার নিয়া
যথারীতি
আমেরিকা চুপচাপ
ইউরোপ চুপচাপ
সকলেই চুপচাপ
আল্লাহপাক নিজেও
আমরা অপেক্ষায় আছি মাগরিবের
প্লেটে বিবিধ খাবার সাজায়া
অথচ আমাদের ওয়াক্ত হইতেসে না অনেকখন
দীর্ঘ নীরবতার পর
মুয়াজ্জিন যখন মাগরিবের আজান দিল
আমাদের প্লেটের ইফতার
কীভাবে যেন
রক্তমাখা ফিলিস্তিন হয়ে গেছিল
কালা
কালা আমার চেহারা
কালা আমার ভবিষ্যৎ
কালা আমার স্বপ্নগুলিও
বারিশ নামলে আমি শোকরগুজার করতে পারি না
আমার দিল কাঁপে ভিটা ডুবার ভয়ে
রাস্তা ডুবার ভয়ে
রাস্তায় নামলে আমিও কী মইরা যাবো কারেন শক খায়া?
বাজারে গেলে মুখে রা ফোটে না
তেলাপিয়ার দিকে তাকায়া আমি রূপ-চান্দার কথা ভাবি
গোশতের বাজার, পিরিতের বাজার, সবখানে অচ্ছুৎ
ধর্মে মুসলমান কিন্তু পূর্বপুরুষের মতো আজও আমি নমঃশূদ্র রয়া গেছি
সুরত কালা বানাইছে খোদা
বাকীটা কালা বানাইছে তার নাম আমি জবানে আনতে পারি না
টাকা বানানোর মেশিন
আমি হই একজন ব্যাটা মানুষ
আমি হই একজন টাকা বানানোর মেশিন
আমার এমপ্লয়ার আমারে চিপড়ায়া টাকা বের করবে
রাষ্ট্র বইসা আছে আমারে দিয়ে জিডিপি বাড়াবে বলে
পরিবার চেয়ে আছে চাতক পাখির মতো
বাজারে বিবিধ পণ্যের টোপ সাজিয়ে বসে আছে দোকানীরা
সবাই তাকায়া আছে আমার দিকে টাকার জন্য
আমি হই একজন ব্যাটা মানুষ
আমি হই একজন টাকা বানানোর মেশিন
জন্ম থেকে কবর পর্যন্ত সবাইরে আমি টাকা সাপ্লাই দিয়া যাবো
তোমাকে বোঝাইতে চাই বলে
তুমি বুঝতে পারতেছো তো, কী বুঝাইতেছি আমি
বুঝতে পারতেছো কি তুমি আমার লেখা
তোমারে বোঝাইতেই যে আমার সমস্ত আয়োজন
সমস্ত তাউরামি
কেবল তোমারে বোঝানোর জন্যই যে আমি লেইখা যাই
আর লিখতে লিখতে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা বাড়াই
লিখতে লিখতে টেক্সটদের উড়ায়ে দেই জানালা খুইলা
তোমার ঠিকানায়
তুমি বুঝতেছো তো আমার লেখা
মোনাজাত
হে আল্লাহ্, আপনি আমাকে কোরান শরীফের একটা পৃষ্ঠা বানিয়ে দিন
পড়ার সময়ে প্রিয়া যেন বোঝে কী আছে লেখা আমার অন্তরে
পড়ার সময়ে তোমার বানী ভেবে যেন আবেগবশত আমারেও সে অযু করা হাতে ছুঁয়ে দেয়
হে আল্লাহ্, আপনি আমাকে বানিয়ে দিন রেশমী কাপড়ের মখমল কোনো জায়নামাজ
নামাজের সময়ে তার নীরব তেলাওয়াত যেন আমার কানেও বাজে
সিজদার সময়ে আমার বুক যেন হয় তার মাথা পাতবার স্থান
হে আল্লাহ্, আপনি আমাকে বানিয়ে দিন প্রিয়ার হাতে নিয়মিত তসবীমালার দানা
এক তসবীদানা থেকে আরেক দানার মাঝামাঝি সময় যেন আমি পেরেশান হয়ে রই
নেক হৃদয়ে তার ওজু করা হাত যেন আমার চুলেও পরশ বুলিয়ে যায়
হে আল্লাহ্, আপনি আমাকে তুলতুলে মাটি বানিয়ে দিন
অন্তর্ধানের পরও যেন আমি প্রিয়ার থেকে জুদা না হই
আমাদের কবরের গাছটি যেন হয়ে ওঠে হুদহুদ পাখিদের সংসার পাতার জা’গা
কাউসার হামিদ জাওয়াদ
কবি ও অনুবাদক। জন্ম ১৯ অক্টোবর, ১৯৯৭। জন্ম, বেড়ে ওঠা, লেখাপড়া সবই ঢাকাতে। অনলাইনে কবিতা লিখেন প্রায় নয় বছর যাবত। ২০২৫ সালে প্রথম কবিতার বই করবেন। ছোটগল্প ও উপন্যাস লেখার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
প্রকাশিত অনুবাদগ্রন্থ: হা জিনের ইন্টারভিউ (২০২৪; বাছবিচার)। প্রকাশিতব্য অনুবাদগ্রন্থঃ এডওয়ার্ড সাইদের ইন্টারভিউ (২০২৪; বাছবিচার)।