।। কাউসার হামিদ জাওয়াদ ।।
আজকের চারাগাছ
একদিন বৃক্ষ হয়ে উঠবে
পায়ের তলার মাটি আরও শক্ত হবে
ঠিক আবু সাঈদের সিনার মতো টানটান
হেলিকপ্টার
ওই দ্যাখো ওই দ্যাখো
আমাদের পয়সায় কেনা হেলিকপ্টার ওড়ে
আকাশে বইসা নজরদারি করে
তোমার উপরে আমার উপরে
বাংলাদেশের রাস্তায় রাস্তায়
আকাশে বইসা তারা গুলি ছুঁড়ে
আমাদেরই উপরে
ওই দ্যাখো হেলিকপ্টার যায়
আমাদের কষ্টের পয়সায় কেনা হেলিকপ্টার ওড়ে
সেলফ-রিফ্লেকশন
বইয়ের পাতায় কি খুঁজো, হে কবি, ওয়ানাবি দার্শনিক
রাস্তায় নাইমা আসো
যা তুমি খুঁজতেছো—
অক্ষর, শব্দ আর কাগজের স্তুপে খুঁইজা পাবা না
কীভাবে বুঝবা ভয়ার্ত একটা মহিষের ভেতরকার অনুভূতি
যখন সে হিংস্র হায়েনার ধাওয়া খায়, পালাইতে চেষ্টা করে
এবং নিজের ভয়রে দমায়া ঝাক নিয়া ফির রুইখা দাড়ায়
রাস্তায় নাইমা আসো
নিজের দ্বিধা এবং প্রশ্নগুলার উত্তর নিয়া যাও
ট্রমা
ক্যামনে বোঝাব এই ট্রমার কথা দুনিয়ারে
যখন আমাদেরই এক ভাই বন্দুকের সামনে বুক পাইতা দাঁড়ায়
আর একের পর এক বুলেট সেই বুকেরে ঝাঁজরা করে
আমি ক্যামনে ঠিক থাকি
ক্যামনে ঠিক থাকা যায়
যখন হাসপাতাল আর হাসপাতালের মর্গ পাল্লা দিয়া
নিজেদের সদস্য সংখ্যা বাড়ায়
কত কত চেহারা আর বাড়িতে ফিরবে না কোনোদিন
অনলাইনে, চায়ের দোকানে, আমাদের মাঝখানে
কীভাবে তেহারি খাবো আমি বিরিয়ানির দোকানে গিয়া আর
কীভাবে বুঝব আমার প্লেট দিয়াই আমার ভাইয়ের লাশ গুম হইতেছে কি না
তারা
কখনও ভাইবো না—
যে ভাইটা তোমার রাস্তায় গুলি খেয়েছিল
সে মারা গেছে
শহীদ আর মৃতের ফারাক তোমরা বুঝো না
জুলাইতে রাস্তায় যারা শহীদ হয়েছিল
তারা জীবিত আছে— কিন্তু তোমরা সেটা বুঝতে পারো না
তারা তাকিয়ে আছে তোমাদের দিকে
কাফফারা
তোমাদের লাশের হক আমরা ক্যামনে আদায় করবো?
আমরা তো গোলামের জাত
আমাদের হাতে আর কাঁধে কড়া পড়ে গেছে
অপমান আর লাঞ্ছনার জোয়াল টানতে টানতে
আমাদের হাতে শিকল বান্ধা
চোখ, কান আর মুখ সেলাই করা আমাদের
আমরা কীভাবে আদায় করব তোমাদের লাশের কাফফারা?
তোমাদের লাশের কাফফারা তখনি আদায় হবে—
স্বৈরাচাররে যখন টাইনা আমরা গদি থেকে নামাবো
চারাগাছ
তোমরা বরং খেয়াল করো
আবু সাঈদের কবরের চারাগাছটার দিকে—
আজকের চারাগাছ
একদিন বৃক্ষ হয়ে উঠবে
পায়ের তলার মাটি আরও শক্ত হবে
ঠিক আবু সাঈদের সিনার মতো টানটান
তোমরা ভুলে যেও না আবু সাঈদের কথা
এই বর্ষাতেই সে নিযুত-কোটি গুণ হবে
আবু লাহাবদের প্রতি
ধ্বংস হোক পৃথিবীর প্রতিটা আবু লাহাব
ধ্বংস হোক তাদের প্রতিটা সহযোগী
ধ্বংস হোক আবু লাহাবদের বংশধর এবং
সন্তান-সন্ততি, নিজ নিজ পিতার জুলুমের
যারা সহযোগী এবং অবৈধ সম্পদের ভক্ষণকারী
কোল্যাটারাল ড্যামেজ
হইতেই তো পারে কিছু কোল্যাটারাল ড্যামেজ
দুই চাইরটা গুলি আইসা তো লাগতেই পারে
কিছু মানুষের চোখে আর বুকে
গুলি কি আর নাবালক সাবালক চিনে
দুই চাইরটা গুলি আইসা তো লাগতেই পারে
এইরকম বাজ্জা একটা দিনে
কিছু গুলি আইসা লাগতেই পারে চিপাচুপা দিয়া
হেলিকপ্টার থেকা এতো সহজে কি সই করা যায়
তোমরা মিয়া বুঝো না কিছু, বিচিরে বলো লিচু
হইতেই তো পারে কোলাটেরাল ড্যামেজ কিছু
কিছু লাশ গুম করা লাগতেই পারে
সব ইনফরমেশন মিডিয়াতে যাবে নাকি
মর্গে যদি জা’গা না হয় আমাদের কি করার আছে
আমরা বরং লাশের খাতাটা নিয়া যাইতে পারি
এতো এতো মানুষের বেহুদা একটা আন্দোলনে
আরে ভাই, কিছু কোল্যাটারাল ড্যামেজ তো হইতে পারে
যার যার জায়গা
তোমরা জালিমের দালাল হইতে পারো
তার মানে এই না
আমরাও দালাল হবো তোমাদের মতো
তোমাদের হাতে লাইগা আছে রক্ত
মানুষের; তোমাদের শরীর থেকে
আসতেছে মানুষ মারার গন্ধ
নিশ্চই তোমরা এবং আমরা এক না
আমাদের হাতে কারো রক্তের দাগ নাই
কোনো জালিমের সাহায্যকারীও আমরা ছিলাম না
নিশ্চই তোমাদের এবং আমাদের স্থান আলাদা
জায়গাতে; দুনিয়াতে এবং আখিরাতে
এক
নিশ্চই আমরা এক ও অদ্বিতীয়
আমরা দেশের জনগন
আমরা ‘এক’ ছাড়া এইখানে
দুইয়ের কোনো জায়গা নাই
নিশ্চই
আমাদের দেশ কীভাবে চলবে
তা আমরাই ঠিক করবো
এবং কারা চালাবে সেইটাও
তোমার বিচার
আমি চাই না এতো জলদি তুমি মারা যাও
সুন্দর সাদা চাদরের ছিমছাম বেডে
পুত্র কন্যা পৌত্রদের সমাবেশে
আমি চাই না এতো জলদি তুমি কবরে যাও
মুনকার নাকির তোমারে কি জিগাবে
এগুলা জানার ইচ্ছা আমার নাই
আমি জানতে চাই না কী হবে
তোমার আখেরাতের হাল-হাকিকত
আমি চাই তুমি আরও একশো বছর বাঁচো
যেন
কাঠগড়ায় তোমার অতীতের কৃতকর্ম
অস্বীকারের অভিনয় আমরা দেখতে পাই
কোমরে বেড়ি পরানো
তোমার লাঞ্ছিত প্রতিটা পদক্ষেপ
তোমার দিকে ছুঁড়ে দেওয়া
প্রতিটা কঙ্কর
থুতুর দলা
আমরা গুণতে চাই
আমি চাই তুমি আরও একশ বছর বাঁচো
তোমার বিচার যদি দেড়শ বছর পর হয়
আমি চাই তুমি আরো দুইশ বছর বাঁচো
গ্রাফিক্স- দেবাশিস চক্রবর্তী
কাউসার হামিদ জাওয়াদ
কবি ও অনুবাদক। জন্ম ১৯ অক্টোবর, ১৯৯৭। জন্ম, বেড়ে ওঠা, লেখাপড়া সবই ঢাকাতে। অনলাইনে কবিতা লিখেন প্রায় নয় বছর যাবত। ২০২৫ সালে প্রথম কবিতার বই করবেন। ছোটগল্প ও উপন্যাস লেখার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
প্রকাশিত অনুবাদগ্রন্থ: হা জিনের ইন্টারভিউ (২০২৪; বাছবিচার)। প্রকাশিতব্য অনুবাদগ্রন্থঃ এডওয়ার্ড সাইদের ইন্টারভিউ (২০২৪; বাছবিচার)।