।। রুদ্র হক ।।
আমরা জেগে উঠেছিলাম
অহমের কালো পাহাড়ের বিপরীতে
আমরা জেগে উঠেছিলাম
পাপে ক্লিষ্ট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কালো মুখের বিরুদ্ধে
আমরা হেরে যাবো? না!
আমাদের গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়ে যাবে? না!
তপ্তঘূর্ণি
গাছগুলো জানে না কিছুই
পাখিগুলো কিছু কিছু জানে
কেঁপে কেঁপে উঠে
ডালে ফিরে আসছে বহুবার
মেঘগুলো জানে
দ্যাখো, কান্নায় ফুঁপিয়ে ওঠার আগে
থমথমে মুখ নিয়ে
তারা উড়ে যাচ্ছে ধীরে
হাওয়া জানে তারও কিছু বেশি
তপ্ত রক্তের ঘ্রাণ সে উড়িয়ে নিচ্ছে দূরে
আর বুকের ভিতরে
ঘূর্ণি তুলছে
ঘুরঘুর…
মনস্টারের বিপরীতে
চোখ জ্বলছে
চারপাশে অন্ধকার দেখছিলাম
বাবার রাগ বাড়ছে, রান্না ঘরে মা
খালি হাতে বসে আছেন
আমরা ছুটছি–
সামনে এগিয়ে আবার ফিরে আসছি
আবার এগিয়ে যাচ্ছি
বৈষম্যের ট্রিগার চেপে ধরেছে সেনা ও শাসক
ঠা-ঠা গুলির মুখে বন্ধু দাঁড়িয়ে গেছে
মৃত্যুর স্বাদ কেমন ও কখনোই জানতো না
ও জানতো মাটির চুলায় পাতা পুড়ছে
মায়ের হাতে লেগে থাকা রান্নার ঘ্রাণ
পায়নি সে বহুদিন..
আঘাতের রক্তাত মুখে কেমন দাঁড়িয়ে গেছে আমার বোন
বুকে বিড়ালের আদুরে আঁচড়ে ও হাসতো খিলখিল
মনস্টারের বিপরীতে এভাবেই লড়তে হয়
ভিডিও গেমসের কনসোল ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসা
বন্ধুটি বলছিল ছুটতে ছুটতে
আমরা ছুটছি-সামনের দিকে
মনস্টার পালাচ্ছে টিয়ারশেল ছুঁড়ে
মনস্টার পালাচ্ছে গুলি ছুঁড়ে
চোখে অন্ধকার দেখছিলাম
চোখ জ্বলছে
বাবার রাগ বাড়ছে,
আমি জানি, রান্নাঘরে মা
শূন্যহাতে বসে আছেন..
জনকের প্রতি
পিতা
তোমার সন্তানেরা আজ বেয়ারিশ মেঘ
ঝরে পড়ছে নিদারুণ বৃষ্টি হয়ে
কান্নার জলোচ্ছাস বাড়ছে-
হা হা হাসছে সিনেমার ডাইনি
ময়দানে পরাজিত কর্নেলের পেছনে
দীর্ঘ হচ্ছে সৈনিকের সারি
নো লেফট, নো রাইট, মিডেলে চলো
এ দেশ যেন আজ পুলসিরাতের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা
পেটভারি জননী এক
ওপরে আকাশ নেই, অতলে বিকট হাসছে নষ্টদাঁত খালাসিরা
মহামান্য
জননী গর্ভে আটকা পড়েছে আঠারো কোটি সন্তান!
ঝড় আসছে- আকাশ কালো হয়ে…
আমরা কি ডুবে যাবো?
আলো ও অন্ধকার
আলো কি আসবেই?
যদি আসে
দরজা খুলে দিন
জানালা খুলে দিন
যা যা পারুন সব খুলে দিন
তারপর…
নিজের অন্তরালে বসে
অন্ধকারের সাথে তার প্রণয়
উপভোগ করুন..
অগ্নিগর্ভ বদ্বীপ
আমাদের গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়ে যাবে?
চেনা ষড়যন্ত্রের মতো অচেনা প্রতিবিপ্লব
এসে কেড়ে নেবে দুপুরের নিরাপদ তন্দ্রা?
প্রতিটা মানুষের চোখ সেদিন হাসছিল
উন্মাদের মতো
মুক্তির আনন্দে ঘুরছিল মানুষ পথে পথে
বুকে শহীদের কান্না
মুখে বলে উঠছিল সবাই ‘স্বৈরাচার, আর না!’
আমরা জেগে উঠছিলাম
প্রতিটি গুলির শব্দে
আমরা ফুঁসে উঠছিলাম
প্রতিটা সাউন্ড গ্রেনেডের বিপরীতে
কেউ বলছিল ফিস ফিস করে,
ড্রাকুলার মতো রক্তচোষার স্বরে…
‘আঠারো কোটি মানুষের শান্তির প্রশ্নে আঠারো’শ আবু সাঈদের প্রাণ?
ব্যাপার না, ব্যাপার না!’
ঝনঝনে মুদ্রার মতো খরচ হয়ে যাচ্ছিল মানুষ
আমরা জেগে উঠেছিলাম
অহমের কালো পাহাড়ের বিপরীতে
আমরা জেগে উঠেছিলাম
পাপে ক্লিষ্ট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কালো মুখের বিরুদ্ধে
আমরা হেরে যাবো? না!
আমাদের গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়ে যাবে? না!
আমাদের শোক তো এখনও ফুরায় নাই
শহীদ জননীর সাথে এখনও রাত কাঁদছে গুনগুন স্বরে
এখনো বুলেট বিদ্ধ পাঁজর মেশেনাই মাটির গভীরে..
আমরা রাজপথে ফের নদীর মতো বয়ে যাবো
আমাদের পথ দেখাবে বায়ান্নো
একাত্তরের প্রতিটি স্লোগান-গান এখন আমাদের পক্ষে
আমরা নূর হোসেনের উত্তরাধিকার
সহস্র আবু সাইদের হত্যার বদলা নিতে এসেছি…
দূর্ভাগা নিপীড়িত আমাদের হাত থেকে
ফের ফসকে যাবে দেশ?
না!
অন্ধকার মুখ মানুষের হাতে হাতে
ফের জ্বলে উঠেছে প্রদীপ
কেউ না জানুক, ইতিহাস তো জানে
কেমন জ্বলে উঠতে পারে অগ্নিগর্ভ বদ্বীপ!
রুদ্র হক
জন্ম ১৯৮৭ সালে, ফেনী জেলায়। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘নাক নেই’ (২০০৭)। পেশা সাংবাদিকতা। ইমেইল: rudrohuq1@gmail.com