।। বায়েজিদ বোস্তামীর দ্বিভাষিক শায়েরী ।।
জীবন তো তামাতামাই হইলো প্রেমে
আমার পুরাটাই আর কিছুটা তোমারও
প্রেমেই যদি খুন হইবা বোস্তামী
শত্রুতায় ডরাইছিলা ক্যান?
১
তোমার চোখের কাজল উড়ন্ত তির
আমার হৃদয় পাখির পারা কাঁপে
*
তেরি ন্যায়নো কে কাজল উড়তে হুয়ে তির
মেরা দিল পরেশান পরিন্দে কি তরেহ কাঁপ রাহা হ্যায়
২
স্রেফ তার চরণ চুমানির লোভে
আমি ধূলার জীবন মানি নিছি
*
সির্ফ উসকে কদমবোসি কে হাওয়াস মে
ম্যায়নে ধুল কি যিন্দেগি এতরাফ কিয়া হ্যায়
৩
শান্তিমতো ঘুমাইতেও পারতেছো না
প্রেম তোমার এ কী দশা করছে বোস্তামী
*
আপ সুকুন সে সো ভি নেহি সাকতে বোস্তামী
ইশকনে আপ কা য়ে ক্যায়া হাল কিয়া হ্যায়
৪
প্রেম আমারে পাত্রভরা বিষ দিছে
আমি সে বিষ সুধা ভাবি গিলছি
*
ইশকনে মুঝে যেহের ভরা সাগর দিয়া
ওর ম্যায়নে উসে অমৃত জান কর পিয়া
৫
প্রেমেই যদি খুন হইবা বোস্তামী
শত্রুতায় ডরাইছিলা ক্যান?
*
মুহাব্বত মেঁ হি মরনা হ্যায় তো বোস্তামী
দুশমনি সে খওফযাদে হুয়ে থে কিঁউ?
৬
জীবন তো তামাতামাই হইলো প্রেমে
আমার পুরাটাই আর কিছুটা তোমারও
*
যিন্দেগি তো বরবাদ হো হি গ্যায়া ইশকমে
মেরা তামাম অওর থোড়া সা আপ কা ভি
৭
পীরিতের আগুনে ছাই হইলা না রে বোস্তামী
বরং হইলা চোখের জলের বহমান এক নদী
*
বোস্তামী ইশক কি আগ মেঁ জ্বল কর রাখ না হুয়ে
বলকে আপ আঁসুও কা ইক বহতা হুয়া দরিয়া বন গ্যয়ে
৮
কে না জানে প্রেম চাহে দাসত্ব
নিজেরে তার হাতে সোপর্দ করো ওহে বোস্তামী
*
কওন নেহি জানতা কে ইশক গুলামি চাহতি হ্যায়
এয় বোস্তামী আপনে আপ কো উস কে হাওয়ালে কর দো
৯
খোদার না তোমার নাম যিকির করি সারাক্ষণ
বেজার হইয়া খোদা তাই যতো দুঃখ আমারে দ্যান
*
খুদা কে বাজায়ে ম্যায় হামেশা তেরা নাম লেতা হুঁ
নাখুশ খুদা নে মেরে লিয়ে তামাম দুখ আতা কর দিয়ে
১০
সারা জীবন তোমার জন্যই রাখছি
কেবল মরণের জন্য একটু দৌড়ের উপর আছি
*
তেরে লিয়ে রাখ দি যিন্দেগি তামাম
সির্ফ মওত কে লিয়ে থোড়া সা জলদি মে হুঁ
১১
তোমার পিছে হাবিয়াতেও যাইতে রাজি
জান্নাতুল ফেরদৌস বাঁয়ে ফালায়া থুয়া
*
আপ কে পিছে জাহান্নুম জানে কো তইয়ার হুঁ
বেপরওয়া ছোড় কে জান্নাতুল ফিরদাউস
১২
দেখবে লোকে কিছু অক্ষর শুধু এসব শেরে
তুমি জানো রক্ত আর অশ্রু বাবদে
*
লোগো কো কুছ হরুফ সির্ফ ইন শেরোঁ মে নযর আয়েগি
আপ জানতে হ্যায় কে ও খুন অওর আঁসুও সে লিখখে গ্যয়ে হ্যাঁয়
কৈফিয়ত, কৃতজ্ঞতা এবং…
আমার মাতৃভাষা রংপুরিয়া (পড়েন, অংপুরিয়া)। ভাষাটি রাজবংশী, কামরূপী, কামতাপুরী ইত্যাদি নামে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসামসহ নানান অঞ্চল এবং নেপালে ছড়ায়ে আছে। অর্থাৎ এই ভাষায় কথা কওয়া মানুষেরা ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন। এই বিচ্ছিন্নতার জন্যই রংপুরিয়াদের মাতৃভাষার স্বীকৃতি আদায়ের দাবি অন্তত বাংলাদেশে নাই। এ বাবদে এদেশে রংপুরিয়া ভাষার ভূমি উত্তরাঞ্চলের অর্থনৈতিকভাবে পিছায়ে থাকারেও একটা কারণ হিশাবে দেখি আমি। বিপরীতে সিলেটি কিংবা চাটগাঁইয়া ভাষার আলাদা ভাষা হিশাবে দাবিটি কিন্তু জোরেশোরেই আছে, খেয়াল কইরেন। পশ্চিমবঙ্গে রাজবংশী ভাষার স্বীকৃতি আদায়ের ব্যাপারে দাবি জোরালো এবং যথেষ্ট অগ্রগতিও সাধিত হইছে।
এদেশে রংপুরিয়া পুরাপুরিই বাঙলার বগলদাবা হইয়া আছে। ইশকুলের বারান্দায় পা দেওয়ার সাথেসাথেই আমারে আত্মবাচক সর্বনামটি তথা মুই ভুলতে হইছে। মানে, মাতৃভাষাটিরেও। আমারে ইশকুল এই শিখাইছে যে আমার মাতৃভাষা বাঙলা। আমি পড়তে-লিখতে শিখছি বাঙলায়। লেখালেখিও করি বাঙলাতেই। মূলত কবি, গদ্যের ব্যাপারে প্রেম প্রবল। বাঙলা ভাষার কবি হইয়া শের লেখার পেছনের কারণটা কইতে গিয়া এই শিবের গীত গাওয়া! শেরগুলি লেখার টাইমে যে দশায় আছিলাম অই দশায় আমার মনে হইছে, একমাত্র শের-এই আমি যেরকম কান্দাকাটি করতে চাই সেইটা করা সম্ভব। বাঙলা কবিতা আমার এই কান্দাকাটি এলাউ করবে না। ফলে, শের। শেরগুলি শুধু বাঙলায় না ক্যান? বা শুধু উর্দুতেই না ক্যান? উর্দু ভাষা বাবদে আমি আকাট মূর্খ— না পড়তে জানি, না লিখতে। শের কিছু পড়ছি বাঙলা অনুবাদেই। আমার উর্দু বাবদে দৌড় অই গযল, কাওয়ালি শোনা পর্যন্তই।
স্বীকারে সংকোচ নাই, উর্দুতে শের লেখা আমার জন্য অসাধ্যকর্মই। নাইলে কেবল উর্দুতেই লিখতাম। শেরগুলি লিখছি মোস্টলি বাঙলাতেই, পরে উর্দুতে তরজমা করছি। কিছুক্ষেত্রে উল্টাটাও হইছে। আমি চাইছি শেরগুলি দুই ভাষাতেই থাকুক।
শেরগুলি যখন ফেসবুকে প্রকাশ করছি তখন বন্ধুদের অনেকেই ভুলচুক ধরায়া দিছেন, কেউ কেউ উচ্ছ্বাসও দ্যাখাইছেন—সেজন্য উনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ আমি। বিশেষ করি কৃতজ্ঞ প্রেমিকার প্রতি। তার তিরস্কার আমারে উজ্জীবিত করছে—প্রেম তো বটেই! শুরুতে কিছু শের সে নিজে সংশোধনও করি দিছে। প্রিয়ভাজন নুসরাত তাবাসসুম পাণ্ডুলিপি দেখি দিছেন। উনার জন্য ভালোবাসা। অগ্রজসম জাভেদ হুসেন উনার শতেক ব্যস্ততার মদ্দেও পাণ্ডুলিপি এডিট করছেন। শেরগুলির উর্দু এন্তার ঘষামাজা করি আমারে চূড়ান্ত বেইজ্জতির হাত থাকি বাঁচাইছেন। উনারে কৃতজ্ঞতা জানানির ভাষা নাই! শের-ই-বোস্তামী-তে সকলেরই হিসসা রইলো।
এতদসত্ত্বেও বেকুব বোস্তামীর হাতে পড়ি শের-এর বেইজ্জতি যে যথেষ্টই হইলো, সে বিষয়ে সন্দেহ নাই। মরণের পর মোটেই গালিব-তকী সাহাবদের সামনে পড়তে চাই না! নেহাত পড়িই যদি, ‘গোস্তাকি মাফ কিজিয়ে, জনাব’ কইয়া দ্রুত কাটি পড়তে পারবো—এই আশা রাখলাম।
বায়েজিদ বোস্তামী
|মিরপুর, ঢাকা।