আজ রবিবার, ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বিপ্লবী নাকি সন্ত্রাসী তুমি, এ কথা ভেবে কেউ কেউ সন্দেহপ্রবণ

কোনো একদিন নিশ্চয়ই মরে যাব আর
হয়তো শিগগিরি নিহত হব- এই দুইটা বাক্যের
মধ্যেখানে এসে বসে থাকে ট্রমা।
নিজের কী অপরাধ জানি না
ভেড়ার পালের স্তবক মানি না-
একটা পাথরখন্ডের উপর রক্তের দাগ
অগুণ্তি সমুদ্র মিলে তবু ধুয়ে দিতে পারে না-
সমুদ্রে গোসল করতে নেমে হারানো কানের দুলের মতো
তারা হারিয়ে ফেলেছিল তাদের চোখ।
সেই থেকে ভালোবাসার নাম হল দুর্ভোগ।
বৃষ্টির পানি বৃক্ষ জন্মানোর সহায়ক।
মানুষ যদি না বাঁচে তবে সৃষ্টিশীলতাও বন্ধ হোক।

মাঝে মাঝে হৃদয় আর কোনোদিকে চলতে চায় না,
হয়ে যায় স্থবির জাহাজ। যেন দেয়ালে অ্যাক্রেলিকে আঁকা
কোনো ছবি। চিরকাল একই জায়গায় ঝুলছে শুধু ঝুলছে।
বাতাসে মাঝে মাঝে শুধু দুলে উঠছে।
যেন প্রাচীনকালের এক মস্ত তিমির কঙ্কাল, দুর্গন্ধটুকুও অবশিষ্ট নেই।
অথচ সমুদ্রে কি দারুণ প্রতাপ ছিল তার!
সলতের গা বেয়ে কিছু আলো কিলবিল করে
তার চোখের নিঃসীম গহŸরে ঢুকে পড়ছে।

ছবিটা ঝুলে আছে দেয়ালে। আর তুমি ঝুলে আছো
তোমারই নিয়তির অচল খেয়ালে। মাঝে মাঝে
স্থবির জাহাজেরও হাঁসফাঁস করে ওঠে মনে।
বিপ্লবী নাকি সন্ত্রাসী তুমি এ কথা ভেবে কেউ কেউ সন্দেহপ্রবণ।
কে চেনে কাকে, এ ভীষণ দুর্বিপাকে।
লাশের পাশ দিয়ে শকুন হেঁটে যায় রুমাল চেপে নাকে।

কে চেনে কাকে, এ ভীষণ দুর্বিপাকে- হাঁসফাঁস শুধু
হাঁসফাঁস করে মরা তারা লাখে লাখে।
হয়তো সমুদ্র তার জল নিয়ে ক্লান্ত, হয়তো পাখিরা ক্লান্ত
আকাশের চিরচেনা রং দেখে দেখে। হয়তো প্রেমিকও
ক্লান্ত সঙ্গমের আয়োজনে। মাছেরা ক্লান্ত সমুদ্রের
জলসীমায়- আকাশও ক্লান্ত আপন বিশালতায়।

আর আমার হৃদয় মাঝে মাঝে হয়ে যায় স্থবির জাহাজ।
যেন দেয়ালে অ্যাক্রেলিকে আঁকা কোনো ছবি।
চিরকাল একই জায়গায় ঝুলছে শুধু ঝুলছে।
বাতাসে মাঝে মাঝে শুধু দুলে উঠছে। কেঁপে উঠছে!

দুইজন বৃদ্ধা পাশাপাশি শুয়ে আছে। তাদের একজনের
জরায়ু থেকে অন্যজনের জন্ম। কিন্তু এখন তারা পাশাপাশি শুয়ে আছে
জমজ বোনের মতো জড়োসড়ো হয়ে। বিধবা, বেরঙিন কাপড়ে
নিজেদেরকে জড়িয়ে। এখন তারা অনেক কথাই বলতে পারে,
যা একদিন সংকোচের শামুক হয়ে মুখের মধ্যে জিভের মতো বাস করতো।
এখন তাদের সারা গায়ে ব্যথা, হৃদয়ে তবু সোনালী সকালের কথা।
চুল বিনুনি করতে করতে সেসব তারা বলে চলে।
এক জন আরেকজনের জরাযু থেকে জন্ম নিলেও এখন তারা
এক নদী থেকে জন্ম নেয়া অপর নদীর মতো পাশাপাশি বয়ে চলে।

ফুটবলের মতো কিক মারতে মারতে আমাকে পাঠিয়ে দাও
সীমানার বাইরে। মাঠে মাঠে পা থেকে পায়ে ঘোরার
খায়েশ আমার আর নাই। এক প্রকান্ড কিকে
পাঠিয়ে দাও সীমানার বাইরে, যেখানে একটা বালক
তার পুরনো খাতার পৃষ্ঠা গোল করে মার্কার দিয়ে
আঁকছে ষষ্ঠভূজ। তার পোষা বিড়াল
আমাকে নিয়ে খেলতে যাবে তারাদের ময়দানে।
যেখানে ভালোবাসারা ভালোবাসতে জানে
ছায়ারা জড়ো হয় বৃক্ষের গানে।

জন্ম: ৩ ডিসেম্বর, ১৯৮১, খুলনায়। বেড়ে ওঠা ওখানেই। কৈশোরে থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তারপর একসময় থিয়েটার ছেড়ে নিজের লেখা ও আঁকার দিকে মনোযোগী হন। মাস্টার্সের পর ঢাকায় বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কপি রাইটার হিসাবে কাজ করেছেন। একসময় সেটাও ছেড়ে দিয়ে এখন সম্পূর্ণভাবে স্বাধীনভাবে লেখালেখি করেন, ছবি আঁকেন, লুবনার বক্তব্য, “নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়াই…”।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top