আজ বৃহস্পতিবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

যথারীতি একমত হচ্ছে না কেউই

।। প্রত্যুষ বন্দ্যোপাধ্যায় ।।

আয়নার ভেতর থেকে তুমি
মাঝেমধ্যেই বেরিয়ে এসে
চেয়ারে বসা তুমির সাথে
ঝগড়া করছে
গোপন আস্তিন থেকে ছুরি শানাচ্ছে
তর্ক জুড়ছে
‘কতটা পথ হাঁটলে তবে পথিক বলা যায়’
এবং যথারীতি একমত হচ্ছে না কেউই
ফলে রাগ বাড়ছে
আর বিলো দ্য বেল্ট

সাদাকালো গরাদের কবিতা

তুমি বসে আছো
আর সামনে রাখা আয়নার ভেতর
হাঁটাচলা করছ তুমি

আয়নার ভেতর তুমি
মিছিলে হাঁটছ
চিৎকার করে রাগ দেখাচ্ছ
বেছে বেছে হাত ধরছ
ভিড়ের মধ্যেও কেউকেটা হয়ে ওঠার চেষ্টা করছ

চেয়ারে তুমি স্থির
বসে আছ
খবর কাগজের পাতায়
বিজ্ঞাপন ঝরে পড়ছে
মোবাইলে নোটিফিকেশন বিপ-বিপ করে
জানান দিচ্ছে তোমার সংযোগ
সোস্যাল মিডিয়ায় ডুব সাঁতার দিচ্ছে
তোমার অবচেতন

আয়নার ভেতর থেকে তুমি
মাঝেমধ্যেই বেরিয়ে এসে
চেয়ারে বসা তুমির সাথে
ঝগড়া করছে
গোপন আস্তিন থেকে ছুরি শানাচ্ছে
তর্ক জুড়ছে
‘কতটা পথ হাঁটলে তবে পথিক বলা যায়’
এবং যথারীতি একমত হচ্ছে না কেউই
ফলে রাগ বাড়ছে
আর বিলো দ্য বেল্ট

চেয়ারে বসা তোমার বাচনভঙ্গী যেন
সুগভীর কূপ থেকে উঠে আসা স্বর
গম্ভীর সুললিত
পাক খেয়ে খেয়ে ওঠা
শব্দের জলজ বৈভব

আয়নার বাইরের তুমি যা-ই বলছে
আয়নার ভেতরের তুমি সেটাকেই
খিল্লির অনুবাদ করছে

এইভাবে তোমরা
তোমাদের নিয়ে বেশ আছো
একজন স্থিতি তো আরেকজন গতির
আত্মতৃপ্ত বিপরীত মহিমা

শুধু একদল কালো কাক আর
একদল সাদা পায়রা এসে বড্ড জ্বালাচ্ছে
এ ওর পালক ধরে টানছে ছিঁড়ছে আর্তনাদ করছে
তারা নাকি সাদা কাক আর কালো পায়রা হতে চায়
তারা নাকি আয়না থেকে পারদ
মুছে ফেলতে চায়

তাহলে তোমাদের কী হবে গো

শুধুই কি বমি করবে বমি করবে বমি

দহনবেলায়

চলে যাচ্ছে এমন কিছু ছবি
যার ভেতর মানুষ ঢলে পড়ছে
শক্ত কাঠামো দিয়ে তাকে আর বেঁধে রাখা যাচ্ছে না
যেন একটা স্ফটিকের জেলি
ক্রমাগত পাল্টে নিচ্ছে আকার ঘুরিয়ে দিচ্ছে
আয়তনের মাপ

একটু আগে যাকে তুমি রাস্তায় দেখলে
মুখের ঘাম মুছতে না মুছতেই
সে একটা সিঁড়ির ওপরে
যেন এক্ষুনি পা নাচিয়ে বলে উঠবে
জল এলো ঐ দ্যাখো জল

সে তখন বিড়াল নখের মতো
গেঁথে নিচ্ছে অকৃতকার্য সময় আর
বস্তাবন্দী করে চলেছে অ্যালবাম
তুমি হয়তো তার বাবার সাথে তাস খেলেছ
তেলমুড়ি মাখা চকচকে রঙের গোলাম
সে পকেট থেকে দেশলাই বার করে
শূন্যে দোলায় আর পৃথিবীর সব করুণ জোকার
একসাথে আত্মহত্যা করে

পায়রা বসানো ছাদগুলো সব
আগাছায় ঢাকা
বিস্কুট খেতে খেতে কেউ আর নামতা শেখে না
অন্যমনস্ক চটিগুলো
কে কার পায়ে ছিল গুলিয়ে ফেলেছে
ফলে ঘড়ির দায় ফুরিয়েছে আর
এইবারে তোমার উঠে পড়ার পালা
অর্ধেক ঘরে অর্ধেক সমুদ্রের ফ্যান্টাসি
অনেক হল
ওঠো বেরোও বাজারে যাও

যে রিকশায়ালা কোনোদিন টায়ারের শোক পায়নি
তুমি তাকে ঠিকানা বলতে পারবে না
বরং রাতের অপেক্ষা করা ভাল
অন্ধকার অনেক কিছু ঘুলিয়ে দেয়
সামগ্রিক চাপা থাকে
পাথরকে মানুষ বলে ভ্রম হয়
তিন দিন একই চিঠি পড়ে চলার ছলনা
কত সহজ লাগে

তুমি তো দেখেছ এইসব বিস্মিত চূর্ণী
যখন এলিয়ে আসে ছায়া
প্রথম প্রেম মনে পড়ে
প্রথম মিথ্যে
কে তুমি বসি নদীকূলে একেলা
ভোর বাকি আছে
আরেকটু বৃষ্টির কথা বল শুনি
পাতাল ভিজুক
অন্তরঙ্গ কাটাকুটিগুলো
নিজেরাই বুঝে নিক
হত্যা আর আত্মহত্যা কখন যে হতে পারে সমান সমান
তুমি বরং বৃষ্টির কথা বল
উপাসনা স্থগিত রেখে যাযকেরা চলে যাক
বধ্যভূমির আরও নিকটে
শিশুদের খেলনা নিলাম হোক
বাসস্টপে এসে বসো বাঘ

সারমেয় জপতপ দ্বিধাদীর্ণ অনুরোধগুলি
ফসল কাটার মাঠে একবার এসো
জড়িয়ে ধরার মতো মায়া নেই আর
জরদগব শিথিলতা নিয়ে কিছু
প্রশ্নের ভাগশেষ
খোলামকুচির কিছু খুচরো বাস্তবতা
একেবারে নিকেষ করুক

তবু তুমি এসো
আজানুলম্বিত কিছু মোহ বাতুলতা
ঢিল দিলে দিক ঘুড়ি কেটে গেলে যাক
হৃদয় ও বেদনার সাযুজ্য ছায়া নিয়ে ভেবে ভেবে
রাস্তার এপার ওপার
যেদিকে তাকাই
দেখি সব দরজা বন্ধ পড়ে আছে
ডাকবাক্স কোত্থাও নেই
পিয়নের সংকেত লিপি নিয়ে জুয়ার আসরে
আজও শাড়ি খোলা হয়
নিশিডাক আজও ডাকে চাঁদ

তিল অন্ন ভ্রুকুটি প্রণয় তার দেনমোহরের বোঝা
ফেলে চলে গেছে
সে যদি ফেরার কথা নাই ভাবে
তার চোখে বালি দিও
অপেক্ষারা জড়ো হোক আঘাটা পাঁজরে
সামান্য খুদ দিয়ে বাসন সাজিও আজ রাতে
নীবিবন্ধে রেখে আসা প্রতিশ্রুতিগুলো
আবার অনাথ হোক দৃশ্যত শোকে
তুমি সেই বাক্য কখনও বোলো না যার দায়ভার
তোমার অতীতচারী স্নায়ুর অসুখ ডেকে আনে

সুখে ছিল পিতরৌ
তাকে তুমি বর্তমান বিস্মরণ দিলে
তথ্যের ভাগাড় থেকে কিনে দিলে বিকলাঙ্গ ভ্রম
এইমতো ব্যথাবোধ সন্তানের এই তঞ্চকতা
আসব বাতাসে আজ ঘ্রাণ জাগে
বদগন্ধ স্বাভাবিক হয়

যে হাত ছেড়েছ তার ছায়া অভিশাপ
দহনবেলায় আনে বেপথু মনীষা
পতন উন্মুখ এই ভরকেন্দ্র থেকে ছিটকে বেরতে চায়
যে সব ধাতব
প্রজন্মের চোখে ফাটে রক্তবহা শিরা
সংজ্ঞাহীন বোধহীন জারজ উল্লাস
বামন প্রসব ছাড়া আর কীই-বা দেবে
কাকে আর ডেকে নেবে একলাই পুড়ে যাও তবে
নিজেরই রোপিত এই বিষবৃক্ষে
আগুন জ্বালিয়ে

শৌখিন পুঁথিগুলো সাথে নিও শুধু

প্রত্যুষ বন্দ্যোপাধ্যায়

জন্ম ১৯৬০, নিবাস, পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা, ভবানীপুর। স্বাক্ষর। সম্পাদিত পত্রিকা – শব্দ, ক্যানেস্তারা। প্রকাশিত কবিতার বই – অব্যয় সংহিতা (ধানসিড়ি) ‘ক্যাজুয়াল স্বৈরতন্ত্রী (অক্ষরযাত্রা)। প্রকাশিতব্য, ‘চালচিত্র’ (অক্ষর যাত্রা)

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top